শরদিন্দু সাহা

লেখক পরিচিতি

বাংলা কথা সাহিত্যের সুপরিচিত লেখক শরদিন্দু সাহা। লেখক সত্তা ও জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে তিনি অভ্যস্ত নন। নিছক লেখক হওয়ার জন্য তিনি কলম ধরেননি, সামাজিক দায়বদ্ধতাই তাঁকে সৃষ্টিকর্মে উদ্বুদ্ধ করে। শৈশব থেকে সৃষ্টিশীল মন লালন করে প্রস্তুতি পর্ব সারলেও নয়ের দশকের গোড়া থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। এ-পর্যন্ত শতাধিক গল্প, গোটা কয়েক উপন্যাস এবং অন্যান্য গদ্য মুদ্রিত হয়েছে। দশটি উপন্যাস আর সাতটি গল্পগ্রন্থ সহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা ষোলো। ১৯৯৮ সালে ‘কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগার পুরস্কার’ পান। ২০০৪ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত সোমেন চন্দ পুরস্কার’ পান। ওই  বছরেই কাটোয়া লিটল ম্যাগাজিন মেলা কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘হল্ অব্ ফেম’-এ সম্মানিত করেন। ২০০৫ সালে ‘ভাষা শহিদ বরকত স্মরণ পুরস্কার’ পান। ২০০৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি’র আমন্ত্রণে গৌহাটিতে বাংলা-অসমীয়া গল্পকার সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে ‘আমি’ পত্রিকা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বিশেষ সম্মান দেন। প্রসার ভারতী’র আমন্ত্রণে নানা সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিলিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যেই নিজস্ব এক ঘরানা সৃষ্টি করে তিনি পাঠকের মন জয় করেছেন।

বিষয় পরিচিতি

(রেভারেন্ড জেমস্‌ লঙ  যে লক্ষ্য স্থির রেখে জীবনকে চালনা করেছেন তা শুধুমাত্র ঘটনাক্রম দিয়ে ধরা যায় না। তাঁর কর্মজীবনের পরিক্রমায় যে অন্তর্নিহিত শক্তি ও প্রভাব রয়েছে তাকে কোনও এক শিল্প মাধ্যম দিয়ে উপলব্ধি করা যায় না। কারণ কোনো সরলরেখায় তিনি তাঁর কাজকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, নানা উত্থান পতন ঘাত প্রতিঘাত তাকে পীড়িত করেছিল, বিপর্যস্ত করেছিল। তিনি প্রবল আত্মশক্তিতে তার মোকাবেলা করেছিলেন এবং কর্তব্যকর্মে অটুট ছিলেন। তাঁর কাজের পরিধি ও ব্যাপ্তি একজন শিক্ষকের, সমাজসেবকের, মানবপ্রেমির যা মূলত শাসক ও শোষিতর মাঝখানে একজন প্রতিবাদীর, সত্যবাদীর, বলা যায় একজন দ্বান্দ্বিক ব্যক্তিত্বের। যার না-বলা কথা, জানা-অজানার কল্পনা ও বাস্তবের মিলন নিয়ে উপন্যাস লেখা সম্ভব অসম্ভবের দোলাচল মাত্র, তবুও শব্দের মায়ায় ধরার সামান্য প্রচেষ্টা। কোথায় তার অন্ত হবে প্রকৃত অর্থে বলা খুব কঠিন। এই মহান মানুষটির শৈল্পিক জীবনকে ছুঁয়ে যাওয়া আর কি।)

  মানুষ হওয়া কি মুখের কথা

নিজের ছায়াটা আজকাল কেমন অগোছালো হয়ে মাঝে মাঝেই এসে হাজির হয়। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি ভুল দেখছি না তো! না কোনো অন্য অনেকের ছায়া আমার ছায়ায় জড়িয়ে গিয়ে আমাকে পাল্টে দিচ্ছে। এখানে কত পুকুর, পাড়ে বাঁধানো ঘাট, জল টলমল করে এসে মিলে যায়। আমি আমার ভাবনাগুলো যেমন ছুঁতে পারি না, ধরে রাখতে পারি না। ছোট ছোট ঢেউগুলো নিজের মতোই আমার সঙ্গে মিশে যায়। অনেক কিছুই আমাকে গ্ৰাস করে কখনও দূরে ঠেলে দেয়, নিজের খুশিমতো কাছে টেনে নেয়। নিজের ঘর, জানালা, দরজায়  ঠকঠক করে , কখনও ঝাঁকুনি দেয়, কখনও থরথর করে কাঁপে। সেই ঝাঁকুনির আবার রকমফের আছে। কখনও এত জোরে যার ধাক্কায় আমি অস্থির হয়ে পড়ি, বিপন্ন হয়ে পায়চারি করি। হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা যে নেই একথা কি কেউ বলতে পারে? শিক্ষার বীজ পুঁতে দিলে আজ না হয় কাল চেতনা জাগবে,  হলফ করে বলা যায়। মার্শম্যানের বাংলার ইতিহাস ও পাঠশালা, লঙ লসনের প্রাণীবৃত্তান্ত এবং শ্যামাচরণের বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে ছাত্রদের আগ্ৰহ যেন আপনা আপনিই কয়েক গুণ বেড়েই চলে। প্রশ্নের পর প্রশ্নের উত্তরগুলো ঠোঁটের ডগায় লেগে থাকে –  ‘ফাদার, ইতিহাসের জীবন আর জীবনের ইতিহাস এই দুয়ের মধ্যে কোনো তফাত আছে কি?’ প্রশ্নটা শুনে ঘাবড়ে তো গেলাম, আবার খানিকটা বিস্মিতও হলাম। বললাম,  সহজ উত্তর হলো জীবনের মাঝে ইতিহাস খুঁজতে যেওনা, ইতিহাসের জীবনে পূর্ণতা নেই, যা কিছু শুনছ, বুঝছ সবটাই আংশিক। ওরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। ‘তবে আর একটা প্রশ্ন করি ফাদার?’ প্রশ্নের উৎপত্তির খেলায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া সোজা খেলা নয়। ওদের মুখগুলো দেখি আর ভাবি আমার শৈশবের নদীর শোভা আর গঙ্গার মোহময়ী রূপ দুটোই আলাদা আলাদা ঢঙে কথা বলে। এই বুঝি ধরে ফেলি, আবার এলোমেলো হয়ে হারিয়ে যায় কোন গর্ভে কী জানি। কত যে মানুষ আসে, কত যে মানুষ যায়, মনের কথা বলে সময়মতো আবার অসময়ে জানান দিলে বুঝে ফেলি – অন্ধকারটা যতটা কাছের ভেবেছিলাম, ততটা নয়। দিনের আলো যখন মাটির ধুলিকণায় এসে আত্মীয়তা পাতায়। আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলে, অনেকেই পেছনে এসে পায়ে পা মেলায়। আমি থেমে গেলে ভাবে এই বুঝি কাদা মাখানো আঙুলগুলোর ফাঁক দিয়ে ফুরুত করে ছড়িয়ে পড়ে থকথকে ধুলিকণা। ঘরের মাঝে মেয়েরা ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করে পড়ে থাকে, আঁচল টেনে ঘোমটা মাথায় দিয়ে পর-পুরুষের সামনে আসে। ওরা কী এঁদো পুকুরের কচুরিপানার মতো ভেসে ভেসে বেড়ায়, বিন্দু বিন্দু সময়ের ফাঁকতালে ঘুরে ঘুরে মরে। ওরা বলে, এমন আজব দুনিয়া জন্মে দেখে নি। যদিওবা কালেভদ্রে কোনো মানুষ এলো আর গেলো ওদের এত মাথাব্যথা নেই। ছায়ারা যখন বসে বসে খেলা করে, একদল জিপসি মেয়েরা ছুটে ছুটে আসে।  ওরা স্কুলবাড়ির জানালার দিকে হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘সাহেব- বাবা আপনার কিছু দরকার নেই?’ আছে মা আছে, যত পথ পার হবো, তত পথে আছে। ‘এত রঙ বেরঙের পাথর, গয়নাগাটি, কোনটা চাই।’ এত বাছবিচারে কাজ নেই, যাতে তোমাদের মন ভরে, তাই দাও। ‘বারে বা, তুমি হলে খরিদ্দার, আমরা হলাম দোকানদার, তোমার পছন্দ অপছন্দ থাকবে না!’ বাছাবাছিতে কাজ নেই, না হয় পরে ঘষে মেজে নেব। হারজিৎ-এর কথা বলছ, সে ভাবনা আমার নয়, অন্যজনের। ‘তোমার কথায় আমরা কোনো কুলকিনারা পাই না গো।’ কত তো শনের ঘর, গোবর লেপানো পাটকাঠির বেড়া। মাথা নিচু করে ডানে বাঁয়ে উপরনিচ করে ছায়াগুলো মাথা খুঁড়ে মরছে – কে আর কাকে দেখে। আমার দেখার ফাঁকফোকরে রয়েছে কত অকল্পনীয় কথা চালাচালি, কে কার কথা শোনে! শোনাবো বলেই তো এত ব্যস্ততা, এত আকুতি। এত বলার কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেশুনে নেওয়া।  

    শ্রেণীকক্ষে এদেশীয় ছাত্ররা বাইবেলের গসপেলের কিয়দংশ মুখস্ত বলা দেখে আমি যেন দিবাস্বপ্ন দেখি। কল্পনার জাল বুনতে বুনতে চলি। চারপাশে কিছু পাঠশালার পণ্ডিতেরা জ্ঞানের আলো ছড়ানোকে শুধুমাত্র ধর্মীয় শৃঙ্খলায় বেঁধে ফেলছে দেখে মনে হয় এই সীমাবদ্ধতা অপূরণীয় ক্ষতি। মুক্ত বাতাস চাই, খোলা বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া চাই, না হলে সমাজের অন্দরে যেই বিষবাষ্প ছড়িয়ে রয়েছে, তার থেকে বের করে আনবে কার সাধ্য। তাহলে কী ধরে নেব, কোথাও না কোথাও ছড়িয়ে রয়েছে যেখানে নিজেকে অতিক্রম না করার স্পৃহা প্রবল হয়ে ওঠে। কত বিষয় না ভাবিয়ে তোলে, মনে হয় সব কিছু উজার করে দিয়ে পুষ্ট করে তুলি, ওদের চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে যখন ঘোরাফেরা করে এবার বোধ হয় আর নিশ্চুপ থাকা চলে না, ওদের পরিতৃপ্ত না করলেই যে নয়। ঘুরপথে পাক খেতে খেতে যদি কোথাও ঢুঁ মারে তখন তো ঘোর বিপদ। দূর গ্ৰাম থেকে এক ঘরামি ছুটে ছুটে আসে। প্রাণ আকুল করা চোখের জলে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেই চলে নানা কথা। বলে ‘বলতে পারেন সাহেব-বাবা সংসারে মাঠে ঘাটে কাম করা লোকের কোনো মান-সম্মান কেন  নাই?’ কেন কে তোমায় অপমান করল? ‘বাবুর বাড়ির গোমস্তা এসে যা নয় তাই বলে গেল। বলল, শালার বেটা শালা বাবুর বাড়ির কাজের চেয়ে তোর কোন কাজটা বড় হলো। বড্ড লেজ গজিয়েছে, দেখাচ্ছি মজা।’ ধনীদের এমন লাথি ঝাঁটা মারা কম তো দেখি নি। ‘সাহেব-বাবা ওরা আমার ঘরবাড়ি তছনচ করে দিয়ে চলে গেল।’ কী আর করব, হাতে দু-আনা পয়সা দিয়ে বললাম এই নিয়ে কাজ চালিয়ে নিও। মামলা লড়তে গেলে সর্বস্বান্ত হবে, এবারের মতো মানিয়ে গুছিয়ে নাও। এমন দিন আসবে, তোমার মনের কথাগুলো অনেকের মনের কথা হয়ে যাবে। মানুষটা কী যে বুঝল কি জানি কিন্তু এক আত্মবিশ্বাস ওর চোখেমুখের আদলটাকে এমন ভাবে পাল্টে দিল, একটু আগের দেখা জুবুথুবু হওয়া মানুষটা এখন ভিন্ন মানুষ। যে সময়টা ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল কোথায় যেন নিমেষে উবে গেছে। আমি নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওর নিজের জায়গায় বসালাম।

    বিদ্যাসাগর ও কেশব সেনদের চিন্তার শরিক হয়ে আমি একসময় বুঝলাম আমার এদেশে আগমনের হেতুটা গৌণ হয়ে যাচ্ছে, আরও কত যে ফুটিফাটা আছে, যে জানবার সেই জানে। । এই নিয়ে অন্যান্য পাদ্রীদের কটুক্তি যে আমার কানে আসে না এমন নয়। রাজার নিয়ম রাজা মেনে চলে তাতে করে কত মানুষের কত কিছু বাড়ে, আবার পিছল খেতেও সময় লাগে না। উলুখাগড়ারা নিজেরা বুঝতেও পারে না কে কোথায় দাঁড়িয়ে। না, সমাজের চোখে কালি পড়েছে, এমন সহজ সিন্ধান্তে কেই-বা আসা যাওয়া করে। ইংরেজদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না, এটা কেমন করে বলি। ওদের ঘর-দূয়ারে আমাকে আসন পেতে বসতে বলে। অভাব-অভিযোগের পাহাড় জমেছে, সকল কিছু জানা-বোঝার বাইরে। কম বয়সী বৌঝিরা শুধু হুকুম তামিল করে, নিজের মতো করে পা ফেলতে ওদের যত সংকোচ। মন দিয়ে ঘর সংসার করে ছেলেপুলে পালতেই ওদের দিন যায়, রাত ফুরায়। পুরুষদের অনুমতি নিয়ে কথা চালাচালিতে কখন যে আপন পরের সীমানা ঘুচে যায়, সে আর কে বলবে। ওরা নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করে – মানুষটাকে দেখলে দেবদূত মনে হয়। মানুষ যে দেবতার আসনে বসতে পারে ওদের মনের হদিস না পেলে আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হতো না। ওরা কত সহজেই না পর্দা সরিয়ে ঘোমটার আড়াল থেকে আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে চায় – পৃথিবীর সব দেশের মেয়েরা অন্দরমহল ছেড়ে সংসারের বাঁধাধরা কাজের বাইরে হাত বাড়ায় কিনা। ওরা ঘরের কাজে সিদ্ধহস্ত, যাবতীয় পুণ্য অর্জনের দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে বিনা শর্তে ওরা পুরুষদের নিষ্কৃতি দেয়। আমার কথার জবাবে ওরা অবলীলায় বলে ফেলে, ‘এতো সহজ সরল প্রশ্নের উত্তর এত কঠিন করে বললে ধাঁধার মতো মনে হয়।’ কথায় কথায় ওরা ‘জয় নিতাই’, ‘জয় গুরু’ বলে নিজেদের আত্মার ও মনের শান্তি কামনা করে। জীবনের হিসেবটা এভাবে করলে কেমন হয়, মাঝে মাঝেই আমি নিজের কাছে রাখি, জবাব পাই না। জবাব দেবেই বা কে? জবাব দেবার মতো উপযুক্ত মানুষ কোথায়? ওরা অনেক দূরের মানুষ, ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেমন করে থাকে, কেমন করে শোয়, কেমন করে কথার পিঠে কথা বলে, এই কল্পনা স্বপ্নেও আসে না। ‘সাহেব-বাবা, আপনি এমন করে পথেঘাটে ঘুরে ঘুরে কীসের নেশায় মেতে থাকেন?’ বললাম, নিজেকে খুঁজি। নিজেকে মিলিয়ে দেখি, আর কতদূর এগোলে এই দেশের মানুষরা অপর দেশের মানুষের ছুঁয়ে ফেলবে। ‘ছুঁলেই-বা কী হবে, না ছুঁলেই বা কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে!’ সত্যি বলতে কি এই-প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে এমন প্রশ্নের উত্তর জানা আছে, যা তোমার কোনও কাজে লাগবে না। এই পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে, অন্ধকাররা সেখানে জাঁকিয়ে বসে আছে। ‘আমাকে দেখাতে পারেন সেই জায়গা?’ অবশ্যই পারি। দিনের আলোতেই সেইসব স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করে। ‘সাহেব-বাবা, আপনি তো সহজ মানুষ নয়!’ লোকে তাই তো আমাকে বলে, সুযোগ পেলেই  তাড়া করে বেড়ায়।

হ্যালহেডের কথা ভোলা যাবে না, আমি ‘এ গ্ৰামার অফ দ্যা বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ’ পড়েছি – ‘বাংলা ভাষার শব্দ গৌরব অসীম। বাংলা ভাষায় সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাসাদি যে কোন বিষয় রচিত হতে পারে। কিন্তু বাঙালিরা এ বিষয়ে যত্নশীল নন।’ নতুন উদ্যমে কাজ করতে হবে, নতুন বাতাস ছড়িয়ে দিতে হবে। কোন নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে রাখা সমীচিন হবে না, প্রত্যেকের ভালো লাগাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বাঙালির রীতিপ্রকৃতি ও ভাষাজ্ঞানও প্রশংসনীয়। নতুন নতুন উপায়ে আরও ছাত্রদের আকৃষ্ট করতে হবে। কথাটা যে ফেলনার নয়, বলেছিল, ‘সাহেব-বাবা তোমাদের আগ্ৰহের কারণটা তো বুঝলাম না, আমাদের মূর্খ বানিয়ে রাখলেই তো তোমাদের লাভ, নাকি গোপন কোনও বাসনা আছে?’ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তবে একথা ঠিক যারা জবরদখল করার ইচ্ছা নিয়ে পরের দেশ দখল করে রাখে সে দেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করবে এই কথাটা মানতে প্রথমেই রাজি হবে না, প্রয়োজনে শূলে ছড়াবে, গাছে তুলে মই কাড়বে, এর বেশি এক পা-ও এগোবে না। কিন্তু গোড়ায় গলদ থাকলে মানুষ চেনা সহজ হবে না।  এত সময় তো পার হয়ে গেল, মানুষগুলো যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেল। অচেনা মুখগুলো চেনা তো হলোই না, ওদের কথা তো ভাবলই না, আরও দূরে ঠেলে দিল। কাকগুলো যেমন ডালে বসে কা কা করে ডাকে, কেন ডাকে নিজেও জানে না, এই দেশের মানুষরা দিনরাত শুধু ডেকেই চলে, কেমন করে ডাকলে অন্যরা সাড়া দেবে কে জানে। আমার জানা যে ছিল কী করে বলি, তবুও মনে হলো, ওদের কথাগুলো আমার নিজের কথা, ওদের মনের কথা, আমার নিজের কথা। ওরা কেউ আমার ধর্মকে আপন ধর্ম হিসেবে মানলো কিনা, আমি ধর্তব্যের মধ্যে নিলাম না। দুচোখ ভরে দেখতে চাইলাম, কেমন করে ওরা হাঁটে, কেমন করে ওরা থালায় ভাত মেখে মুখে পোরে, কেমন ভঙ্গিতে শব্দগুলো একের মুখ থেকে অন্যের মুখে বসিয়ে দেয়, কেমন সুরে সুর মেলায়।  আমি যখন ওদের ডেকে বলি, দরজা জানালাগুলো খুলে দাও, সূর্যের আলো থমকে দাঁড়িয়ে আছে, আর হাতে একটুও সময় নেই, সকলে কয়েক কদম এগিয়ে গেছে, তোমরা পিছিয়ে পড়েছ, এবার কিন্তু নদীতে ডুবে মরবে। ওরা ঘাড় মটকে ধরলে আর রক্ষা থাকবে না। ওরা আমার কথা গায়ে তো মাখলোই না, ফুৎকারে উড়িয়ে দিল। আসলে এসব কথা আবার কোনো কথার কথা! ওরা বুঝলই না, যেমন চলতে পছন্দ করছিল, তেমনই চলল। ওরা দল বেঁধে এসে কত যে গল্প শোনাল, সেই গল্পে পিতামহ প্রপিতামহের উপদেশ আদেশ নির্দেশ সব ছিল, যে গল্পে ওদের এখনের গল্পগুলো অন্য খাতে বইল, বিল থেকে খালে গেল, কত খাল নদীতে গেল, নদী থেকে সাগরে গেল।

শামুকের খোলস দেখে তার গোটা আকার আকৃতি অনুমান করলে যে কল্পনার জন্ম নেয়, মানুষের ভেতরের মানুষটার রঙ ঢঙ খুঁজে পাওয়াও শরীরের কাঠামো দেখে বুঝে নেওয়া এমনই ভাবের সঞ্চার করে। আমার ভাবনার জগৎ গোড়ায় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত এমন করে এই বুঝি ওদের ধরে ফেলি। চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে কত তো ফারাক, জায়গা পাল্টাতে হবে, অনির্দিষ্ট পথের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হবে, সবুজের মেলা বসুক কিংবা নদীতে জোয়ার আসুক, পাড়ে পাড়ে বালির স্তুপে বোঝাই হোক, মানুষের বিষন্নতাকে উপলব্ধিতে চিনে নিতে হবে। কে বা কারা কখন কীভাবে তা দখলে নেবে কে জানে। চেনার মতো করে চিনে নিতে হবে। আমি জানাতে চেয়েছিলাম যে মানুষগুলো ঘুমিয়ে আছে, ওদের ধাক্কা মারতে হবে আরও জোরে। ওরা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে হাঁটছিল, ভাবছিল এমন অভিভাবকহীন ব্যবস্থায় কেউ কারও সঙ্গে কথা বলবে না, নির্জীব হয়ে ভাববে যে যার মতো খেলছে খেলুক, তাতে কার কী আসে যায়। কথাটা যে ষোলো আনা ভুল এই কথাটা মর্মে মর্মে জেনে নিতে একটু সময় নিয়েছিলাম। ওরাও সময় চেয়েছিল, আমিও সময় চেয়েছিলাম। ওদের তুলসী মণ্ডপ, মন্দিরের চারপাশে হরি সংকীর্তনে বুঁদ হয়ে গেলে ওরা আসন পেতে বসাল, ওদের চোখ দিয়ে জল গড়াল, আমার চোখও ভিজে উঠল। কেন ভিজে উঠল, এর জবাব দেবার মতো লোক আমার স্বজাতিতে জন্ম হয় নি। নিজেরা জ্ঞানী পুরুষ বলে গর্ব করে, সারা পৃথিবীতে আলো ছড়াবার ঠিকাদারি যেন ওদের একার। ‘জানার কথাগুলো বাবা ছড়ানো রয়েছে, এত উন্নাসিকতা থাকলে আধপেটা খাওয়া মানুষগুলোর চাওয়া-পাওয়াকে হজম করা যাবে না।’ গুরুমশাইর পাঠক্রম বুঝতে সময় লেগেছিল, পরে বুঝলাম যতটা সহজে নিয়েছিলাম, ততটা সহজপাচ্য নয়। এঁদের জ্ঞান বিলোবার নির্দিষ্ট একটা পদ্ধতি আছে, ওদের ভাবভঙ্গি রপ্ত করতে হলে সময়কে কাটাছেঁড়া করতে হবে। প্রবেশদ্বার এর খোঁজ পেলে শুধু চলবে না, নির্গমনের পথটাও আগেভাগেই জেনে নিতে হবে। ঝরের তাণ্ডবে যেদিন সবকিছু ভেঙে চুরমার হলো, আমার ঘরটাও উল্টে পড়ল। তড়িঘড়ি ওরা আমার ঘরটাকে দাঁড় করিয়ে দিল, নিজের ঘরের খুঁটি ভেঙেচুরে পড়ে আছে। শিক্ষা কাকে বলে এই সংজ্ঞাটা একসূত্রে গেঁথে দিলে চলে না বোধহয় তাই।

এটা এমন এক অদ্ভুত সময় যখন ডঃ আলেকজান্ডার ডাভ নির্দেশিত পথই চোখ খুলে দিল। ওরিয়েন্টালিস্ট দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জেনারেল এসেম্বলি ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করলেন যাতে দেশীয়রা ইউরোপীয় জ্ঞান ও বিজ্ঞান শিখতে পারে, মিশনারীদের বললেন  খ্রীষ্টের বাণী ছড়িয়ে দিতে। চার্চ মিশনের অন্যান্যদের মতো হেয়ার সাহেবকে সমালোচনা করতে আমার মন চাইল না। আমার মনে হলো তাঁর কথার সারবত্তা আছে। মানুষের চাহিদার সঙ্গে কোথাও যেন সামঞ্জস্য ছিল। ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, ‘মানুষকে ভালোবাসতে হবে, দ্বন্দ্ব ও জড়তা থেকে মুক্তির একমাত্র সোপান হলো যুক্তিবাদকে প্রতিষ্ঠা করা।’ ইউরোপীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের নির্যাস বিদ্যাসাগরের চিন্তা ও চেতনায় ঢেউ খেলে গেল। অক্ষয়কুমার দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র. রামতনু লাহিড়ী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শিবনাথ শাস্ত্রীরা চাইলেন মরা গাঙে বান আসুক, না হলে সমূহ সর্বনাশ। কথায় ও কাজে বুঝলাম সময় এসেছে, এখন শুধুমাত্র ইংরেজদের রীতি রেওয়াজ আর ইচ্ছেগুলো সমাজের উপর চাপিয়ে দিলে চলবে না, একটা বিপরীত ধারা বইতে শুরু করেছে। এঁদের মতো আরও  সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপচারিতায়,সভা সমিতিতে ও ঘরোয়া আড্ডায় নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ত্রুটি বিচ্যুতির কথা জোর গলায় আমি শুনতে লাগলাম। মতের বেমিলের চেয়েও মিলটা আমি খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর কাব্যে জায়গা দিলেন এমন সব চরিত্রকে, যা আম মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। একটা আশঙ্কা যে ছিল না সেটা কেমন করে বলবো। একটা নির্দিষ্ট গণ্ডিতেই সবকিছু যেন ঘোরাফেরা করছে অবলীলাক্রমে। বুঝলাম এমন হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, না হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না, সব নিয়মকানুন এক সময় মুখ থুবড়ে পড়বে। এক পাঠশালার হেডমাস্টার মশাই আমাকে রীতিমত গালমন্দ করেন। আমি তাঁকে বললাম, শুনুন ছাত্রদের মধ্যে যাবতীয় অলসতা যাতে জন্ম না নেয়, সেই দিকে নজর দিতে হবে, উগ্ৰ চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। তিনি স্বীকার করলেন আমার যুক্তির কাছে হার মেনে আবার খানিকটা নিমরাজিও হলেন। আমি মাথা নত করে বললাম, ছাত্ররাই সমাজকে ধরে রাখে, এগিয়ে যাওয়ার দরজাগুলো খুলতে খুলতে যায়। কেবল পাঠ করবে, বিচার করবে না, বিতর্ক করবে না, তার কখনও হয়! বিদ্যাসাগর মশাই আমার ভাবনাচিন্তাকে সাধুবাদ জানালেন। বাঙলা গদ্যের ধারক বাহক তো বটেই, মেয়েদের পড়াশোনার কথা প্রসঙ্গে বলতেন, ‘মেয়েরাই আলো ছড়াবে, নিজেরা আলোকিত না হলে আলো ছড়ানো যায়।’ আমার উপলব্ধিতে তিনি হিউম্যানিস্ট তো বটেই, প্রেম ও মননের আকর্ষন-বিকর্ষণে ব্যাকুল মানুষ। তিনি আমাকে ষোলো বোঝেন ঠিক হয়তো , আমিও কিন্তু তাঁকে ষোলো আনা না হলেও বারো আনা তো বুঝি। এই দেশের কৃষ্টিকে বিশ্বের দরবারে মেলে ধরতে হলে আমার মনে হয়, এই দেশ সম্পর্কে বিদেশিদের ভুলভ্রান্তিকে দূর করা জরুরি। মানুষের অন্তরাত্মাকে চেনাতে হবে, ঘুমিয়ে পড়া মানুষের জাগাতে হবে, তবেই না ভুল ভাঙবে। অভুক্ত হয়ে এইভাবে কী বাঁচা যায়, না বাঁচা সম্ভব। এই পথে আলো না জ্বালালে তো আর চলছে না।

মাঠের কাজ ছেড়ে, পুকুরে জাল না ফেলে, মুটে মজুরের কাজ ফেলে, মাঝি মাল্লারের কাজে না গিয়ে ওরা যে পাঠশালার দিকে ছুটবে, এই কথা কেউ কি কখনও ভেবেছিল! আমার দেশের মাটি আমাকে শিখিয়েছে এই পৃথিবীতে যা কিছু ঘটেছে, ঘটে চলেছে কিংবা ঘটবে, এর কোনোটাই কাকতালীয় নয়, একটা কার্যকারণ সম্পর্ক তো আছে। এই সম্পর্কের গভীরতা না জানলে কোনো কাজই সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা যাবে না, শুধুই পথ হাতড়ে মরতে হবে, নিট ফল হবে শূন্য। ছাপোষা মানুষগুলোর দিকে শহরের বাবুরা, সাহেবসুবোরা যখন ফিরেও তাকায় না, কেউ এসে একবার জানতেও চায় না ওদের বাঁচতে গেলে কী প্রয়োজন কিম্বা ওরা নিজেরাও জানে না, তা কীভাবে পাওয়া সম্ভব, কার কাছে গিয়ে ওরা ওদের মনের কথা বলবে, নতুবা ভেবে নিয়েছে এটাই পিতৃপুরুষের দেওয়া জীবন, একে বয়ে নিয়ে যেতে হবে শেষের দিকে।  একদিন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এক চাষীকে তুমি কি জীবনের অর্থ জান? সে তো হেসেই খুন যেন এমন এক আজব কথা শুনল, যা আগে কখনও শোনে নি, শুনবে বলে আশাও করে নি। ওরা যেমন করে চলাফেরায় অভ্যস্ত হয়েছে তেমন করে চলছে। ওদের ভাব ভঙ্গিমায় চরম এক উদাসীনতা আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি ওদের এই পিছিয়ে থাকা নতুন কোনও প্রশ্নের জন্ম দেয় নি। ওদের বলার কথাগুলো গ্ৰামে গ্ৰামে, রাস্তায় রাস্তায় কেবল পিচ্ছিল নরম মাটির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, হড়কে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রতি পদে পদে। বুঝতে চাইলে তো হলো না, জানা দরকার কোথাকার মাটি ফুঁড়ে কথাগুলো বেরিয়ে আসছে। চাপা পড়ে থেকে কিছু কথা এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় নি তো। আমার অর্জিত বিদ্যার রসে ডুবিয়ে দিলে অর্থটা অন্য কোনো পথ দিয়ে ছুটবে না এরও কী কোনো নিশ্চয়তা আছে?  ধরা ছোঁয়ার বাইরে গেলে ভিন্ন অর্থে যদি বুমেরাং হয়ে ফেরত আসে, তখন কী হবে! মনের অন্দরে চলতে থাকে নানা কাটাকুটি।

ওদের যাওয়া-আসার পথের গরিমা তো বাড়ছে দিনে দিনে।  যে বইগুলো পড়ালেখার জন্য পাঠশালায় পাঠ্য করা হয়েছে, তার সঙ্গে ইতিহাস ভূগোল যোগ হওয়াতে শিক্ষার মান বাড়ে । শহরের ছাত্রদের মনে বিজ্ঞান ভাবনার জোয়ার আসায় ওরা বেজায় খুশি, আশংকার কারণও কম নয়, সব কিছুতেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে বসে, গডের অস্তিত্বের কথা উঠে আসলেও কিন্তু কিন্তু করে।  ওদের কথা বলার ঢঙে আত্মবিশ্বাস ছুঁলে চেহারাটা পাল্টে যায়। মিশনারীদের ধর্ম প্রচারের আসল উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়ে। এই নিয়ে একজন অন্যজনকে আড়ালে দোষারোপও করে, পত্র পত্রিকাতে শিরোনামে আসলে ইংল্যান্ডের ধর্মগুরুদের মনেও অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়।  কত কথাই না আলোচনার বিষয়বস্তু হয়। আলেকজান্ডার ডাভ অখুশি হয়ে বেছে বেছে সভা সমিতিতে পা রাখেন। ব্যাপারটা যে বাংলার শাসকরা ভালো চোখে দেখছেন না,কথাটা চাউর হয়ে যায়। মোক্ষম প্রশ্নটা হলো বিদেশি শাসকরা এই দেশের মানুষদের শিক্ষিত করবেন কেন, এর কোনো সদুত্তর কেউ দিতে পারে না। কেউ আবার বুঝে শুনেও রাজরোষে পড়ার ভয়ে চুপ মেরে থাকে। মোদ্দা কথা হলো আমাদের দেশের বণিকেরা ব্যবসা আর লাভের অঙ্কের জন্যই এই দেশে এসেছিল। কিন্তু দেশ শাসনের ভূত মাথায় চাপলো বলেই না যত গোলমাল।  মুখের কথায় তো চিড়া ভেজে না। তাই বলে  নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখবো তা তো হতে পারে না। কথার বিনিময় করার সময় বুঝলাম ওরা তৃষ্ণার্ত পথিকের মতোই অপেক্ষায় ছিল কখন কেউ আসবে আর ওদের প্রশ্নের সঠিক জবাব দিয়ে যাবে। আমাকে পেয়ে ওরা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। এমন মানুষদের যে হাতের কাছে পেয়ে যাব আমার কল্পনাতেও কী ছিল! জীবন কোন পথে যে কখন বাঁক নিয়ে নেয় আগে থেকে অনুমান করা কঠিন হয়। ভাগ্যিস এই দেশের ভাষাকে আপন করে নিতে পেরেছিলাম, তাই তো গ্ৰামে গঞ্জের কোনায় বসবাস করা লোকগুলো আমার এত কাছের হয়ে গেল, এত ভিন্নতা নিয়ে গড়া মানুষটা ওদের বসার ঘরে আসন পেতে বসলাম। এমন তো কখনও ভাবিনি এই আলো বাতাস ধুলোমাটি জল গায়ে মেখে, এত কথার অংশীদার হয়ে ভিন্ন মানুষ হয়ে যাবো। প্রতিভাস ম্যাগাজিন

(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *