সৌরভ চক্রবর্তী
কোনও এক সন্ধ্যায় ভোল্টেজ কমে যাওয়া ল্যাম্পপোস্টের আলোর নীচ দিয়ে আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম। বলা ভাল, হাঁটছিলাম। কারণ, কলোনি পাড়ার রাস্তাগুলো আমাদের খুব প্রিয়। শুনেছি, এরকমই কোনও রাস্তা দিয়ে ‘শুক্রবারের অলৌকিক পদযাত্রা’ হয়েছিল। শুনেছিলাম মরা সজনে গাছের গন্ধ রাস্তাগুলোর শরীরে লেগে থাকে। শোনার পর থেকে সেই গন্ধের টানে আমরা মাঝে-মাঝেই কলোনি পাড়ার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই। হাঁটতে হাঁটতে গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করি। এছাড়া আরও কারণ আছে; যেমন, কলোনি পাড়ার বাড়িগুলো। অবাক করা এইসব বাড়ি। কোনও বাড়ির উঠোন থেকে গন্ধরাজ ফুলের গন্ধ ভেসে আসে, আবার কোনও বাড়ির ছাঁদ থেকে ভেসে আসে শুকনো শ্যাওলার গন্ধ, কিংবা কাগজি লেবুর ফুলের গন্ধ ঘিরে থাকে কোনও কোনও বাড়ির চৌহদ্দি। বাড়িগুলোও কম অদ্ভুত নয়। টিন ছাওয়া কোনও বাড়ির উপর চাঁদের আলো পড়ে থাকে, তির্যক অন্ধকার লুকিয়ে থাকে উঠোনের কোণাগুলোতে, গুলঞ্চ লতা বেয়ে ইঁদুর দৌড়দৌড়ি করে, সুপুরি গাছের পাতায় লেগে থাকে ল্যাম্পপোস্টের আলো-মাখা অন্ধকার। এইসব গন্ধ, শব্দ আর দৃশ্যের টানে আমরা কলোনি পাড়ার রাস্তা দিয়ে হাঁটি; যখন যেমন সময় পাই— বিশেষত সন্ধ্যায়। প্রতি সন্ধ্যায় আলো উজ্জ্বল থাকে, রাতপাখি ঝোপের আড়ালে ডাকাডাকি করে। তারপর একসময় এই অলস হাঁটাহাঁটি আমাদের ক্লান্ত করলে যখন হাঁটার দরকার ফুরোয়, আমরা ফিরে আসি। সাধারণত এরকমই হয়ে থাকে; কিন্তু এ-দিন ল্যাম্পপোস্টের ম্লান আলোর নীচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা চমকে উঠি কতিপয় শিকারী পেঁচার ডাক শুনে। বুঝতে পারি আজ শেষ-সন্ধ্যায় আমরা আমাদের মৃত বাবাদের দেখা পাব। অদ্ভুত ব্যাপার তাই না? ফলে ভয় হয়, কারণ, এরকম ঘটনা তো আগে কোনও দিন ঘটেনি!
আমরা তিন জন চুপিসারে রাস্তার ধারে এসে দাঁড়াই। একটি পেঁচা তখনও ডেকে চলেছে। মৃত পিতার দেখা পাওয়া বিশেষ ভাগ্যের ব্যাপার। সেই ভাগ্যের অধিকারী আমরা হব, এই ভেবে মনে মনে আনন্দ হয়, সঙ্গে ভয়ও। এবং রাস্তার ধারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যখন বুঝি ধমনির ভেতরে রক্ত প্রবাহের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, তখন আবার হাঁটতে শুরু করি। কিছুক্ষণ হেঁটে পৌঁছোই নিত্যানন্দ অধিকারীর বাড়িতে। ক্ষয়াটে বাড়ি। এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে আমরা নিচু গলায় ডাক দিই। নারকেল গাছের পাতার ছায়া উঠোনে দোলে। একটু পরে সাদা চুলের মাজা ভাঙা বৃদ্ধা দরজা খোলেন। তোমরা আবার এসেছ? বলেন তিনি। তারপর একটু ইতস্তত করে ভেতরে আসতে বলেন। আমরাও দেরি না করে আশ-পাশ মাথা ঘুরিয়ে আবার দেখে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই। তিনি দরজা আটকে দেন। তারপর, আমরা বেরিয়ে আসি প্রায় আধ ঘণ্টা পরে। গাছের পাতার আড়াল দিয়ে তারা দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু মনে হয় কেউ আমাদের উপর নজর রাখছে। আগন্তুকের নিশ্বাসের গন্ধ এই বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে রয়েছে অনুভব করি। আমাদের ভয়-ভয় করে। কিন্তু তা-ও আবার রাস্তায় এসে দাঁড়াই এবং হাঁটতে শুরু করি। পরের গন্তব্য মনে মনে ঠিক হয়ে যায়। আমরা বাঁ-দিকে অপেক্ষাকৃত অন্ধকার রাস্তাটায় নেমে যাই। রাধেশ্যাম বিশ্বাসের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমাদের বিভ্রম জাগে। শুনেছি এককালে মনসামন্দির বিধৌত এই বাড়িতে ভক্তের ভিড় লেগে থাকত। এখন মন্দির ভগ্ন, ওর বাসঘরও ভেঙে পড়েছে। আমরা কি রাধেশ্যামকে খুঁজব? না, খুঁজব না। আমরা এগিয়ে চলি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, ওই পেঁচার ডাক আমাদের কানের মধ্যে বেজে চলে। আমাদের এক বন্ধু এবারে মুখ খোলে; বলে সে, আর কতক্ষণ? সেই সুযোগে আর এক বন্ধু বলে ওঠে, এরকম একটা অসম্ভব বিষয়কে বিশ্বাস করা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। আমি কিছু বলার আগেই আমাদের তৃতীয় গন্তব্য এসে যায়। একটা ছোটখাট একতলা বাড়ি। আমরা কলিং বেল বাজাই। দরজা খোলেন ৫২ বছরের এক ব্যক্তি। হাসিমুখে আমাদের ভেতরে ডেকে নেন। সত্যি বলতে কী, আমাদের খুব চা খেতে ইচ্ছা করছিল। বিশ্বনাথ বাবু বোধহয় তা বুঝেছিলেন। এবং চা পেয়ে আমাদের স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে দেখে তিনি মৃদু হাসলেন। বলো, কী বলছ তোমরা? বললেন তিনি। আমরা আমাদের স্বপ্নের কথা বললাম। তাঁর ভ্রু কুঁচকে গেল। কিন্তু এ যে অসম্ভব! বললেন তিনি। হোক অসম্ভব, বলি আমরা, মাত্র ৫ জন রাজি হলে আজ রাতে আমরা প্রত্যেকে আমাদের বাবার দেখা পাব। যে স্বপ্ন ওঁরা দেখেছিলেন, ওঁদের সঙ্গে দেখা হলে আরও ভাল করে জানতে পাব ওঁদের স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের কথা। বিশ্বনাথ বাবু মাথা চুলকে কী বলবেন ভেবে চলেন। ততক্ষণে আমরা চা খাওয়া শেষ করি। বাইরে মেহগনির কচি পাতায় মোম-মসৃণ সন্ধ্যা লেগে আছে। সেই পাতার তলায় মাটিতে কারো পদশব্দ আমরা টের পাই। পরস্পরের মুখের দিকে তাকাই আমরা। আর বেশিক্ষণ বসা ঠিক হবে না। আমরা উঠে পড়ি। বাইরে বেরিয়ে দেখি কলোনির রাস্তায় সন্ধে ফিকে হয়ে থমথমে রাত্রির দিকে পা বাড়িয়েছে। এই সময়েই তো আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার কথা। অতএব, আর একটু তাড়াতাড়ি পা চালাতে হবে। আমরা এগিয়ে চলি। এখনও দুই বাড়ি বাকি, তারপর ছোট মাঠের পাশ দিয়ে যে সরু রাস্তা চলে গেছে, সেই রাস্তায় আমাদের নেমে যেতে হবে। আমরা মনের মধ্যে ভয় পুষে রেখেও থেমে যাই না। কারা যেন আমাদের দেখছিল, তাদের দৃষ্টির তরঙ্গ আমাদের বুকের কাছে ঘা দেয়। একজন বলে আমাদের মধ্যে, দরকার নেই— ফিরে চল। কিন্তু অন্যজন বলে, না, এভাবে ফিরব না। ফলে আমাকে আর কিছু বলতে হয় না। যা হয় হবে: আমরা আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকি।
একটু পরেই আমরা কালিদাস বিশ্বাসের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াই। বাড়িটার বিশেষত্ব তার ক্যাটকেটে রং— রাত্রির অন্ধকারে সেটা ভুতুড়ে দেখায়। আমরা সন্ধ্যার ভুতুড়ে প্রতিসঙ্গে সে-বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়াই। বলা দরকার, যে সময়ের গল্প বলা হচ্ছে তা একেবারেই আধুনিক সময়। এই আধুনিক সময়ের থেকে দু-দশ বছর আগেও বাড়িতে-বাড়িতে দরজার আধিপত্য ছিল না। এখন আছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা একটু ক্লান্তি বোধ করেছিলাম কি না, আজ আর মনে পড়ে না। কিন্তু আমরা ওদের দৃষ্টির তরঙ্গ ও নজরের কষ উপেক্ষা করেও কালিদাস বিশ্বাসের বাড়িতে ঢুকি। তারপর সেই একই প্রশ্ন ও আমদের সেই একই উত্তর। কিন্তু এবার আমরা একটু ঘুরিয়ে বলি: হয়তো-বা আরও বেশি লোকের রাজি হওয়ার দরকার থাকা উচিত ছিল, কিন্তু মাত্র ৫ জন; তুমি ভাবতে পারছ— মাত্র ৫ জন! কালিদাস কাকু হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকেন। আমরা মুখ ঘুরিয়ে পা-খোঁড়া একটা টিকটিকির শিকার ধরা দেখি, দেখি ওটার নির্লজ্জ মলত্যাগ। কিন্তু একসময় খেয়াল হয়, কালিদাস কাকু আমাদের এখনও কিছু বলেননি। তবে কি আমরা উঠব? বলি আমরা। এসো, বলেন তিনি, তবে লাভ হবে বলে মনে হয় না; — যদিও শুধুমাত্র লাভ হওয়াটাই বড় কথা নয়। তিনি হাসেন।
আমরা বেরিয়ে আসি।
আমাদের এক বন্ধু বলে, আর একজন বাকি। কিন্তু রাধেশ্যাম? ওর কাছে তো যাওয়া হল না! হ্যাঁ, বলি আমি, যেতে হবে তো। আমাদের আর এক বন্ধু গোপনে হাসছিল বলে মনে হয়। না-ও হতে পারে।
যাই হোক, আমাদের পঞ্চম ব্যক্তি সুতপা দিদিমণি। আমরা এর আগে কত বার যে গিয়েছি ওঁর কাছে মহাভারত-এর গল্প শুনতে! শুধু তা-ই নয়, রুশ দেশের সাহিত্যের কথাও ওঁর কাছেই প্রথম শুনেছি। এই কলোনি পাড়ার পুকুরগুলো যেমন সবুজাভ জলে নারকেল গাছের মায়াময় ছায়া ঢেউয়ে দোলায়, তেমনি রুশ দেশের কথা শুনে বড় হয়েছি আমরা। কলোনি পাড়ার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, যাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম আমরা প্রথম বার, তাঁর কাছ থেকে আমরা শুনেছিলাম লাতিন আমেরিকার কথা, আর দরজা খুলেছিলেন যে মাজা ভাঙা নারী, তিনি আমাদের পড়তে দিয়েছিলেন আস্ত আস্ত বোর্হেস। হ্যাঁ, তারপর এক-এক করে বসন্ত কাল চলে গিয়েছে।
আমরা হেঁটে চলেছিলাম। আকাশ থেকে একটি অদৃশ্য তারা আমাদের আলো দিচ্ছিল। যদিও ঘুটঘুটে অন্ধকার, আর এই পথে ল্যাম্পপোস্টের আলোও নেই— পুকুরের পাশ দিয়ে রাস্তা। আচ্ছটি পাতার গন্ধ সেই পথে। জানতাম, পাকা আচ্ছটি ফলের পাগল করা গন্ধ যেখানে পাব, সেখানেই সুতপা দিদিমণির বাড়ি। তিন মাস আগে আমরা শেষ ওঁর বাড়ি গিয়েছি। তিন মাস পরে ঋতু বদলের বাতাস আমাদের গায়ে লাগছিল। বেশ উৎফুল্ল আমরা। হাঁটছিলাম। হঠাৎ আমাদের মধ্যে একজন বলে, এসে গেছি; দাঁড়া।
সুতপা দিদিমণির বাড়িতে আমরা ঢুকি।
আচ্ছটি গাছ এ-পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। আমাদের ছোটবেলায় এই গাছ ছিল। ফুল ফুটত, ফল ধরত, সেই ফল পেকে উঠত। সুতপা দিদিমণির বাড়িতেও বোধহয় নেই, রাস্তার ধারেও না— হয়তো-বা শুধুমাত্র গন্ধের বিভ্রম রয়ে গেছে। সেই বিভ্রমই আপাতত সত্য আমাদের কাছে।
সুতপা দিদিমণিকে বলি আমরা সে-কথা। শুনে তিনি মৃদু হাসেন। শোনো, তোমাদের একটা কথা বলি, বলেন তিনি, ওই যে বাইরে অন্ধকার দেখছ— ওটা সত্য; এই যে ঘরে আলো দেখছ— সত্য এটাও।
আমরা বলি, কিন্তু, যেসব সত্যের-বিভ্রম দেখছি— তাও কি সত্য?
হ্যাঁ। তা-ও। তিনি বলেন।
আমরা সত্যকে বিভ্রম-মুক্ত করতে চাই। বলি আমরা।
সত্যকে প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করতে হয়, অর্থাৎ স্থাপনা; তার জন্য বিভ্রম-যুক্ত সত্যকে পগার পার করে দিতে হয়— বিভ্রম-মুক্ত করা যায় না। যদি করা যায়ও-বা, সে আবার অন্য বিভ্রমের সঙ্গে গলা জড়াজড়ি করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। শেষ অবধি সেও বিভ্রম-যুক্তই হয়ে পড়ে।
আমরা সুতপা দিদিমণির কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করতে থাকি। ফলে কিছুক্ষণ সময় চলে যায়। একসময়, বাবাদের দেখা পাওয়ার ক্ষণ এসে পড়েছে অনুভব করে উঠে পড়ি আমরা। তার আগে অবশ্যই মিষ্টি খেয়েছি।
যাই হোক, তারপর আমরা তুলনামূলক অন্ধকার রাস্তায় এবং আচ্ছটি পাতার গন্ধ-ভরা পথে ফিরে যেতে শুরু করি। কেন যে এই রাস্তায় পৌরসভা আলো লাগায় না! বলি আমরা। অথচ জানি এই অন্ধকার থেকে আলোর রাস্তায় ওঠার মুখেই রাধেশ্যাম বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা হবে। আর, হয়ও তাই।
রাধেশ্যাম বিশ্বাস, ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা, গা-হাত-পা খসখসে, এক সময় চাঁদ সদাগরের মতো বাঁ-হাতে মনসার পুজো করে বিখ্যাত হয়েছিল— এখন দারিদ্রের চরমে পৌঁছে পাগলের মতো বেশভূষা করে ঘুরে বেড়ায়। সেই রাধেশ্যাম এখন আমাদের সামনে।
বাড়ি গিয়েছিলে কেন? জিজ্ঞেস করে সে।
চলো, তোমার ঘরে গিয়ে বলি।
না; যা বলার এখানে বলো।
এখানে বলা যায় না। একটু বসে দুটো কথা বলব।
রাখো তোমাদের কথা; এখানে যদি বলতে পারো বল— নয়তো আমি চললাম।
আমাদের মৃত বাবাদের দেখা পাওয়ার সময় সমাগত। সিদ্ধান্তহীনতা এখানে খুব বড়সড় ভুলের কারণ হতে পারে। তবে মজার ব্যাপার হল, কী হতে চলেছে আমরা অনুমান করতে পারছিলাম। তা সত্ত্বেও, সময় খুব দামী হয়ে উঠল হঠাৎ করে।
বাবাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না আমরা। শ্যামকে বলতে শুরু করলাম আমাদের কথা। বসন্ত এক তীক্ষ্ণ আশ্লেষে আমাদের জড়িয়ে ধরছিল। ফলে আমরা প্রগলভ না হয়ে পারলাম না। কিন্তু অবাক হলাম, যখন দেখলাম, রাধেশ্যাম আমাদের কথা অর্ধেক শুনে আচমকা হো-হো করে হাসতে শুরু করল। কী হল? বললাম আমরা। আর বলা মাত্র ৭/৮ জন আমাদের ঘিরে ধরল।
খুব বাড় বেড়েছিস।
আমরা তাকিয়ে রইলাম।
নিয়ে চল; জুতিয়ে লম্বা করে দেব।
আমরা হাসলাম।
পেটের থেকে নাড়িভুড়ি বের করে কুকুর দিয়ে খাওয়াব।
আমাদের জুলপি বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ল।
হঠাৎ লোডশেডিং হয়েছিল সেই মুহূর্তে। কিন্তু আমরা পালানোর চেষ্টা করিনি—শুনেছি, স্বপ্ন দেখতে শিখলে পালিয়ে যাওয়া সাজে না।