সৌরভ চক্রবর্তী

ঝড় বৃষ্টির রাত, কিন্তু পূর্ণিমা। মেঘের তলায় চাঁদ ঢাকা পড়েছে যদিও, কিন্তু পথঘাট দিব্যি দেখা যায়। এ জন্মে তো নয়ই, গত জন্মেও এরকম কোনো রাতে পথে বেরিয়ে ছিল কি না, মনে পড়ে না ওর। অর্থাৎ, এরকমই বৃষ্টির রাত, কিন্তু নিকষ অন্ধকার নয়।

এরকরম রাত সচরাচর আসে না। 

পকেটে টর্চ থাকা সত্ত্বেও ওকে টর্চ জ্বালতে হচ্ছিল না। কিন্তু সরকারদের পুকুরপাড় বরাবর বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে যে রাস্তা, সে রাস্তা বেশ অন্ধকার। টর্চ জ্বালানোর প্রয়োজন পড়তেও পারে, সে জানত। 

আজও যাবে নিতাই ময়রার বাড়ি। সেইমতো শর্টকাট রাস্তা বেছে নেয়াও আছে। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে সে রাত্রিটার দিকে না তাকিয়ে পারল না। টিপটিপ বৃষ্টিতে অন্ধকার ধুয়ে যাচ্ছে, গাছপালার পাতায় চাঁদের আড়াল। ঝাপসা, গা শিরশিরে অন্ধকার। 

তখনই ওর মনে পড়ে, ওস্তাদের সেই কথা। 

ওর তখন ১৩ বছর বয়স। ঘরের এক কোণে মাদুরের ওপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল জানে না। শনশন করে বাতাস বইছিল বাইরে, সেই শব্দ শুনতে শুনতে কখন শব্দ থেমে গেল জানে না তাও। হঠাৎই, মাঝ রাতই হবে হয়তো, জাগিয়ে তোলা হল ওকে। যে জাগিয়ে তুলল, তাকে ও মামা বলে ডাকত।

বলল লোকটি, আমার সঙ্গে যাবি? 

ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ও বলল, কোথায়? 

চুরি করতে। লোকটি বলল। 

সে কোনো উত্তর দিল না। 

লোকটি বলল, যদি যাস, তবে আর আমাকে মামা নয়, ওস্তাদ বলে ডাকবি। 

সে-ই শুরু। 

সেই রাত্রি কেমন ছিল ওর মনে নেই, কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে ও রাত্রির দিকে তাকাচ্ছিল। তখনই কথাটা বলেছিল, মামা থেকে সদ্য ওস্তাদ হয়ে ওঠা লোকটি— 

চুরি করতে বেরিয়ে কখনো রাত্রির দিকে তাকাবি না। রাত্রি দেখে কবিরা, চোরদের রাত্রি দেখা বারণ। 

তারপর থেকে সে আর রাত্রির দিকে তাকায়নি, চুরি করতে বেরিয়ে, কী না বেরিয়ে— তাকায়নি কোনোদিন। 

আজ বৃষ্টির এই বিমল রাত, তবুও রাত্রির দিকে তাকানো যাবে না— জানত সে। তাকাচ্ছিলও না; কারণ, সে-অভ্যাস হারিয়েছে বহুদিন। 

দেখতে দেখতে সরকারদের পুকুরপাড়ের রাস্তায় এসে গেল। শনশনে হাওয়া, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, আর বাঁশ বনের অন্ধকার। পুকুরের ধার দিয়ে রাস্তাটা সোজা চলে গেছে দক্ষিণ পাড়ার দিকে। 

সে এগোতে থাকে। 

আজ নিয়ে পাঁচ দিন সে এই একই পথে যাচ্ছে। মনে মনে ঠিক করে সে, আজই শেষ— তাতে সফল হোক, আর না হোক। 

ধরা যাক, ছেলেটির নাম নিধু বিশ্বাস আর দক্ষিণপাড়ায় যে বাড়িতে সে চুরি করতে যাচ্ছে, সেই বাড়ির মালিকের নাম নিতাই ময়রা। 

নিধুর ওস্তাদ যেদিন মারা যায়, তার পাঁচ দিন আগে সে ওকে একটা বাক্স দিয়েছিল। ছোট্ট— গয়নার বাক্সের মতো দেখতে। 

কী এটা? নিধু জানতে চায়। 

এখন থেকে এটা তোর কাছে রাখ; সময় মতো সব বুঝিয়ে দেব। বলে ওস্তাদ। 

নিধু সেই মতো বাক্সটা যত্ন করে তুলে রাখে। 

৫ দিনের মাথায় নিধু লক্ষ করে, ওস্তাদ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। 

কষ্ট হচ্ছে ওস্তাদ? কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে চায় সে। 

কিন্তু ওস্তাদ কোনো ক্রমে বলে, বাক্সের ভিতরে দেখবি… … 

তারপর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ হয়ে যায়। 

নিধু ভয় পায়। ওস্তাদ, ওস্তাদ বলে কয়েকবার ডাকে। তারপর বুকের কাছে মুখ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে যায় যখন, আচমকা ওস্তাদ ডান হাত তুলে তার মাথায় ছোঁয়ায়। নিধু ভয়ে গেঙিয়ে ওঠে। তারপরে বোঝে: ওস্তাদের হাতখানা নিধুর মাথা থেকে খসে পড়েছে— সে হাতে আর কোনো প্রাণ অবশিষ্ট নেই। 

কয়েকদিন কেটে যায়। একদিন হঠাৎই মনে পড়ে ওর, ওস্তাদ বলেছিল, বাক্সের ভেতরে দেখবি… … 

কিন্তু কথাটা শেষ করতে পারেনি।

কী বলতে চেয়েছিল তারপর? নিধু ভেবে পায় না। 

সে রোজই, যখন সময় পায় বাক্সটা খুলে ভেতরে তাকিয়ে থাকে। কোনোদিন কিছু দেখতে পায় না। 

ধীরে ধীরে বাক্সটার কথা ভুলে যায় সে। 

তারপর বর্ষাকাল চলে যায়, চলে যায় শরৎ— এমন-কী, হেমন্তও। 

পৌষের দ্বিতীয় বুধবার নিধু স্বপ্ন দেখে। দেখে: ওই বাক্সের মধ্যে দুই চোখ গুঁজে দিয়ে সে দেখছে তার ওস্তাদকে। কিন্তু, কী অদ্ভুত— ওস্তাদের মেঘের শরীর, মুখও মেঘের। 

চমকে উঠে তার ঘুম ভেঙে যায়। 

অথচ নিধু ভয় পায় না। সে বাক্সটা বের করে শক্ত হাতে ঢাকনা খুলে, তারপর চোখ রাখে ভেতরে। কয়েক সেকেন্ড শুধু অন্ধকার। হঠাৎ একটা আলোর বিন্দু। কেউ একজন হেঁটে চলেছে গোলপুকুরের রাস্তা ধরে। 

নিধু ভালো করে দেখে: আরে— এ তো সে নিজেই! চতুর্দিকে খেয়াল রেখে হেঁটে চলেছে সে সন্তর্পণে। শীতের রাত; গায়ে চাদর জড়ানো। 

গোলপুকুর পার করে সান্যাল বাড়ি। সে এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচিলের গেটের সামনে। ভালো করে এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে, তারপর গেটের তালা অনামিকা আর বুড়ো আঙুল দিয়ে টান দিতে খুলে যায়।

নিধু গেট খোলে— ঠিক যে ভাবে ওস্তাদ খুলত।

তখন ওর বুঝতে বাকি থাকে না কিছু। 

কতবার জিজ্ঞেস করেছে সে ওস্তাদকে, কীভাবে তুমি আঙুল ছুঁয়িয়েই তালা খুলে ফেলো?

মন্ত্র বলে, বলেছে ওস্তাদ। 

আমাকে শেখাবে ওস্তাদ? 

সময় হলে শেখাব।

তারপর আবার কিছুদিন পরেই জানতে চেয়েছে, কবে শেখাবে ওস্তাদ? 

ওস্তাদ মৃদু হেসেছে। 

নিধুর অভিমান হয়েছে। কিন্তু মুখে কিছু বলেনি। ওস্তাদকে বুঝতেও দেয়নি। 

তাই বাক্সের মধ্যে চোখ রেখে সব দেখার পরে পৌষ মাসের দ্বিতীয় বুধবার নিধু আর কান্না চেপে রাখতে পারেনি। 

অতএব, একটু ধাতস্থ হয়ে, আর দেরি না করে, সেই রাতেই বেরিয়ে পড়েছিল  নিধু। সান্যাল বাড়ি ঢুকে চুরি করে এনেছিল, একটা বসার চেয়ার। 

কেন? সামান্য একটা বসার চেয়ার কেন? 

ইচ্ছা করলেই সে চুরি করতে পারত কুড়ি হাজার টাকা কিংবা সোনার গয়না কিংবা নিদের পক্ষে চেয়ারের থেকে মূল্যবান অন্য কোনো জিনিস। কিন্তু না। নিধু সেসব নেয়নি। 

ওস্তাদ বলত, যেটা দরকার শুধু সেটাই চুরি করবি, অন্য কিছুর প্রলোভনে পড়বি না। 

পৌষের দ্বিতীয় বুধবার একটু শীত পড়েছিল বেশি। পিঁড়ি পেতে রোদে বসতে বসতে নিধুর মনে হয়েছিল, একটা চেয়ার থাকলে আরাম করে বসা যেত। 

তাই শুধুমাত্র সামান্য চেয়ার। 

কিন্তু শীত চলে গেলে, বসন্তকাল ভর নিধু বাক্সে চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পেল না। 

বৈশাখের প্রথম শনিবার আবার দৃশ্য উঠল ভেসে। সে আবার বের হল চুরি করতে। ঘরের চাল নামাতে হবে, কিছু টাকা লাগবে। ওই, হাজার সাতেক। ভেবেছিল শুধু নয়, চালের মিস্ত্রি এনে দেখিয়েও ছিল। হাজার খানেক হাতে আছে। অতএব, দরকার আরও ছয়। 

নিধু সেদিন,  বৈশাখের প্রথম শনিবার পুব পাড়ার জগন্নাথ মণ্ডলের বাড়ি থেকে চুরি করে এনেছিল ওই ৬০০০ টাকা। 

কিন্তু ঘটনাটা ঘটল বৈশাখেরই তৃতীয় শুক্রবার। সেদিন সন্ধ্যায় নিধুর একটু মদ খেতে ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু পকেট এক্কেবারে ফাঁকা। ওদিকে, রবিন বেশ কিছু টাকা পায়। আর বাকি দেবে না। অগত্যা, বিড়ি টানা ছাড়া, অন্য কোনো উপায় ছিল না তার। 

সেই রাতে আবার-ও দৃশ্য জন্ম নিল।

সেদিন রঞ্জিৎ দারোগার বাড়ি। 

যদিও নিধু জানত না, আজ কী নেবে— মদ, না মদ কেনার টাকা। 

কোণের ঘরে দেখল, টেবিলে আধ বোতল ইংলিশ মদ। বুঝল নিধু, ওটাই নিতে হবে তাকে। তুলেও নিল। কিন্তু তাতেই থামল না সে। ড্রয়ার খুলে দেখল, একটা টাকার বান্ডিল। ভাবল, রবিন যে টাকা পায়, সেটাও নেওয়া যাক। সে বান্ডিল থেকে গুনে গুনে টাকা ক’টা নিল প্রথমে, তারপর ভাবল কিছুক্ষণ। এদিক-ওদিক তাকাল। তারপর, পুরো বান্ডিলটাই পকেটে ভরে নিল। 

কিন্তু, সারারাত ঘুমোতে পারল না সে। ওস্তাদের আদেশ অমান্য করেছে যে! আর কি কোনো দিন দৃশ্য ভেসে উঠবে চোখে? 

কিন্তু অদ্ভুত এই জগৎ। পরের রাতেই ফের দৃশ্য জন্ম নিল। দু’চোখ ভরে দেখল নিধু। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।

তারপর তিন বছর কেটে গেছে। 

মেঘলা রাতের জ্যোৎস্নায় হাঁটতে হাঁটতে নিধু ফুলের গন্ধ পেল। 

ঠিক চার দিন আগে বাক্সের মধ্যে চোখ রেখে যা দেখেছিল, সেই মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে বেরিয়ে পড়েছিল নিধু। সরকারদের পুকুরপাড় বরাবর হেঁটে পৌঁছে গিয়েছিল, নিতাই ময়রার বাড়ি। ভেতর থেকে বন্ধ দরজা খোলার যে কৌশল সে ব্যবহার করে প্রতিটি বাড়িতে, এখানেও তা প্রয়োগ করতে গিয়ে দেখল, দরজা খোলা। 

সে-বার মুসলিম পাড়ায় গিয়েছিল চুরি করতে। ঝড়-বৃষ্টির রাত ছিল না সম্ভবত। কিন্তু, মনে আছে নিধুর, সেই বাড়িতেও দরজা ভেজানো ছিল, ভেতর থেকে বন্ধ ছিল না। 

ওস্তাদ বলেছিল, ফিরে চল। 

কেন?

ভেতর থেকে দরজা বন্ধ নেই। 

তাতে তো আরও সুবিধা… 

দরজা খোলা থাকলে সে বাড়িতে চুরি করতে নেই। তুইও কোনো দিন করবি না। ওস্তাদ বলেছিল। 

অতএব নিতাই ময়রার, ভেতর থেকে বন্ধ না-করা দরজা, না খুলেই ফিরে আসে নিধু। 

কিন্তু, আরেকটি কাজ করে সে। 

সে-বার মুসলিম পাড়া থেকে চুরি না করে ফিরে এসেছিল যেদিন, তার পরদিন ওস্তাদকে বলেছিল, কাল তো হলো না, আজ আর যাবে না? 

ওস্তাদ বলেছিল, না। 

কিন্তু কেন যাবে না সেকথা বলেনি। নিধুও জিজ্ঞেস করেনি। 

অথচ, নিতাই ময়রার বাড়িতে পরদিনও সে গিয়েছিল। দরজা খোলা ছিল সেদিনও। এইভাবে, পরপর চার দিন দরজা খোলা বলে ফিরে এসেছে। আজ পঞ্চম দিন।

নিধু সরকারদের পুকুরপাড় পার করল। বিনয় অধিকারীর উঠোন দিয়ে শর্টে মারতে হবে। যাচ্ছিল ঠিকঠাক। হঠাৎ মনে হল, পেছনে কেউ আসছে। উঠোনের একদিকে কাঠের গাদা। নিধু কাঠের গাদার আড়ালে সরে গেল। হ্যাঁ, ঠিকই বুঝেছে— একজন হেঁটে আসছে। 

লোকটি যখন কাছাকাছি এসে গেছে, নিধু অবাক হয়ে দেখল, যেন তারই মতো। একই রকম পোশাক, একই ছাতা মাথায়। কিন্তু মুখ দেখতে পেল না। নিধুর গা শিরশির করে উঠল। লোকটি বিনয় অধিকারীর উঠোন পেরিয়ে রাস্তায় উঠল যখন, নিধু নিঃশব্দে পিছু নিল তার। লোকটি একবারও পেছনে ফিরে দেখছিল না। 

নিভু নিভু রাত্রির এই লুকোচুরি তার কেমন লাগছিল, বলা শক্ত। কিন্তু বিপন্ন বিশ্বাস শক্ত হচ্ছিল ক্রমশ যে, সে ধরা পড়বে না। এবং অবাক করা বিষয়, আগন্তুকও শেষমেষ নিতাই ময়রার বাড়ির দরজার সামনেই এসে দাঁড়াল।

নিধুও এগিয়ে এল সন্তর্পণে।

আগন্তুক যখন দরজা খোলার জন্য হাত বাড়িয়েছে, এগিয়ে এসে তাকে বাধা দিল নিধু। 

দাঁড়া, এ-বাড়ি আমার টার্গেট। 

আগন্তুক পেছন ফিরে তাকাল না। সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। 

একই পোশাক দু’জনের, একই ছাতা দু’জনের হাতে। নিধু ভেবে পাচ্ছিল না, এটা কীভাবে সম্ভব! 

অথচ, আবার বলল সে, তুই চলে যা। এটা আমার টার্গেট। 

আগন্তুক দরজা থেকে সরে গেল। তারপর হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। 

তখন বিদ্যুৎ চমকাল না, এমনকি বৃষ্টিও বেগ বাড়াল না। নিধু বুঝল: আগন্তুক আসলে অন্য কেউ নয়; দরজা খোলা থাকা সত্ত্বেও ঘরে ঢোকার নির্দেশ বয়ে আনা তারই প্রতিরূপ। 

অতএব, অবলীলায় ভেতরে ঢুকে পড়ল নিধু। 

বারান্দা সংলগ্ন ঘরটিতে দেওয়ালে পোঁতা একটা পেরেকে সোনার একটা চেইন ঝুলিয়ে রেখে তুলতে ভুলে গিয়েছে কেউ। সেটাই নিধু চুরি করার নির্দেশ পেয়েছিল দৃশ্য মারফত। 

সে সরাসরি সেদিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু, হারটা সেখানে ছিল না। 

ভাবল নিধু, ওস্তাদের নির্দেশ অমান্য করে প্রথম দিনই যদি ঢুকে পড়ত, হারটা এভাবে হাতছাড়া হত না। নিষ্ফল আফশোসে সে ভেতরে ভেতরে রেগে উঠল।

তখন বারান্দা সংলগ্ন ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল, পাশের ঘরটাও খোলা। না, কেউ কোথাও নেই। 

সে ঢুকে পড়ল ওই ঘরে। সেখানেও মহার্ঘ কিছু পেল না। ফলে, নিষ্ফল ক্রোধ বেড়ে গেল আরও। 

সিদ্ধান্ত নিল নিধু, পাশের ঘরটাতেও ঢুকবে এবং অচিরেই বুঝল, পাশের ঘরটাও ফাঁকা। তার মানে, এ বাড়িতে নিচের তলায় কেউ থাকে না। 

কিন্তু হঠাৎ একটা আওয়াজ ভেসে এল উপরতলা থেকে। ভালো করে শুনল নিধু, হ্যাঁ, কারো গলার স্বর। হ্যাঁ, মানুষের কথার আওয়াজ। 

আর দেরি নয়, ভাবল সে। এক্ষুনি সদর দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে হবে। 

কিন্তু এ কী! সদর দরজা বন্ধ হয়ে গেল কী করে! 

নিধু দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দরজাখানা টানাটানি করতে লাগল, কিন্তু খুলতে পারল না দরজা। 

তখন পাগলের মতো ছুটে এসে ঘরগুলোতে দেখল খাট বা আলমারি এমন কিছুই নেই, যার আড়ালে একটু লুকোতে পারে। 

কী ভুল আমি করেছি— ভাবতে ভাবতে ওর কান মাথা গরম হয়ে উঠল, যেন ফেটে চৌচির হয়ে যাবে এখনই। 

তখনই সিঁড়ির আলো জ্বলে উঠল। 

আর ভাবতে পারছিল না নিধু। নিজের প্রাণ গুটিয়ে ছোট্ট করে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে নিজেকে লুকিয়ে বসল।

বুঝতে পারল, আরও আলো জ্বলে উঠছে। 

বুঝতে পারল, কয়েকজন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। 

বুঝতে পারল, পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে ক্রমশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *