সৌমিতা রায় চৌধুরী

পর্ব – ৩

চার্লি চ্যাপলিনের কর্মজীবনের স্থায়িত্ব পচাত্তর বছর। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিশেষ রকমের পরিবর্তন ঘটেছিল। নির্বাক থেকে সবাক, সবধরনের চলচ্চিত্র এইসময়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিমাণ ছিল প্রায় বিরানব্বইটি। কৌতুকের মধ্যে দিয়ে তৎকালীন সময়কে তাঁর তৈরি চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করেছেন। 

চ্যাপলিন কি স্টোন স্টুডিওতে ছত্রিশটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রগুলোর প্রযোজনা করেন মার্ক সিনেট। ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাক চলচ্চিত্র ‘মেকিং আ লিভিং’-এ চ্যাপলিন ছাড়াও অভিনয় করেন হেনরি লেহম্যান, ভার্জিনিয়া কার্টলি, চেস্টার কঙ্কলিন এবং মিন্টা ডার্ফি। এই ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন এনরিক হুয়ান ভাইজো এবং ফ্র্যাংক ডি উইলিয়াম। এই ছবিটির মূল বিষয়বস্তু মানুষের জীবনের ভালোভাবে বাঁচা এবং সেই বাঁচতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে নানান চারিত্রিক উত্থান পতনের কাহিনী। 

ছবির শুরুতে দেখা যায় চ্যাপলিন এক যুবতীকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছেন। লেহম্যান চরিত্রটি ওই একই যুবতীকে ফুল ও আংটি দিতে চাইলে, সে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং জানায় তার অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক আছে। ঘটনাচক্রে চ্যাপলিন সেইখানে উপস্থিত হলে তাদের মধ্যে স্ন্যাপস্টিক যুদ্ধ হয়। পরবর্তী সময়ে লেহম্যান চরিত্রটি একটি গাড়ি দুর্ঘটনার ছবি তোলে এবং মোটর চালককে সাহায্য করার সময়ে চ্যাপলিন তার ক্যামেরা চুরি করে নেন এবং সংবাদপত্রের অফিসে গিয়ে তা নিজের বলে ছাপিয়ে দেন। পরে তাদের মধ্যে আবার মারপিট শুরু হয়ে যায়। 

এইসময় তাঁর নির্বাক ছবিগুলি পরপর প্রকাশ হতে থাকে। ‘মেকিং আ লিভিং’ ছবিটি প্রকাশ হওয়ার দিন কয়েক পরেই প্রকাশিত হয় ‘কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস’। মুখ্য ভূমিকায় চার্লি চ্যাপলিন ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেন হেনরি লেহম্যান, ফ্র্যাংক ডি উইলিয়াম এবং গর্ডন গ্রীফিত। ছয় মিনিট দীর্ঘ এই ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন এনরিক হুয়ান ভাইজো এবং ফ্র্যাংক ডি উইলিয়াম। 

এই ছবির মূখ্য বিষয়বস্তু হল, কিশোরদের একটি গাড়ি প্রতিযোগিতা। দ্য ট্রাম্প এই প্রতিযোগিতার একজন দর্শক। কিন্তু তিনি প্রতিযোগিতার চিত্রগ্রহণে সমস্যার সৃষ্টি করছেন, শুধুমাত্র ক্যামেরার সামনে চলে এসে। এতে দর্শক এবং প্রতিযোগীরা উভয়েই বিরক্ত হচ্ছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই চলচ্চিত্রে ট্রাম্প চরিত্রটিকে প্রথম দর্শকদের সামনে উপস্থিত করা হয়। 

চার্লি চ্যাপলিনের অন্যান্য সিনেমা গুলির মধ্যে ‘দ্য গোল্ড রাশ’, ‘দ্য সার্কাস’, ‘সিটি লাইট’, দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ ইত্যাদি সিনেমা অত্যন্ত জনপ্রিয়। সমসাময়িক সময়ে জীবনধারা এবং মানুষের মানষিক বোধকে চিত্রায়িত করেছে চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমা। ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমার মধ্যে দিয়ে বাস্তব জীবনকে অভিনয় দক্ষতায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন এই শিল্পী। 

(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *