সুতপন চট্টোপাধ্যায়

    আফজল ও হরিপ্রসাদ 

  

সেদিন প্রবল বৃষ্টিতে  দিল্লির চারিদিক জলে জলময়। অনেকক্ষণ অঝোরে বৃষ্টি, এমন বৃষ্টি দিল্লিতে বহু বছর বাদে । আমার তো মনেই নেই এমন জলধারা কবে শেষ দেখেছি। পরিবেশ পরিবর্তনে বদলে গেছে এই শহর।  যখন এসেছিলাম তখন এই শহর ছিল শান্ত, গাছপালায় ঢাকা, রাস্তাঘাটে বাসের রেষারেষি নেই। মানুষ রাস্তার পাশে বাস স্টপের শেডের নিচে বসে থাকে, রাস্তার উপরে জটলা করে না।  দেখেছি বাসের  কন্ডাক্টারের  কোন তাড়া নেই । বয়স্ক মানুষেরা বাসে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারত। চওড়া রাস্তা দুপাশে বিভক্ত, ফলে ধাক্কা লাগার কোন সম্ভবনা নেই। তা বলে কি দুর্ঘটনা ঘটতো না? ঘটতো। সামনাসামনি নয়। আগে-পিছে।  যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে। 

এক অদৃশ্য গতি ছিল এই শহরের। কাজ আর  কাজ। কাজ ছাড়া অন্য কোন সংস্কৃতি  এই শহরটাকে গিলে ফেলেনি। ফলে কাজের টানে চার পাশের রাজ্য হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব থেকে মানুষ  এসে হাজির হল এই শান্ত শহরটিতে। আমরাও এসেছিলাম বাংলার সবুজ রাজ্য থেকে ধুলিধূসর এই শহরে। এই কুড়ি বছরে সে আঁচল বিছিয়ে অনেক মানুষকে জায়গা দিতে অনেক বিস্তৃত হয়েছে, কলেবরে বেড়েছে, হাত-পা ছড়িয়ে সে এখন আপাদমস্তক বৈভবে মোড়া এক শহর।  শহরের এক কোণে   বসন্তবিহারের এক রেস্তরাঁয় ঢুকেছি।  প্রথমেই একটা মুখ দেখে চমকে উঠেছি।   মুখটা চেনা কিন্তু কিছুতেই নাম মনে করতে পারছি না। ডিমেনশিয়া নাকি? নাম না জানলে কাউকে এই শহরে “এই  যে শুনছেন”  বলে সম্বোধন করা যায়?  সে  আপনার দিকে তেড়ে আসবে। শুধু  নাম নয়। নামের পাশে জী  জুড়তে হবে। আমি প্রাণপণে তার নাম মনে করার চেষ্টায় সমস্ত স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছি, ঠিক এমন সময় সেই সম্ভ্রান্ত মানুষ কাছে এসে বলল,

–চিনতে পারছেন?

আমি তখন দ্বন্দের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে বললাম,

–চিনতে পারছি, কিন্তু নাম মনে  নেই। কিছুতেই মনে করতে পারছি না। ভেরি সরি।  

–আমি হরিপ্রসাদ। আপনার সঙ্গে কাশ্মীর যাবার ট্রেনে আলাপ হয়েছিল। মনে পড়ছে? আপনি দিল্লি স্টেশন থেকে জম্মু যেতে যেতে আমার সঙ্গে দেখা?মনে আছে? 

আমার কিছুই মনে পড়ল না। হরিপ্রসাদ বলে আমি কোনকালে কাউকে চিনতাম বলে জানি না। দিল্লিতে বা কলকাতায় এই নামে পরিচিত কেউ নেই।

আমি ভদ্রতার হাসি হেসে বললাম,

–হরিপ্রসাদ? ও, সে তো প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা? 

সে একগাল হেসে বলল,

–রাইট্জী। আপনার সঙ্গে এতোদিন পরে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি।  

 ২)

বিয়ের পর আমরা একটি সাহসী মধুচন্দ্রিমা ঠিক করেছিলাম। যেতে হলে কাশ্মীর যাব। আমি কোনদিন ওদিকে মাড়াই নি।  আমার স্ত্রী খুব ছোটবেলায় বাবা আর মার সঙ্গে গিয়েছিল। তার কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে বরফ গোলা করে বোনের দিকে ছুঁড়েছিল। সেই স্মৃতি তাকে পরিণত বয়সে টেনে নিয়ে যাবে কাশ্মীর। বিয়ের চেয়েও এই ভ্রমণের উত্তেজনা ছিল টানটান। আমাদের সঙ্গে আমার শশুরমশাই,শাশুড়ি ও শালী  যাবে জম্মু । তারপর তারা যাবে অন্য পথে।  আমাদের মধুচন্দ্রিমা শুরু, তাদের বার্ধক্য ভ্রমণ। বাঙ্কের চাকরি। উনি  বছরে ভ্রমণভাতা পান। জম্মু পর্যন্ত আমাদের এক সঙ্গে  টিকিট। জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস। হাওড়া থেকে আমাদের সোজা টেনে নিয়ে যাবে পশ্চিম থেকে সোজা উত্তরের শেষ রাজ্যে।   

টিকিট যেদিন এলো সেইদিন থেকে উৎসবের মেজাজ। কলকাতা  কেমন  মৃয়মান, ভিজে সপসপে লাগল। যেন জীবনে কাশ্মীর যাওয়াটাই আসল, বিয়েটা প্রায় নস্যির পদবাচ্য। সেদিন  আমার শশুরমশাই বারান্দায় পায়চারি করতে করতে বললেন,

–ভূস্বর্গ  জীবনে দেখতে পাবার সুযোগ জীবনে একটা মাইলস্টোন। ক’জনের ভাগ্যে বারবার ঘটে? আমার মাইয়া ভাগ্যিস বিয়া করল!  

আমার শশুরমশাইয়ের একটা দারুণ গুণ ছিল। কোথাও যাবার আগে তিনি সেই  জায়গার ইতিহাস, ভূগোল, জলবায়ু প্রায় মুখস্ত করে ফেলতেন। আর সেখানে গিয়েই যে লোক্যাল গাইড থাকে, তাদের কথা ভুল হলেই পদে পদে শুধরে দিতেন। সেটাই তাঁর ছিল বেড়ানোর অধিক অনেক বেশি আনন্দ। তাই মেয়ের বিয়েটা মেয়ের মা ও তার দুই ভাইদের হাতের সঁপে দিয়ে কাশ্মীর নিয়ে বসে  গেলেন।  

তা হল কী?  

আধ ঘন্টা আগে ট্রেন প্লাটফর্মে দেবে, ঠিক সময়েই ছাড়বে। আমরা সময় নিয়ে  হাওড়া রওনা হলাম। স্টেশনের মুখে হাওড়া ব্রীজের উপর সেদিন প্রবল জ্যাম। বিগ্রেডে মিছিল। আমাদের গাড়িটা আগেই পেরিয়ে গেছে। আমরা আমাদের কামরা দেখে উঠে পড়েছি। জিনিস যথাস্থানে রেখেছি। আমার স্ত্রী বলল,

–বাবুরা তো এখনও এলো না? তুমি বাইরে গেটের সামনে দাঁড়াও। তুমি প্রায় ছয় ফুট লম্বা। বাবুরা তোমাকে ঠিক দেখতে পাবে।

আমি সেই মত প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে। লোকে লোকারণ্য। সময় এগিয়ে আসছে। কোথাও শশুরমশাইদের দেখা যাচ্ছে না। আমার স্ত্রী  নিশ্চিত, তারা আমাকে ঠিক দেখতে পাবে, কারণ তারা সবাই আমার থেকে অনেক বেঁটে।  সে সিটে বসে আছে। মাঝে মাঝে বাইরের দিকে তাকাচ্ছে। বগিটা ট্রেনের মাঝামাঝি। আমার উপর দিয়ে দুনিয়ার লোক ধাক্কা দিয়ে, ঠেলে, গোঁত্তা মেরে ট্রেনে উঠবে। যতো না প্যাসেঞ্জার তার চেয়ে দ্বিগুণ বিদায় জানাতে এসেছে । আমি তখনও আশা করছি তারা আমকে দেখতে পেলেই চিৎকার করে বলব, সামনের যে কোন  কামরায় উঠে পড়। সময় আর মাত্র এক মিনিট।  এই প্রবল গন্ডোগলের মধ্যে একসময় ট্রেনটা চলতে আরম্ভ করল। আমি সামনের সী-অফ পাবলিক সরিয়ে আর কামরার হাতলটা ধরতে পারলাম না। ততক্ষণে গতি নিয়ে ফেলেছে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস। আমি হতভম্ব  হয়ে দাঁড়িয়ে আছি প্লাটফর্মে। দর দর করে ঘামে সারা শরীর ভিজে গেছে। আস্তে আস্তে প্লাটফর্মের সব লোক চলে গেলে আমি অবাক হয়ে দেখলাম শশুরমশাইদের কোন হদিস নেই। তখন মনে হল, হয় তারা শেষ অব্দি পৌঁছতে পারে নি, না হয় সামনের কোন কামরায় উঠে পড়েছে। আর আমি পড়ে আছি একা। 

 ৩)

ভেস্টিবিউল ট্রেন। শেষের  দিকের কামরা থেকে  নিজেদের সিটে তারা পৌঁছে দেখে অঝোরে কাঁদছে আমার স্ত্রী। সে চেন টানতে গিয়েছিল। এক মারোয়াড়ি মহিলা তাকে চেন টানতে দেয় নি। সেই নিয়ে প্রবল ঝগড়া, প্রায় মারামারি করেছে। কেউ তাকে সাহায্য করতে আসে নি। আমি ট্রেনে উঠিনি। সে একা। বাবা, বোন,মা কেউ নেই। অসহায় হয়ে বসে ছিল। বর্ধমান পেরিয়ে আমার শশুরমশাই তাঁর নববিবাহিতা মেয়েকে দেখে চিৎকার করে উঠেছিলেন,

–কৈসিলাম না? দেখা নিসচয় হইবে? তা জামাই কোথায়?

আমার স্থী বলেছিল,

–ও তো তোমাদের দেখতে প্লাটফর্মে  দাঁড়িয়েছিল। সে তো উঠতে পারেনি বোধহয়। তাকে আমি অনেকক্ষণ দেখছি না।    

কিছুটা বিস্মিত, কিছুটা বিমূঢ হবার পর তিনি ধাতস্ত হলে পাশের একটি লোক  বললেন,

–আপনারা ধানবাদে নেমে যান। ওখানেই প্রথম স্টপ। ফিরে যান  কলকাতা।  

অনেক গভীরভাবে ভেবেছিলেন তিনি। তাঁর পর ঘোষণা করেছিলেন,

–না, নামব না। সোজা জম্মু গিয়া নামমু। জানি, জামাই ঠিক পরের দিন এই ট্রেন ধইরা ঝুলতে ঝুলতে জম্মু পৌঁছাইয়া যাইবা।

আমার শশুড়ি ধমক দিয়ে বলেছিল,

–তোমার মাথা খারাপ? এতো রাস্তা ঝুলে ঝুলে যাওয়া যায়? পাগল নাকি?

আমার শশুরমশায় বিজ্ঞের হাসি হেসে বলেছিলেন,

–ঠিক যাইবে। এ তো আর আমাগো কালের বিয়া নয়। প্রেম কইরা বিয়া।

বলে বাকিটা গিলে নিয়েছিলেন।

তখন কল্যাণ মজুমদার কলকাতা এয়ারলাইনসের অফিসে আঞ্চলিক প্রধান। আমার পরিচিত। কাঁধে ব্যাগ, পায়ে হাওয়াই চটি পায়ে আমাকে দেখে তো কল্যাণদা অবাক।  বলল,

–কোথা থেকে? এই তো বিয়ে করলি? এর মধ্যেই বৌকে একা রেখে  বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিস? 

তাকে গোটা গল্পটা বললাম। কল্যাণদা বলল,

–তা কী করতে চাস?

আমি বললাম,

–প্লেনের টিকিট কেটে দিল্লি যাব। সেখান থেকে জম্মু স্টেশন । আমি হয়ত আগেই পৌঁছে ওদের ধরে ফেলতে পারব। 

কল্যাণদা কিচুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল,

–সঙ্গে টাকা আছে? 

বললাম,

–আছে। 

–তাহলে বোস। দেখি কী করতে পারি। জ্যোতি বসু, মানে সি এম  আজ দিল্লি যাবে। তেমনি খবর আছে। যদি না যায় তোকে ঢুকিয়ে দেব।

সেই প্রথম আমার চটি পায়ে কলকাতা-দিল্লি বিমানে চড়া । দিল্লি বিমানবন্দর থেকে বাইরে বেরিয়ে একটি বাস ধরে দিল্লি স্টেশন। টিকিট কাউন্টারে উঁকি দিয়ে জানতে পারি, ঝিলম এক্সপ্রেস কিচুক্ষণের মধ্যে আসছে। পুণা থেকে দিল্লি হয়ে জম্মু  যাবে। রিজারভেশান নেই। পাঁচ মিনিট দাঁড়াবে দিল্লি স্টেশনে। সারা রাতের পর সকাল আটটায় সেই ট্রেন পৌঁছবে জম্মু । একটা সাধারণ টিকিট কেটে অরক্ষিত কামরায় উঠে বসি। প্রচন্ড ভীড়। এভাবে বহুদিন ট্রাভেল করিনি। কোনক্রমে একটা সিটের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আমার ডান হাতের উপর দিয়ে একটা মোট চলে গেল আর একজনের ঘাড়ে। দু পাশে বড় বড় ট্রাঙ্ক। তাঁর উপরও লোকের ভীড়। টয়লেটের সামনেও এক চিলতে জায়গা নেই। আমি একপাশে কোনক্রমে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে। ট্রেনটা ছেড়ে দিল কিছুক্ষণের মধ্যে। আমি ক্লান্তিতে সামনের একজনের গায়ে ঢলে পড়েছিলাম। সেই লোকটা সজোরে আমাকে ঠেলে দিয়ে হিন্দিতে একটা জোরাল গালাগালি দিল। আমি মুখ বুজে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আমি সেই লোকটার গায়ের উপর আবার হুমড়ি খেয়ে পড়তেই আমার খালি তলপটে একটা গোঁত্তা। আমি যন্ট্রণায় ‘ও- ও- বাবাগো’ বলে চৎকার করে উঠি। আর ঠিক তখনি বয়সে তরুণ একটি ছেলে আমাকে ধরে তার সিটের পাশে বসিয়ে দিয়েছিল। আমার মাথাটা নামিয়ে দিয়েছিল তার কাঁধে।   —-কোথায় যাবেন?

আমি কাতর গলায় বললাম,

–জম্মু।

–কেউ থাকে ওখানে? 

–না। 

–দেখে তো মনে হচ্ছে এভাবে ট্রাভেল করেন না। কী হয়েছে?

আমি সেই ছেলেটিকে সব ঘটনা বলার পর সে বলল,

–আসুন আমি একটু জায়গা করে দিচ্ছি। 

সে তাদের ডোংরি ভাষায় কী সব বলে আমার জন্য একটু ভদ্রস্থ জায়গা বের করল এই ভীড়ের কামরায়। আমি তখন তার নাম জানতে চাইলে সে বলেছিল, আফজল। সে মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে পুণা থেকে জম্মু হয়ে শ্রীনগর যাবে। 

–কী হয়েছিল মায়ের?

আফজল বলল,

–জমির উপর মাথা ঘুরে পড়ে যায়। স্ট্রোক। খুব ভালো মানুষ ছিলো। গ্রামের গরিব লোকদের খুব দেখতো। কী আর করব বলুন? 

–কী কর তুমি পুণাতে?

–একটা হোটলে চাকরি করি। লেখাপড়া করিনি। কী আর পাবো? এক বন্ধুর দাদা পুণা চলে গিয়েছিলা। কিস্মত ওখানেই লেখা ছিল।

বলতে বলতে চোখে জল দেখলাম।

–মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছিলাম। শেষ সময়টা কাছে থাকতে পারলাম না। 

আমি বললাম,

–আমি তোমায় শ্রীনগরের বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়ে আসবো। আফজল বলল,

–আপনার ফ্যামিলি? 

–সে দেখা যাবে। ওদের হোটেলে পৌঁছে যাব। 

কখন যে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেছিলাম খেয়াল ছিল না। হঠাৎ আফজলের এক ধাক্কায় ঘুম ভাঙল। জম্মু এসে গেছে। নামতে হবে।  

তাকিয়ে দেখি কামরা অনেক ফাঁকা। শুনলাম জম্মু তাওয়াই আধ ঘন্টা পরে ঢুকবে।  

আমি আফজলকে বললাম,

–দাঁড়াও, তোমার তো বাসের দেরি আছে। আমি দেখে নেই। যদি আমার পরিবারকে দেখি তো হোটেলে নামিয়ে তোমায় বাসে তুলে দিয়ে আসব। আর না পেলে তো সময়ই সময়।

ট্রেনটা ঢুকল। জানালা দিয়ে শশুরমশাইয়ের গলা,

–কোইসিলাম না। ঝুলতে ঝুলতে চলে আসবা। অহনে প্লাটফর্মে খাড়াইয়া আসে দ্যাখ।

তারপর আমি গোটা ট্রেনের সামনে প্রদর্শনের বস্তু। ফিরে পাওয়া সোনার মতো মহার্ঘ  দ্রষ্টব্য একটি পিস।  

কাছেই ছিল হোটেল। স্ত্রীকে বললাম,

–ততক্ষণ তোমারা বিশ্রাম কর। আমি শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরব।

৪) 

বসন্তবিহারে হোটেলের বাইরে বৃষ্টি  কমে এসেছে। আমি আর তাকে দেখতে পাই নি। খুব খিদে পেয়েছিল। ভালো মতো খেয়ে বিল চাইলাম। রেস্তোরাঁর ছেলেটা কাছে এসে বলল,

–স্যার আপনাকে পেমেন্ট করতে হবে না। স্যার বারণ করেছেন।  

আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,

–কে বারণ করেছেন? 

-মালিক স্যার।

–মালিক? কে মালিক?

 ঠিক সেই সময় একটি সুদৃশ্য ঘর থেকে বেরিয়ে এল হরিপ্রসাদ। কাছে এসে বলল,

–জানি আপনি হরিপ্রসাদকে চিনতে পারেন নি। না পারারই কথা। 

আমি বললাম,

–কিছু মনে করবেন না। সত্যিই পারি নি। 

–আচ্ছা, আপনার আফজলকে মনে আছে? 

স্মৃতির ফলক ঝলসে উঠল মনের মধ্যে।  

–আরে তুমি? তুমি সেই … 

আফজল  বলল,

–এই রেস্তোরাঁটা আমার স্যার। আপনি কি দিল্লিতে থাকেন? কলকাতায় থাকতেন না?

আমি উত্তর দিই,

–হ্যাঁ, মনে আছে তো তোমার? 

হরিপ্রসাদ মুচকি হেসে বলল,

–শুধু কি তাই? আপনার শশুরমশাইকে মিথ্যে কথা বলেছিলেন তাও মনে আছে।

–মিথ্যে কথা?

আফজল বলল,

–ভুলে গেলেন?  আমার নামটা আফজল না বলে হরিপ্রসাদ বলে আমাকে বাসে তুলতে গিয়েছিলেন সেদিন। মনে পড়েছে?

আমি যেন সেই পঁচিশ বছরের জম্মুর হোটেলের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিলাম।

লজ্জায় মাথাটা নামিয়ে আছি। 

আফজল হাসতে হাসতে বলল,

–আমি জানতাম আপনি কেন সবাইকে আমার নামটা হরিপ্রদাস বলেছিলেন সেদিন।  

প্রতিভাস ম্যাগাজিন | Prativas Magazine

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *