সুদীপ ঘোষাল

প্রিয় কথাকার কমলকুমার মজুমদার 

তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের দুরূহতম লেখকদের একজন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিলেন; যেমন সুহাসিনীর পমেটম উপন্যাসে ২৫০ পৃষ্ঠায় যতি-চিহ্ন বিহীন মাত্র একটি বাক্য লক্ষ্য করা যায়। তিনি বাংলা সাহিত্যের দুর্বোধ্যতম লেখক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। দীক্ষিত পাঠকের কাছে কমলকুমার অবশ্যপাঠ্য লেখক হিসেবেই সমাদৃত হলেও অদ্যাবধি তিনি সাধারণ্যে পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেন নি।তিনি ১৬ নভেম্বর, ১৯১৪ সালে উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলার, টাকি শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।পিতার নাম প্রফুল্লকুমার মজুমদার ও মাতার নাম রেনুকাময়ী।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বাংলা সরকারের জনগণনা বিভাগ, গ্রামীন শিল্প ও কারুশিল্প, ললিতকলা অ্যাকাডেমি এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। এ ছাড়াও তিনি ছবি, নাটক, কাঠের কাজ, ছোটদের আঁকা শেখানো, ব্যালে নৃত্যের পরিকল্পনা, চিত্রনাট্য রচনা করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘অন্তর্জলি যাত্রা’। ১৯৭০ সালে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘নিম অন্নপূর্ণা’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী গ্রন্থাবলী: গল্পসংগ্রহ, পিঞ্জরে বসিয়া শুক, খেলার প্রতিভা ও দানসা ফকির।

তিনি বিচিত্র বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসসমূহ হল: অন্তজর্লি যাত্রা, গোলাপ সুন্দরী, অনিলা স্মরণে, শ্যাম-নৌকা, সুহাসিনীর পমেটম, পিঞ্জরে বসিয়া শুক এবং খেলার প্রতিভা। ছোটগল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: অন্নপূর্ণা, গল্প সংগ্রহ। একদিকে, ভাষায় আর অপরদিকে বিষয়ে নির্জনতা দুয়ের মধ্যবর্তী পথে বিচরণ করে কমলকুমার সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর চিরায়ত কাহিনিগুলো। বহমান বাঙালিত্বকে রূপময়তায় চিত্রায়িত করেছেন, শহুরে জীবনে থেকে খুঁটিয়ে দেখেছেন কৌম জীবন, তার আখ্যান লিখেছেন অপরিচিত জগতের অন্যরকম জীবন ও জীবিকার ছোঁয়ায়, যা অন্তিমে হয়ে উঠেছে ধ্রুপদী। তা কি ভাষার গুণে, না দেখার অনন্যতায়? কমলকুমারের জীবদ্দশায় পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল দুটি মাত্র উপন্যাস আর দুটি গল্প সংকলন। বিচিত্র জীবন ও আশ্চর্য সব জীবিকা গ্রহণের অন্তে তিনি কিন্তু মনোনিবেশ করেছিলেন কাহিনিবিন্যাসে, যা শেষপর্যন্ত লেখকরূপেই তাঁর প্রধান পরিচয় হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *