উত্তম চক্রবর্তী
হাই তোলা এমন একটা বাজে অভ্যাস যে কী আর বলব। এক তো স্থান কাল পরিবেশ বিচার না করে আপনার যখন তখন হাই আসবে। তার উপর আবার কাউকে হাই তুলতে দেখলেই, সে সামনে হোক বা দুরে হোক বা টি ভি বা সিনেমার পর্দায় হোক, আপনারও হাই এসে যাবে। এমনকি মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলেও প্রায়ই দেখবেন হঠাত আপনার হাই আসবে। অনেক সময় হাইয়ের কথা পড়তে পড়তে বা ভাবতে ভাবতেও হাই এসে যায়। আপনি কিছুতেই এইসব সময়ে নিজেকে চেপে রাখতে পারবেন না। এমনকি এই যে আমি এই রম্য রচনাটা লিখছি, সমানে আমারও হাই উঠছে।
সাধারণত সভ্য লোক মুখে হাত চেপে হাই তোলে। কিন্তু কিছু মানুষ আবার একটা বিকট আওয়াজ করে হাই তোলে এবং আসে পাশের লোক কী ভাবতে পারে বা ভাবছে তার পরোয়াও করেনা।
আপনার নিজের হাই আসবার অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। হতে পারে আপনি এক নাগাড়ে কাজ করতে করতে টায়ার্ড হয়ে হাই তুলছেন। হতে পারে আপনার শরীর যে কোন কারণে ক্লান্ত অনুভব করছে তাই হাই আসছে, আবার হয়ত রাতে ভাল ঘুম হয়নি তাই আপনার হাই উঠছে। আর এই সব হাই তো জায়গা দেখে উঠবে না, যেখানে সেখানে – সে রাস্তা ঘাটে, বাসে ট্রেনে বা বাড়িতে বা অফিসে কলিগদের বা এমনকি বসের সামনে বা ক্লাইন্টদের সামনেও হাই আসতেই পারে। অনেকের শুনেছি বিয়ের পিড়িতে বসেও হাই ওঠে। এই সময়ে আপনি কিছুতেই হাই চেপে রাখতে পারবেন না।
শোনা কথা, জানিনা। একবার নাকি প্রিন্স চার্লসের এক বান্ধবী শুধু মাত্র বাগানে বসে তাদের প্রেমালাপ করবার সময় চার্লস কেবলই হাই তুলছিল বলে ওর সাথে সম্পর্ক কাট আপ করে দেয়। আরেকবার অনিল আম্বানি একজন কোম্পানির হাই প্রোফাইল অফিসার গুরুত্বপূর্ণ মিটিঙের মাঝে বারবার হাই তুলছিল বলে তাকে বরখাস্ত করে দেয়। কোন এক রাজ্যে নাকি একজন নতুন মন্ত্রী শপথ বাক্য পাঠ করবার সময় হাই তুলবার অপরাধে রাজ্যপাল সভা ছেড়ে চলে যান।
হাই তুলবার আরেকটা সমস্যা আছে। আপনি হয়ত বাসে বা ট্রেনে কারো পাশে বসে আছেন। সেই মানুষটা যদি হাই তূলতে থাকে আর তার মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় তখন কেমন অস্বস্তি হবে বলুন। আবার কোন সময় যদি আপনার মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে আপনি না পারবেন কারো সামনে হাই তুলতে, না পারবেন বৌয়ের পাশে বা ভাই বা বোনের পাশে বা আপনার বন্ধুর পাশে শুতে। তারা আপনার হাই তোলার সময় একবার মুখের দুর্গন্ধ টের পেয়ে গেলেই হল আর কি। আর কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। আপনাদের সাময়িক বিচ্ছেদ হবেই হবে।
এমনও দেখা গেছে যে হাই উঠবার কথা শুনে বা গল্পে হাইয়ের ছবি দেখেও অনেকেরই হাই আসতে শুরু করে দেয়। এমনকি সামনে কাউকে হাই তুলতে দেখলে হাই অবশ্যই আপনাকে অবাধ্য শিশুর মতো চেপে ধরবে। এসবের বৈজ্ঞানিক কারন শুনেছি আমাদের শরীরে হঠাৎ শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম হবার কারন থেকেই নাকি হাই হয়। এবং সেই হাই উঠবার সময় সে কারো মানা বা বাঁধা শুনবে না। তবে আমি কিন্তু শিওর, আপনি আমার এই লেখাটা পড়তে পড়তেও হাই তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। কি ঠিক বললাম তো ?
আপনি এখন সত্যিই হাই তুলে থাকলে আর আমার সাথে একমত হলে এই রচনার তারিফ করুন। করবেন না ? ঠিক আছে। আমাকে এভয়েড করলেও হাইকে কিন্তু এভয়েড করতে পারবেন না বলে দিলাম। সাবধানে হাই তুলুন।