শরদিন্দু সাহা
বাংলা কথা সাহিত্যের সুপরিচিত লেখক শরদিন্দু সাহা। লেখক সত্তা ও জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে তিনি অভ্যস্ত নন। নিছক লেখক হওয়ার জন্য তিনি কলম ধরেননি, সামাজিক দায়বদ্ধতাই তাঁকে সৃষ্টিকর্মে উদ্বুদ্ধ করে। শৈশব থেকে সৃষ্টিশীল মন লালন করে প্রস্তুতি পর্ব সারলেও নয়ের দশকের গোড়া থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। এ-পর্যন্ত শতাধিক গল্প, গোটা কয়েক উপন্যাস এবং অন্যান্য গদ্য মুদ্রিত হয়েছে। দশটি উপন্যাস আর সাতটি গল্পগ্রন্থ সহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা ষোলো। ১৯৯৮ সালে ‘কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগার পুরস্কার’ পান। ২০০৪ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত সোমেন চন্দ পুরস্কার’ পান। ওই বছরেই কাটোয়া লিটল ম্যাগাজিন মেলা কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘হল্ অব্ ফেম’-এ সম্মানিত করেন। ২০০৫ সালে ‘ভাষা শহিদ বরকত স্মরণ পুরস্কার’ পান। ২০০৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি’র আমন্ত্রণে গৌহাটিতে বাংলা-অসমীয়া গল্পকার সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে ‘আমি’ পত্রিকা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বিশেষ সম্মান দেন। প্রসার ভারতী’র আমন্ত্রণে নানা সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিলিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যেই নিজস্ব এক ঘরানা সৃষ্টি করে তিনি পাঠকের মন জয় করেছেন।
(নিত্য সমাজ সংসারের যে স্রোত আমরা চাক্ষুষ করছি তার অন্দরমহল জুড়ে ঘুমিয়ে রয়েছে কত তো কথাকাহিনী, যার পরতে পরতে তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে গোপনে কত তো নারীর জীবনযন্ত্রনা, ধারক বাহক হয়ে গোটা সমাজকে যাঁরা ছাতার মতো আগলে রেখেছে, নিজের পরিচয় খুঁজে নিয়েছে, সকল ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে দিচ্ছে মুক্তি যুগ যুগ ধরে। কয়জনের কথাই বা আমরা মনে রাখি। তাঁদের গোপন ব্যথা, অনুচ্চারিত কথা গুমড়ে মরে যায়, চোখের জল কেউ মুছিয়ে দেয় না, গণ্ডীবদ্ধ শৃঙ্খলিত জীবনই তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। এমনই এক সাধারণ গ্রাম্য নারীর কথকতা ও চেতনায় চেনা জীবন ও সমাজপিষ্ট অব্যক্ত যন্ত্রনার পাঁচালি ‘দেশের গর্ভে স্বদেশ ‘ উপন্যাস।)
স্বপ্নে ভাঁয়ে হোনার তরী
মিলবে যহ্ন হাড়ের কড়ি
হুজার মাস আইছে। হোলার মনে আগের মত আনন্দ নাই। মাইয়াডারে হেতির বাপ কি মনে করি গ্ৰামের তুন্ টাউনে লই গেছে। জানি না হ্যাতেনের মনের মইদ্যে কি চলের। মাইয়া থাইক্বার লাই আর এক্কান ঘরও বানাই দিছে। হড়ালেয়ার লাই টেবিলও কিনি আইন্ছে। মাইয়ারে লই এরুম উৎসাহ আগে দেই ন। কেউ না কেউ কইছে আম্নের মাইয়ার মাথা ভালা, গড়গড় করি বাংলা ইংরাজি কবিতা তর্জমা করি দিত হারে, কবি মধুসূদনের দত্তের সনেট মুখস্ত কয়। শেলি কিটস ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতাও ঠোঁডের ডগায়। হেতির বাপ ভাবে মাইয়ার যহ্ন নিজের এত আগ্ৰহ, একবার চেষ্টা চরিত্র করি দেয়া যাক। কতদূর যাইত হারে, ইস্কুলে যাইবার হুযুগ গ্ৰামের দ্যাশে অয় ন, নিজের কাছে রাই হড়াই, যদি কোনদিন মাইয়ার ভাইগ্যে থায়, প্রাইভেটে হরীক্ষা দিব। হেইসব না অয় অইল, বেক্ সাধ ত হুরণ অয় না, দ্যাশেরও যা টালমাটাল অবস্থা, ভবিষ্যৎ বলি ত কিছু নাই, দ্যাশডাই ত একদিন উজাড় অই যাইব, হোলামাইয়ার ভালামন্দ দূর অস্ত। উকিলবাবুর বউ টাউনের মাইয়াগ ইস্কুলে হড়ায়। আঁঙ্গ ঘরে আই হত্যেকদিন বিয়ালবেলা হেতির লগে বই ইস্কুলের হাইট্য হুস্তকগুন লাড়েচাড়ে। হাতার হর হাতা উল্টাই বুজায়। মাইয়াও মনযোগ দি হুনে। হেতির লাই বউডার মনের মইদ্যে কেরুম মায়া হড়ি গেছে। বউডা আঁর মাইয়ার এক নোয়া নাম দিছে। কয়, জেডিমা তুলিরে একবার আঁঙ্গ বাসায় হাডাই দিয়েন। হরে জাইন্লাম বউডার মাইয়াডার অকালে মরি যাওনের শোক আইজও ভুইল্ত হারে ন। বাঁচি থাইক্লে হেতির কাছাকাছি বয়স অইত। আঁর মাইয়ারে ভালবাসি আঁকড়াই ধইর্ত চায়। আঁই বউডার দুখ্ডা বুজি এই সম্পর্কডারে মানি লইছি। আঁর হৌড়ি কয়, বড়বউ তুই অন্ তোর মাইয়ার কাছে যাই থাক্, আঁরে মাঝে মাঝে চাই যাইচ্, অন্ আঁই ছোডবউয়ের ঘরে খামু। আমরা ত হড়ালেয়া কইর্তাম হারি ন, নাতিনডার যদি এক্কান গতি হয়। আঁর হৌড়ির মুয়ে এরুম কতা হুনি নিজেরে আর ধরি রাইখ্তাম হারি ন, হ্যাতেনেরে বুয়ে জড়াই নিলাম।
বিরাট বড় রায়বাহাদুর বাড়ির খিলান দি হাঁদাই গেলেই তিন চাইরডা কোডায় বাস করে উকিল বাবুরা। মাইন্ষ্যের মুয়ে মুয়ে হিরে এই বাড়ির কতা। গালগপ্পও কম নাই। যত ভিত্রে ঢুকন্ যায় কত গাছগাছালি মাথা তুলি খাড়াই রইছে, হাপখোপ ত হইত্য সময় দেয়া যায়, ঘসা ভাঙাভুঙা ইটের মাইজহান দি মুখ বাড়ায়। দেড়শ বছরের হুরান বাড়ির কাছে মাডে ত্রিপল টাঙাই চইল্ছে অখিল পালের দুগ্গা ঠাকুর গইড্বার কাম। কত মাইন্ষ্যের আওন যাওন। কোন টানে আইয়ে, কিয়ের লাই চখ মেলি চাই থায়, ঠাউর দেইখ্তে দেইখ্তে জ্যান্ত অই উডে। এই বুজি নামি আই কতা কইব। অল্প অল্প বাতাসে গাছের হাতাগুন দুলি দুলি উডে। মেঘেরা আঁচল হাতি বই রইছে আকাশে, কার এত ক্ষমতা আছে যে টানি নামাইব। হোলামাইয়াগ লগে লই আঁইও চাইতে গেলাম। এই হঁত দি যাইবার সময় হইলা ঘোষাল বাড়ি, হরে হরে দত্ত বাড়ি ডাইন হাশে, বাঁ হাশে ছদ্রি বাড়ি। বেক্ বাড়ির বউঝিরা আইছে মার রূপ দর্শন কইর্ত। আর চাইর হাঁচ দিন বাদেই হূজা আরম্ভ অইব, ঢাকঢোল বাইজ্ব। আনন্দের সীমা নাই। বউডা আঁরে হেতিগ ঘরে টানি লই যাই বয়ায়। হুরান যে ঘর এই কতা আর কইবার অপেক্ষা রায় না, চেয়ার টেবিলের কম বয়স ত অয় ন। বালু সিমেন্টের হলেপ অইড়ছে দেয়ালে, চুনকাম্ অয় ন। মেরকডির জাল কোনায় কোনায় ঝুলের। ব্যাঙের ছানারা চইয়ের হায়ার কাছে ঘুরঘুর করে। তবুও এই বাড়ির কৌলিন্য উপেক্ষা করন যায় না। হুনা যায় এই বাড়ির মালিকরা মরি ভূত অইছে। কেইস্ কামারি চইলছে, কোনানের জল কোনাই গড়াইব কে কইত হারে। এক শেখ পরিবারের হইসাওলা মোছলমান জমিদার বাড়ি জবরদখল কইরবার লাই উডিপড়ি লাইগছে। এত সহজে কি স্বত্ব আতছাড়া করন যায়। উদ্দার কইর্বার দায় হইড়ছে আঁর স্বামীর উপ্রে। লোয়ার কোরটে হারি গেলেও হাল ছাড়ে ন। এক মাস বাদে তারিখ হুইরছে ঢাকা হাইকোটে ।
আঁর স্বামী আবার এক কতার মানুষ। হরান দি হালাইব তবু কতার খেলাপ কইর্ত ন। এদিগে চাইরদিগে ত হুলস্থুল কাণ্ড! হোলাহাইন, জোয়ান হোলা, জোয়ান মাইয়া, এরুমকি বুড়াগ মনেও জোয়ার আইছে। এই জোয়ার য্যান্ তেন্ জোয়ার ন, ভোটের জোয়ার, বেকেরে ভাসাই লই যার। মুজিবের চাপে হড়ি ইয়াহিয়া খান শ্যাষমেশ রাজি অইছে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে। তারিখ ত এক্কান দিব, এই লই অন্ও নির্দিষ্ট কোনও কতা অয় ন। কে কয় এইডা হুদা ভোট। কত আশা ভরসা, কত স্বপ্ন আছাড় হিছাড় খাই মরের। কালা আর ধলা মিশি যাই কল্পনারে দূর তুন্ ছায়া ছায়া লাগে, ধরইতে গেলে হুরুত করি উড়ি চলি যায়। কন্নাই কি ভুল অই গেছে? ভুলের মাশুল তাইলে গুইনত অইব! এই দ্যাশের মানুষ আর কত খেসারত দিব? হশ্ন ত মনের মইদ্যে ঘুরি ঘুরি আইয়ে, উত্তর দিব কে। শেখ মুজিব ত কবে তুন্ কত খাডাখাড্নি করের। আঁঙ্গ গ্ৰামেও ত রিক্শাআলাগরে জড় করি হেগুনের অভাব অভিযোগ হুনের কবে তুন্। চাষা, জাইল্লা, দোয়ানের কর্মচারী বেক্গুনেরে লই সভা কইর্ছে, বাড়ি তুন্ বাড়ি ঘুরের্, কম হরিশ্রম ত করে ন। কে আর তহ্ন চিন্ত। মাওলানা ভাসানী আর সোহরাওয়ার্দীর লগে হাশে খাড়াই রইছে খবরের কাগজে এরুম ছবি থাইক্ত। অন্ না হয় এত বড় নেতা অইছে, দ্যাশ হুদ্দা মাইন্ষ্যে জানে হুনে, সম্মান দেয়, হ্যাতেনের এক ডাকে লক্ষ লক্ষ লোক জড় অই যায়, হরান দিতেও কসুর কইর্ত ন, এরুমও হুনা যায়। এদ্দিন হাকিস্তানীগ য্যাতারা এত হত্তুর বলি মনে কইর্ত না, হ্যাতেরাও আস্তে আস্তে হাল্টি যার।
মানুষডার কতার মইদ্যে জাদু আছে, না হয় মন্তর টন্তর জানে। কন্নাইর তুন্ এসব কতা শিখছে! দ্যাশের মাইন্ষ্যের জন্য হরান না কাঁইন্লে নিজের জীবন কেউ এরুম করি বাঘের মুয়ে ঠেলি দিতে হারে! গুল্লি খাইব, তবুও হিছে হইড্ত ন। তাও ত কম দিন অয় ন, আওয়ামী মুসলিম লীগ যে আওয়ামী লীগ অইছে। মাইন্ষ্যে অন্ বুইজ্ত হারের এট্টু এট্টু করি বেক্ মাইন্ষ্যের কাঁধে ভর দি চইল্ত অইব যদি দ্যাশডারে বাঁচাইতে হয়। দ্যাশের মানুষ বুইজ্ত হারের হুব বাংলারে হুব হাকিস্তান বানানোর বিপদ, হশ্চিমাগ বানাইন্না জিনিষ তৈল সাবান মাজন লোহা সিমেন্ট তুন্ কলকব্জা, নিত্য নৈমিত্তিক জিনিস হুরা দ্যাশে ছাই গেছে। আঁঙ্গ দ্যাশ তুন্ জিনিষহত্র লই যাই হ্যাতাগ দ্যাশে এসব বানায়, হইসাকড়ি লুডি লই যার, ইস্কুলগাইন দিন দিন বন্দ অই যার। হেই কতাগাইনই ত বঙ্গবন্ধু বক্তিতা করি করি বুজার – অন্ সময় আইছে বাঙালিগ বেকেরে এক অইত অইব। নৌকা মার্কায় বেশি বেশি করি ভোট দিত অইব যদি সোনার বাংলা গইড়্তে হয়। ভোট বোধ হয় আগাই আইছে, না হয় আঁঙ্গ বাড়ির বেড়ার গায় এত হোষ্টার মাইরল কারা। নৌকা আর মুজিবুর রহমানের ছবিহান মানাইছে। মাইন্ষ্যে আবার খাড়াই খাড়াই চায়। চয়ের সামনে এরুম জলজ্যান্ত স্বপ্নরে কাছের তুন্ দেইখ্লে কার না ভালা লাগে। এরুম অবস্থা অইছে মাইন্ষ্যে য্যান্ কাইল্যাই হাকিস্তানি সরকাররে হালাই দিত হাইরলে বাঁচে। হত্তুররা যে ঘুর ঘুর করের না এরুম না, হ্যাতেরাই ত বই রইছে বড় বড় চেয়ারে। আঁর স্বামী ত বার বার করি কয়, এগুনেই ত শতানের গোড়া, হশ্চিমা সরকার এগুনেরে কাজে লাগাই আঁঙ্গ উপ্রে ছড়ি ঘুরায়, হেগুনে উর্দু জানা হশ্চিম হাকিস্তানের লোক, আঁঙ্গ সুখ দুখ্, হাবভাব, চালচলনের খবর হেগুনে জাইন্ব ক্যাম্নে! বাঙালিগ শিক্ষিতও কইর্ত ন, জাগাও দিত ন। হ্যাতাগ হুকুমেই বলে সব চইল্ব। হিয়ের লাই ত বঙ্গবন্ধু কয়, আমরা অন্ও হরাধিন দ্যাশে বাস করিয়ের, আঁঙ্গরে স্বাধীন অইতে অইব। ছোড ছোড হোলারা সার কতাহান বুজি গেছে। হেগুনে সাদা কাগজে নৌকার ছবি আঁকি আঁকি নাইরকল গাছে, বাদি গাছে, রিক্শার হিছে আডা দি লাগাই দের। আঁঙ্গ ঘরের জানালার হাঁকে দি চাইলেই চয়ে হড়ে, মাঝি য্যান্ দাঁড় বাই নৌকা লই চলি যার কল্পনার দ্যাশে।
কে আর জাইন্ব, সব্বনাশডা এরুম করি আই বেকেরে কাবু করি হালাইব। এই ভোট ত যেরুম হেরুম ভোট ন, হা’য়ে যে বেড়ি হরাই রাইখ্ছে হশ্চিমারা, ছিঁড়ি বার অইবার ভোট, মুয়ের উপর জবাব দিবার ভোট, নিজেগ দ্যাশ হিরি হাইবার ভোট। টগবগ করি ছোডের মাইন্ষ্যের মন, এরুম সময় বাজ ভাঙি অইড়ল, আকাশের রঙ বেরঙ অইল, বাতাসের দপ্দপানিতে মানুষ অইল দিশাহারা। রেলগাড়ি উল্টি যাইবার জোগাড়। আঁর স্বামী ধনুর্ভাঙ্গা হন্ কইরছে যেই করি হোক কাইল যাই ঢাকা হৌঁছাইব, জমিদারি বেআত অওনের তুন্ বাঁচাইতেই অইব। বিলাই কাঁদে, কুত্তা কাঁদে, যত হারে কাঁদুক, আঁর হৌড়ি কত বারণ কইর্ছে, কে হুনে কার কতা। উল্টাই হালাই দেয়, বাতাসে উড়াই লই চলি যায়, গাছের মগ ঠাইল ভাঙি আই হড়ে হা’য়ের কাছে, দৌড়ি চলি যাই ইষ্টিশন মাষ্টরের ঘরে হাঁদায়। চয়ে মুয়ে মাষ্টরের আতঙ্ক, কয়, স্যার, আম্নে কইর্ছেন কী, হইকও ত বাসা ছাড়ি এই দূর্যোগে বার অয় না, আম্নে কিনা এত বড় ঝুঁকিডা লইলেন। কি করুম মাষ্টর কও, কতা যে দি হালাইছি, ক্যাম্নে কতার খেলাপ করি।
বোচ্কাবুচ্কি লই আঁর স্বামী গাড়িত্ ওডে, অগ্গা মানুষ নাই বগিত্, খালি এক হৈর এক কোনায় বই থাই ভয়ে আল্লার নাম জপে। এরুম ঝড় তুফান কেউ কোন কালে দেইখ্ছে নি। নদীর চরের মাইন্ষ্যের কী অবস্থা কি জানি। আঁঙ্গ চাষের জমি আছে সন্দীপের চরে। এই ত হেইদিন আবিদ আইছিল তিলক কচ্কচি, সাক্করখোরা ধান লই – বাবু আম্নে ত কিছু দাবিও করেন না, খোঁজও নেন না, বেক্গাইন আতেভূতে খায়, আম্নের লাই দুই মন ধান লই আইছি, খাইলে খুশি অমু। কী যে কও আবিদ, এত কষ্ট করি চাষবাস কর, তোঁরা হোলামাইয়া লই খাইদাই বাঁচি থাক, তাইলেই আঁই খুশি, ধান কিয়ের লাই দিত অইব, ধর এই ট্যাঁয়াগুন রাখ, হোলামাইয়ারে ভালামন্দ কিনি খাইতে দিও। এই ট্যাঁয়াগুন আম্নে হিরাই লন, আঁর বিবি হুইনলে রাগ কইরব, আম্নের লগে আঁর কি খালি মালিক আর বর্গাদারের সম্পর্ক?
আঁর স্বামী গাড়িত্ একলা বই চিন্তায় মরি যায় এই চালচুলা ছাড়া মানুষগুনের কী অবস্থা অইব, ঘরে জল উডি মরি যাইব। গাড়ি ছোডে, চাইরহাশের তুন্ ভাঁই আইয়ে মাইন্ষ্যের কাঁদাকাঁডি আর গাছগাছালির মড়াৎ মড়াৎ আবাজ। হিছন হিরি চাইবার সময় নাই। এজলাসে সওয়াল জবাব চইলছে, কী অয়, কী অয়, কেইস্ হারি গেলে মান সম্মান থাইক্ত ন। মনতোষ উকিলের হরিবার খালি ন, ওই চৌহদ্দির দশ ঘর হরিবার হঁতে বইব। আইজ্ হ্যাতেনে বাবা মার নাম জইপ্ল মনে মনে, বলও হাইল। বিচারের রায় রায়বাহাদুরের হক্ষেই গেল। কিন্তু হকৃতির তাণ্ডব মাইন্ষ্যের বিপক্ষে গেল, এইডারে সাম্লাইব ক্যামনে। ঘরে আয়ে ন, ট্রেইন তুন্ নামি সোজা গেল নদীর চরে। কিচ্ছুই চয়ে হড়ে না, শুধু জল আর জল, একডাও মাইন্ষ্যের মাথা নাই। এই বিপদের তুন্ কে বাঁচাইব চরে হড়ি থাইন্না আধামরাগুনরে আর কারাই বা লাশগুনের কবর দিব। গরু ছাগল কুত্তা বিলাই মাইন্ষ্যের লাশের লগে এক লাইনে হুতি রইছে। আঁর স্বামী আর দেইখ্ত হারে ন, ছুডি চলি আই হতিজ্ঞা কইর্ছে, এভাবে চুপ করি থাইক্লে অইত ন, এক্কান বিহিত করবই কইরব।
ওমা এ ত দেইখ্ছি সরকার চুপচাপ অই রইছে, কোনও কতা কয় না। মাথার উপ্রে চাল নাই, হ্যাডে ভাত নাই, চাইরধারে মরা মাইন্ষ্যের হঁচা গন্দ। হাড়গোড় ছিট্কাই হড়ি রইছে। সরকারের কাছে দাবি তুইল্লে মুখ হিরাই লয়। আরে বাঙালি মইর্ছে, মরুক, ছাহোষা গরু ছাগলের জাত, খামাখা হ্যাতাগ মজুত ট্যাঁয়া আঁঙ্গ লাই খরচা কইর্বার কী দায় হইড়ছে। এইডা কী হ্যাতাগ দ্যাশে ঝড় তুফান অইছে, কাঁদাকাডি করি চয়ের জলের বুকে ভাসাই দিব। হ্যাতারা ত আঁঙ্গরে মানুষই মনে করে না, চুঁই লই যাইবার যম, রক্তচোষা জোঁক ছাড়া আর কী! য্যান্ বাংলার মাইন্ষ্যেরে দয়া করের, আঁঙ্গ দ্যাশের ট্যাঁয়া লই যাইবার সময় আর মনে থায় না। রাগে মাথায় রক্ত চড়ি গেছে বিধায় এত কতা কইয়ের। কমু না, রক্ত রক্তের লাই কাঁদে, এইডা হাঁচা কতা, বাংলার মানুষ আর হশ্চিমারা এক ন, হ্যাতেরা আঁঙ্গ কষ্টের কতা বুইজ্ব ক্যাম্নে? হিয়ের লাই ত যেই যেরুম হাইর্ছে, আগাই আইছে; হরানহান কাঁইন্ল বলিই না গর্জি উইঠ্ছে। ঘিন্না লাগের, হ্যাতেরা ক্যাম্নে সুহে থাইক্ব আঁঙ্গ সম্পদ লই, উচ্ছন্নে যাইব, আঁঙ্গ বঙ্গবন্ধুর তেজের কাছে হেগুনে ছাই অই যাইব, বেশি দিন নাই। উকিলবাবুরে কইলাম, দাদা হ্যাতেরা কী হাষান, রিলিফ হাডাইতে এত দেরি করের! খাড়ান খাড়ান, ভোটের বাক্সে বেক্ জবাব বাঙালিরা ঠিকমতই দিব, এই কতাহান মিলাই লইয়েন। ভোট বলে দাদা হিছাই যার? হেরুমই ত হুনিয়ের। ইয়ার মইদ্যে হ্যাতাগ ভিন্ন কোনও হন্দি নাই ত, এই জাতডারে ত বিশ্বাস করন যায় না। দৈনিক কাগজে হইড়লাম, ঢাকাত্ বলে বইন্যার ক্ষয়ক্ষতি লই হ্যাতাগ বিরুদ্ধে মাইন্ষ্যে সোচ্চার অইছে। হ্যাঁ, আঁঙ্গ টাউনেও ত কাইল জনসভা অইব। হ্যাতাগ গাফিলতি বাংলার মাইন্ষ্যে আর মাইন্ত ন। কিছু চশমখোর, বেইমান আঁঙ্গ মইদ্যেও আছে য্যাতারা হ্যাতাগরে সমর্থন করে । এগুনের লজ্জা শরম কিছু নেই! হেই দলেরই ত এক মিঞা রায়বাহাদুর বাড়ি ভোগদখল কইরবার হাঁদ হাইত্ছিল। হেইদিন আম্নের স্বামী জীবনের ঝুঁকি লই গেছে বলিই না রায় আঁঙ্গ হক্ষে গেছে।
দ্যাশের মাইন্ষ্যের কতা যে সরকার ভাবে না এই আবার কিয়ের সরকার। এই কতাডা ত একবারও ভাবের না, আইজ্ যেভাবে মুখ হিরাই রইছে, এরুম একদিন আইব মানুষও মুখ হিরাই লইব। আবাজ কিন্তু কানে আইয়ের, হ্যাতেরা হুনের না, হুইন্ত চায়ের না। এই আবাজের মইদ্যে মাইন্ষ্যের মনের কতা আছে, রাগ আছে, ঘেন্না আছে, কান্দন আছে, আরও যে কত না-হাওনের বেদ্না আছে কে আর বুইজ্ব। সরকারের মনের মইদ্যে কী ভাব্না চইল্ছে হেইডা ত আমরা ক্যাম্নে কমু। তিন চাইর জন বউঝি এক লগে জড় অইলে কত কতা বার অই আইয়ে। ঘরের দুয়ারে দুয়ারে রাস্তায় রাস্তায় কত কত নোয়া মাইন্ষ্যের চেয়ারা দেই। এগুনে বেক্গুনে চরের কোলের মানুষ, হোলামাইয়া বউ বুড়া মা বাবারে লই টাউনে চলি আইছে যদি মাইন্ষ্যের কাছে চাই চিন্তি খাই হরি বাঁইচ্ত হারে এই আশায়। ছোড জাগা, কন্নাই আর উইঠ্ব, ই্স্কুল ঘর, মাদ্রাসায় মাডেঘাডে আই তাবু খাডাই মাথা গুঁজি কোনমতে রইছে। চাইরদিক জঞ্জালে ভর্তি অই গেলে ভদ্রলোকেরা ক্ষেপি যার, কিন্তু ক্ষেইপ্লে কী অইব, এই মানুষগুন যাইব কন্নাই। আইজ্ না হয় হ্যাতাগ ঘরবাড়ি বানের জলে ভাঁই গেছে, কাইল ত আঁঙ্গও এই দশা অইত হারে। কিছু মানুষ আগাই আইছে, তাতে কি চিঁড়া ভিজে। কলেরা অই, না খাই, না দাই কত লোক মরি যার, কে আর ইসাব রাইখ্ছে। লীগের নেতারা চেঁচার, সরকারি আফিসের সামনে জড় অই রিলিফের লাই দাবী করের, হ্যাতাগ কতায় কে আর কান দেয়।
একদিন দেই আঁঙ্গ ঘরের সামনে আই আবিদেরা হরিবার লই হাজির। হ্যাতাগ এই অবস্থা দেই ত আঁর মাথায় আত। বাবু আঁঙ্গরে বাঁচান, বানের জলে বাড়িঘর গরু গোতান বেক্ ভাসাই লই গেছে, হঁতে বই গেছি, উপায়ান্তর না দেই শ্যাষমেশ আম্নের কাছে চলি আইছি। আঁর স্বামীর দয়ার শরীল, থাওনের ব্যবস্থা করনের লাই উডিপড়ি লাইগল। হাশে এক উকিলের ঘর খালি হড়ি আছিল, হেই ঘরেই আশ্রয় হাইল। কিন্তু মুশকিল অইল এক মুয়ের ভাষাহান ছাড়া খাওন দায়ন চালচলনে আঁঙ্গ লগে কোন মিল নাই, তবুও ত আঁঙ্গ দ্যাশের মানুষ, অমিল আছে ঠিক কতা, কত কিছুর জোগান দেয়, এক নদীর জলে ছান করে, এক ক্ষেতের ধান খায়, এক রম করি আঁসে, এক রম করি কাঁদে, বিপদে হড়ি আইছে, কিছু এক্কান না কইর্লে অমানুষের কাম অইব। ভাবি দেইখ্লাম, হেগুনে হেগুনের মত থাক্, মিলাইতে গেলেই না যত বিপদ, হেইডা ত অনেক দিনের কাম, আগে ত জীবন বাঁচুক, হরের কতা হরে ভাইব্লেই চইল্ব। ভোটের কতা মনে উইঠ্ল, হিয়ানে আবিদগ আর আঁঙ্গ মইদ্যে ত কোন হারাক নাই। য্যাতারা মরিধরি গেছে, তা ত গেছে, য্যাতারা উঁচা জাগায় ছড়াই ছিডাই আছে, কম ত নয়, হ্যাতারা ভোট দিব ক্যাম্নে। ভিডামাডি জমিন হুকনা অইলে আবিদ কইল, বাবু এইবার আঁঙ্গরে ঘরে হিরি যাইবার অনুমতি দেন। সরকার ত দেয় ন, আম্নে ধারদেনা করি আঁর হোলামাইয়ারে বাঁচাইছেন, আম্নের এই উপকারের কতা কোনদিন ভুইল্তাম ন। অন্ সময় অইছে, ভোট দিতে ঘরে যাইয়ুম।
এই দৃশ্য জীবনে দেই ন, জীবনে দেইয়ুম্ বলি কল্পনাও করি ন। শয়ে শয়ে মানুষ আঁডি আঁডি চলি যার। যাওনটা আনন্দের না দুহের ক্যাম্নে কইব। হেগুনে ত জানে না, কতবার হোঁচট খাইব, কতবার উডি খাড়াইব, জাইন্বার কোনও নিয়ম ত জানা নাই। কেউ ত কোনদিন আত ধরি শিখাই দেয় ন। এইডাও ত জানে না, কোনও বিষধর হাপ হণা তুলি ভিডার উপ্রে বই আছে কিনা, যাইলেই সুযুগ বুজি ছোবল মাইরব। সাবধান অইত চাইলেই ত সাবধান অওন্ যায় না, কত রম কারসাজি হ্যাতেরা জানে, আঁঙ্গ দ্যাশের সাদাসিধা মাইন্ষ্যের বুইজ্বার বাপের হাইদ্য আছে নি। হেগুনের মাথায় হোট্লা হু্ট্লি লই এক আতে লাডি আর এক আতে হোলার আত ধরি মা, আর মাইয়ার আত ধরি বাপ, চইল্ছে ত চইল্ছেই। বেক্গুনে ঘরের দূয়ার তুন্ চাই থায়। কন্নাই আছিল এদ্দিন? য্যাতারা জানে তারা জানে আর য্যাতারা জানে না আবোদা অই হশ্ন করে। না, হ্যাতেরাও জানে ইয়ানে হ্যাতাগ জাগা অইত ন, সময় হুরাইলে একদিন চলি যাইত অইব নিজের জাগায় যিয়ানে ব্যারামের ওষুধ নাই, গলা ভিজাইবার হরিষ্কার জল নাই, গাত্ মাথাত্ মাই্খ্বার তৈল নাই, গায়ে চড়াইবার জামা নাই, বউঝিগ হরনের শাড়ি কিনবার হইসা নাই, খালি আছে চ্যাটচেটে গরমের ভ্যাপসা জ্বলন, চৈত বৈশাখের হাগলা বাতাসের দাপট দিনেরাইতে। আর ইয়ানে বাবুগ আত বাড়াইলেই মুডা মুডা ট্যাঁয়া, যা খাইতে মন চায় খায়, যা হইরত চায় হরে, মজবুত দালানে আরামসে হুই বই থায়, এরুমই ভাইব্তে ভাইব্তে হঁত মাড়ায়। হ্যাতাগ ভাবনাডা বেঠিক কন্নাই। এক দ্যাশের মানুষ অই কিয়ের লাই এত হিছে হড়ি আছে, এর উত্তর খুঁইজ্তে চাইলে চুল ছিঁড়ি হালান ছাড়া উপায় নাই।
হেগুনের আলোর হিথিবীডায় খালি দুই চয়ে আঁন্দার আর আঁন্দার। কারা করি রাইখ্ছে এরুম আঁন্দার, ভোটের বাক্সে কী উত্তর লেয়া থাইক্ব? তবুও ভোট দিবার লাই হ্যাতাগ মন উচাটন করে কিয়ের লাই? দ্যাশের লগে য্যাতারা ল্যাপ্টাল্যাপ্টি করি আছে দ্যাশের মানুষ ক্ষমতা হাইলে হ্যাতাগ লাভ অইব, এতাগ কী লাভ অইব? মিছিলে যাইবার ডাক দিলে হ্যাতেরা ছোডে কিয়ের লাই? কীয়ের টান হেগুনের, খালি আশায় আশায় বুক বাঁধে, আইজ্ না হয় কাইল সূর্য উইঠ্বই উইঠ্ব, না হয় কোনদিন উইঠ্ত ন। এই কতার উত্তর আঁর কাছেও কী আছে! টাউনের মাইন্ষ্যেরা কিয়ের লাই যে হ্যাতাগ হাডা হাডা মুখগুনের মুই চাই থায়, কী খোঁজে হ্যাতাগ হুকনা হোড়া আত আর হোড়া হা’র ভিত্রে! নাকি হাজার বছরের বাপ-ঠাদ্দার ঋণের জ্বালা শোধ কইর্ত চায়, না কোনও হায়চিত্ত কইর্ত চায় জমাইন্না হাপের!
ঝড়ের তাণ্ডবে কারা লণ্ডভণ্ড অই গেছে আঁঙ্গ দ্যাশের মানুষ না হশ্চিমাগ হাজানো বাগান। হ্যাতারা কী টের হায় ন শক্তহোক্ত ভিত্হানে হাঁটল ধইর্ছে এট্টু এট্টু করি। হিয়ের লাই কী কাঁপন ধইর্ছে। হ্যাতারা লাডির বাড়ি দি এক্কারে আঁঙ্গ মাথা হাডাই দিব, যেরুম লাথি মারি মাডিত্ হালাই আঁর হোলার হা ম্চ্কাই দিছে। জোয়ান হোলারা কই বেড়ায়, ‘মার দুধ খাই বড় অইছি আমরা, আঁঙ্গরে দমাইত অইলে গুল্লি মাইর্লে অইত ন, কইল্জার জোর চাই।’ হেগুনের কতা হুনি আঁর ডর লাগে, হা ঠক্ ঠক্ করি কাঁপে। মুয়ে আগুন ঝরে, কী কইর্তে কী করি বয়। ইয়াহিয়া খানের হুমকির মইদ্যে ঝাঁজ আছে, সিংহাসনে হা দোলাই চম্কার, মনে কইর্ছে বঙ্গবন্ধু ডরাই যাইব, হ্যাতেনে যে বাঙাল বাপের ব্যাডা এইডা মাথায় হাঁদাইতে অন্ও সময় লাইগ্ব।
মাষ্টরনি কয়, ছয় দফারে পশ্চিমারা কতার কতা মনে কইর্ছিল, ভাইব্ছিল তুড়ি মারি উড়াই দিব। কিন্তু ব্যাপারডা অত সোজা আছিল না, কোমরে গামছা বাঁধি নাইম্ছে যে। মাইয়ার এলেম আছে, কতার মত কতা কয়। ধুঁয়াডা গল্গল্ করি উইঠ্ছে, কেউ দ্যায়, কেউ দ্যায় না। হ্যাতেনে মাখন জিনের কোট প্যান্ট হরি আফিসে যায়, আর বিয়াল অইলে আঁই চাই থাই কহ্ন রিক্শার টুং টাং শব্দ হুনুম, রিক্শার তু্ন্ নামি গট্ গট্ করি ঘরে হাঁদাইব, আত হা ধুই চেয়ারে ড্যালাম্ দি বইলে তালহাখা দি বাতাস কইর্ব। বাতাস খাইতে খাইতে যত রাজ্যের কতা বার অই আইয়ে। আইজ্ হ্যাতেনের মেজাজ সপ্তমে চড়ি গেছে। কে আবার কন্নাই কি কইল কে জানে। খোঁচাইতে খোঁচাইতে মুখ খোলে। বিচারক তোফাজ্জল ইসলামের বিচারের মইদ্যে আছিল অনিয়মের গন্দ! এক ইস্কুল মাষ্টররে বিনা কারণে চাকরি তুন্ ছাঁডাই কইর্ছে বলি মামলা গেল কোটে। মাষ্টর আত জোড় করি কইল, ‘হুজুর আঁই এক গরীব মাষ্টর। ছাত্রগুনরে কই নিজের ভাষারে ভালবাইসবা, মায়ের ভাষা মায়ের দুধের হমান আর বাংলা তোগ মা, এই কতাডা মনে রাইখ্বা। এই কওনডা আঁর অপরাধ, আম্নেই কন্!’ বিচারক কতাগাইন হুইনল। মাষ্টর আছিল আঁর স্বামীর মক্কল। গম্ভীর অই থাই কিছুক্ষণ হরে আঁর স্বামীরে উপলক্ষ করি ভালামন্দ কতা কইল, ‘আম্নেরও কি একই মত, মক্কল দ্যাশের বিরুদ্ধে যাই কতা কইছে। এই দ্যাশডার নাম হাকিস্তান, বাংলা নয়। আম্নের মক্কলের চাকরি বাতিল।’ রাসেল মাষ্টর হাউ হাউ করি কাঁইন্তে কাঁইন্তে আদালত তুন্ বার অই গেল। যাইবার সময় কই গেল, ‘এরা বেক্গুনে বেইমানের জাত, আল্লাহ এগুনের বিচার কইর্ব।’ হরে হরে জানা গেল তোফাজ্জল ইসলাম জামাতের মেম্বার, তলে তলে হাকিস্তান সরকারের কাছে খবর পাচার করে। আঁর স্বামীও হতিজ্ঞা কইর্ল এর শ্যাষ দেই ছাইড়ব। অইত হারে দ্যাশের নাম ‘বাংলা’ কইছে, মিথ্যা কতা ত কয় ন। হাকিস্তান মালিক অইত হারে, মাডি ত বাংলারই, এই কতা অস্বীকার কইর্ব কার এত বুয়ের হাডা। আওয়ামী লীগ ধিক্কার মিছিল বার কইর্ছে। মাষ্টররে মিছিলের সামনে খাড়া করাই হাজার হাজার মানুষ শাসকের এই অবিচারের বিরুদ্ধে হতিবাদ শ্লোগান দিছে – হাকিস্তান মুরদাবাদ। হুলিশের লাডির মাইরে মাজা হাঁইড্ছে কত মাইন্ষ্যের। মিছিল কি আর থামে, আদালত ঘেরাও অইছে হপ্তাহ খানিক ধরি। অবস্থা বেগতিক দেই সরকার আর আগাইবার সাহস করে ন, এই বিচারকরে হাঁডাই দিছে অইন্য জিলায়। অইন্য বিচারকের রায়ে আগের আদেশ বাতিল অই গেল। আঁর স্বামীরে বেক্গুনে মালা হরাইল। হিছনে হড়ি গেছে জামাতিরা, হাইর্লে ছোলাই হালায়। নিজেগ মইদ্যে এরুম হত্রুতামি বাপের জম্মে দ্যাই ন। এক্কান কতা সাফ্ অই গেল শুধু ধম্ম ধম্ম করি দ্যাশডারে বাঁচান যাইত ন, ধম্মে ধম্মে রেষারেষি করিও দ্যশডারে বাঁচান যাইত ন। তয় দ্যাশের মাইন্ষ্যের মনের গতি একমুখী অইছে, কারণ অইল মাইন্ষ্যে এতদিনে হাঁচা হাঁচা দ্যাশডারে ভালাবাইসতে শিখছে। এক্কান হশ্ন মাথাচাড়া দি উডে এই প্রেম ভালবাসা কদ্দিন থাইক্ব, ক্যাম্নেই বা ধরি রাইখ্ব। বিশ্বাস যে রাওন যায় না এরুমটা ন, বঙ্গবন্ধুর মত মানুষ আছে না, মানুষডা খুবই ভালা, খাডি মানুষ, বেকে মনের মইদ্যে এক্কান বড় জাগা দি রাইখ্ছে। আঁই মাঝে মাঝে ভাবি ভারত যহ্ন এক আছিল দ্যাশের মানুষ মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুরে নেতা মাইন্ত, হ্যাতেনেগ কতায় কত মানুষ হরান দিছিল, হিগাইন ত চুঁইবুঁই গেল, এদ্দিন বাদে আর একজন নেতারে হাইল, যাঁর ডাকে আগুনেও ঝাঁপ দিত হারে। আঁর স্বামীই ত গদ্গদ্, বঙ্গবন্ধুরে নেতা মাইন্ছিল, হ্যাতেনের ছবিহান বাঁধাই ঘরে টাঙাইছে, বিশ্বাস কইর্ত শুরু কইর্ছে যদি কেউ বাঙালিরে রক্ষা কইর্ত হারে, এই মানুষডাই হাইরব, মনের জোর আছে, অনেক দূর দেইখ্ত হারে। এরুম আস্থার খবর সরকারের কাছে যায় ন! নিশ্চয়ই গেছে, হিয়ের লাই ত হেই লিষ্টিতে নাম উইঠ্ছে, টাউনের কারা কারা হাকিস্তান সরকারের কামকাইজে খুশি ন। হেই খবর আওয়ামী লীগের নেতারা আঁর স্বামীর কাছে হৌঁচাই দিছে, কইছে সাবধানে থাইক্তে। কতা অইল হরানডা ক্যাম্নে যাইব, দ্যাশের বেইমানরা নিব, না চশমখোর হাকিস্তানের সেনারা গুল্লি করি মাইর্ব। আঁর স্বামী আঁসে, কয়, ভালা কতা, আঁর হরান দিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যদি হুরণ হয়, হেইডাই সই।
জাগে রে মানুষ, জাগে রে দ্যাশ
নিজের দ্যাশে গইড়্ব স্বদ্যাশ
বেক্গুনে কতা কইছে চিল্লাচিল্লি করি, ভাষা বুজন দায়। একলগে কতা কইলে কোন কতার অর্থ হরিষ্কার অয় না। তয় যে কতাগাইন কইছে, নোয়া কতা, ভবিষ্যতের কতা। কতার লগে মাইন্ষ্যের আঁচার আচরণেরও অইছে কতরমের হরিবর্তন। এক্কান ঢেউ ত আই আছড়াই হরের, ভাসাই লই যার যেমুই যাইত চায়। ভোটের ঘন্টা বাজি গেছে। এই ভোটের রঙ ঢঙ আলাদা। সাড়ে সাত কোটি মাইন্ষ্যের মনের গতি টের হাওন যাইব। আওয়ামী লীগ এরুম ঝাঁপান ঝাঁপাইছে, জামাতে ইসলামী, পিডিপি, হাকিস্তান মুসলিম লীগ কুল কিনারা খুঁজি হার না, ঘেডি চাপি ধইর্ব না আত টানি ধইর্ব, না কোন মাইন্ষ্যের মনে কুমন্তর দিব, বুজি উইঠ্ত হারেন না। মাইন্ষ্যের মন বুজা কি এত সোজা, কহ্ন যে কোন মুই ঘুরি যাইব হেইডা কে কইব। মাইন্ষ্যের মনের লাগাম ধরি রাওন মুশকিল। হা’র তলার মাডি শক্ত কইর্ত অইব। মোছলমান ভাই বইন্গ মনের হদিশ খুঁইজ্লে বুজা যায় কেউ কেউ অইন্য সুরে কতা কয়। হেগুনের মন আওয়ামী লীগের দিগে ঘুরাইবার লাই কত হচার, কত কতার মালা কাব্য করি করি ঘরের দূয়ারে দূয়ারে আওড়ায়, কেউ হুনে কেউ হুনে না। আওয়ামী লীগের হাল্লা যে ভারি টের হাওন যার দিনে রাইতে। আঁঙ্গ ঘরের উল্টা দিগে ঘোষেগ বাড়ির তিন তিনডা মাইয়ার হিছে লাইগ্ত কারা য্যান্, নানা কতা কইত। একবার ঠিকও করি হালাইছিল হেগুনের জ্বালায় বাড়ি হাল্টাই হালাইব। ওমা চয়ের সামনে দেইখ্লাম ক্যাম্নে ক্যাম্নে বাতাস ঘুরি গেল, হেগুনের মুখ দি আর কতা হরে না। ঘোষেগ বউগ জিগ্গাইলাম জাননি এর রহস্যহান কী? বউ চালাক কম ন। কয়, আর কইয়েন না দিদি, বেক্গাইন ভোটের রঙ্গ। হইলা বুজি উইঠ্তি হাইর্লাম না কি কয়, হরে হরে বুইজ্লাম হাটির তুন্ নিদ্দেশ আইছে অন্ হিন্দুগ হিচনে লাগন যাইত ন, হাইর্লে এট্টু আধটু তৈল মালিশ কইর্ত অইব, ভোটডা যাতে হ্যাতাগ হক্ষে হড়ে। সাবধান থাইক্ত অইব, চাইরদিগের বাতাস গরম, বুজি হুনি চইল্ত অইব। আওয়ামী লীগ যে হাওয়া ঘুরাই দের, বিরোধীরা হাড়ে হাড়ে টের হার।
হ্যাতারা বেক্গুনে মিলি বলাবলি করের, বেশ অইছে, এদ্দিন আঁঙ্গরে কি কম জ্বালান জ্বালাইছে, এবার হালাগ উচিত শিক্ষা অইব। চাইরদিগে ভিত্রের কতাগাইন বার অই আইয়ের। মাইন্ষ্যে বুজি উইঠ্ত হারের কত কারসাজি হ্যাতেরা গোপনে গোপনে কইর্ত লাইগ্ছে। ছয় হাজার সেনা অফিসারগ মইদ্যে বাঙালিরা মাত্র তিনশ, তাও কি নিচের দিগের অফিসার, হেথাগ হা’র নিচে রায়। আঁঙ্গ নাকি নিরাহত্তা নাই, অস্ত্রসস্ত্র পাঁচানব্বই ভাগ হশ্চিম হাকিস্তানে আছে, অনুমান কইর্ত হারেন নি আঁঙ্গ দ্যাশের অবস্থাহান, বেক্গুনে মিলি হ্যাতাগ আত তুন্ দ্যাশডারে উদ্দার কইর্ত অইব। বেল্লাল মিঞা আর অশোক ডাক্তর দুইজনে মিলি হুইর হাড়ের সিঁড়িত্ বই আরও কত কতা যে কয়, আঁই বেক্ কতা বুইজ্তামও হারি না, তবু ঘরে বই বই কান হাতি হুনি। খালি ভোটের কতা লই চট্কাইলে ত আঁর চইল্ত ন, ঘরে মেলা কাম হড়ি রইছে।
আঁর এক দূর সম্পর্কের মাসি আছে মাইল আষ্টেক দূরে থায় কেতুহরে, কদ্দিন ধরি ভাইব্ছি হ্যাতেনরে চাই আইয়ুম, সময় আর কইর্তাম হারিয়েন না। আঁই চলি গেলে হোলামাইয়ার হড়ালেহার অসুবিধা অইব, রাঁধাবাড়ি করি কে আর খাওয়াইব, কাজের হোলাডাও হেই যে বাড়ি গেছে আর আওনের নাম নাই। তাই বলে কি আত্মীয় হজনের খোঁজখবর লইতাম্ ন। মাডির রাস্তা, ধুল উড়ের, ঝোপঝাড়ের কিনার দি এট্টুহানি আঁটলেই নোয়া বৌয়ের মত লাগের দুইহাশ, হরাই হরাই যাওন লাগে, লতা আই হড়ে মাথার উপ্রে, যন্তনার আর শ্যাষ আছে নি, কহ্ন যে যাই হৌঁছাইয়ুম ঈশ্বর জানে। আঁডি আঁডি, হা’র গোড়ালির ছাল উডি যার, তবুও আঁডি। আঁর মুসাত বইন দেই চখ বড় বড় করি কয়, ও দিদি, তোর হা হাঁডি ত রক্ত ঝরের। হেতি তাড়াতাড়ি উডানের এক কোণার তুন্ গেন্দা হাতা ছিঁড়ি আতের তাইল্লাত্ কচ্লাই আঁর গোড়ালিত্ চাপি ধরি রায়। রক্ত বন্দ অই যায়। আঁর মাসি চিৎকার দি কয়, কার লগে কতা কচ্ রে শেফু। অষ্টমীদি আইছে গ। মাসি ত আহ্লাদে আড্খানা। আতে আতে তালি দি কয়, অষ্টমীরে আঁর কাছে লই আয়, কদ্দিন মুখহান দেই ন। এদ্দিন বাদে মাসির কতা মনে অইড়ল বুজি। মাসি আঁর থুত্নিহান আল্তো করি ছুঁই বিলাপ কইর্তে শুরু করে। মাসিরে ক্যাম্নে হাম্লাইয়ুম, চয়ের জল হালায় ঝরঝর করি।
বুড়া অই গেছি মা, কদ্দিন আর বাঁচুম ক, তুই যে দেইখ্তি আইছস আঁই কত যে খুশি অইছি, কী কমু। ও শেফু, অষ্টমীরে এক গেলাস জল আর দুই চাইরহান বাতাসা দে, তাঁতি পুড়ি আইছে, বয় মা বয়, আঁর কাছে বয়। আঁর মাথাগাইন টানি গালে একহান চুমা দেয়। মাসির মাথার আগার সাদা চুলগুন হরাই আত বুলাই দিলে মাসির আরাম হয়। আহ্! কদ্দিন বাদে কেউ এরুম করি মাথাত্ আত বুলাই দিল। বাঁচি থাক্ মা, বাঁচি থাক্। হতায়ু হ। মাগ, আর কইছ না, কি কষ্টে যে আছি, শরীলডারে লাড়াইতাম হারি না, ডাইন আত ডাইন হা অবশ অই গেছে। মাসির কষ্ট দেই হরানডা আঁর জ্বলি গেল। বুড়াবুড়িগ কত যে কষ্ট!
বাঁইচ্তে ইচ্ছা করে না রে মা, এবার যাইতে হাইর্লে বাঁচি। অমলটা ত আঁরে রাই স্বর্গবাসী অইছে। নাতিডারে আঁর কাছে রাই চলি গেছে। হান্ডাগুলি মারি বেড়ায় হারাদিন, ভোট লই মাতামাতি করে, কহ্ন কোন বিপদ ঘডায় কি জানি, মুয়ে ঐ হ্যাতের এক বুলি – নৌকা মার্কায় ভোট দিন। বউডা থাইক্লে না অয় কতা আছিল, হেই যে শ্রাদ্ধশান্তি শ্যাষ করি গেল, আর এমুখো অয় ন। অন্ ত হুনি হেতির মা বাপে আবার বিয়া দিব। শেফুডার ত কবে বিয়ার বয়স হার অই গেছে। আঁই দুই চখ বুইজলে এগুনের যে কী গতি অইব, আঁই চিন্তায় চিন্তায় মরি যাই। মাইয়া গোঁ ধরি বই আছে, বিয়া কইর্ত ন, হেতি চলি গেলে আঁরে কে দেইখব এই ভাবনা মাথাত্ গাঁড়ি বইছে, দেয়চ্ নারে মা, এক্কান হোলা যদি হাছ্,কানা খোঁড়া যা হোক, খাওয়াইতে হরাইতে হাইর্লেই চইল্ব। না অয় যা দিনকাইল হুইরছে হিয়াল কুত্তা টানি লই চলি যাইব। মাসি এত কতা কইয়েন না, যার কেউ নাই, তার ভগবান আছে। নাতিডারে এট্টু বুজাই ক য্যান্ আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ না করি কোন ধানের গোলায় খাতা লেওনের কামে ঢুকি যায়।
আঁই মাসিডারে উল্টা দিক করি হোতাই দিলে যতিন আই হাঁদাইল। কয়, বুড়ি আবার বক্ বক্ শুরু কইর্ছে বুজি। আরে হ্যাতেনে কয় আঁই বলে খালি বেগার খাডি। রাজনীতির কিছু ত বুজে না। আরে বঙ্গবন্ধুরে না জিতাইত হাইর্লে হাঞ্জাবীরা হিন্দুগ কচুকাডা করি ছাইড়ব। এই দ্যাশে হিন্দুরা আর থাইক্ত হাইর্ত ন। কতাডা যতু এক্কারে ভুল কয় ন, চিন্তার বিষয় আছে।
দিন ত চলিই যায়। মাসিও যাইত দেয় না। কয় আরো দুই দিন থাক্। ওমা যে ছাগলডা গাছের গোড়ায় বাঁধি রাইখ্ছে ম্যাঁ ম্যাঁ করি ডাকে। কি জানি ছাগলডাও বুজি হালাইছে অতিথ্ এবার বিদায় লইব। ঘাস সামনে ধইর্লেও খাইত চায় না। মায়া মমতা এরুম জিনিষ আডার মত লাগি থায়, ছাড়াইতে চাইলেও ছাইড়তে চায় না। যতু আইজ্ লাফাইতে লাফাইতে বাড়ি আইছে। আওয়ামী লীগের সভায় চাইর মুই তুন্ দলে দলে মানুষ আইছে। আততালিতে হাঁডি অইরছে জীবনতলার মাড। এরুম উচ্ছ্বাস দেই জামাতীগ হুঁশ উড়ি গেছে। মাসি বিছনার তুন্ চিৎকার করি কয়, হারামজাদা, তোরে মানা কইর্ছি নি কোনও সভাত্ যাইতে না। কী যে কও ঠাম্মা, আওয়ামী লীগ এবার হচুর ভোডে জিতব। বঙ্গবন্ধু কইছে স্বাধীন বাংলা অইব। হশ্চিমারা আঁঙ্গ ট্যাঁয়া হইসা, কাঁচামাল বেক্ কিছু চুরি করি লই যার, হ্যাতাগ দ্যাশের কারখানাত্ জিনিস বানাই আঁঙ্গ দ্যাশে চড়া দামে বেচে। বেক্ সরকারি দপ্তর হশ্চিম হাকিস্তানে। আঁঙ্গ হোলারা চাকরি হায় না। এরুম তফাত করন আর চইল্ত ন। এটা আঁঙ্গ জাগা, বেক্ অধিকার অন্ অইতে আমরা বুজি নিমু। মাসি রাগি টঙ অই যার। বিছ্না চাপরায়। হ্যাতে কি কয় রে অষ্টমী, আঁই ত কিছুই বুজি না। আম্নের বুজনের দরকার নাই গ মাসি, হ্যাতে যা কয়, ঠিক কয় গ মাসি। তুইও হ্যাতের কতায় তাল দেছের, তোরা বেক্গুন আঁর হত্তুর, আঁই মরলেই তোগ শান্তি। মাসি আম্নে খালি মরার কতা কন্ কিয়ের লাই। যতু আছে, শেফু আছে, আঁই বাঁচি আছি, আম্নের এত চিন্তা কিয়ের লাই।
তোরা বুইজ্তি হাইর্তি ন আঁর মনের কতা, এই দ্যাশে হিন্দুগ কোন দলের নেতারা মানি লইত ন। আঁর যতুর যদি কিছু অই যায়, বংশে বাতি দেওনের লাই কেউ থাইক্ত ন, আঁই আঁর দ্যাশের মাইন্ষ্যেরে চিনি, হ্যাতারা বেক্গুনে ভাই ভাই। দ্যাশ ভাগের সময় দেই ন, কেউ আঁঙ্গরে বাঁচাইত আইছিল নি, হুইরে ডুবি থাই মাইয়ারা হরান বাঁচাইছে, বাড়ির কত্তারা হলাই আছিল হাট ক্ষেতে। হেই দিন যে হিরি আইত ন, কে কইত হারে। মাসি হেই দিনের কতা কী আঁই ভুলি গেছি। সময়ও হাল্টায়, মানুষও হাল্টায়। অন্ ত বঙ্গবন্ধু কইছে আমরা হিন্দু মোছলমান মিলি নোয়া দ্যাশ বানাইয়ুম। আরে মুজিব কী এই দ্যাশের মালিক, না হ্যাতেনের কতা দ্যাশের বেক্ মানুষ হুইনব। আ্ম্নে মাসি হাঁচা কতা কইছেন, চেষ্টা করি দেইখ্তে ক্ষতি কী! অইন্য আর কী উপায় আছে হিন্দুগ সামনে, আম্নে ক্ন্।
অষ্টমী হিশী, ঠাম্মা কউক্ আঁই হুইন্তাম্ ন, হুরান দিন আঁই দেই ন, আঁই এই দিন দেইয়ের, বঙ্গবন্ধুর কতা আঁর ঠিক মনে অর, আঁই হ্যাতেনের লগে আছি, যা অয় হরে বুজুম। শেফু আর কতা কইত হারে না, বোবা অই গেছে য্যান্। কার কাছে যে কইব। হেতিরে হাঁপাইতে দেই আঁই কইলাম, কী অইছে রে? দম আট্কাই আইয়ে, তবু নিজেরে হামলাই লই শব্দগুন উড়াই দেই। আর কইছ না দিদি, ঐ যে নিরু কাকিমার ছোড বইন, কাকিমার লগেই থায়। কোনও উপায় না দেই নিজের কাছে আনি রাইখ্ছে। হেতির মাথায় এরুম গোলমাল অইছে, ধরি রাওন যায় না, ঘরের মইদ্যে যা জিনিসহত্র আছে বেক্গাইন ভাঙিচুরি হালার, যারে সামনে দেয় বেক্গাইন মেলাই মেলাই হালাই দের।
শেফুর কতা হুনি মাথাডা ঝিম মারি আইয়ে। মাইয়াডারে কি জানি ভূতে ধইর্ছে নি, গরমে ভালা মাইন্ষ্যের মাথা হাডি যার, আর হেতির ত মাথার দোষ আছে। কাঁচা বয়সে বিধবা অই গেছে, সাদা থান হরি থায়, চুলগাইন বাডি ছাঁডের মত কাডি দিছে। হেতির বয়সী মাইয়ারা রং চং মাই ঘুরি বেড়ায়। হেতি ত বেদিশা অই গেছে, কোন মুই যাইব, হাগলের মত হুইরের ঘাডে বই থায়। নিজের মনে গাছের ঠাইলের লগে কতা কয়। একবার সদর দরজার মুই যায় আবার বেতইন গাছের ছায়ার লগে ঘষাঘষি করে, ডুয়র গাছে উডি লাফায় ঝাঁপায়, কে আর তহ্ন জাইন্ত এরুম অইব। দিদির বাড়ি আই হাগলামিডা এত জাপটাই ধইরব, হাড়া হতিবেশী কেউই ত বুইজ্ত হারে ন। কারও মাথায় যহ্ন হোকে বাসা বাঁধে, নিজেও ত টের হায় না, কুরি কুরি খায়, জোরে লড়ি উইঠ্লে হামলাইত হারে না। দরজাহান খুলি মাইয়াডার কাছে যাই হিডে আত দিলে ছেঁকা খাওনের মত লাফাই উডি আঁর গলা চাপি ধরে। মনে অইল এই বুজি শাঁস বন্দ অই মরি যাইব যাইয়ুম। ওমা কী মনে করি আঁর চয়ের মুই কিছুক্ষণ চাই রেহাই দিল। মাইয়ডার এই রোগের কারণডা আঁর কাছে ধীরে ধীরে হরিষ্কার অইল। কত কষ্ট হেতির বুকে চাপা হড়ি আছে, কে এক্কান রাস্তা দেহাইব? অল্পবয়সী গ্ৰামের বিধবার যে কত কঠিন হরীক্ষা দিত হয় সূর্য উডার তুন্ সূর্য ডুবা হইয্যন্ত, কেউ কি চখ মেলি চায় একবার, খালি ছোলাই খাইত চায়। আঁই যহ্ন কইলাম্, বইন তোরে আঁই আর একবার বিয়া দিমু, হচন্ড গরমে শইর্ল্যে বিষ্টির জল অইড়লে যেরুম হয়, চয়ে মুয়ে এক টুকরা আলো য্যান্ ঠিকরাই বার অইল। হ্যাঁরে হাগলি, হিন্দুগ মইদ্যে বিধবা বিয়া হয়, তুই জানছ্ না। হুনি ত হেতি আকাশ তুন্ হইড়ল। ঘাড় লাড়াই কইল, না। আঁর আত দুইডা চাপি ধরি কইল, কন্নাই লেয়া আছে। মাইয়া ত হড়ালেয়া জানে না, ক্যাম্নে বুজাই, এ ত ভারি বিপত্তি। আঁঙ্গ দ্যাশের মাইন্ষ্যেরা স্বাধীনতা চাই, স্বাধীনতা চাই বলি হরান দি হালার, আরও যে কত আঁন্দারে গ্ৰামগঞ্জ ডুবি রইছে, হেই খবর কেউ রায়ে না, বঙ্গবন্ধুরে আরও কত কিছুই না হাল্টাইতে অইব। মনে মনে কইলাম্, মাইয়াডার মঙ্গল হোক। দুই দিন বাদে হুইন্লাম্, হেতির মাথার হোকাডা এট্টু কমই লড়ে চড়ের। আঁর সান্ত্বনার কতা হুনি মনে অয় হেতির বিশ্বাসডাও হিরি হাইছে কে জানে। হেতি বলে বন্দ ঘরের জান্লা দি আঁঙ্গ মাসির ঘরের উডানের মুই চাই থায়। কী মনে করি বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ বইহান হেতির আতে দি আইলাম। হেতি বইহান উল্টাই হাল্টাই দেইখ্ল।
আঁর মাসি অগ্গা ছাগল হাইল্ত। কত আদর করি লালী কই ডাইক্ত। মাসি ঘুমের তুন্ উডি দেইখ্ল আই বেয়ানের আলোডা তেছরা অই ঘরের মইদ্যে হইড়ছে। হেরুম তেজও নাই, শীত এরুম কাবু কইর্ছে, আলোর ক্ষমতা নাই ঠেহায়। মাসি ত ঠক্ ঠক্ করি কাঁপে। কাঁথার তলার তুন্ কয়, লালীর ডাক হুনিয়ের না কিয়ের লাই রে শেফু। দড়ি ছিঁড়ি উডানে চড়িবড়ি খার বুজি? শেফু ঘরের দরজায় আই দেইখ্ল লালী নাই, গোডা বাড়ি খুঁজি দেইখ্ল কোন হদিসই মিলল না লালীর। কী জবাব দিব অন্! উত্তর না হাইলে মাসি বাড়িহুদ্দা চেঁচায় হাডাই হালাইব। খোঁজ্ খোঁজ্ এই বাড়ি হেই বাড়ি। কেউ কইল, দেইখ্ছিলাম বটে, দত্তগ বাগান বাড়িত্ হাঁদাইছে। আর রক্ষা নাই লালীরে হিডি মারি হালাইব। এই খবরহান ক্যাম্নে দেই! আবার অইন্য খবরও ত ভাঁই বেড়ায় – জয়নাল হাড়ার এক দুষ্টু হোলা গলার দড়ি ধরি টাইন্তে টাইন্তে লালীরে লই চলি গেছে। সব্বনাশ! অন্ কি অইব, মাসির কানে গেলে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাইব। দুই রম কতার ফাঁদে হড়ি দূর্বিষহ কইরব অবস্থা। দত্তবাবুরা কী ছাড়ি কতা কইব। গাছের আগা খাইলে গুষ্টির তুষ্টি কইর্ব। আর যদি জয়নাল হাড়ায় যায় হ্যাতাগ এত ছাগলের মইদ্যে তুন্ লালীরে খুঁজি বার করন সহজ কাম অইত ন। যতু বার অইছে লালীর খোঁজে, কোন মুই যাইব উত্তর মুই দত্তগ বাগানে না দইন মুই জয়নাল হাড়ায়। মইনুল আগ বাড়াই জিগ্গায়, কীরে যতু কন্নাই যাছ্, ছাগলের খোঁজে বুজি? ছাগল কিয়ের লাই কছ্, হিগার এক্কান নাম আছে। তুই ক্যাম্নে জান্লি আঁঙ্গ বাড়ির লালী চুরি অইছে। তোরে কইউম্ কিয়ের লাই ক্যাম্নে জাইন্লাম। ও তাইলে তোগ হাড়ার কেউ চুরি কইর্ছে। কী কইলি, আমরা চোর। চোর যদি না অবি, জাইন্লি ক্যাম্নে! হরমান দে তাইলে।
ছাগল দল বাঁদি মাডে চরে, আলাদা করি লালীরে চিন্ত ত হাইর্ত ন। মাইন্ষ্যের মত নাম ধরি ডাইক্লে সাড়া দিব। হ্যাতেরা ত চোর বদনাম দিছে, ইয়ের লাই বেক্গুনে মিলি মাইর্ত আইয়ে। হুলিশের কানে এই খবর যায়। যতুর আবার আওয়ামী লীগের সমর্থক বলি হরিচিতি আছে হাঁচ গ্ৰামে। নালিশ গেছে হ্যাতে জাত তুলি গালাগাল দিছে। হুলিশ দেইখ্ল এই হুযুগ – দে হালারে লক আপে ভরি, মালাউনের জাত, ইসাব করি কতা কইতি শিখছ্ ন।
হাটিত্ খবর গেলে এক নেতা আই আর এরুম কইর্ত ন এই কই মুচলেকা দি জামিনে ছাড়াই নিল। যতুর কানে কানে কইল, ভোটের সময় এরম কইর্তে আছে বাপ। জয়নাল হাড়ার আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এবারের মত তোরে বাঁচাই দিছে। এরম কতা আর কইছ্ না, পার্টির উপ্রে মাইন্ষ্যে অযথা আঙুল তুলি দিব, তোর গাত্ নৌকা মার্কার ছাপ্পা মারা আছে, হেইডা বুজচ্ না, মন দি পাটিডা কর। দাদা, আঁর লালীর কী অইব? রাখ্ ত তোর লালী, হশ্চিমাগ আত তুন্ দ্যাশ রক্ষা কইর্ত অইব, কঠিন সময়, চাইর মুই আগুন জ্বলের। খবর কিছু ত রাখছ্ না। আঁর ঠাম্মা, ছাগল না লই গেলে কাঁদিকাডি মরিই যাইব, লালী হ্যাতেনের হরান। আইচ্চা, তোর দাদীরে আঁই বুজাই কই দিমু, তুই চিন্তা ছাড়ান দে।
মাসির আঁর হারা রাইত ঘুম নাই। যারে মনে হুষি রাই জীবন চলে, অন্ হিগারে যদি টোকাই না হাওন যায়, তাইলে মনে এট্টু আদ্টু দুখ্ ত অইবই, অবাক অইবার মত ত কিছু নাই। এত সহজ কতায় কী উড়াই দিলে চলে! মাসি টপাটপ চয়ের জল হালায়, কিছুতেই বুজাই কইত হারিয়েন্ না। মাসি বুড়া অইছে, জীবনের কত রঙ্গ দেইখ্ছে, তবুও কি কইত হারে নি অন্ও কোনডা ঠিক, কোনডা বেঠিক। আর যদি বুজেও হ্যাতেনের কতাহান কে আর অত মাইন্য করে। কবে ত জম্মাইছে, দ্যাশের অবস্থাহান তহ্ন কেরুম আছিল, হাবভাব আর চিন্তা করনের ঢঙ, ডাকাডাকির রমসম এক লগে মিয়াইলে ভিন্ন জগৎ। হেই জগতের স্বাদ আইজকাইলকার ছুট্কিয়ারা ক্যাম্নে আর বুইজ্ব।
আইচ্চা মাসি, আম্নে গণতন্ত্র, আন্দোলন, স্বাধীনতা, ধর্মঘট এই কতাগাইন কহ্নও হুইন্ছেন নি? অষ্টমী, তোর এত ভারি ভারি কতা হুনি আঁর কাম নাই। তোর আন্দাজ আক্কল কিচ্ছু নাই রে। মারে, এসব কতা হুনুম ক্যাম্নে, য্যাই কারণে ইগাইন্ অর, হিগাইন্ ত আগে আছিল না। ঘরে ঢুকাই দিছিল তহ্নকার মাইন্ষ্যে গরু দৌড়ানর মত করি। আম্নের অন্ ইচ্ছা করে না হুরা বাংলারে ঘুরি দেইখ্তে যেরুম করি মুজিব দ্যায়ের। এই দ্যায়াডা বড় আজব দ্যায়া। কত মায়া, কত মমতা, কত রক্তের ঢেউ খেলা, কারা যে মাইজ্ মাডের দহল নিব কেউ জানে না।
জানে জানে, কইত হারে না। আঁঙ্গ আর এক দ্যাশ আছিল, হেই দ্যাশডা ছিল হুরা আঁন্দার, হারিকেন আর কুপির আলোয় সংসার দ্যায়া, মাইয়া মানুষ আর বাইচ্চাকাইচ্চার মুখ খালি কিলবিল কইর্ত। মশামাছি আই ভ্যান ভ্যান কইর্ত কানের কাছে। তেনাতুনা কাহড়চোহড় হরি লইজ্জা নিবারণ, কে বুইজ্ব রে এই জ্বালা, কোন্ডা সুখ কোন্ডা দুখ্, বুজানর কে আর আছিল। আঁসি মস্করা আমোদ আল্লাদ কন্নাই আর, চয়ের জলে রাইত দিন হার অই যাইত। কে আর গপ্প হুনায়, কত কিছুই না ঘইট্ছে এই দুইন্নায়। কারা আইল, কারা গেল টের হাই ন, আইজও হাই না। এ য্যান্ এক জেল। হাঁচিল কই, দ্যায়া ত যায় না, ঘিরি রইছে ছায়ার মতন, হ্যাতেনে গুমরাই মরে।
ঠিক কতা কইছচ্ রে মা, মনের কতাহান কইছচ্। চুলের মুডি ধরি মা ঠাম্মারা টাইন্তে টাইন্তে লই যাইত চুলার কাছে, কইত ইয়ান তোগ জাগা। ধোঁয়া উইঠ্ছে ত উইঠ্ছে, লাকড়ির ধোঁয়া হাকের ঘরে, হাঁক খাইতে খাইতে শরীলডা উপ্রে উইঠ্ছে আর নাইম্ছে, যাইবার জাগা নাই। হুইর হাড়ে লাডি লই বই রইছে গুরুজনরা, কয়, ‘ঐ মাইয়া কন্নাই যাবি, এক হা যদি আগাছ্ লাডির বাড়ি দি ঠ্যাং খোঁড়া করি দিমু।’ আঁঙ্গ ইচ্ছাগাইন এক ধমকে চুরমার অই যাইত, হেই যে যাইত আর জোড়া লাইগ্ত না। কত হোলার ইচ্ছা হুরন অইত, ড্যাং ড্যাং করি চলি যাইত। যিয়ানে যাইবার যাইত, আমরা ঘরের চৌকাডে বই মাথা খুঁড়ি মইর্তাম। তুই অন্ আঁরে কত কতা হুনাচ্। আঁর মত মুরুখ্য মানুষ ইগাইনের অর্থ বুজা ত দূরের কতা জম্মে হুনিও ন। তুই যতুরে ক আঁর লালীরে খুঁজি আনি দিত। হেতির মুই চাই থাই ত আঁর দিন কাডে, তোরা বুজচ্ না, আঁই অন্ ক্যাম্নে সময় কাডাইয়ুম, হেই বেডি আঁরে না খুঁজি হাই কত কাঁদাই না কাঁইন্ব, অন্ ত হেতিই আঁর দ্যাশ। তোগ দ্যাশ তোরা খোঁজ, আঁই আঁর লালীরে চাই।
যতুর মন আইজ্ খুশি খুশি। বাতাস বইছে এলোহাতাড়ি, কে যে কোন মুই যাইত চায় কেউ জানে না। কতা জিগ্গাইলে কেউ উত্তরও দেয় না মন খুলি। কেউ একজন কই চলি গেল বিড়বিড় করি, দিনক্ষণ ঠিক অই গেছে। কেউ কোন চিন্তা করিয়েন না, আমরা জিতুম। আমরা আবার কারা! কে যে কোন দলের, কে জানে। এক দল মানুষ হাকিস্তানের হতাকা উঁচাই বড় নৌকাত্ করি বড় রাস্তার মাইজহানে আই জমা অইছে। হ্যাতেরা যে এই গ্ৰামের মানুষ ন, হেইডা বুইজ্তে দেরি লাগে ন। যতু বাড়িত্ আই খবর দিল এক্কান গোলমাল লাইগ্ব আইজ্, অবস্থাহান সুবিধার ন। কী জানি কি অইছে। দ্যাশ যহ্ন ভোটের বাতাসে হুরা গরম, তহ্ন এরুম এক্কান দশা অইব কিয়ের লাই। এরুম এক্কান ঘটনার যে সাক্ষী অইত অইব, ভাইব্তাম্ও হারি ন। মাসির বাড়ি আইবার তুন্ কত কিছুই যে মনডারে বিগ্ড়াই দের, ভিজা কাপড় চিবানোর মত, জল গড়ায় টলটলাই হড়ে হোঁডা হোঁডা। কী কইয়ুম, কোন দিশা খুঁজি হাইয়ের না। এরুম এক্কান কাণ্ড কী করি ঘইট্ত হারে! ড্যাগা ড্যাগা হোলারা হুক্না মুহে চখ কচ্লাই আইলের হঁত ধরি আঁইড্তে আঁইড্তে বইখাতা শিলেট, হিন্সুলের থলি মাথাত্ লই ঘরে চলি আইয়ের অসময়ে। এত মুখ এক লগে দেই আঁই ঘাব্ড়াই গেলাম। ঝড় উইঠ্লে এরুমডা অয়। ব্যাদিশা অই কত মানুষ যে হঁত ভুলি যায়, তার কি ইয়ত্তা আছে। বুইজ্লাম আবার হশ্চিমারা আর এক চক্রান্ত কইর্ছে। দ্যাশের মাইন্ষ্যের মাজা ভাঙ্গি দিত অইলে এক্কানই অস্ত্র হেগুনে ধার দেয়, হড়ালেয়া শিহান চইল্ত ন। হোলাআইনের হশ্ন করার ক্ষমতারে নষ্ট করি দ্যাও। হল্ যে উল্টা অইত হারে এটা হশ্চিমা সরকার দেরিতে অইলেও বুইজ্ব। হোলাগুনের মুয়ে হেই এক কতা ‘আঁঙ্গ ইস্কুলহান বন্দ করি দিল, অন্ আমরা হড়ুম ক্যাম্নে?’ এই ছাত্রগুন অন্ কন্নাই যাইব, দশ মাইলের মইদ্যে কোনও ইস্কুল নাই। সরকারি আদেশে নাকি হুরা দ্যাশে অনেক ইস্কুল বন্দ অই গেছে। আওয়ামী লীগের নেতা এই বন্দের বিরুদ্ধে রাস্তায় নাইম্ছে। নেতারা কর, আঁঙ্গ দ্যাশে ইস্কুল চালাইবার লাই সরকারের কাছে ট্যাঁয়া নাই, হশ্চিম হাকিস্তানে এক্কান ইস্কুলও ত বন্দ অয় ন। আঁঙ্গ দ্যাশের ট্যাঁয়াগুন লই যাই নিজের দ্যাশে সম্পদ বাড়ার এইডা ক্যাম্নে মানি লওন যায়। হ্যাতারা এই কতা লই গর্জি উইঠ্ছে, ছাত্ররা যাই যোগ দিছে। আঁর মাসিগ গ্ৰামের হোলারাও কম যায় না, হেগুনেও ছুইট্ছে হেই মুই। ভোট যত আগাই আইয়ের, সরকারের মতলব ঘরে ঘরে হৌঁচাই দেওন শুরু করি দিছে নেতারা – শিক্ষার অধিকার হিরাই দিত অইব। ইস্কুল আবার খুইল্ত অইব। এই আন্দোলনের চেহারা দেই সরকার বুজি গেছে হ্যাতারা এই নির্বাচনে গো হারা হাইর্ব। দ্যাশের মানুষ এইডাও বুজি গেছে মঙ্গা রুইখ্ত গেলে, বাঙালিগ সরকারি চাকরি হাইত গেলে হশ্চিমা শাসন তুন্ হুব হাকিস্তানরে বার করি আইন্ত বঙ্গবন্ধুর দ্যায়ান্না হঁতেই চইল্তে অইব।
ওমা হোলামাইয়ারা হঁতেঘাডে, আঁডে বাজারে বলা শুরু করি দিছে – ‘ নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’ ঘরে ঘরে নৌকার ছবি আঁকি, বুয়ে লাগাই ঘুইর্তে আছে। যতুও ত কম যায় না। হ্যাতে ত বাড়ির উডানে নাইচ্তে নাইচ্তে চিল্লায়, ‘জয় আওয়ামী লীগের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়।’ ড্যাগা ড্যাগা মাইয়ারাও হ্যাতের হিচনে হিচনে ঘুরি ঘুরি গোল অই কতার লগে তাল মিলায়।
কীরে অষ্টমী, ঘরের বারে এত চিল্লাচিল্লি কীয়ের লাই? জালে কোন বড় বোয়াল ধরা অইড়ছে নি? মাসি চুপ করেন, কোন কতা কইয়েন না। জামাতে ইসলামীর নেতারা ভোট চাইত আইছে। জনে জনে জিগ্গায়, এই বাড়ির মানুষরা কোন দলেরে হছন্দ করে। আই কইলাম, হেইডা এক্কান কতা অইল নি বাপেরা, আঁই ক্যাম্নে জানুম কার মনের মইদ্যে কে আই বাসা বাঁইনেছে। এক এক জনের এক এক রকম সমইস্যা। যার চাকরি দরকার, য্যাতারা তার চাকরির বন্দোবস্ত করি দিব, হ্যাতাগ দিগেই ভোটটা যাইব, যার দোয়ান দরকার, তারে হুঁজি দিলেই খুশি, যে মানুষ শহরে আওন যাওয়া করে, তার এক্কান ভালা রাস্তা অইলেই আর কিচ্ছু চায় না। এই ধরেন গ্ৰামের ইস্কুলহান সরকার বন্দ করি দিল, মাষ্টর চায় ইস্কুলহান আবার চালু হউক তাইলেই মনে শান্তি। মনের শান্তিই ত আসল, ভোটটাও হেই পার্টির দিগে যাইব। আম্নেরাই কন্, আঁই কতাগাইন মন্দ কইছিনি। হ্যাতেনরা কয় আ্ম্নে ত বড় কটর কটর কতা কন্। এই বাড়ির বুড়া মাইন্ষ্যেরে ডাকিয়ের লাই চাই, হ্যাতেনের লগে আঁঙ্গ কিছু কতা আছে। কী যে কন্, হ্যাতেনে ত বুড়া মানুষ, বিছ্নায় হুতি থায়, কিছু কওনের থাইক্লে আঁরে কন্। আঁই আ্ম্নেগ বেক্ কতার জবাব দিমু। হ্যাতেনরা অবাক অই আঁর মুয়ের দিগে কিছুক্ষণ চাই থাই কইল, ‘এই বাড়ির কার কতগাইন জমি, আম্নে হেইডার ইসাব জানেন নি?’ জমির ইসাব আম্নেগ কোন্ কামে আইব? আইব, আইব, ভোটের হরে বেক্ ইসাব অইব ত। আমরা ক্ষমতায় আমু না। আওয়ামী লীগ তহ্ন কলা চুইষ্ব। বাপেরা, আম্নেরা ত আঁঙ্গ আপনজন, হতিবেশী, এরকম করি কতা কন্ কিয়ের লাই? কতা কই কি আর সাধে, মুজিবুর রহমান আঁঙ্গ হিচনে এরুম লাগা লাইগ্ছে, আমরা নিজের দ্যাশেই বেকের চক্ষুশূল অই গেছি।
মতিনের গলা হাইয়ের মনে হর, তুই আবার কবে এই দলে নাম লেহাইচস্? হ্যাঁগ দাদী, ঠিকই চিন্ছেন। বেক্গুনেরে কইয়েন ভোটটা য্যান্ আঁঙ্গরে দেয়, দিনকাল ত ভালা ন, কহ্ন কি হয় কওন কি যায়। সোন্দর করি ক, ডর দেয়াইলে কী লাভ অইব। তোরাও এই দ্যাশের মানুষ, আমরাও চইদ্দ হুরুষ ধরি এই দ্যাশে আছি, এই কতাহান মনে রাইচ্।
ঘরে ঘরে হ্যারিকিয়ের লাই টিম টিম করি জ্বলে। কেরসিনের আকালে কেউ আবার কুপি জ্বালাই রাইখ্ছে। দূর তুন্ দেইখ্লে লাগে গাছগাছালি দি ঘেরা গ্ৰামখানা য্যান্ সূর্য ডুবি যাইতে না যাইতেই ঝিমাই অইড়ছে। কী অইব কাইল এই লই বুয়ের মইদ্যে হাথর চাপা দি রাইখ্ছে, মুখ দি কারও কতা হরে না। হুসুরহাসুরের শ্যাষ নাই। মাগরিবের নামাজ শ্যাষ অইছে ঘন্টা খানিক অইল। মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খও বাজের, কাঁসরঘন্টাও বাজের। কাইল্লার দিনডা কেরুম যাইব, কি জানি। হিন্দু মোছলমান বেক্গুনের মনে এক এক রমের চিন্তায় কেউ দুই চয়ের হাতা এক কইর্ত হারেন না। কুত্তা বিলাইও বিপদ বুজি এরুম কুডাক ডাকে, মাইন্ষ্যের বুক কাঁপে। বনেবাদাড়ে কোন শব্দ অইলে বেক্গুনে ঘর তুন্ এক লগে বার অই দেইখ্ত যায় আবার কিছু এক্কান অইল বুজি। নৌকাত্ চড়ি কারা য্যান্ দূর দূর তুন্ আই রাইত থাইক্তেও বাজারে জড় অর। চাষাভূষা, কামার কুয়ার, তাঁতি ধোয়া নাপিত কেউ কি আর বাদ যায়। এক্কানই চিন্তা কাইল্লা ঠিক অইব, এই দ্যাশের শাসন কোন্ দল কইরব। আওয়ামী লীগ যে দাবীগাইন রাইখ্ছে, হশ্চিমা সরকার কিছুতেই মাইন্ত ন, তাইলে কী অইব!
মাইন্ষ্যের মনে এইডাই ভাবনা, এই দ্যাশ ত অনেক ভাঙন দেইখ্ছে, বাংলা ধম্মের নাম করি, শাসনের নাম করি কত ভাগাভাগি অইছে, হশ্চিমারা আঁঙ্গ লাই করদ রাজ্য বানাই রাইখছে, ইয়ার তুন্ এইবার মুক্ত হওন চাই। ঘরের দরজার আড়াল তুন্ টিকটিকিটা টক্ টক্ টক্ করি উই্ঠ্ল, তিন হাঁচা অইলে দ্যাশের যাতে মঙ্গল হয় মাইঝরাইত হর্যন্ত জাগি থাই হেই কতাই ভাবি। উদ্ বিলাই সড়াৎ করি এই ঝোঁপ তুন্ এই ঝোঁপে লাফাই গেলে চিন্তাগাইন ভাঙি হান হান অই যায়। দুই এক্কান হঁইক কিয়ের লাই এই অসময় ডাকি উডে। মন মাইন্ত চায় না। হেগুনের মইদ্যেও কি শুরু অইছে নোয়া কোন ছট্ফটানি! মাইন্ষ্যের লগে হেগুনেও ডরে কাবু অই যার। দ্যাশের গন্দ ভাঁই বেড়ার গাছের গোড়ায়, গাছের ডগায়। চাইর হাঁচগা কুত্তা হুতি আছিল, কী এরুম অইল হেগুনে ঘেউ ঘেউ করি উডের। এত্ত বড় বাড়িডায় কোন সাহসে চোর ডাকাইতের উৎপাত অইছে আইজকার রাইতে, যহ্ন বাড়ির বুড়া জোয়ান বেক্গুনে জাগি রইছে, জোনাকিগুন মিট্ মি্ট্ করি জ্বলি উডানের চাইরদিগের হুলগাছেরে জাগাই রাইখ্ছে। কারা যে্ন্ ঘরের চালে ইডা মারি চলি গেল। হ্যাতারা আবার কোন আপদ! কোনও সাড়াশব্দ নাই। এক আতে লাডি আর এক আতে টর্চ মাইর্তে মাইর্তে চলি যার। আলোর আভায় কত খাল, কত বিল, কত জলা, কত হঁত, কত মাইন্ষ্যের মুখ দেয়া। আলো হুরাই যাইব, মানুষগুনও হাল্টি যাইব – অচেনা মুখ, অজানা কতা, অজানা জীবন, অজানা দ্যাশ। মানুষরা দৌড়াই চলি যাইব জান হরান দি ঐ ঘরের দিগে, ভোটার কার্ড, ভোটার লিষ্ট, ব্যালট, আঙুলের কালি, ভোটের বাক্স হিয়ানে মাইন্ষ্যের চিন্তারে জাপটাই ধইর্ব। ইয়ার হরে আর কিছু নাই, আলোডা নিভ্তে নিভ্তে আঁন্দারের দিগে চলি যাইব এরুম করি, কেউ জান্তই হাইর্ত ন, কোন কালেও হাইর্ত ন। মাসি আধা ঘুমে গোঙায় – বেয়ান অইতে আর কতক্ষণ লাইগ্ব। এরুম করি কইল য্যান্ এতদিনের নাড়িডা ছিঁড়ি রক্ত ঝরি হড়ের, ঘরের মেঝে চৌকাড ভিজি যার। এট্টু হরেই এক্কান শব্দ হুনা গেল – যা তোরা গোয়াল ঘরের বেড়া খুলি দে, হাম্বা হাম্বা করি ডাকের, হুনছের না।
দিনটা নোয়া, আকাশটা নোয়া, মেঘেরা ভাঙা ভাঙা, হঁইকগ ডানায় নানা রঙের খেলা। আঁর মনে অইল গ্ৰামের বাড়ি যাইত অইব, কিয়ের লাই যামু, নিজের ভোট নিজে দিত অইব। একবার মনে অইল আঁই এরুম এক্কান দ্যাশের নাগরিক, যেই দ্যাশে আঁঙ্গরে মাডিত্ আঁছাড় দি মারি হালাইত হাইর্লে ভাবে, যা মইর্ছে, দ্যাশ তুন্ এক্কান আপদ বিদায় অইল। কিয়ের লাই আঁর এরুম মনে অর, এই দ্যাশে আঁই জন্মাইছি, আঁর শ্বাসে মাডেঘাডের টান, সন্তানের জন্ম দিছি, কত আত্মীয় স্বজনের আত্মা ঘুরি ঘুরি মরে আঁরে খোঁজে, মাইন্ষ্যের এত দরদী ডাক ‘এরিও কন্নাই চইল্লেন, বেক্গুনে কুশলে আছে ত?’ কন্নাই গেলে হাইয়ুম এরুম মানুষ, কেউ চিন্ত ন, দূর দূর করি দৌড়াই দিব। কী আশ্চার্য ত! আঁর মনে দুই রমের কতা ঘুরের কিয়ের লাই? এর উত্তর আঁরে খুঁজতই অইব। তাইলে কী দ্যাশডারে আঁই কম ভালবাসি? ফাঁকি রই গেছে? নাকি ভয়! এরুম দোটানায় ভুইগ্তে ভুইগ্তে আঁর দ্যাশ আঁর সামনে এক নোয়া আশার জম্ম দিল। জাইন্ত চাইল, কে তুই? আঁই ত মা, দ্যাশও আঁঙ্গ মা। কদ্দিন অইল মার রূপটা দেইন মন ভরি। মার দিগে চাইবার অবসরও অয় ন। আইজ্ দেইউম্ আঁই, গোটা দুইন্না হুদ্দা মানুষও দেইখ্ব। আঁঙ্গ দ্যাশের মাইন্ষ্যের চেহারা সুরত কেরুম, রাগে হাডি হুইরলে কেরুম লাগে, আনন্দ অইলে কেরুম লাগে। শয়ে শয়ে মানুষ চইল্ছে ইস্কুলে, কাঁচারি বাড়িতে, ভোট দিব কি না । হ্যাডে ভাত নাই, হরনে কাপড় নাই, হকেটে হইসা নাই, ঘরে চাইল ডাইল নাই। কিয়ের টানে চইল্ছে ঘর ছাড়ি খালি ওই মানুষটার কতায় বিশ্বাস করি! কি না – হশ্চিমারা আম্নেগ যা কিছু কাড়ি লই গেছে, এক এক করি বেক্গাইন আঁই হেরত দিমু, আম্নেরা আঁরে বঙ্গের বন্ধু বানাইছেন, বেক্গুনে মিলি দ্যাশডা গড়ি তুলুম্। এই কতাগাইন কী কল্পনা, এ কী দিনের আলোর মায়া স্বপন, নাকি হাঁচা কতা। এই দ্যাশ কারা আই মেঘনার জলে ডুবাই দিছে, মানুষ উদ্ধার করি আনার স্বপন দেয়ের। এক্কান ভোট বাক্সে ঢালি মহান নেতার আত শক্ত কইর্ত হাইর্লেই কেল্লা ফতে। হিয়ের লাই ঘরদূয়ার ছাড়ি রাস্তায় চইলছে ত চইলছে। যে যিয়ানে আছিল আতে বঙ্গবন্ধুর ছবি লই চিল্লাইতে চিল্লাইতে আই অইড়ছে। হরান দি হালার যেই করি হোক হৌঁচাইতে অইব। কন্নাই যানের গ? আরে হেইডাও জান না, দ্যাশ আঁঙ্গ আদা মরা অই গেছে, বঙ্গবন্ধুরে যেই করি হোক সিংহাসনে বয়াইত অইব, জান কবুল। আঁন্দা নি আম্নে, দেহেনের না চাইরদিক আঁন্দার, হঁতঘাড্ উঁচানিচা, খানাখন্দে ভরা, কেউ আছে নি উডাই তুইলব। উষ্টা খাই হড়ি যাইয়ের, যেই করি হোক যাইত ত অইব। আঁরে লগে নিবেন না, একলা একলা চলি যাইবেন। হাঁ চালান বদি।
এরুম দ্যাশের চেহারা ত আগে দেই ন কহ্নও। হ্যাতেরা বাঙালির মনের ভাব বুজি হালাইছে। আর উপায় নাই, এইবার অইন্য চাল দিত অইব। সিংহাসন হ্যাতেরা কোনমতেই ছাইড়্ত ন। তার আগে হরখ করি নিত চায়, বাঙালিরা হ্যাতাগ লগে ঘর কইর্তে চায় কি না, যদি না চায় অইন্য ঔষধ দিব। হশ্চিমাগ মতলবহান বুইজ্তে কী আর বাঁই আছে, এমনিতে কই বেড়ার, ‘খাবাই দিমু বাংলা’। ভোটের শেষের ঘন্টা বাইজ্ল, জনগন নাই্চ্তে নাইচ্তে ঘরেও হিরল, মনে অইল, থ্ম্ মারি আছে হুরা গ্ৰাম।
দ্যাশ চিনে না, ঘর চিনে না
মাইন্ষ্যের বিচার করে
এ কেরুম আজব দ্যাশ
ধম্মের নামে মানুষ দৌড়াই মারে
মইদ্যে যে ঘর একদিন হুড়মুড় করি ভাঙি গেছে হেই ঘর যে জোড়া লাইগ্বার লাই ছটফট কইর্ব, কেউ কোনদিন ভাইব্তে হাইর্ছে নি। বেক্ কিছু চয়ের নিমিষে হাল্টি যাইব, হাঁচা কতাহান অইল আঁই বিশ্বাস কইর্তাম্ হারিয়েন্ না, এইডা ক্যাম্নে সম্ভব অইল। ইয়ান এক্কান বড় ঝড় আঁই কমু, মাইন্ষ্যের মনের মইদ্যে হেই ঝড় উইঠ্ছে, বুইজ্ত হারেন না, কোন্ হঁত ধরি যাইলে হুরান চিন্তা দূর অই নোয়া চিন্তার উদয় অইব, শিকল ভাঙি হালাই মানুষ হাঁপ ছাড়ি বাঁইচ্ব, জোরে শ্বাস নিত হাইর্ব, দুম্ড়াইন্না মোচ্ড়াইন্না ঘর বাড়িগাইন ঝারিঝুরি খাড়াই উইঠ্ব। আঁর দেয়রের হোলা রতনের মনের মইদ্যে কী চন্মনা ভাব আছিল যহ্ন ড্যাগা ছুটকিয়া আছিল, যেই না জোয়ান অইল, হোলাডার শরীল যে হাল্টাইল এরুম ন, হাবভাব, চলাহিরা হাল্টি গেল। মন মরা অই হড়ি থাইক্ত ঘুমটি ঘরে। বাড়ির বেক্গুনে ত হাল ছাড়ি দিছে এই হোলা আর ঘুরি দাঁড়াইত না। অন্ই ত বুইজ্তাম্ হারিয়ের হ্যাতের ভিত্রে কত কষ্ট চাপি রাইখ্ছিল, কাউরে কহ্নও কইত না। কন্নাই গেলে দিশা হাইব হেইডাও হ্যাতের জানা আছিল না। বাপ-দাদার আমলের চাষবাসের জমি আছে। চাইল, হাক্ সব্জিগাইন অই যায়। হপ্তাহান্তে হুইরের দুই এক্কান রুই মাছ, মেনি মাছ, গোটাকতক হুডি মাছও কোয়ালে জোডে। কিন্তু ইগাইনই কী সব নি, হড়ালেয়া শিখছে, নিজের হাঁয়ে ত দাঁড়াইত হারে ন। হেই দোষ হ্যাতের উপ্রে চাপান যায় না। গ্ৰামেগঞ্জের হোলা কদ্দিন আর আইবুড়া থাইক্ব। বাপ মা-ও চায় হোলাডারে সংসারি করি দিতে। কিন্তু চাইলেই ত অইল না, হরের মাইয়ারে খাওয়াইব কী। এদিগে গ্ৰামহুদ্দা মানুষ কই বেড়ায় হোলাডার অইলডা কী! মনের রোগের ওষুধ যে কন্নাই আছে হেইডা আর কে জাইন্ব! অন্ দ্যাশে যহ্ন হরিবর্তনের ঢেউ উইঠ্ছে, হেই ঢেউ আই লাইগ্ছে ঘরে দূয়ারে, হ্যাতে অন্ টের হাইছে কিছু এক্কান অইব।
খবরাখবর আইয়ের বানের জলের মত, কোন্ডা ঠিক, কোন্ডা বেঠিক কে কইব। জাইন্বই বা ক্যাম্নে কী অইত চলের, দ্যাশের নেতারাও হুরাহুরি জানে না। আশা ভরসা এক জিনিস বাস্তব আর এক জিনিস, অইত হারে আবার না-ও অইত হারে। আশায় আশায় বুক বাঁধে মুডে মজুর চাষাভুষা বেক্গুনে। এদ্দিন যা হায় ন, এবার য্যান্ হাইব, হুইন্ব মন ভালা করা কত কতা। কোন মুই দৌড়াইব, যেদিগে চখ যায় মাইন্ষ্যে ভরা। ভিড়ের মইদ্যে চাপা হড়ি গেলে জয়ের আনন্দের অংশীদার অইব ক্যাম্নে। এই জয়রে খালি জয় হিসাবে দেইখ্তে চায়, না বাড়তি অইন্য কিছু। আইজ্ যে ঘরে হাঁড়ি চড়ে ন, হেই কতাও ভুলি গেছে। নৌকা মার্কা ছাপহান ছিঁড়তে গেলে বুয়ে লাগে। ওরে তোরা কী করচ্ ইয়ানে? এত হোষ্টার হালি কন্নাই? বাজার তুন্ টোকাই আইন্ছি। ভালা কইর্ছচ্, আগুন জ্বালাইবার কামে লাইগ্ব। আম্নের কী মাথা খারাপ অইছে! বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে না, ইগাইন হোড়ান যাইত ন, ঘরের মইদ্যে হটো বাঁধাই টাঙ্গাই রাইয়ুম। কিয়ের লাই রে হ্যাতেনের লাই এত হরানহান কাঁদে। ওমা, আম্নে হুনেন ন ভোটের হল্ বার অইলে বুজা যাইব এই দ্যাশ চালাইব কে? আঁঙ্গ ইস্কুলহান বন্দ অই হড়ি রইছে। আঁঙ্গ মাষ্টররে সরকার ইস্কুল তুন্ বার করি দিছে, হেরত আইন্ত অইব ত। ইস্কুলহান হ্যাতেনের হরান, বাড়ি বই থাই চয়ের জল হালাইছে এদ্দিন। আর কত হুইন্বেন। বিনা দোষে যেগুনেরে জেলে ভইর্ছে, হেগুনের নোয়া করি বিচার অইব। আঁঙ্গ দ্যাশ আমরাই চালামু। হেগুনের মুয়ে এত কতা হুনি আঁই আশ্চায্য অই গেলাম। তাইলে কী কওন যায় – দ্যাশের মানুষ জাগি গেছে। আঁঙ্গ দ্যাশে কত অভাব, ক্যাম্নে হুরন অইব জানি না, কিন্তু এই কতাহান হাঁচা, আঁঙ্গরে আর বোকা বানান যাইত ন। মোছলমানরা রোজার হরে চাঁদ দেই ঈদ হালন করে, কোরবানি ঈদের আনন্দ করে, হিন্দুগ বারো মাসে তের হার্বন, কই এরুম মোচ্ছব ত কন্ও দেই ন, এক লগে বেক্গুনে মিলিমিশি আত হা নাচার, আখাই গুড় দি মুড়ি খাইতে খাইতে গালগপ্প করের! গ্ৰামের মাইন্ষ্যের মনের জ্বালা এদ্দিনে কী তাইলে জুড়াইল! কত হশ্ন ত ঘুরি ঘুরি আইয়ে, উত্তর হাই না। ঘরের এক কোনায় বই যহ্ন চিন্তা করি, এই জীবনে আর কত উথালহাতাল দ্যাইয়ুম্, কোনদিন কী শান্তির মুখ দেইখ্তাম্ ন ? বিলাইডা আঁর দিগে চাই মিঁউ মিঁউ করে, লেজ লাড়ায়। হাইল্লা হইকগুন উডানে বই ঝগড়া কইর্তে কইর্তে কত শোধ হতিশোধ লয়, আবার হা নাচাইতে নাচাইতে চাইর্দিগ ঘুরে, উড়ি চলি যাই চালের উপ্রে বই থায়, নাই কোন ঝড় জলের চিন্তা, চাই চাই কোন দ্যাশের কতা ভাবে, কী জানি হুরা হিথিবীডারে নিজের দ্যাশ ভাবে কিনা। আঁই ভাবি, আঁঙ্গ মাইন্ষ্যের বেলায় কিয়ের লাই এরুম অয় না?
ভোটের খবর আইয়ের। বাড়ির বেক্গুনে ধেই ধেই করি নাচের। গড়ের উল্টাদিগে জমির আইল্ বরাবর হাঁডি হাঁডি দেই ধানের চারাগুন কেরুম সুন্দর বাড়ি উইঠ্ছে। মনডা জুড়াই যায়। বাইল্লা, হাইল্লা, বক হইকগুন উড়ি উড়ি চক্কর দেয়। হেগুনেই ত জমির মালিক। হসলের অধিকার লই কোন কাড়াকাড়ি নাই, মনের সুয়ে ঠোঁডের ডগায় তুলি চম্পট দেয়। আঁর ইচ্ছা অয় কত কতা কই। ক্যাম্নে কইয়ুম্ ছুঁই ছুঁই করিও ছুইতাম্ ত হারি না। চালাক ত কম ন, আয় আয় করি ডাকি, গ্যারাজ্য করে না। হেগুনে কী জানে আইজ্ আঁঙ্গ দ্যাশডার রঙ ঢঙ বেক্ কিছু হাল্টি যার। এই ত অয়, এরুম এক্কান দিন আইয়ে, যার লাই মাইন্ষ্যের ঘুম আইয়ে ন কত রাইত, স্বপ্ন দ্যায় কন্নাই য্যান্ ভাঁই যার দিন দুইন্নাই, কোনও কুল কিনারা হাই না। ভাঙা ভাঙা স্বপ্ন চয়ের সামনে হাজির অই কয়, আঁরে দ্যাহেন। কী আর কইয়ুম্, মুয়ের কতা মুয়েই থাই যায়, মনে কয় জড়াই ধরি, ছায়ারে ত জড়াই ধরন যায় না, তবুও কতাগাইন বাতাসে ভাসতেই থায়, যে যেমন খুশি ধরে, আর একজনের কাছে হৌঁচাই দেয়। দেওনের মইদ্যেই কত আনন্দ, কত মজা। রেডিওডারে যক্ষের ধনের মত আগ্লাই রাইখছে এই বাড়ি হেই বাড়ির মাইন্ষ্যে। এই একদল আইয়ে, ত আরেকদল ছুডি চলি যায়, অইন্য দল আবার অইন্য গ্ৰামের দিগে ছোডে। বদইল্লাগ আইজ্ মাডের কামে মন নাই। গরু ছাগলগুন মুখ উডাই আকাশের দিগে চাই থায়। আঁর নিজেরও কামে মন বইয়ের না। হোলামাইয়াগুনরে খাইতে দিমু, হেইডাও ভুলি গেছি। আঁর স্বামীর মনও উচাটন্ অইছে, বুইজ্তে দেন না। আইজ্ আর সদরে থায় ন, বাড়ি চলি আইছে। বাড়ির চাইর হাশে যদি কোন গোলমাল হয়, হামলাইব কে। য্যাতারা হাকিস্তানের লগে এঁটেল মাডির মত লেপ্টাই থাইক্ত চায়, হেগুনের সংখ্যাও ত কম ন, হুযুগ হাইলে ঘাড় মট্কাইতে আত কাঁইপ্ত ন, তহ্ন ভুলি যাইব আমরা এক মাডির মানুষ। নাইর্কল গাছ, সুয়ারি গাছ, তাল গাছের নিচে বই সুখ দুহের কতা কইছি, আম জাম নাইর্কল খাইছি, ঠাণ্ডা বাতাসে হরান জুড়াইছি। ছোরা ঢুকাই দিব মন মত না অইলে, রক্তের স্বাদ না চাইট্লে চইল্ব ক্যাম্নে।
এই ত আজব দুইন্নাই। খালি কি দ্যাশ, ভাঙা ঘরের মাইন্ষ্যে জোড়া লাইগ্বার লাই এঘর ঐঘর করে। এদ্দিন মনের যেই জানালাগুন ছুতানাতায় বন্দ কইর্ত হাইর্লে সোয়াস্তির নিঃশ্বাস হালাইত, আইজ্ হাশার দান হাল্টি গেছে। খুচুরমুচুর করের কহ্ন যাই কাকা কাকি জেডা জেডি ডাকি মনের সাধ মিডাইব। কি জানি হয়ত মধুর চাক্ডা এত বড় একা খাইলে বদহজম অইব, হিল্লাই ভাগাভাগি করি খাইত চায়। না, খবরডা আই হৌঁছায় ন। রতন ঘর তুন্ বার অই জিগ্গায়, আম্নেরা কোন ঘোষণা হুইনছেননি? যে রতনের মুয়ের তুন্ কতা বার কইর্ত অইলে মুখ ব্যথা অই যাইত, হ্যাতে অন্ টন্টইন্না কতা কয়। হ্যাতে কি হোনার কাডির ছোঁয়ায় জাগি উইঠ্ছে?
জেডি, আঁই এট্টু বড় রাস্তায় যাইয়ুম্, মানুষ দেইয়ুম্, মাইন্ষ্যের কতা হুনুম। কদ্দিন মানুষ দেই না, রাস্তাঘাড দেই না, মাইন্ষ্যে কত রমের কতা কয়, হুইন্তে ভালা লাগে, আলম মাঝির গান হুনুম, কী সুন্দর ভাটিয়ালি গায়, মনের ভিতরডা খাঁ খাঁ করি উডে, ইচ্ছা অয় মাঝির লগে চলি যাই, ঘরে আঁর মন টিয়ে না। তাইলে এদ্দিন চুপ মারি আছিলি কিয়ের লাই? এই উত্তর ত আঁই জানিনা, দিমু কত্তুন।
রতন ছুডি চলি যায়, এরুম করি যায় য্যান্ হ্যাতের চাইর হাশে কোন মানুষজন নাই, গাছগাছালি নাই, কোনও মেঘ ভাঁই ভাঁই যার না, চিল উড়ি উড়ি বেড়ার না, মাছেরা ডুবাডুবি খেলের না। কত কিছুই না জাপটাই জাপটাই ধরে, হুরুত হারুত করি বার অই যার। রতনের এইরম হাগল হাগল অবস্থা দেই আঁর কেরুম লাগে। আঁর ভিত্রেও কোন এরুম কতা আট্কি আট্কি আছিল নাকি, যা আঁই কারোরে কইতাম্ হারি ন। বুয়ের ভিত্রে চাপা কষ্টে চুয়া ঢেঁয়ুর উডে – আঁই এই দ্যাশের মাইয়া বলে, আঁর অগ্গা মাইয়া আছে বলে, এই মাইয়ারে হামলাইবার হঁত খুঁজি হাই না বলে! আঁর ঘরের হাশে ঘর। রতনের মনের গতি আর আঁর মনের গতি একমুই ছুডি চলি গেছে, টেরও হাই ন। আঁঙ্গ বাড়ির আরও ত মানুষ আছে, হ্যাতাগ কার মনে কত রোগ বাসা বাঁধি রইছে জাইন্বার চেষ্টাও ত করি ন, গ্ৰামের মাইন্ষ্যের ব্যথা, দ্যাশের মাইন্ষ্যের ব্যথা ত শত যোজন দূরে।
মাইন্ষ্যের মনে আনন্দ অইলে এরুমটা হয়। না অইলে আঁর জা ক্যাম্নে মাইয়ারে কয়, যা তোর জেডিরে যাই ক এট্টু ভাত দিত, আঁই ত অন্ও হাক্ চাপাই ন। বেশি দিন ত অয়ন, মাইয়াডা চুপেচুপে আঁঙ্গ ঘরে আই মুরি খাওনের লাই আবদার কইর্লে হেতির মা কী হিডান হিডাইল, মাইয়াডা এরুম কাঁদন কাঁইন্ল চয়ে দ্যায়ন যায় না। আইজ্ নিজেই আই কইল, মাইয়াডারে আম্নের কাছে রাই গেলাম, চয়ে চয়ে রাইখ্বেন, কোনও সব্বনাশা কাণ্ড না বাঁধায়, হেতিরে ত আঁই হাম্লাইতাম্ হারি না, রাজ্যের ঘরের কাম হড়ি থায়, কহ্ন ছান, কহ্ন হুজা বেক্গাইন মাথায় উইঠ্ছে। আম্নের দেয়র দোয়ান তুন্ আই ভাত না হাইলে বাড়ি হুদ্দা চিল্লাই মাথা উডাইব, যা এক্কান মাথা গরম মানুষ, আম্নে ত জানেন চুন তুন্ হান খইস্লে আঁর চুল ছিঁড়ব।
কদ্দিন বাদে আঁর জা আঁর লগে মন খুলি কতা কইল, সুখ দুহের গপ্প কইর্ল। হেই দিনগুন আঁই ভুলি ক্যাম্নে ভাগাভাগি করি নিজের সংসার নিজে বুজি লইবার লাই দিছিল ত ঘরের মাইজহান দি মুলি বাঁশের বেড়া, ঝন্ঝন্ করি থালা বাসন হালাই ছড়াই জানান দিছিল। হেতির কী রাক্ষুসে চেহারা! মনডা আর গলি গেল, বুকে জড়াই ধইর্লাম। এইডার নামই সংসার, বুজন্ও যায় না, চিনন্ও যায় না, কহ্ন কোন মূর্তি ধরে! ঘরের মন হাল্টাই গেলেও বারের মন কী আর এত সহজে হাল্টায়, অইন্য কতা কয়। আঁর হৌড়ি অন্ আর কতা কইত হারে না, কানেও কম হুনে। মরার মত হরি থায়। তবুও কিছুডা আঁচ কইর্ত হাইর্ছে। বউ, হেতি বুজি মিডা মিডা কতা কই তর মন ভিজাইত আইছে।
মা, আম্নে চুপ করি থান, বেশি কতা কইয়েন না, শেষে লঙ্কা কাণ্ড বাঁধাইব। যদি কাছে আইবার লাই মন টানে আইয়ক্ না। দ্যায়েন না, যে হিন্দু মোছলমান কাডাকাডি মারামারি কইর্ছে, মুজিবের ডাকে অন্ হ্যাতাগ ধম্মের অনেকেই আবার এক সুরে হশ্চিমাগ বিরুদ্ধে গর্জি উইঠ্ছে। ও তোর বুজি হেরুম লাগে। আবার কোনদিন কইব, এই জাগা জমিন আঁঙ্গরে ছাড়ি দে, না হয় আঁঙ্গ ধম্মে নাম লেয়া। মা, যহ্ন কইব তহ্ন দেয়া যাইব। সময় যহ্ন আইছে একলগে মিলবার, মিল্লে ক্ষতি কী! অইলে ত ভালাই অইত কিন্তু অইত ন, আদায় কাঁচকলায় মিল অয়? এই এক বিরাট যুদ্দ রে মা, এই যুদ্দে তোগই মরণ অইব। চেষ্টা করি যাইতেই অইব, হাশাহাশি বাস করন লাইগ্ব ত। আইজ্কাইলকার যুগে খালি মোছলমানের দ্যাশ আর খালি হিন্দুর দ্যাশ বলি কিছু অয়! য্যাতারা ইগাইন কয়, অবুজের মত কয়।
তুই ভালা ভালা কতা রাখ্ ত, নোয়া বউয়ের কতায় মজি যাইস্ না, হেতির মতলবহান ভালা না, আঁর তুন্ কে হেতিরে ভালা চিনে। মুজিব সাধে হশ্চিমাগ তুন্ ভিন্ন থাইক্ত চায়, ভিন্ন খাইত চায়। কিছু জিনিস আছে, কিছুতেই জোড়া লাগান যায় নারে মা।
কতায় আঁর ভাবনাচিন্তাগাইন গুলাই যায়। মন মাইন্ত চায় না। শরীল তুচ্ছ অই যায়, মন জাগি যায়। মনের কতা হুইন্তাম হাইর্লে ভালা লাগে। আঁই মাডির চুলাত্ ভাত চাপাই লাক্ড়িগাইন ভিত্রে ঠেলি দি আগুন বাড়াই দি। গন্গন্ করি জ্বলি উইঠ্লে ভাত ভুট্ভুট্ করি হুঁডে। আঁর নজর হেই দিগেই থায়। লাকড়ির গাদা তুন্ তিন চাইরহান লাকড়ি নামাই আনি। হাশের চুলাত্ নাড়ার আঁচে মাইরার ডাঁডা আর ঢুল্লার হাক রান্না অইলে হোলামাইয়াগুনরে খাইতে দিমু। কদ্দিন বাদে মাডির চুলার রান্না খাইব। গন্দ আর স্বাদ দুডাই ভিন্ন রম, লোভ লাগে। শহরে ইগাইন আর কন্নাই হাইব। যেই না ড্যাগের তুন্ আতা কাডি ভাত দিতে যামু, রতন নাইচ্তে নাইচ্তে আই কয়, জেডি এক্কান জব্বর খবর আছে।
আওয়ামী লীগ মেলা আসন হার, ঐ হালারা আরি ভুত অই যার, আঁঙ্গ ইয়ানেও লীগের প্রার্থী তরতর করি আগাই যার। কারও এরুম ক্ষমতা অর না হমানে হমানে লড়াই করে। আম্নের বাপের বাড়ির দ্যাশেরও খবর কইছে। হিয়ানেও জয়ে জয়কার আওয়ামী লীগের। একবার বার আই দ্যায়েন না, হিন্দু মোছলমান বেক্ মানুষ গলাগলি করি কয় – জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা। মনের মইদ্যে খচ্খচ্ করে, এই সম্পর্কডা ঠিক থাইক্ব ত, না ভোটের হরে মাইন্ষ্যের মনে কেউ আই বিষ ঢুকাই দিব ধম্মের নাম করি, কে কইত হারে। ঘরের বার অই দেই দশ বার জন করি ভাগে ভাগে গোল অই বেক্গুনে কত কতা বলাবলি করে – যদি আওয়ামী লীগ জিতেও যায়, হাকিস্তান সরকার এত সহজে ক্ষমতা ছাড়ি দিত ন……এই হার হ্যাতারা মাইনত ন…এত বড় দ্যাশের সম্পদ লুইঠ্ব ক্যাম্নে…….হিন্দু মোছলমানের মইদ্যে গণ্ডগোল লাগাই দ্যাশের মইদ্যে অশান্তি লাগাই দিব…….এই ভোট বাহানা বানাই বানচালও করি দিত হারে……হড়ালেয়া জানা বাঙালিগ মারি হালাইব না অয় জেলে ঢুকাইব। হেই জায়গায় হ্যাতাগ মন মত মানুষ বয়াইব…… আইয়ুব হান, ইয়াহিয়া হানগ অন্ও যদি না চিন্তে হার, মায়ের হ্যাডে রইচ তাইলে…….আগে ত হুরা হল্টা বার অইতে দে, আওয়ামী লীগের নেতারা ইয়ার হরে কী হদক্ষেপ নেয়, হেইডা আগে হুনি……..দ্যাশের জনগণ ত লোম ছিঁড়বার লাই চুড়ি হরি থাইক্ত ন। রক্ত ত হশ্চিমারা অনেক নিছে, আরও রক্ত দিমু, ছয় দফা মাইন্তে বাধ্য করুম্ই করুম্। হেগুনের কতা হুনি আঁই কোয়াল চাপড়াই, বিপদ এক্কান যে আইয়ের হিয়ান লই কোনও সন্দেহ নাই, আরও কতকিছু যে জলাঞ্জলি দিত অইব শতানগ চালাকির কাছে, অন্ অনুমান করন এক্কারে দুহাইদ্য।
ঝড় এক্কান আইয়ের বুজা যার যহ্ন মাইন্ষ্যে উল্লাস আর ধরি রাইখ্ত হারে না, হকাশ করণের লাই এদিক ঐদিক ছুডি মরে। তবুও ঝড় আইয়ে, ঝড় কি থামাই রাওন যায়। করিম মিঞার ইগাইন লই খুব এক্কান মাথাব্যথা নাই। হ্যাতের মইদ্যে এরুম উদাসীন ভাব দেই আঁই চিন্তায় হড়ি যাই। লাঙ্গল লই গরুর হালের হিছনে হ্যাট্ হ্যাট্ করি মাডের মুই ছোডে। এই য্যান্ হ্যাতের নিত্যকর্ম, যা কিনা না কইর্লে হ্যাডের ভাত অজম অইত ন। ফজল হন্তদন্ত অই ছুডি আইয়ে, কয় ও করিম, কোন মুই যাও, দ্যাশ-গ্ৰামের খবর টবর কিছু কি রাও নি, বেক্গাইন উল্টাই যার, তুঁই দেইয়ের নিজের জগতেই ঘুরিহিরি মর। ক্যান্, কী অইছে এরুম চিল্লাও কিয়ের লাই?
আরে নজরুল সদরে গেছিল ভাইয়ের লগে জমি লই মামলা লইড়তে। আইজ্ মামলার দিন আছিল। হেই এক রক্তারক্তি কাণ্ড! আওয়ামী লীগের সভার উপ্রে গুল্লি চালাইছে হুলিশ। এক হিন্দুর হোলা ভিড়ের মইদ্যে বক্তিতা হুইন্ত গেছে, দিছে মারি, এক গুল্লিতেই সাবাড়। গুল্লির বাজ হুনি নজরুলের মাথা ঘুরি গেছে, হাথালি অই হড়ি গেছে রাস্তার উপ্রে। আঁঙ্গ বাড়ির রুস্তম দেই চিন্ত হাইরছে, না অইলে কী দশা অইত, কও দেই। বুইজ্জনি দ্যাশের অবস্থাহান! তুঁই দেইয়ের কিছুই খবর রাও না।
আর কইওনা ভাই, কাইল রাইত তুন্ আঁর মাইয়াডার ভেদ্বমি অর, কোনরমে রাইতডা আল্লার নাম করি কাডাইছি। হরে কবিরাজ আই জড়িবুটি দেওনের হরে মাইয়া চখ খুইলছে, না অইলে চখমুখ উল্টাই হালাইছিল, ভাইব্লাম আর রক্ষা নাই, মাইয়া আঁর শ্যাষ! বড় আদরের মাইয়া। ভালা হোলা দেই হেতির বিয়া দি দিমু। মাইয়ার বয়স কত? তের হার করি চইদ্দত্ হইড়ছে। তোঁয়ার ত চাইর মুই যাতায়াত আছে, খুঁজি দেও না এক্কান সমজ্দার হোলা, আঁঙ্গ মত হরের জমিত্ খাডুক, হানবিড়ির দোয়ানদারি করুক, বোজা বইয়ুক, মোড কতা দুইবেলা দুই মুডা জোগাড় কইর্তে হাইর্লেই চইল্ব। মোক্তারবাবু কইছে, ‘তোর মাইয়ার বিয়ার খরচা আঁই দিমু।’ মাইয়ার জম্মের খবর হুনি হ্যাতেনে আঁরে কতা দিছে।
তোঁর দেইয়ের এই সংকটের দিনে দ্যাশ লই কোনও চিন্তা নাই! হরু ইস্কুলের মাডে লীগ এক্কান মিটিং ডাইক্ছে, হাজির থাইক্তে অইব যেভাবে হোক। বুইজ্জ না, দ্যাশ বাঁইচ্লে গ্ৰাম বাঁইচ্ব, গ্ৰাম বাঁইচ্লে তুঁই বাঁইচ্বা, তুঁই বাঁই্চ্লে হোলা মাইয়া বাঁইচ্ব। আর রোগশোক লই অত চিন্তা করিও না, আইব আর যাইব, হিয়ানে কী আঁঙ্গ আত আছে, উপরওয়ালা যা লেই রাইখ্ছে, হেইডাই অইব। করিম মিঞা কইল, ভাই, এরুমই যদি অইব, অত লড়াই সংগ্ৰাম করেনের কিয়ের লাই? বাঁইচ্বার লড়াই কোন অংশে কম নি ?
কোন কতাডা যে হালাইব আর কোন কতাডা যে রাইখ্ব বুজি উইঠ্বার আগেই আর এক্কান কতা আই গাঁইগুঁই করে। কিত্তাম কন্ চাই? মাইন্ষ্যেরে বাদ দি নিজের কতা কইয়ুম ক্যাম্নে, ভালা দিন না মন্দ দিন। দরজাত্ আই দুমদাম আবাজ করি কয়, ‘কে আছ ভিত্রে, দরজাহান খোল, খবর আছে।’ কী জানি কে আইল কিনা। রামহুর তুন্ টুবাই আইছে। আরে হ্যাতেরে আঁই দেইখছি হেই কবে। মুয়ের চোয়াল ভাঙিচুরি গালে গাল লাগি গেছে, হায়জামাডা তালি মারা, গা’ত জামা হইয্যন্ত নাই। ঠিক দেইখছি ত, আঁর বাইচ্চাকালের কিত্কিত্ খেলার বন্ধু চন্দনার হোলা। চন্দনা কন্নাই যে আরাই গেছিল কেউ জানে না। একদিন আঁর মাসির বাড়ি যাইবার সময় ভুল করি আগের ইষ্টিশনে নামি দেই এক্কান মাইয়া বোরখা হরি ছোট্ট হোলার আত ধরি বই রইছে সিঁড়ির উপ্রে। আঁরে এমুই ওমুই চাইতে দেই হেতি হোলার আত ধরি আগাই আই কয়, ‘অষ্টমী না, আঁরে চিনতি হারচ্ ন, আঁই চন্দু।’ হ্যাডের কতা হ্যাডেই রইল, হেতিরে জড়াই ধরি কাঁইন্লাম্, গাড়ির হর গাড়ি চলি গেল, হেই কাঁদন্ আর থাইম্ল না। শ্যাষে আঁর আঁচল দি হেতির চখ মুছি দি কইলাম্, তোর এই দশা ক্যাম্নে অইল ক, এইডা তোর হোলা, তোর নাম কিয়ারে ? চন্দুই উত্তর দিল, টুবাই টুবাই কয় বেক্গুনে, ভালা নাম মুস্তফা। হেতির দুহের কাহিনী হুনি আর এক দফা কাইন্লাম। কারা হেতিরে তুলি লই গেছে কইত হারে না। মৌলবী আই কলমা হরাই বুড়া ব্যাডার লগে বিয়া দিছে। হেতির নাম দিছে রুকসানা বিবি। সন পঞ্চাইশের কতা। হাঁচ বছর ঘর করার হর হ্যাতেনের ইন্তেকাল অইছে। হেই যে টুবাইরে এক নজর দেইখছি হেই চেহারাহান মনে আছে। আঁঙ্গ বাড়ি চিনছচ্ ক্যাম্নে? আম্মা মরি যাইবার আগে কইছিল, ‘আঁই মরি গেলে তোর অষ্টমী মাসির কাছে চলি যাইচ্, আঁর হরিচয় দিচ্, তোরে হিরাইত ন।’
আঁর কী করন উচিত, কোন দিই বা হামলাই। হোলাডারেই বা ক্যাম্নে ঘরে তুলি? মোছলমানেগ হোলারে আঁর ঘরে জাগা দিছি হুইন্লে আত্মীয়হজনরাই কিভাবে নিব। আঁর সহেলির হোলা বিশ্বাস না করতই হারে। টুবাইরে কইলাম্, হোন, ভুলেও কন্ও কইচ্ছা তোর নাম মুস্তফা, তাইলে কিন্তু কেলেঙ্কারি অই যাইব। সাহস করি হ্যাতেরে হিছনের এক্কান ঘরে থাইক্তাম দিলাম। ঘরহান হড়িই আছিল, হুরান আমলের থালা বাসন আর ভাঙা এক্কান চই, তাও এক্কান হায়া লড়বড়ে, ভুলেও কেউ হেই ঘর মাড়ায় ন। হেই কত আগে আঁর ছোড হোলা বাইচ্চাকালে কোনা ঘুপচি অন্ধকার ঘরে চুপ করি বই থাইক্ত আঁর ছেঁড়া কাহড়হান দি ঢাই। কন্নাই গেছত্ রে, ডাইকলেও কতা কইত না, শব্দ কইর্ত না, বেক্গুনের তুন্ দূরে যাই আরাই যাইতেই হ্যাতের আনন্দ। আজ এদ্দিন বাদে এই ঘরহান যে এরুম করি কামে লাগি যাইব, কে আর ভাইব্ছে। ঘরহান ঝাড়িঝুড়ি দিলাম, টিক্টিকির গুয়ের গন্দ আর তেলাহোকার বাইচ্চা দেই আঁর শরীলডা ঘিন্ঘিন্ করি উইঠ্ল। কিন্তু ইয়ান ছাড়া আঁই কীইবা কইর্তাম্ হাইর্তাম। তুই ইয়ানে থাইক্তি হার্বি ত বাপ।
খুব হারুম, আম্নে কিচ্ছু চিন্তা করিয়েন না মাসি। আঁর হোলার এক্কান হুরান জামা দিলাম হরনের লাই। যা বড় হুইরে যাই ডুব দি আয়। আঁর হোলাই লগে করি লই গেল। কাউরে আঁই কিচ্ছু জানাইলাম্ না। আঁর হোলার মনে হঙ্গী হাই কী আনন্দ। হ্যাতেরে কি খাইত দিব, কন্নাই বয়াইব, ঘুরি ঘুরি আঁঙ্গ হুরা বাড়িহান হ্যাতেরে দেয়াইব। আঁঙ্গ বাড়ির কাম কাইজ করে মনা, হ্যাতেরে দি গাছ তুন্ ডাব হাড়াই ড্যাগা ডাবের জল খাওয়াইল। হোলাডা এমনিতে তাঁতি হুড়ি আইছে কত দূর তুন্, আহারে! বাপ মা মরা হোলা, চয়ে দেওন যায় না এত কষ্ট। ভোটের হলের আর বেশি বাঁই নাই। রেডিওর উপ্রে বেকে য্যান্ ঝাঁপাই হইড়ছে। কেউ আবার চেঁচাই কয়, সাউন্ডডা আর এট্টু বাড়ান যায় না.. আর ঘুরাইলে ভাঙি যাইব…ব্যটারি ড্যাম্প অই গেছে নি, চাও না খুলি…অন্ আর অবেলায় কন্নাই হাইবা ব্যাটারি, বেকেই ত বাড়ি হলাইছে। এতগুন মাথা গোল অই রেডিওত্ কান হাতি রাইখলে কেইবা হুইনত হাইর্ব। টুবাই কয়, আঁরে একবার দেন চাই টেরাই করি চাই। টুবাইয়ের বাপ রেডিও সারাইয়ের কাম কইর্ত, বাপ চলি গেলে বাড়িত্ হড়ি থাওন্না ভাঙাচুরা রেডিও লড়াচাড়া কইর্তে কইর্তেই শিখি হালাইছে কিছু কিছু, হেই বিদ্যাহান এই সময়ে যে কামে লাগি যাইব, কে জাইনত। হিন্দু মোছলমান মিলি দুই গ্ৰামের জনা পঞ্চাইশেক মানুষ য্যান্ ঝাঁপাই হইড়ছে। যত বেলা বাড়ছে, তত মাইন্ষ্যের সংখ্যাও বাড়ছে। এত গ্ৰাম মিলি এক্কান মাত্র রেডিও, কোন চ্যানেল তুন্ খবর কইছে কে জানে। টুবাই সাউন্ড ত ঠিক করি দিল, চ্যানেল ত খুঁজি হায় না, মাইন্ষ্যের মইদ্যে উস্খুস্ উস্খুস্, মাথায় রক্ত চড়ি যার, হাইর্লে টুবাইরে দুই চাইর কিলঘুষি লাগাই দেয়। মাইন্ষ্যের আর তর সয় না, শ্যাষে চ্যানেল খুঁজি হাইলে হ্যাতারা শান্ত অইল। এর মইদ্যেই কত কতা। কাছারি ঘরেও গ্ৰামের মাইন্ষ্যে ভিড় জমাইছে, বুয়ের মইদ্যে বেকের ঢিপ্ ঢিপ্ করে যদি আশা ভরসায় জল ঢালি দেয়, তহ্ন কী অইব। অলক্ষইন্না কতা হেগুনে হুইনতও চায় না। চাতক হইকের মত উবুড় অই বই থায়, কহ্ন খবর আইব, দুই আত তুলি নাইচব।
খবর আইল, বেক্গুনের ধড়ে হরান হিরল। অন্ করনের আছে কেউ ঠিক কইর্ত হাইর্ল না। হেগুনে কেউ কেউ লম্বা শ্বাস হালাই কইল, সুবহানাল্লাহ, কেউ কইল, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়, অনেকে কোলাকুলিও কইর্ল। কেউ হর্মুলের আঁটি বাঁধি আগুন জ্বালাই আকাশের দিগে মুখ করি নাচানাচি কইর্ল, কেউ আবার মনের আনন্দ কী করি দ্যায়াইব বুইজ্ত না হারি উডানের এমাথা ঐমাথা চাইর হাক দৌড়াই নিল। আঁঙ্গ বাড়ির হোলাগুন শিস দিল জোরে জোরে, মাইয়ারা শঙ্খ বাজাইল, জোয়ার দিল। টুবাই আনন্দ অইলে যেরুম কয় হেরুমই কইল – ইন্শাআল্লাহ। বেকে মুখ চাওয়া চাওয়ি কইর্ল, এইডা কী অইল! বেকে হ্যাতের কতাহান লই হিস্হিসানি শুরু করি দিলে ভাইব্ল কিছু ভুল কই হালাইছে কিনা। কারও কারও মনে সন্দেহ অইল মোছলমানের হোলা নয় ত! তাইলে হিন্দুর ঘরে জাগা দিল ক্যাম্নে! মোছলমানের হোলারে হিন্দু বানাই হালাই ন ত। হিন্দুগ মনের মইদ্যেও সন্দেহ জাইগ্ল, কিছু এক্কান গোলমাল আছে। আঁর হোলাও কেরুম ভ্যাবাচ্যাকা খাই গেল। বেক্গুনের আনন্দের মইদ্যে এক হোঁডা চুনা অইড়ল য্যান্। বেক্গুনে মূর্তির মত বোবা অই খাড়াই রইল। আঁর খুড়া হৌড়ের ঘরের সেঝ দেওরের ছোট্ট হোলা ভিড়ের মইদ্যের তুন্ জোরে চেঁচাই উইঠ্ল – জয় বাংলা। এট্টুক ছুটকিয়া মাথায় কী এক্কান বুদ্দি খেইলল। যেতাগ মুহে দি এতক্ষণ এক্কান কতাও বার অইছিল না হ্যাতেরাও এক লগে কওয়া শুরু কর্ইল – জয় বঙ্গবন্ধুর জয়। কত রমের হোষ্টার উপ্রের মুই তুলি ধরে। কোনটায় লেখা ‘সোনার বাঙলা শ্মশান কিয়ের লাই?’ আবার অইন্যটায় লেখা ‘আপনাদের মুজিবর রহমানকে নৌকা মার্কা বাক্সে ভোট দিয়ে গরীবের স্বার্থ রক্ষা করুন’। টুবাই নিজেও য্যান্ দোটানায় হড়ি গেল। বেকে যে দ্যাশের কতা ছাড়ি হ্যাতেরে লই নানা গপ্প বানাইব, হেইডা আর কেরুম করি জাইনব। কেউ কয়, এইডা এত সোজা ব্যাপার ভাবিও না ভাই। গ্ৰামের মাতব্বরগ কানে তুইল্তে হয়। মাইন্ছি আমরা হিন্দু মোছলমান বেকে আওয়ামী লীগের সাপোর্টার, আঁঙ্গ সম্পর্কহানও ভালা, তাই বলি মোছলমানের হোলা হিন্দুর ঘরে থাইক্ব, এইডা এক্কান কতা অইল নি, ধম্ম বলি এক্কান বস্তু আছে ত। মৌলবী সাব ছাড়ি কতা কইব নি। মৌলবী সাব যা চেতা মানুষ, হ্যাতেনের কানে গেলে তৈলে বাইয়ুনে জ্বলি উইঠ্ব, কয়, ‘কত বারণ কইরছি হিন্দুগ লগে এত মিলামিশা করিছ্ না, হোনচ্ না, এবার আক্কেল অইল ত, দিল ত কষি এক্কান থাপ্পর, জাত মান দুই গেল। অন্ ভাব ক্যাম্নে হোলাডারে হিন্দুগ খপ্পর তুন্ বার করি আনবি। আমরাও দেই।’ বুইজ্লাম গোলমাল এক্কান বাঁধাইব। হিন্দুরাও ত কম যায় না, চাইরবার আই আঁরে ধমক্ দি গেছে। মুক্তার বাবু সজ্জন মানুষ, হ্যাতেনে এই অসামাজিক ঘটনার এক্কান বিহিত কইর্ব।
টুবাইরে লই আঁই কি করি। না রাইখ্তাম হারিয়ের্, না হালাইতাম্ হারিয়ের। চন্দুর শ্যাষ ইচ্ছাহান আঁই হুরণ কইর্তাম্ ন? আঁর স্বামী কইল, হুরা ঘটনাডা তুঁই গ্ৰামের বেকের সামনে খুলি কও। হ্যাতারা যা বিচার করি ঠিক কইর্ব, তাই অইব। কাছারি ঘরে সভা অইল। টুবাই বেচারা মাইজ্হানে জড়সড় অই বই রইল। হ্যাতে বুইজ্তেই হারেন না, কোন মুই যাইব। একজন গলা উঁচাই কইল, রায়েন ত ভাই আম্নের মিডা মিডা কতা, ধম্ম আগে না আওয়ামী লীগ আগে? সভা তুন্ উত্তর আইল, ধম্ম আগে। হ্যাতেও হেইদিন আওয়ামী লীগের জিতার আনন্দে চেঁচাইছে, হোষ্টার তুলি লাফাই উইঠ্ছে। আঁর স্বামী হাজার বুজাইলেও কেউ কানে তুইলল না, না মোছলমানরা, না হিন্দুরা। সভায় সিদ্ধান্ত অইল টুবাইরে হ্যাতাগ গ্ৰামে হেরত যাইত অইব। আঁই ভালা করি জানি, হিয়ানে হ্যাতেরে দ্যায়ার মত কেউ নাই, যত্ন আত্তী না হাই না খাই না দাই অকালে মারা অইড়ব। টুবাই আঁঙ্গ ঘর ছাড়ি চলি যাইবার সময় নিজেরে আর ধরি রাইখ্তাম হাইর্লাইম না, হাউমাউ করি কতক্ষণ কাঁইনলাম। কইলাম, চিন্তা করিছ্ না টুবাই, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন হাঁচা অইলে দ্যাশের মাইন্ষ্যে বেক্গাইন বুইজ্ব, তহ্ন একদিন না একদিন আঁঙ্গ আবার দ্যায়া অইব। টুবাইও কিছুক্ষণ কাঁইনল, হ্যাতের মার কতা মনে করি চয়ের জল হালাইল, না আঁর কতা মনে করি কে কইব। মনে মনে ভাইব্লাম্, হায় হায় রে, এই দ্যাশের মাইন্ষ্যে কবে আর মাইন্ষ্যের ভালা মন্দের কতা বুইজ্ব।
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)