আশিস ভৌমিক
লেখক পরিচিতি
(জন্ম 5 ই এপ্রিল 1974, গ্রাম -বৃন্দাবনচক , পাঁশকুড়া , পূর্ব মেদিনীপুর ।প্রাথমিক পড়াশোনা গ্রামে ।উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় ।সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ।গৃহ শিক্ষকতার ফাঁকে ফাঁকে সাহিত্য চর্চা । বিভিন্ন লিট্ল ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন । প্রথম কাব্যগ্রন্থ “”হিরণ্ময়ী ” । দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ” কালবেলা “।
প্রথম পর্ব
সৃষ্টিলগ্ন থেকে পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতা অন্যতম। প্রায় ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দক্ষিণ ইরাকের তাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছিলো প্রাচীন এই সভ্যতা। অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার মতো সুমেরীয় সভ্যতার লোকজনও বিশ্বাস করত, পৃথিবী ও মহাজাগতিক সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন অদৃশ্য দেব-দেবীরা। এই বিশ্বাস থেকেই সুমেরীয় সভ্যতায় জন্ম নিয়েছে তিন হাজারেরও অধিক দেব-দেবী। সময়ের সাথে সাথে মেসোপটেমিয়াতে সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়কালের (আক্কাদীয়, ব্যবিলনীয়, ক্যালডীয়) পরিবর্তন ঘটলেও উপকথার শেকড় প্রোথিত রয়েছে এক জায়গাতেই। সেজন্য মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত বিভিন্ন সভ্যতায় ও সংস্কৃতিতে ভিন্ন নামের দেব-দেবীর উপস্থিতি থাকলেও তাদের কাহিনির বহমান স্রোত গিয়ে মিলেছে একই সমুদ্রে। সুমেরীয় সভ্যতা হলো মেসোপটেমীয় সভ্যতার স্রষ্টা। তাই ধরা যায়, মেসোপটেমীয় ধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর হয়েছে এই সভ্যতার সময়েই।
সুমেরীয় দেবতাদের মানব প্রকৃতি
মেসোপটেমিয়ার ধর্মীয় চিন্তাধারায় প্রধানত জীবিকা প্রদানকারী হিসাবে প্রকৃতির শক্তির উপাসনা জড়িত। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে উপাসনার বস্তুগুলিকে মূর্তিমান করা হয়েছিল। প্রাচীন সুমেরীয় ধর্মতে দেবতাদের উপস্থাপন করা হয়েছে মানব আকৃতির সাথে মিল রেখে। উপকথা অনুযায়ী, দেব-দেবীদের অলৌকিক শক্তি বিদ্যমান থাকলেও, মননে ও গড়নে এরা ছিল মানুষের মতোই।
তারা নৃতাত্ত্বিক ছিল, যার ফলে মানবিক রূপ ছিল। একইভাবে, তারা প্রায়শই মানুষের মতো কাজ করত, খাদ্য ও পানীয়ের প্রয়োজন, সেইসাথে অ্যালকোহল পান করত এবং পরবর্তীতে মাতালতার প্রভাব ভোগ করত, কিন্তু সাধারণ মানুষের তুলনায় তাদের পরিপূর্ণতা বেশি বলে মনে করা হয়। তারা আরও শক্তিশালী, সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞানী, অকথ্য এবং সর্বোপরি অমর বলে মনে করা হয়েছিল। তাদের বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি ছিল একটি ভয়ঙ্কর উজ্জ্বলতা ( মেলাম্মু ) যা তাদের ঘিরে রেখেছিল, যা পুরুষদের মধ্যে অবিলম্বে বিস্ময় এবং শ্রদ্ধার প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। ঐতিহাসিক জে. বোটেরোর অভিমত ছিল যে দেবতাদেরকে রহস্যজনকভাবে দেখা হতো না, বরং তাদেরকে উচ্চ-উপস্থিত প্রভু হিসেবে দেখা হতো যাদেরকে মান্য ও ভয় করতে হতো, যেমন ভালোবাসতেন এবং পূজা করতে হতো।
মানবজাতির মতোই দেবতারা মনে পোষণ করতেন লোভ, লালসা, কামক্ষুধা, আবেগ, ভালোবাসা, হিংসা, ঈর্ষাপরায়ণতা ইত্যাদি। মানুষের মতো জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠলেও মানুষের সাথে ছিল তাদের একটাই ফারাক। দেবতারা ছিলেন অমর। সোজা ভাষায়, গড়নে এরা মানুষের মতো হলেও, শক্তিমত্তা এবং সৌন্দর্যে এরা মানুষের চেয়ে উৎকৃষ্ট। কোনো সুমেরীয় দেবতাই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলেন না। তারা আকারে ছিলেন বিশাল।
পৃষ্ঠপোষক দেবতার ধারণা
সুমেরীয় সভ্যতার আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো, পৃষ্ঠপোষক দেবতাদের ধারণা। প্রতিটি প্রধান শহর তাদের প্রধান স্থানীয় দেবতা হিসেবে আলাদা আলাদা দেবতার পূজা করত। উদাহরণস্বরূপ, উরুকের লোকেরা দেবতা আন এবং দেবী ইনানাকে শ্রদ্ধা করত। ওদিকে নিপ্পুরের বাসিন্দারা এনলিলকে তাদের পৃষ্ঠপোষক দেবতা বলে মনে করত। এরিদু এনকিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে ধরা হতো। সমস্ত পরিচিত মন্দিরগুলি শহরে অবস্থিত ছিল, যদিও শহরতলিতেও কিছু উপাসনালয় থাকত।
মন্দিরটি একটি জিগুরাটের আকারে মাটির ইট দিয়ে নির্মিত হয়েছিল , যা একটি পিরামিডের মতো আকৃতির একটি টাওয়ারের মতো ছিল এবং দৈত্যাকার ধাপগুলির সমন্বয়ে গঠিত। এটিকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। টাওয়ারটিকে দেবতাদের স্বর্গ থেকে নেমে আসার এবং স্বর্গে আরোহণের জন্য এক ধরণের সিঁড়ি বা সিঁড়ি হিসাবে বিবেচনা করে। পুরো মন্দিরটিকে একটি বিশাল বেদী হিসাবে গণ্য করা হতে পারে। কিছু মন্দির, যেমন এরিদুতে এনকি মন্দিরে একটি পবিত্র গাছ ( কিসকানু ) ছিল, যা রাজার দ্বারা সম্পাদিত বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রীয় বিন্দু ছিল, যিনি “মাস্টার মালী” হিসাবে কাজ করতেন।
মেসোপটেমিয়ার মন্দিরগুলি মূলত দেবতার বাসস্থান হিসাবে পরিবেশন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যিনি শহর ও রাজ্যের মঙ্গলের জন্য পৃথিবীতে বসবাস করতেন এবং বিচার ব্যবস্থা ধরে রাখতেন বলে মনে করা হয়। তার উপস্থিতি একটি পৃথক ঘরে দেবতার একটি মূর্তি দ্বারা প্রতীকী ছিল। মূর্তিটির মধ্যে দেবতার উপস্থিতি একটি খুব সুনির্দিষ্ট উপায়ে ভাবা হয়েছিল, দেবতার উপস্থিতির জন্য একটি মিথের আশ্রয় নেওয়া হতো।
রাজারা তাত্ত্বিকভাবে ধর্মীয় নেতা ছিলেন, তবে অনেক ধরণের পুরোহিতও বিদ্যমান ছিল। সাধারণত, সেবা বা কাজের মাধ্যমে দেবতার মঙ্গল বজায় ছিল ( দুল্লু )। ইমেজ পরিহিত ছিল এবং দিনে দুবার ভোজ পরিবেশন করা হয়. বলিদানের খাবারও নিয়মিতভাবে নির্ধারিত হত, একটি বলিদানকারী পশুকে একজন মানুষের প্রতিস্থাপন বা বিকল্প হিসাবে দেখা হত, এবং এটি বিবেচনা করা হত যে তখন দেবতা বা দানবদের ক্রোধ বলির পশুর দিকে পরিচালিত করা হোত।
সুমেরীয় সৃষ্টি তত্ত্ব
মেসোপটেমিয়ার টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে আজ থেকে প্রায় ৪,৫০০ বছর আগে গড়ে উঠেছিল সুপ্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা। পৃথিবীর প্রথমদিককার সভ্যতাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রাচীন শহর নিপ্পুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের সময় বেশ কিছু মাটির ব্লক (ট্যাবলেট) পাওয়া যায়, যাতে সুমেরীয় সভ্যতায় মানব সৃষ্টির গল্প লেখা ছিল। একে ‘এরিডু জেনেসিস’ বলা হয়। গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, আজ থেকে প্রায় ২,১৫০ বছর আগে ‘এরিডু জেনেসিস’ লেখা হয়, তবে অনুমিতভাবেই লোকমুখে এ গল্প বহু আগে থেকে চলে আসছে।
সৃষ্টির শুরুতে
সুমেরীয়রা মনে করত, মহাবিশ্ব একটি বদ্ধ গম্বুজের আকৃতিবিশিষ্ট এবং সেটিকে ঘিরে রয়েছে আদ্যকালীন লবণাক্ত জলের এক সমুদ্র। এই গম্বুজের ভিত্তিটি হল শিলাময় পৃথিবী এবং পৃথিবীর নিচে রয়েছে একটি পাতাললোক এবং আব্জু নামে পরিচিত মিষ্টি জলের একটি মহাসাগর। আদ্যকালীন লবণাক্ত জলের সমুদ্র থেকে আবির্ভূত হন নাম্মু। অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল পরিবেশ। আকাশ, পৃথিবী, স্বর্গ, নরক কিছুই ছিল না তখন। চারিদিক বিষাক্ত। প্রানের অস্তিত্ব ছিল না। সেই আদি সাগর থেকে উঠে এলেন নাম্মু। তিনি অযৌন যোনি প্রাপ্ত। পারথেনোকারপির মাধ্যমে তার থেকে জন্ম হলো স্বর্গ ও পৃথিবীর যুক্ত সত্ত্বার। আন এবং কি। তার দুই সন্তান।স্বর্গের প্রতিনিধিত্ব করেন আনু, যিনি পুরুষ। পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বকারী দেবী কি। আনু ও কি’র মিলনে তাদের পারস্পরিক প্রাকৃতিক জৈব ক্রিয়ায় উৎপত্তি হলো বায়ুদেবতা এনলিলের। আকাশ হলো কিছুটা নির্মল। বায়ুর শৈশব দশা কাটার পর তার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তার প্রভাব জোরে তিনি আনু আর কি-কে আলাদা করে ফেললেন। আনু নিজে ঊর্ধ্বমুখী হলেও সন্তানের সাথে কি নেমে এলেন নিচের দিকে। এই ভাবেই তৈরি হল স্বর্গ পৃথিবী আর চাঁদের মাঝে বায়ুমণ্ডল।
নিচে নেমে এসে একসময় এনলিল আর তার মা কি স্থির হলেন। কিন্তু চারদিক বড় অন্ধকার। আলো কোথায়! আলো পেতে কি এবং এনলিল সৃষ্টি করলেন তাদের তিন সন্তান। অর্থাৎ এনলিল তার মায়ের সাথে মিলিত হয়ে জন্ম দেন দেবতা নিনুর্তা, চন্দ্রদেবতা নান্না এবং সূর্যদেবতা উতুরকে। নিনুর্তাকে যুদ্ধ ও কৃষি দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো। আবার অন্য মতে চন্দ্রের দেবতা নান্না জন্ম দিলেন সূর্যদেব, উটুর। নান্না অন্ধকার আকাশে আলো আনার জন্য দায়ী ছিলেন, যাকে একটি সমতল পৃথিবীর উপর তিনটি গম্বুজে বিভক্ত বলা হয়েছিল প্রতিটি গম্বুজ একটি মূল্যবান পদার্থ দিয়ে তৈরি। তিনি আকাশের চারপাশে নক্ষত্র এবং গ্রহগুলি ছড়িয়ে দেন এবং তার স্ত্রী নিঙ্গালের সাথে একত্রে ইনানা এবং তার যমজ ভাই উতুর জন্ম দেন।
এবার এনলিল ও কি-র সম্মিলনে বাতাস আর পৃথিবী এক হয়ে সৃষ্টি করল দেবতা এনকির। এনকি ছিলেন মিষ্টি জলের দেবতা। এছাড়াও তিনি পুরুষদের যৌন সক্ষমতা ও জ্ঞানের দেবতা হিসেবেও সুপরিচিত। প্রকৃতপক্ষে তিনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রভু, গাছপালা আর মিঠা জলের দেবতা। তার নির্দেশে মাটি চিরে প্রবাহিত হলো শক্তিমান টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদী। জলে সাঁতার কাটতে লাগল নানা প্রজাতির মাছ, জমি হয়ে উঠল কৃষিকাজের উপযোগী। ধরণীতে দেবতাদের থাকার জন্য এনকি বানালেন শহর। পত্তন হলো প্রাচীনতম নগরী এরিদু, বাদ-তিবিরা, লারসা আর শুরুপ্পাকের।
কালক্রমে আরো বহু দেবদেবীর পদচারণায় পৃথিবী মুখরিত হয়ে উঠল। তাদের কাজ তারা নিজেরাই করতেন। মাটি কাটা, ঘরবাড়ি বানানোসহ আরও বহু কাজ করতে করতে দেবতারা হয়ে পড়লেন ক্লান্ত। তারা আনুর কাছে আবেদন জানালেন, এই দিনভর কাজ থেকে মুক্তি দিতে। আনু ভেবে দেখলেন, সত্যিই তো, তার সন্তানেরা কাজ করতে করতে মরেই যাচ্ছে!
দ্বিতীয় পর্ব
মানুষের জন্ম
এনকি পরামর্শ দিলেন, দেবতাদের দাস হিসেবে তাদের আকার-আকৃতিতে একটা কিছু সৃষ্টি করবার। যে-ই কথা, সে-ই কাজ। আনুর অনুমতি পেয়ে তিনি এক দেবতাকে হত্যা করলেন। মৃত দেবতার রক্ত-মাংস কাদামাটির ছাঁচে ফেলে এনকি তৈরি করলেন প্রথম মানুষ। এদের পাঠালেন তিনি কাজ করতে, আর দেবতারা মনের আনন্দে আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠলেন। মানুষ তাদের সেবা করতে লাগল। বলা হয়, প্রথম মানুষ যেখানে সৃষ্টি হয়েছিল, তার নাম ইডেন- দেবতাদের বাগান। বাগানটির অবস্থান ছিল টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিসের মাঝে কোনো এক জায়গাতে।বাইবেলে বর্ণিত স্বর্গের এডাম আর ইভের কাহিনীর সাথে এই সুমেরীয়’দের মনুষ্য সৃষ্টির গল্পের কিছু সাদৃশ্য পাওয়া যায় ।
মানুষ সৃষ্টির পর কাজ করতে হবে না- এ খুশিতে সব দেবতারা ভোজসভায় মিলিত হলেন। এখানে নেশার ঘোরে এনকি আর প্রজননের দেবী নিন্মাহের মধ্যে তর্ক বেঁধে যায়। এনকি বড়াই করলেন, নিন্মাহ যেভাবেই মানব বানান না কেন, তিনি তার জন্য সমাজে কোনো না কোনো স্থান খুঁজে দিতে পারবেন। নিন্মাহ একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি প্রথমে বানালেন এমন এক মানুষ, যার হাত সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। এনকি তাকে রাজদরবারের সভাসদ করে দিলেন। এবার নিন্মাহ সৃষ্টি করলেন এক অন্ধ ব্যক্তির, এনকি তাকে পরিণত করলেন সুকণ্ঠী গায়কে। নিন্মাহ খুঁড়িয়ে চলা এক লোক তৈরি করলে এনকি তাকে কামারের কাজ দিলেন।
নিন্মাহের রোখ চেপে গেল। তিনি পর্যায়ক্রমে বন্ধ্যা এক মানবী এবং না-পুরুষ, না-নারী এক অস্তিত্বের সৃষ্টি করলেন। প্রতিবারই এনকি তাদের কাজের জন্য কোনো না কোনো উপায় বের করে ফেলেন। হতাশ হয়ে নিন্মাহ চলে যান। এনকি এবার নিজেই এক মানুষ সৃষ্টি করেন, যার শরীর ছিল চরমভাবে বিকৃত। তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সঠিকভাবে গঠিত ছিল না। নিন্মাহ তাকে দেখে প্রচুর রেগে গেলেন। এনকি স্বীকার করলেন, সৃষ্টির ব্যাপারে নিন্মাহ তার থেকে অনেক ভালো। তারা বুঝতে পারলেন, মানুষকে সঠিক আকারে না বানালে তারা দেবতাদের উপাসনা করবে না।
আরেক বর্ণনায় আছে, দেবতারা ভোজসভাতেই মানব সৃষ্টি করেছিলেন। কি কাদামাটি দিয়ে যাদের বানালেন, তারা কেউ সন্তান জন্মদানে সমর্থ ছিল না। ফলে এনকি নতুন করে আরো কিছু মানুষ সৃষ্টি করলেন। কিন্তু তারা ছিল বেশ দুর্বল। সুমেরিয়ানরা বলত, মানুষের দুর্বলতা আর রোগবালাই দেবতাদের নেশার ঘোরে সৃষ্টি করার ফল।
আডাপার আখ্যান
প্রথমদিকে মানুষ শিশু জন্মদানে অক্ষম হলেও শীঘ্রই দেবতারা বুঝতে পারেন, মানবসংখ্যা বৃদ্ধি করতে হলে প্রজননের ক্ষমতা দিতে হবে। ফলে প্রথম সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে তারা অ্যাডাপাকে সৃষ্টি করলেন। সে কাজ করত এরিদু নগরীতে। মাছ ধরে দেবতাদের মন্দিরে নিয়ে আসত। দখিনা হাওয়ার দাপটে একবার মাছ ধরতে গিয়ে সে দুর্বিপাকের শিকার হয়। তিক্ত-বিরক্ত অ্যাডাপা বায়ুকে অভিশাপ দিলে তার ডানা ভেঙে যায়। এতে করে দক্ষিণ বাতাসের উপকারিতা থেকে এরিদুর লোকেরা বঞ্চিত হতে থাকে। আনু অ্যাডাপাকে জবাবদিহিতার জন্য ডেকে পাঠালে এনকি তার প্রিয় সন্তানকে কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে দিলেন।
সেই মোতাবেক অ্যাডাপা শোকের পোশাকে আনুর সামনে হাজির হলেন, যাতে দেবতাদের দেবতা তার প্রতি নমনীয় হন। আনু খুশি হয়ে তাকে স্বর্গীয় রুটি আর পানি দিতে চাইলে আডাপা এনকির পরামর্শমতো তা গ্রহণে অপারগতা জানিয়ে আনুর কাছে তেল চেয়ে নিলেন। আনু কৌতুক বোধ করলেন, তবে তিনি সেই প্রার্থনা মঞ্জুর করেন।
স্বর্গীয় পানি আর রুটি গ্রহণ করে দেবতারা অমর থাকতেন। তাই তা খেয়ে আডাপাও হয়ত অমর হয়ে যেতেন। এর বিশ্লেষণে বেশ কয়েকটি মতের একটি হলো, এনকি চাননি মানবজাতি দেবতাদের মতো অমর হয়ে উঠুক। আবার অনেকে বলেন, দেবতাদের খাদ্য নশ্বর মানবের জন্য নয়। যে রুটি আর পানি দেবতাদের চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে, সেই খাদ্যই মানব শরীরকে নিমেষে হত্যা করবে। যা-ই হোক না কেন, স্বর্গ থেকে অ্যাডাপা নেমে এলেন সুস্থভাবে। মানুষকে শোনালেন আনু আর এনকির মহিমার কথা।
সুমেরীয় পুরাণে পাতাল লোক
ব্যাবিলনীয়রা সুমেরীয় পাতালপুরীকে তাদের পুরাণে ইরকাল্লা নামক একটি নরকীয় স্থান হিসাবে বর্ণনা করেছিল । মেসিডোনিয়ান (গ্রীক) এবং পরে রোমানরা, ইরকাল্লাকে হেডিস ( গ্রীক আন্ডারওয়ার্ল্ড ) হিসাবে চিহ্নিত করে; খ্রিস্টান মূর্তিতত্ত্বে, নরক/হাডেস
এই ইরকাল্লা হল সুমেরীয় পাতাল। এর প্রবেশদ্বারটি সুদূর পূর্বে জাগ্রোস পর্বতমালায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এর সাতটি দরজা রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে একজন আত্মাকে যেতে হয়।ইরেশকিগাল (ইরকাল্লা এবং আল্লাতু নামেও পরিচিত) হলেন মৃতদের মেসোপটেমিয়ার রানী যিনি পাতাল শাসন করেন। তার নাম ‘গ্রেট নিচের রানী’ বা ‘লেডি অফ দ্য গ্রেট প্লেস’ হিসেবে পরিচিত। তিনি মৃতদেরকে তার রাজ্যের মধ্যে রাখা এবং জীবিতদের প্রবেশ এবং পরকালের সত্য শিখতে বাধা দেওয়ার জন্য দায়ী ছিলেন। দেবতা নেতি হলেন তার দারোয়ান।
এরেশকিগাল তার স্বামী নেরগালের সাথে ইরকাল্লা শাসন করতেন। এরেশকিগালই একমাত্র যিনি তার রাজ্যে রায় দিতে এবং আইন দিতে পারতেন। তাকে উৎসর্গ করা মূল মন্দিরটি কুথায় অবস্থিত ছিল। প্রাচীন সুমেরীয় কবিতায় Inanna’s Descent to the Underworld এ এরেশকিগালকে ইনানার বড় বোন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইরেশকিগালের সাথে জড়িত দুটি প্রধান পৌরাণিক কাহিনী হল আন্ডারওয়ার্ল্ডে ইনানার উত্তরণের গল্প এবং দেবতা নেরগালের সাথে এরেশকিগালের বিয়ের গল্প।
পাতালপুরীর ফলের বাগান
সুমেরীয় পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে , সূর্য-দেবতা উতু রাতে পাতালের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেন, এবং তিনি সূর্যোদয়ের প্রস্তুতিতে পূর্ব দিকে যাত্রা করেন। একটি সুমেরীয় পুরানে উতু আন্ডারওয়ার্ল্ডকে আলোকিত করে এবং সেখানে রায় প্রদান করে। শামাশ স্তবক 31 (BWL 126) বলে যে উতু মালকু , কুসু এবং আনুন্নাকির পাশাপাশি পাতাল জগতে মৃতদের বিচারক হিসাবে কাজ করে । পাতালপুরীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার পথে, উতু অর্থাৎ সূর্যদেবতা একটি বাগানের মধ্য দিয়ে যায় বলে বিশ্বাস করা হয় , যেখানে গাছ রয়েছে যা ফল হিসাবে মূল্যবান রত্ন বহন করে। সুমেরীয় স্তোত্র ইনানা এবং উতুকে নিয়ে একটি মিথ রয়েছে যেখানে উতুর বোন ইনানা তার ভাই উতুকে তাকে এই পাতালপুরীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে, যাতে সে সেখানে জন্মানো একটি গাছের ফলের স্বাদ নিতে পারে, যা তার কাছে সমস্ত গোপনীয়তা প্রকাশ করবে। উতু মেনে নেয় এবং, ইনানা এই ফলের স্বাদ গ্রহণ করে এবং যৌনতা সম্পর্কে জ্ঞানী হয়।
পরকাল এবং জীবনতত্ত্ব
প্রাচীন মেসোপটেমীয়রা একটি পরকাল বিশ্বাস করত যা আমাদের পৃথিবীর নীচের একটি ভূমি। এটি ছিল এই ভূমি, যা পর্যায়ক্রমে Arallû , Ganzer বা Irkallu নামে পরিচিত , যার শেষেরটির অর্থ ছিল “গ্রেট নীচে”, যেটি বিশ্বাস করা হত যে প্রত্যেকেই মৃত্যুর পরে যায়, সামাজিক অবস্থান বা জীবনের সময় সম্পাদিত কর্ম নির্বিশেষে। খ্রিস্টান নরকের বিপরীতে, মেসোপটেমীয়রা পাতাল লোককে শাস্তির স্থান বা পুরষ্কার বলে মনে করত না। তবুও, মৃতদের অবস্থা পৃথিবীতে পূর্বে যে জীবন উপভোগ করা হয়েছিল তার মতো কমই বিবেচনা করা হয়েছিল: তাদের নিছক দুর্বল এবং শক্তিহীন ভূত হিসাবে বিবেচনা করা হত।
পাতালে ইশতারের বংশধরের পৌরাণিক কাহিনীটি বলে যে “ধুলো তাদের খাদ্য এবং কাদামাটি তাদের পুষ্টি, তারা কোন আলো দেখতে পায় না, যেখানে তারা অন্ধকারে বাস করে।” আডাপা পৌরাণিক কাহিনীর মতো গল্পগুলি বলে যে, একটি ভুলের কারণে, সমস্ত মানুষকে অবশ্যই মরতে হবে এবং সত্য অনন্ত জীবন দেবতাদের একমাত্র সম্পত্তি। যাইহোক, কিছু গল্প ইঙ্গিত করে যে নির্দিষ্ট কিছু দেবতা পরবর্তী জীবনে কিছুটা ভাল দিতে পারে যদি তাদের অনুগ্রহ পাওয়া যায়। অনেক দেবতা যারা তিয়ামাতকে হস্তগত করার সময় তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল তাদের একইভাবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নির্বাসিত করা হয়েছিল, মেগাটেনের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন উচ্ছৃঙ্খল দেবতাদের পরে দানব করা হয়েছিল।
তৃতীয় পর্ব
সুমেরীয় পুরাণের দুটি গল্প
দ্য ডিসেন্ট অফ ইনানা :-
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আসলে আমাদের ধারণার চেয়েও প্রাচীন বিষয়
দুজন বোন ছিলেন যাঁরা একে অপরকে যারপরনাই ঘৃণা করতেন। একজন ইনানা, মর্তের এবং জীবিত প্রাণীদের দুনিয়ার দেবী। অন্যজন এরেশকিগাল, পাতালের এবং মৃতের জগতের দেবী। একবার ইনানার ইচ্ছে হল, পাতালে ঘুরতে যাবেন। তিনি পাতালের দ্বাররক্ষককে গিয়ে বললেন, তিনি তাঁর ভগ্নীপতির শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যেতে ইচ্ছুক। তবে আসলে হয়তো তাঁর এই সুযোগে পাতালের রাজত্বটিকেও হাতিয়ে নেবার ইচ্ছে ছিল। মর্ত ছেড়ে আসার আগে ইনানা তাঁর মন্ত্রী নিনশুবুরকে বলে গিয়েছিলেন, তিনি যদি পাতালে কোনও বিপদে পড়েন, মন্ত্রী যেন এনলিল, নান্না আর এনকি নামক তিন দেবতার কাছে আর্জি পেশ করেন তাঁকে উদ্ধার করতে। ইনানা পাতালে গেলেন রীতিমতো জমকালো পোশাক-আশাক পরে। শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানের জন্য নিতান্তই বেমানান এই পোশাকের জাঁকজমক দেখে, এবং পাশাপাশি তাঁর উদ্ধত আচরণ লক্ষ করে, পাতালের দেবীর বেশ সন্দেহ হতে শুরু করল। এরেশকিগালের কথামতো পাতালের দ্বাররক্ষক ইনানাকে জানাল, পাতালের প্রথম দরজা দিয়ে তিনি প্রবেশ করার অনুমতি পাবেন শরীর থেকে একটি কোনও পোশাক খুলে তার হাতে তুলে দেবার পরেই। ইনানা কারণ জিজ্ঞাসা করতে সে জানাল, ‘পাতালের এটাই নিয়ম।’ অতএব তিনিও এ-শর্ত মেনে নিলেন।
সাতটি দরজা দিয়ে এগিয়ে চললেন ইনানা, প্রত্যেকবারই পরে আসা একটি কোনও পোশাক বা অলঙ্কার খুলতে-খুলতে। অবশেষে যখন তাঁর বোনের সামনে গিয়ে তিনি পৌঁছলেন, তখন তিনি নগ্ন, অসহায়। এরেশকিগাল ইনানাকে একটি শবদেহ বানিয়ে একটি শিকে টাঙিয়ে রাখলেন।
তিন দিন, তিন রাত কেটে যাবার পর নিনশুবুর ইনানার কথামতো এনলিল, নান্না আর এনকির মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করলেন— জীবন, জীবিত এবং প্রেমের দেবীকে যেন তাঁরা রক্ষা করেন। প্রথম দুজন দেবতা এ-প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন, এ-বিপদ ইনানা নিজে ডেকে এনেছেন। তবে এনকির খুবই দুশ্চিন্তা হল, তিনি ইনানাকে উদ্ধার করতে রাজি হলেন। তিনি দুটি লিঙ্গবিহীন জীব সৃষ্টি করলেন (নারীও নয়, পুরুষও নয়), এবং তাঁদের বললেন, পাতালে গিয়ে এরেশকিগালকে তুষ্ট করতে। তিনি যখন প্রসন্ন হয়ে বর দিতে চাইবেন, তখন যেন তাঁরা ইনানার শবদেহে খাদ্য এবং জিয়ন-জল ছিটিয়ে দেয়।
এনকির পরিকল্পনামাফিকই সব হল, দুই লিঙ্গবিহীন জীব বাঁচিয়েও তুলল ইনানাকে। কিন্তু এরেশকিগালের রাক্ষসেরা ইনানার পিছন-পিছন ধাওয়া করে উঠে এল পাতাল থেকে, তাদের দাবি— ইনানার পরিবর্তে অন্য কাউকে না পেলে তাঁকে যেতে দেওয়া হবে না। প্রথমে তারা নিনশুবুরের কাছে এসে তাঁকে বলল, ইনানার স্থানটি গ্রহণ করতে। কিন্তু ইনানা এতে রাজি হলেন না, কারণ নিনশুবুর বাধ্যভাবেই তাঁকে সমস্তভাবে সাহায্য করেছিলেন। এরপরে রাক্ষসেরা ধরল ইনানার স্বামী দুমুজিকে। স্ত্রী পাতালে হারিয়ে গিয়েছেন জেনেও দুমুজি দিব্যি আমোদ-প্রমোদ করে জীবন কাটাচ্ছিলেন। অতএব ইনানা তাঁকে নিয়ে মোটেই খুশি ছিলেন না, তিনি রাক্ষসদের দুমুজিকে ধরে নিয়ে যাবার অনুমতি দিলেন। দুমুজি তাঁর অদৃষ্টকে এড়াতে চেষ্টা করে পালালেন বটে, তবে ইনানা এবং রাক্ষসদের একটি মাছি এসে বলে দিল দুমুজি কোথায় লুকিয়ে আছেন। অতঃপর ঠিক হল, বছরের অর্ধেকটা সময় দুমুজি পাতালে এরেশকিগালের সঙ্গে কাটাবেন এবং বাকি অর্ধেকটা কাটাবেন নিজের স্ত্রী ইনানার সঙ্গে।
দ্য ম্যারেজ অফ ইরেশকিগাল
একদিন দেবতারা একটি মহান ভোজ প্রস্তুত করলেন যাতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরেশকিগাল অবশ্য উপস্থিত হতে পারেননি, কারণ তিনি পাতাল ছেড়ে যেতে পারেননি এবং দেবতারা সেখানে তাদের ভোজ অনুষ্ঠানের জন্য নামতে পারেনি কারণ তারা পরে যেতে পারবে না। দেবতা এনকি ইরেশকিগালকে একটি বার্তা পাঠান যে একজন ভৃত্য পাঠাতে পারে যে তাকে ভোজের অংশ ফিরিয়ে আনতে পারে এবং সে তার ছেলে নামতারকে পাঠায়।
নামতার যখন দেবতাদের ভোজসভা হলে পৌঁছেছিল, তখন যুদ্ধের দেবতা নেরগাল ছাড়া তারা সবাই তার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে দাঁড়িয়েছিল। নামতার অপমানিত হয়েছিল এবং ভুলের প্রতিকার চেয়েছিল, কিন্তু এনকি তাকে কেবল আন্ডারওয়ার্ল্ডে ফিরে যেতে এবং তার মাকে কী ঘটেছে তা বলতে বলেছিল। যখন ইরেশকিগাল নেরগালের অসম্মানের কথা শুনেন, তখন তিনি নামতারকে এনকির কাছে একটি বার্তা পাঠাতে বলেন যাতে নেরগালকে পাঠানো হয় যাতে সে তাকে হত্যা করতে পারে।
দেবতারা এই অনুরোধটি স্বীকার করেন এবং নেরগালকে বলা হয় তাকে অবশ্যই পাতাল ভ্রমণ করতে হবে। এনকি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি অবশ্যই ঘটবে, এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাতটি দরজার প্রতিটিতে তাকে সহায়তা করার জন্য নেরগালকে চৌদ্দাটি দানব সরবরাহ করে। যখন নেরগাল আসে, নেতি তার উপস্থিতি ঘোষণা করে এবং নামতার তার মাকে বলে যে দেবতা যিনি উঠবেন না তিনি এসেছেন। ইরেশকিগাল আদেশ দেয় যে তাকে সাতটি দরজার প্রতিটি দিয়ে প্রবেশ করতে হবে যা তার পিছনে বাধা দেওয়া উচিত এবং তিনি যখন সিংহাসনের ঘরে পৌঁছাবেন তখন তিনি তাকে হত্যা করবেন।
প্রতিটি গেট পেরিয়ে যাওয়ার পর, তবে, নেরগাল তার দুটি দানব এসকর্টকে খোলা রাখার জন্য পোস্ট করে এবং সিংহাসনের ঘরে চলে যায় যেখানে সে নামতারকে পরাস্ত করে এবং এরেশকিগালকে মেঝেতে টেনে নিয়ে যায়। সে তার মাথা কেটে ফেলার জন্য তার বড় কুড়াল তুলেছে, কিন্তু সে তাকে রক্ষা করার জন্য তাকে অনুরোধ করে, যদি সে রাজি হয় এবং তার ক্ষমতা তার সাথে ভাগ করে নেয় তাহলে তার স্ত্রী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। নেরগাল সম্মতি দেয় এবং মনে হয় সে যা করেছে তার জন্য অনুতপ্ত। কাহিনীটি শেষ হয় দুজন চুম্বন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে তারা একসাথে থাকবে।
যেহেতু নেরগাল প্রায়শই তার মেজাজ হারিয়ে পৃথিবীতে সমস্যা সৃষ্টি করত এবং যুদ্ধ ও কলহ সৃষ্টি করত, তাই হয়তো এনকি তাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরো দৃশ্যটি সাজিয়েছিল। যুদ্ধকে মানুষের অভিজ্ঞতার একটি অংশ হিসাবে স্বীকৃত করা হয়েছিল, এবং তাই নেরগাল স্থায়ীভাবে পাতালে থাকতে পারেনি কিন্তু বছরের ছয় মাসের জন্য তাকে পৃথিবী পৃষ্ঠে ফিরে আসতে হয়েছিল। যেহেতু তিনি তার দানবকে গেটগুলিতে পোস্ট করেছিলেন, নিজের ইচ্ছায় এসেছিলেন এবং রাণীর সাহায্যে থাকার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, নেরগাল কোনও প্রতিস্থাপন না করেই চলে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
চতুর্থ পর্ব
গিলগামেশ মহাকাব্য
গিলগামেশ যিনি সব জানতেন, চিনতেন পৃথিবীর সব রাজ্য। জ্ঞানী ছিলেন তিনি। মুখোমুখি হয়েছিলেন রহস্যের, জানতেন অনেক গোপন কথা। মহাপ্লাবনের পূর্বের দিনগুলোর কথা তিনি আমাদের শুনিয়েছিলেন। দীর্ঘ এক যাত্রায় বেরোন তিনি। পরিশ্রান্ত, অবসন্ন দেহে ফেরার পর বিশ্রাম করেন। তারপর পুরো গল্পটি লিখে রাখেন পাথরখণ্ডে।
গিলগামেশ, পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য। ইলিয়াড ও ওডিসির প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে যা রচিত হয়েছিল। এই মহাকাব্য আবর্তিত হয়েছে প্রাচীন নগরী উরুকের রাজা, গিলগামেশ ও তার বন্ধু এনকিদুকে ঘিরে। দেবতা, স্বর্গ-মর্ত্য-নরক ও অমরত্বের সন্ধান ইত্যাদি উঠে এলেও, এই মহাকাব্যের মূল কথা দুজন প্রায় দেবতা ও প্রায় বনমানবের মানুষ হয়ে ওঠা নিয়ে। বন্ধুত্বের জন্য মৃত্যুকে পরাজিত করার প্রচেষ্টা নিয়ে। কিন্তু মৃত্যুকে কি হারানো যায়? মানুষ কি পেতে পারে অমরত্ব?
মহাকাব্য-কথা
মহাকাব্য মানেই, তাতে উঠে এসেছে একটি সভ্যতা ও সমাজের জীবনদর্শন, মানবিকতা, শুভ ও অশুভের ব্যবধান ইত্যাদি। মহাকাব্য কিছু চরিত্রের গল্প হলেও এর ক্যানভাস জীবনের চেয়ে বড়, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। কারণ, এর লেখক হয়তো একজন-যেমন, রামায়ণের লিপিকার বাল্মীকি-কিন্তু তিনি নিজেই এর রচয়িতা নন। যুগে যুগে মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফিরে পুরো সভ্যতার গল্প, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি মিলে-মিশে ধীরে ধীরে তৈরি করে মহাকাব্য।
একই কথা খাটে হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসির ক্ষেত্রেও। আমরা জানি, হোমার একজন কবি ছিলেন না। যুগে যুগে একাধিক কবি, সভ্যতা ও সময়ের হাতে হাত রেখে রচনা করেছেন এই মহাকাব্য দুটি।
গিলগামেশও তেমনি কোনো একজন মানুষের রচিত নয় বলেই মনে করা হয়। কে রচনা করেছিলেন এই উপাখ্যান, আমরা জানি না। জানা সম্ভবও নয়, কেননা কোনো একজন ব্যক্তি বা কবি তো এর রচয়িতা নন। লোকের মুখে মুখে বহু পুরুষ ধরে বংশপরম্পরায় যুগে যুগে গিলগামেশকে নিয়ে অজস্র কাহিনী প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের কাছাকাছি কোনো একসময়ে তা সর্বপ্রথম ভাষায় লিপিবদ্ধ করা হয়। কোনো একজন লোক যে একা বসে বসে লিখেছিলেন, তা মনে হয় না। বহু সময় ধরে বহু ব্যক্তি ঐ কাজ সমাধা করেছিলেন হয়তো।
গিলগামেশ মহাকাব্য-দ্য এপিক অব গিলগামেশ-এর মূল গল্প
প্রাচীন দক্ষিণ মেসপটেমিয়া অঞ্চল। ইউফ্রেতিস ও তাইগ্রিস নদী দুটির মধ্যবর্তী দোআব অঞ্চলের গড়ে উঠেছে উরুক রাজ্য। এই রাজ্যের রাজা গিলগামেশ। প্রচণ্ড সাহসী, সুপুরুষ এবং বীরযোদ্ধা। দুই-তৃতীয়াংশ দেবতা, এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। তার বাবা উরুকের ধর্মযাজক লুগালাবান্দা, মা দেবী নিনসাল। দেবীর দিক থেকেই তার দেহে দেবত্বের ধারাটি এসেছে। গিলগামেশ তাই মানুষ হয়েও অমর, অপ্রতিরোধ্য।
সব হাতের মুঠোয় পেলে যা হয়, গিলগামেশেরও তাই হলো। তিনি খেয়ালি ও অত্যাচারী হয়ে উঠলেন। প্রজারা তাকে রাজ্য রক্ষা ও সুনাম ধরে রাখার জন্য রাজা হিসেবে পছন্দ করতেন। কিন্তু তার খামখেয়ালি ও অত্যাচারে তাদের জীবন বিষিয়ে উঠেছিল। এমনকি, কেউ বিয়ে করতে চাইলে নববধূকে আগে রাজার সঙ্গে কিছুদিন কাটাতে হতো, তার সেবা করতে হতো। রাজা সন্তুষ্ট হলেই কেবল বধূ ফিরে যেতে পারত নিজের নতুন সংসারে।
গিলগামেশ মহাকাব্য অনুযায়ী, দেবরাজার নাম আনু। তার মন্দির ছিল উরুকে। রাজ্যের প্রজারা সেখানে গিয়ে তার কাছে বিচার চাইল। তিনি দেবী আরুরুকে ডাকলেন।
এই আরুরুই মাটি ছেনে মানুষ তৈরি করেছেন। তাই তাকেই দায়িত্ব দিলেন আনু, তৈরি করতে হবে গিলগামেশের প্রতিদ্বন্দ্বী। আরুরু ঠিক গিলগামেশের মতো করে তৈরি করলেন এক বনমানুষ। এনকিদু। পার্থক্য বলতে, এনকিদুর সারা শরীর পশুদের মতো লোমে ঢাকা। তাকে তিনি ছেড়ে দিলেন বনে। বিশাল অরণ্যে, প্রকৃতি ও পশুদের সঙ্গে, সবার চোখের আড়ালে বড় হতে লাগল এনকিদু।
এনকিদুকে প্রথম দেখতে পান এক শিকারী। এরকম অদ্ভুত প্রাণী দেখে ভয় পেয়ে যান তিনি। তবে বুঝতে পারেন, প্রাণীটি মানুষ। কিন্তু সে তার মানুষ-পরিচয় জানে না।
খবর পৌঁছে গিলগামেশের কাছে। রাজা কিন্তু এসব শুনে পাত্তা দিলেন না। ঠিক বিশ্বাসও করলেন না। তবু একটা উপায় বাতলে দিলেন— দারুণ সুন্দরী কাউকে পাঠাতে হবে বনে। এনকিদু তার ক্ষতি করতে পারবে না, অন্তত সৌন্দর্যের জন্য। আর, মানুষ হিসেবে সে সেই মেয়েটির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে চাইবে। তখন দেখা যাবে, বনের প্রাণীরা আর তার সঙ্গ চাইছে না। ফলে মেয়েটা তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিয়ে আসতে পারবে শহরে।
ঠিক তা-ই হলো। এনকিদু চলে এল শহরে। জানতে পারল গিলগামেশের অত্যাচারের কথা। বিয়ে করতে চাচ্ছিল এক লোক। নববধূর ব্যাপারে তিনি জানালেন এনকিদুকে। বললেন, সেজন্যই তিনি বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন উরুকে, রাজার অনুমতি নিতে। সব শুনে এনকিদুও এলেন উরুকে। মুখোমুখি হলেন গিলগামেশের। প্রচণ্ড এক লড়াই বেঁধে গেল তাদের মধ্যে। একসময় তারা দুজনেই বুঝলেন, দেখতে তারা প্রায় একরকম। সাহস ও বীরত্বেও তাই। লড়াই থেমে গেল, হয়ে গেল বন্ধুত্ব। যে বন্ধুত্বের জন্য গিলগামেশ পাড়ি দেবেন পৃথিবীর শেষ প্রান্তে, পেরিয়ে যাবেন মৃত্যুসায়র। জানতে পারবেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যটির কথা।
যাই হোক, বন্ধু এনকিদুকে নিয়ে গিলগামেশ বের হলেন অভিযানে। দৈত্য হুম্বাবাকে হত্যা করে তিনি নিজের কীর্তি রেখে যেতে চান। এই দৈত্যকে অরণ্য রক্ষায় নিয়োজিত করেছিলেন দেবতারা। গিলগামেশ সেসবের পরোয়া করলেন না। দেবী মায়ের সাহায্যে সূর্যদেবের আশীর্বাদ আদায় করে নিলেন। হত্যা করলেন হুম্বাবাকে।
এ সময় দেবী ইশরাত তাকে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রলোভন দেখান। দেবীকে যাচ্ছেতাইভাবে অপমান করেন গিলগামেশ। ক্ষুদ্ধ ইশরাত বাবা, দেবরাজ আনুর কাছে গিয়ে স্বর্গীয় ষাঁড় চাইলেন গিলগামেশকে শায়েস্তা করার জন্য। গিলগামেশ একা কতটা করতে পারতেন, তা জানার কোনো উপায় নেই। কিন্তু ষাঁড় যখন গিলগামেশকে আক্রমণ করছিল, সেই ফাঁকে বুদ্ধি করে এনকিদু ঠিকই হত্যা করল স্বর্গীয় ষাঁড়কে। প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত দেবতারা গিলগামেশকে শাস্তি দেয়ার জন্য তার সবচেয়ে পছন্দের মানুষটিকে সরিয়ে নিতে চাইলেন। মারা গেল এনকিদু।
এনকিদুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গিলগামেশ মহাকাব্যের প্রথম পর্ব শেষ। শুরু হলো দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে প্রিয় বন্ধুকে পুনর্জীবিত করতে গিলগামেশ পথে নামলেন। তিনি শুনেছেন, পৃথিবীর শেষ প্রান্তে থাকেন উৎনাপিশতিম। জ্ঞানী এই বৃদ্ধ মহাপ্লাবনেও মারা যাননি। তিনি নাকি জানেন অমরত্বের রহস্য। যে করেই হোক, তার কাছ থেকে এই রহস্য জানতে হবে।
শুরু হলো গিলগামেশের যাত্রা। বিশাল অরণ্য, পাতাল থেকে শুরু করে আকাশ ছোঁয়া মাশুপর্বত পেরিয়ে তিনি পৌঁছালেন মৃত্যুসায়রের পাড়ে। উৎনাপিশতিমের নৌকার মাঝি উর্শানাবি ছাড়া আর কেউ পেরোতে পারে না এই নদী। উর্শানাবি বললেন, তিনি ওকে পার করাবেন না। ভেলা ও বৈঠা তৈরি করে নিজেকেই পেরোতে হবে। তবে যে বৈঠা একবার পানি স্পর্শ করবে, তা আর ওঠানো যাবে না। অসম্ভবকে সম্ভব করল গিলগামেশ। হাজির হলো উৎনাপিশতিমের কাছে।
জ্ঞানী বৃদ্ধ তাকে জানালেন, মৃত্যু থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। মহাপ্লাবনের সময় দেবতা এয়ার দয়ায় তিনি বেঁচে গেছেন। আর কিছু না। শোকে কাতর গিলগামেশকে দেখে মায়া হলো উৎনাপিশতিমের স্ত্রীর। স্বামীকে তিনি তিরস্কার করলেন। সেজন্যই, উৎনাপিশতিম সত্যিটা জানালেন গিলগামেশকে। মৃত্যুসায়রের তলায় গায়ে কাঁটাযুক্ত একধরনের লতা আছে, জীয়নলতা। এই লতাই পারে মানুষকে অমরত্ব দিতে।
গিলগামেশ উদ্ধার করলেন সেই জীয়নলতা। তারপর পা বাড়ালেন উরুকের পথে। বন্ধুকে তিনি পুনর্জীবিত করবেন, দেবেন অমরত্ব।
পথে, এক দীঘির পাড়ে জীয়নলতা রেখে গোসল করতে নামলেন গিলগামেশ। এতদিনের ক্লান্তি ধুয়ে গেল শীতল জলে। আর, সেই ফাঁকে এক সাপ এসে খেয়ে গেল জীয়নলতা। গিলগামেশ গোসল সেরে উঠে দেখেন, সাপের মৃত খোলস পড়ে আছে দীঘির পাড়ে। আর, জীয়নলতা খেয়ে নবযৌবন নিয়ে চলে গেছে সেই সাপ।
ক্লান্ত, পরাজিত, পরিশ্রান্ত গিলগামেশ উরুক ফেরেন। এক উরুকবাসীকে তিনি জিজ্ঞেস করেন এনকিদুর কথা। ‘কে সে?’ জবাব দেয় উরুকবাসী। গিলগামেশ বোঝেন, যে মারা গেছে, সে হারিয়ে গেছে ইতিহাসের বাঁকে। তাকে কেউ কেউ মনে রাখে না।
গিলগামেশ মহাকাব্য আবিষ্কারের গল্প
প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্যের সময়কাল থেকেই বিভিন্ন লেখকদের কলমে একটি প্রাচীন সভ্যতার পতনের কথা উঠে এসেছে। অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য।
শোনা যায়, সুবিশাল সেই সাম্রাজ্যের শেষ রাজা সার্দানাপলাস বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও অনেক অনেক দাসী পরিবেষ্টিত অবস্থায় আত্মহত্যা করেছেন। কেউ কেউ বলেন, সার্দানাপলাস না, সর্বশেষ সেই রাজার নাম আশুরবানিপাল। ওল্ড টেস্টামেন্টের ভাষ্যমতে, স্বয়ং স্রষ্টার অভিশাপে ধ্বংস হয়ে গেছে অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য। কিংবদন্তী আর গুজব ঘুরে ফেরে। আগ্রহী অভিযাত্রী থেকে শুরু করে শখের প্রত্নতাত্ত্বিক, সবাই খুঁজে ফেরে সেই সভ্যতা। ঠিক যেন উইলবার স্মিথের লেখা গল্প!
কিন্তু ১৯ শতকের মধ্যভাগে উত্তর ইরাকের মসুল শহরের কাছাকাছি আবিষ্কৃত হয় হারিয়ে যাওয়া এক শহরের ধ্বংসাবশেষ। এই শহরের নাম নিনেভেহ (Nineveh)। অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী। কিংবদন্তী পরিণত হয় সত্যে!
১৮৪৯ সাল। স্থান: মসুলের নিকটবর্তী এলাকা (প্রাচীন নিনেভেহ শহর)। ব্রিটিশ মিউজিয়াম গত চার বছর ধরে এখানে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। প্রজেক্টের দায়িত্বে আছেন প্রত্নতাত্ত্বিক অস্টিন হেনরি লায়ার্ড (Austen Henry Layard)। কাজকর্ম ভালই আগাচ্ছে, বলা চলে। কিন্তু চার বছর পরে এসে লায়ার্ড এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করলেন। আবিষ্কার করে বসলেন রাজা আশুরবানিপালের হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন গ্রন্থাগার।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের তথ্যানুযায়ী, এই আবিষ্কারের ফলে ৩০,০০০ ট্যাবলেট (পাথরখণ্ড) উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এসব পাথরখণ্ডের ১২টি ট্যাবলেট মিলে লেখা হয়েছে গিলগামেশ মহাকাব্য। যার ১১তম খণ্ডে লেখা আছে মহাপ্লাবন (Great Flood)-এর কথা। ইসলাম ও খ্রিষ্ট ধর্মমতে যা নূহ (আঃ) এর সময় হয়েছিল। এই মহাপ্লাবনের সবচেয়ে প্রাচীন বর্ণনাসূত্র ছিল বাইবেলের বুক অব জেনেসিস। নতুন এই ট্যাবলেট এখন সবচেয়ে পুরাতন বর্ণনাসূত্রের জায়গা দখল করে নিল।
কিংবদন্তী বনাম বাস্তবে গিলগামেশ
গিলগামেশকে (রোমান উচ্চারণে বিলগামেশ) ঐতিহাসিকরা উরুকের ‘আধা-কিংবদন্তী’ ও ‘আধা-বাস্তব’ রাজা বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে আমরা একটু পরে দেখব। কিন্তু, শুধু গিলগামেশ মহাকাব্য থেকেই এই উত্তরের ব্যাপারে বেশ খানিকটা ধারণা পাওয়া যায়।
মহাকাব্য মতে, গিলগামেশের বাবা ছিলেন মানুষ, কিন্তু মা দেবী। স্বাভাবিকভাবেই, তার মা যে দেবী- এটি ঐতিহাসিক ও যৌক্তিকভাবে সম্ভব না। আবার, দৈত্য হুম্বাবাকে হত্যা কিংবা এনকিদুর মৃত্যুর পরে পৃথিবীর শেষ মাথায় গিয়ে জীয়নলতার সন্ধান, উর্শানাবির পরামর্শে নৌকায় করে মৃত্যুসায়র পেরিয়ে উৎনাপিশতিমের দেখা পাওয়া। এসব কিছুর কোনোটারই ঐতিহাসিক প্রমাণ মেলে না। মহাপ্লাবনের কথা অবশ্য ধর্মগ্রন্থগুলোতে এসেছে। কিন্তু তাতে জীয়নলতা, মৃত্যুসায়র বা উৎনাপিশতিম কারো উল্লেখ নেই। স্বাভাবিক যুক্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে এদেরকে তাই বাস্তব বলে মনে হয় না। এখান থেকে গিলগামেশের ‘কিংবদন্তী’ অংশটুকু স্পষ্ট বোঝা যায়। কিন্তু, প্রশ্ন হলো, গিলগামেশ নামের কেউ কি আদৌ বাস্তবে ছিলেন?
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, ছিলেন। ২৯০০-২৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে তিনি সুমেরীয় শহর উরুকে রাজত্ব করেছিলেন বলে মনে করা হয়। প্রাচীন প্রাচ্য বিশেষজ্ঞ স্টেফানি ডেলি মনে করেন, সুনির্দিষ্ট কোনো সময়কাল বলা না গেলেও, ২৮০০ থেকে ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে তিনি রাজত্ব করেছিলেন।
১৯৫৫ সালে টুমাল ইন্সক্রিপশন আবিষ্কৃত হয়। এই ইন্সক্রিপশনের ভাষ্যমতে, গিলগামেশ উরুকের চারপাশে একটি দেয়াল তুলেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গিলগামেশ মহাকাব্যে এই দেয়াল নির্মাণ ও এ সময় প্রজাদের প্রতি তার অত্যাচারের (অতিরিক্ত কাজ করানো, চাপ দেয়া ইত্যাদি) কথা এসেছে!
গিলগামেশের সমসাময়িক সময়কার কিশ-এর রাজা এন্মেবারাগেসিও (Enmebaragesi) গিলগামেশকে উরুকরাজ বলেছেন। এই কিশ হলো সুমেরের এক পার্বত্য রাজ্য। আবার, পাথরে খোদাই করা সুমেরিয়ান রাজাদের তালিকায়ও (Sumerian King List) পাওয়া যায় গিলগামেশের নাম। এই তালিকা বলে, গিলগামেশের রাজত্বকাল ছিল ১২৬ বছর। কিংবদন্তী অনুযায়ী, মৃত্যুর পর তার দেহ ইউফ্রেতিস নদীর তলদেশে কবরস্থ করা হয়।
পঞ্চম পর্ব
এনলিল এবং নিনলিলের কাহিনী
এনলিল এবং নিনলিল বা নিনিল
মহাকাব্যের ধারাটি সাধারণত পৌরাণিক কাহিনীর তুলনায় তরুণ বলে মনে হয় এবং স্পষ্টতই বিষয়বস্তু এবং মূল্যবোধের দিক থেকে প্রাথমিক রাজবংশীয় যুগের মাঝামাঝি সময়ে রাজতন্ত্রের উত্থানের সাথে যুক্ত ছিল। তবে, যে রচনাগুলি টিকে আছে সেগুলি সবই পরবর্তীকালের বলে মনে হয়। একটি সংক্ষিপ্ত সুমেরীয় মহাকাব্যিক গল্প, “”গিলগামেশ এবং কিশের আগা”, প্রাথমিক মহাকাব্যের স্টাইলে বলা হয়েছে। এটি গিলগামেশের তার অধিপতি এবং প্রাক্তন হিতৈষী , কিশের আগা এর বিরুদ্ধে সফল বিদ্রোহের সাথে সম্পর্কিত। রোমান্টিক মহাকাব্যের স্টাইলে আরও রয়েছে “এনমারকার এবং আরত্তার প্রভু”, “এনমারকার এবং এনসুহকেশদন্না” এবং “লুগালবান্দা মহাকাব্য”, যার সবকটিতেই প্রথম রাজবংশের শাসকরা নায়ক হিসেবে রয়েছেন। উরুক (আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ) এবং পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত আরত্তা শহরের সাথে সেই শহরটির যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করে। গিলগামেশ, যিনি সেই রাজবংশেরও সদস্য, বিভিন্ন ছোটগল্পের নায়ক হিসেবে পরিচিত; কিছু, যেমন “গিলগামেশ এবং হুওয়াওয়া” এবং “গিলগামেশ এবং স্বর্গের ষাঁড়”, রোমান্টিক মহাকাব্যিক ধাঁচে রচিত, এবং অন্যগুলি, যেমন “গিলগামেশের মৃত্যু” এবং “গিলগামেশ, এনকিডু এবং নেদারওয়ার্ল্ড”, মৃত্যুর অনিবার্য সত্য এবং পরকালের চরিত্র নিয়ে আলোচনা করে।
এনলিল এবং নিনলিলের কাহিনী রূপক ধর্মী মাটির শস্য উর্বরতার সঙ্গে যুক্ত এক অন্যরকম প্রেম কথা।
কাহিনী:-
প্রারম্ভিক পৌরাণিক কাহিনীতে, এনলিলকে মানব সৃষ্টির আগে নিপপুর শহরে বসবাসকারী একজন যুবক দেবতা হিসাবে দেখা যায়। নিপপুর ছিল এই গল্পে দেবতাদের একটি নগর কেন্দ্র এবং ঐশ্বরিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । নিনলিল (সুদ নামেও পরিচিত) একজন যুবতী এবং সুন্দরী দেবী যিনি এনলিলের প্রতি আকৃষ্ট হন। এনলিলও তার প্রতি আকৃষ্ট হন। নিনলিলের মা, নিসাবা (লেখার দেবী এবং দেবতাদের লেখক), তাকে নদীতে স্নান করতে যাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বিশেষত তরুণ এনলিল সম্পর্কে সতর্ক করে এবং তাকে তার কুমারীত্ব হারানোর বিপদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন। নিনলিল এই পরামর্শ উপেক্ষা করে নদীতে যায় কারণ তার মধ্যে জন্ম নেয় এনলিলের প্রতি প্রেম এবং মাতৃত্বের প্রবল আকাঙ্খা। ফলত এনলিল দ্বারা প্রলুব্ধ হয়। তিনি গর্ভবতী হন এবং চাঁদ দেবতা নান্নার জন্ম দেন। যদিও কপট বাধা দিয়েছিল কিঞ্চিত।
পরে, এনলিল যখন শহরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যান, তখন তিনি অন্যান্য দেবতাদের দ্বারা আচারিকভাবে নিয়ম ভাঙার জন্য গ্রেফতার হন এবং শহর থেকে পাতাল-এ নির্বাসিত হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সাথে নিনলিনের প্রলোভনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে হয়। নিনলিল তখন এনলিলকে ফটকের বাইরে সন্তান সহ অনুসরণ করেন, তবে তার পিছনে বেশ কিছু দূরত্বে।
পথে এনলিল প্রথমে নিপ্পুর দ্বাররক্ষীর, তারপর পাতালের নদীর লোকের (মাঝির?) এবং অবশেষে পাতালের নদীর ফেরিওয়ালার রূপ ধারণ করেন। এই ধরণের প্রতিটি ছদ্মবেশে এনলিল নিনলিলকে রাজি করান যেন তাকে তার সাথে মিলিত হতে দেওয়া হয় যাতে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিতে পারে যে পাতালে সু-এনের স্থান নিতে পারে এবং তাকে উপরের জগতের জন্য মুক্ত করে দিতে পারে। এইভাবে আরও তিনজন দেবতা, সকলেই পাতালের ব্যক্তিত্ব, জন্মগ্রহণ করেন।
তারা যথাক্রমে নেরগাল (যিনি মেসলাম থেকে উৎপন্ন),নিনাজু (জল ছিটানো [?]), এবংএন্নুগি (যিনি ফিরে আসেন না এমন প্রভু)। অন্যান্য পরবর্তী পৌরাণিক কাহিনীতে, তবে, এই তিন দেবতার আলাদা আলাদা পিতামাতা রয়েছে এবং নিনাজু,বিশেষত, নিরাময়ের দেবী গুলার পুত্র হিসাবে বেশি পরিচিত । নায়ক-দেবতা নিনুর্তাকে কখনও কখনও তাদের সন্তানদের একজন হিসাবেও উপস্থাপিত করা হয় যদিও, সবচেয়ে পরিচিত পৌরাণিক কাহিনীতে, তিনি নিনহুরসাগ এবং এনলিলের পুত্র।
গল্পটি শেষ হয় এনলিলের বীরত্বের জন্য প্রশংসা করে, এবং পৌরাণিক কাহিনীটি পৃথিবীর উর্বরতা উদযাপন করে বলে মনে করা হয়। দুটি যুবক যুবতী, তাদের আলাদা রাখতে পারে এমন আইনগুলিকে অস্বীকার করে, জীবন তৈরি করতে একত্রে যোগদান করে এবং এমনকি যখন তারা পাতালে নির্বাসিত হয়, তখনও তাদের আলাদা করা যায় না এবং সৃজনশীল কাজ চালিয়ে যায়। এনলিল একজন বিদ্রোহী হিসাবে যিনি দেবতাদের আইনকে অমান্য করেন নিজের ইচ্ছাকে অনুসরণ করার জন্য অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনীতে এমন কর্তৃত্বে পরিবর্তিত হন যিনি ঐশ্বরিক আইনের ক্ষমতা রাখেন এবং যার বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না।
এনলিল এবং আনজু পাখি
আঞ্জুর ব্যাবিলনীয় মিথ (BCE দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথম দিকে),
ঝু পাখি [আনজু নামেও পরিচিত], ঝড় ও তুফানের প্রতীক, ছিল মন্দের দেবতা যিনি এনলিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। এনলিল ছিল “ভাগ্যের ট্যাবলেট” এর ধারক, যার মাধ্যমে তিনি স্বর্গ ও পৃথিবী শাসন করেছিলেন। ঝু বা আনজুর এই ট্যাবলেটটি লোভ ছিল এবং এটি গ্রহণ করতে এবং তার পরিবর্তে শাসন করার জন্য সংকল্প করেছিল। ঝু বা আনজু তার সুযোগটি গ্রহণ করেছিল। একদিন সকালে যখন এনলিল তার মুকুটটি খুলে একটি পাথর খন্ডে রেখেছিল এবং পরিষ্কার জল দিয়ে তার মুখ ধুয়ে নিচ্ছিল, তখন আনজু তার কাছ থেকে ট্যাবলেটটি ছিনিয়ে নিয়ে পাহাড়ে উড়ে যায়। আনু দেবতাদেরকে আনজু-এর বিরুদ্ধে যেতে এবং তার কাছ থেকে ট্যাবলেট নেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু সবাই প্রত্যাখ্যান করে এবং এরফলে স্বর্গ ও পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
পৌরাণিক কাহিনীর এই বিশেষ সংস্করণে, নায়ক লুগালবান্দা ট্যাবলেটগুলি পুনরুদ্ধার করে, অন্যদের মধ্যে মারদুক ছিলেন সহযোগী। যাইহোক, প্রতিটি সংস্করণে, এনলিলকে দেবতাদের বৈধ রাজা হিসাবে দেখানো হয়েছে, যা ট্যাবলেট অফ ডেস্টিনি দ্বারা কাজ করার জন্য অনুমোদিত এবং সর্বোচ্চ দেবতা অনু দ্বারা সম্পূর্ণরূপে সমর্থিত। এই আলোকে, এনলিলকে রাজত্বের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়েছিল, উচ্চ শক্তি এবং নশ্বর বিশ্বের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে। তা সত্ত্বেও, এনলিলেরও একটি খারাপ দিন যেতে পারে এবং তার ধৈর্য হারাতে পারে যেমনটি দ্য অ্যাট্রাহাসিস নামে পরিচিত মহাপ্রলয়ের পৌরাণিক কাহিনীতে লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
অট্রাহাসিস
দ্য আট্রাহাসিসে ( খ্রিস্টপূর্ব 17 শতক),
যখন জ্যেষ্ঠ দেবতারা অবসর জীবন যাপন করেন তখন ছোট দেবতাদের মহাবিশ্ব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সমস্ত কাজ করতে বাধ্য করেন। কনিষ্ঠ দেবতাদের নিজেদের জন্য কোন সময় নেই, এবং তাই এনকি প্রস্তাব করেন যে তারা কম উন্নত প্রাণী তৈরি করবে যারা তাদের জন্য কাজ করবে। যখন তারা এই নতুন প্রাণীগুলি তৈরি করার জন্য কোনও উপযুক্ত উপাদান খুঁজে পায় না, তখন দেবতা উই-লু (লাওয়েলা নামেও পরিচিত) এর নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবকদের বলি দিয়ে হত্যা করা হয়। মাতৃদেবী নিনহুরসাগ তারপরে তার মাংস, রক্ত এবং বুদ্ধিমত্তাকে কাদামাটিতে গুঁড়ে 14টি মানুষ তৈরি করেন: সাতটি পুরুষ এবং সাতটি মহিলা।
এই নতুন প্রাণীগুলিকে পৃথিবীতে স্থাপন করা হয় এবং প্রথমে, দেবতারা যেমন আশা করেছিলেন ঠিক তেমন কাজ করে। তারা ভূমি রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত কাজ করে এবং তাদের জীবনের জন্য দেবতাদের পূজা ও বলি প্রদান করে। কিন্তু প্রাণীগুলি ব্যতিক্রমীভাবে উর্বর হয়ে ওঠে, এবং শীঘ্রই তাদের শত শত এবং তারপরে হাজার হাজার হয় এবং তারা সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে এবং আরও দ্রুত হতে শুরু করে এবং নিজেদের মধ্যে আরও বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে।
এনলিল অবশেষে আর গোলমাল সহ্য করতে পারে না এবং তাদের জনসংখ্যা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি জনগণের উপর একটি খরা, একটি মহামারী এবং দুর্ভিক্ষ পাঠান, কিন্তু প্রতিবার তারা তাদের স্রষ্টা এনকির কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করে এবং তিনি গোপনে তাদের নিজেদেরকে বাঁচাতে এবং পৃথিবীতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে কী করতে হবে তা জানিয়ে দেন। এনলিল বুঝতে পারে না কী ঘটছে কারণ তিনি প্রাণীদের বিরুদ্ধে যা কিছু পাঠান তা কেবল তাদের আরও প্রচুর পরিমাণে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে সহায়তা করে বলে মনে হয় এবং তাই তিনি একটি মহা বন্যায় তাদের সবাইকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি তার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা অন্যান্য দেবতাদেরকে বোঝান এবং এটিকে গতিশীল করেন। এনকি কিন্তু একমত ছিল না কিন্তু একবার এনলিলের ডিক্রি হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করতে কিছুই করতে পারে না। এনকি তখন যান পৃথিবীতে ভ্রমণ করতে এবং ঋষি অট্রাহাসিসের কাছে তাকে একটি সিন্দুক তৈরি করতে বলেন তাদের এবং নিজেকে বাঁচানোর জন্য এতে প্রতিটি ধরণের দুটি প্রাণী নিতে বলেন। অট্রাহাসিস তাকে যেমন বলা হয় তেমন করেন। বন্যা আসে এবং পৃথিবীতে জীবন ধ্বংস হয়।
এনলিল প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তার সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা করে, এবং দেবতারা তাদের প্রাণীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে, কিন্তু তাদের কেউই পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু করতে পারে না। এনকি তখন অট্রাহাসিসকে সিন্দুকটি খুলতে এবং দেবতাদের উদ্দেশ্যে বলি দিতে বলেন এবং তিনি তা করেন। উৎসর্গের মিষ্টি গন্ধ স্বর্গে পৌঁছায়। এনলিল, যদিও কেবলমাত্র তার বন্যার জন্য বিচলিত ছিল, তবু একজন মানুষ যেকোনওভাবে বেঁচে গিয়েছিল বলে ক্ষিপ্ত হন। এনকি নিজেকে ব্যাখ্যা করেন এবং দেবতাদের বলিদান গ্রহণে তার সাথে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান।
তারা খাওয়ার সাথে সাথে, এনকি একটি নতুন পরিকল্পনা প্রস্তাব করে যার মাধ্যমে তারা নতুন প্রাণী তৈরি করবে যারা কম উর্বর হবে এবং কম আয়ু থাকবে এবং এনলিল সম্মত হন। মানুষ বন্ধ্যাত্ব, মৃত্যুহার এবং তাদের অস্তিত্বের জন্য দৈনন্দিন হুমকি অনুভব করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। যদিও এনকিকে স্রষ্টা হিসাবে গণ্য করা হয়, যেহেতু মানবতা ছিল তার ধারণা, এনলিলের সম্মতি ছাড়া কিছুই এগিয়ে যেতে পারে না, এবং তাই তাকে পুরুষ এবং মহিলাদের মহান পিতা হিসাবে গণ্য করা হয় ।
ষষ্ঠ পর্ব
দ্য মিথ অফ ইটানা
“দ্য মিথ অফ ইটানা” হল সুমেরীয় প্রাচীন কিশ রাজার গল্প, যিনি ঈগলের পিঠে চড়ে স্বর্গে যান দেবতাদের কাছ থেকে জন্ম উদ্ভিদের জন্য যাতে তার একটি পুত্র সন্তান হয়। সুমেরীয় রাজাদের তালিকা (প্রায় ২১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) -অনুসারে ইটানাকে কিশের প্রথম রাজা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে তিনি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের প্রথম দিকে রাজত্ব করেছিলেন। সুমেরীয় রাজাদের তালিকা অনুসারে, দেবতারা বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলা তৈরি করার এবং মানবজাতির মধ্যে রাজত্ব ও সরকার প্রতিষ্ঠার ধারণা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইটানাকে “ভূমি স্থিতিশীলকারী” হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে। অতএব, ইটানা একজন সুপরিচিত এবং অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং ঠিক এই কারণেই তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে নির্বাচিত করা হত। এই পুরাণের একটি কেন্দ্রীয় বার্তা হল যে দেবতাদের উপর আস্থা রাখা উচিত এবং ইটানা, একজন মহান রাজা, যিনি সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সেরা উদাহরণ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এই পৌরাণিক কাহিনীটি যে অনেক পুরনো তা প্রমাণ করে ঈগলের পিঠে এতানা চিত্রিত ট্যাবলেট, যা আক্কাদের সারগনের রাজত্বকাল (২৩৩৪-২২৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) থেকে এসেছে। ব্রিটিশ জাদুঘরের সংগ্রহশালার মধ্যে নিনেভায় রাজা আসুরবানিপালের লাইব্রেরি থেকে ইটানার মিথের একটি অংশ রয়েছে , যা ৭ম শতাব্দীর।
এই গল্পটিতে প্রতিটি সংস্কৃতির পৌরাণিক কাহিনীতে দেখা যায় এমন অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে : দেবতাদের দ্বারা নির্মিত একটি মহান শহর , একজন যোগ্য শাসকের সন্ধান, কথা বলা প্রাণী, ভঙ্গ করা শপথ, ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ এবং একটি অনুসন্ধান যা নায়ককে দেবতাদের দেশে নিয়ে যায় (এটিতে পৌরাণিক অনুপাতের একটি ঈগল জড়িত)। আর. ম্যাকরবার্টসের মত অনুসারে, পৌরাণিক কাহিনীটি রাজত্ব সম্পর্কে একটি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হতে পারে।
কাহিনী
গল্পটি শুরু হয় মহান কিশ নগরীর ভিত্তি এবং নির্মাণের মাধ্যমে যেখানে দেবতারা উঁচু দেয়াল দিয়ে শহরটিকে ঘিরে রাখেন।
মহান আনুন্নাকি দেবতারা ছিল ভাগ্য নির্ধারণকারী,
ভূমি সম্পর্কে তাদের পরামর্শ গ্রহণকারী চারটি বিশ্ব অঞ্চলের স্রষ্টা, সমস্ত ভৌত রূপের প্রতিষ্ঠাতা।
তাদের সকলের আদেশে ইগিগি দেবতারা জনগণের জন্য একটি উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। তারা জনবহুল জাতির উপর কোন রাজা প্রতিষ্ঠা করেননি, সেই সময়ে কোন শিরস্ত্রাণ জড়ো করা হয়নি, মুকুটও ছিল না, রাজদণ্ড স্থাপন করা হয়নি। এমনকি কোন সিংহাসনের মঞ্চ তৈরি করা হয়নি।
জনবসতিপূর্ণ বিশ্বের কাছে তারা দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল…। ইগিগি দেবতারা শহরটিকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন। তারা একজন রাখাল খুঁজতে স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন, এবং সর্বত্র একজন রাজা খুঁজছিলেন। ইন্নিনা একজন রাখাল খুঁজতে স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন। এনলিল রাজার মঞ্চ পরীক্ষা করেছিলেন।
“দেশে রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক,
কিশ্ এর হৃদয় আনন্দিত হোক”
অবশেষে ইশতার / ইনান্না ইটানাকে শাসন করার জন্য বেছে নেন এবং তিনি দেবতা আদাদ( উত্তাল জলরাশি) -এর জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের ছায়ায় একটি পপলার গাছ ছিল যার ডালে একটি ঈগল বাসা বেঁধেছিল এবং শিকড়ে একটি সাপ বাসা বেঁধেছিল। প্রতিদিন তারা বাতাসের প্রাণীদের দেখত। ঈগল কথা বলতে প্রস্তুত হয়ে সাপকে বলল, “এসো, আমরা বন্ধুত্ব করি, তুমি এবং আমি”।
ঈগল এবং সর্প, সূর্যদেব শামাশকে সাক্ষী রেখে আনুগত্যের শপথ করে। শামাশের সামনে তারা শপথ করে বলেছিল, “যে কেউ শপথেরর সীমা লঙ্ঘন করবে শামাশ তাকে অপরাধী হিসেবে জল্লাদের হাতে তুলে দিক, ” পাহাড় তার প্রশংসা দূর করে দিক, “আগত অস্ত্র তার জন্য সোজা করে দিক, “শামাশের ফাঁদ এবং অভিশাপ তাকে উৎখাত করুক এবং তাকে তাড়া করুক!”
এরপর তারা বন্ধু হয়ে এবং একে অপরের সন্তানদের যত্ন নেয়। প্রতিদিন পালাক্রমে বন্য পশুদের খোঁজে,
ঈগল বুনো বলদ এবং হরিণ শিকার করত। তাদের সন্তানরা খেত। ঈগল বন্য ভেড়া শিকার করত।
সাপ মাঠের পশুদের, মাটির প্রাণীদের শিকার করত।
ঈগলের বাচ্চারা দ্রুত বড় হয়ে উঠল। তারা বড় হয়ে ওঠার পর ঈগলের হৃদয়ে খারাপ পরিকল্পনা জেগে ওঠে। সে তার বন্ধুর বাচ্চাদের খাওয়ার চিন্তাভাবনা স্থির করল!
ঈগল তার সন্তানদের বলেছিল,”আমি সাপের সন্তানদের, খাব। এতে আমি উপরে গিয়ে স্বর্গে বাস করব!”
সবচেয়ে ছোট বাচ্চাটি, অত্যন্ত জ্ঞানী, তার বাবাকে এই কথাগুলো বলল,”খেয়ো না বাবা! শামাশের
জাল এবং শপথ তোমাকে উল্টে ফেলবে এবং তাড়া করবে। যে কেউ শামাশের সীমা লঙ্ঘন করবে,
শামাশ তাকে অপরাধী হিসেবে জল্লাদের হাতে তুলে দেবে!”
সে তার কথা শোনেনি, বা তার ছেলেদের কথা শোনেনি সে নেমে এসে সাপের বাচ্চাদের খেয়ে ফেলল। সেই দিনের সন্ধ্যায়, যখন সাপটি দিনের খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে, তখন সে দেখতে পায় তার বাচ্চারা আর নেই, তার বাসা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ঈগলের তলোয়ার আর তার পূর্বের বাড়ির চারপাশে মাটিতে সব চিহ্ন । তার বাচ্চারা নেই ! ঈগল তার পশম দিয়ে মাটি কেটে ফেলেছিল, আকাশ থেকে ধুলোর মেঘ আকাশকে অন্ধকার করে দিয়েছিল। সাপ…. শামাশের সামনে কাঁদছিল, যোদ্ধা শামাশের সামনে তার চোখের জল গড়িয়ে পড়ল, “হে যোদ্ধা শামাশ, আমিই তোমার উপর ভরসা করেছিলাম ঈগলকে খাবার দিয়েছিলাম এখন আমার বাসা চলে গেছে যখন তার বাসা নিরাপদ, আমার বাচ্চারা ধ্বংস হয়ে গেছে, যখন তার বাচ্চারা নিরাপদ, সে নেমে এসে আমার বাচ্চাদের খেয়ে ফেলেছে! তুমি জানো, হে শামাশ, সে আমার সাথে কত খারাপ আচরণ করেছে, সত্যিই, হে শামাশ তোমার জাল বিস্তৃত পৃথিবী, তোমার ফাঁদ দূর স্বর্গ পর্যন্ত বিস্তৃত। ঈগল তোমার জাল থেকে পালাতে পারবে না, সেই জঘন্য আনজু যে তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে মন্দ আশ্রয় নিয়েছিল!” সাপের বিলাপ শুনে শামাশ কথা বলার জন্য প্রস্তুত হল এবং তাকে বলল, “যাও, পাহাড় পার হও,আমি তোমার জন্য একটা বুনো ষাঁড় ধরেছি।
তার ভেতরটা খুলে দাও, পেট ছিঁড়ে ফেলো, পেটে লুকিয়ে রাখো, আকাশের সব ধরণের পাখি মাংস খেতে নেমে আসবে। ঈগল তাদের সাথে মাংস খেতে নেমে আসবে,যেহেতু সে তার জন্য মন্দ কিছু ভাবতে পারবে না,সে সবচেয়ে রসালো মাংস খুঁজবে , সে বাইরে ঘুরে বেড়াবে, অন্ত্রের আবরণে তার পথ তৈরি করবে,
“যখন সে ভেতরে আসবে, তাকে তার ডানা ধরে ধরো,
তার ডানা এবং লেজের পালক কেটে ফেলো,
তাকে টেনে নিয়ে অতল গর্তে ফেলে দাও,
ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় সেখানে তাকে মরতে দাও”।
যোদ্ধা শামাশ যেমন আদেশ করেছিলেন,সাপটি গিয়ে পাহাড় পার হয়ে গেল। তারপর বুনো ষাঁড়ের কাছে পৌঁছাল। সে তার পেট ছিঁড়ে ফেলল এবং তার পেটে লুকিয়ে পড়ল। আকাশের সব ধরণের পাখি মাংস খেতে নেমে এল। ঈগল কি আদৌ তার জন্য মন্দ কিছু জানতে পেরেছিল? সে ঠিক করল অন্য পাখিদের সাথে মাংস খাবে না! সে তার বাচ্চাদের বলল,”চলো, আমরাও নীচে যাই এবং আমরাও বুনো ষাঁড়ের পেটের ভেতর মাংস খাই”।
ছোট্ট বাচ্চাটি, অত্যন্ত জ্ঞানী,তার বাবাকে এই কথাগুলি বলল,”নিচে যেও না বাবা, নিঃসন্দেহে সাপটি বুনো ষাঁড়ের ভিতরে লুকিয়ে আছে”।
ঈগল নিজেকে বলল,”পাখিরা কি ভয় পায়? তারা শান্তিতে মাংস খায়?”
সে তার কথা শোনেনি, সে তার ছেলেদের কথা শোনেনি। সে নেমে বুনো ষাঁড়ের উপর বসে পড়ল।
ঈগল মাংসের দিকে তাকাল, সামনে এবং পিছনে অনুসন্ধান করল। সে বাইরে ঘুরে বেড়াল, সে অতঃপর পেটের ভেতর প্রবেশ করল। যখন সে ভিতরে এলো, সাপটি তার ডানা ধরে তাকে ধরে ফেলল,
“তুমি অনুপ্রবেশ করেছ… তুমি অনুপ্রবেশ করেছ…!”
ঈগল কথা বলতে প্রস্তুত হল, সাপকে বলল,”আমার প্রতি দয়া করো! আমি তোমাকে রাজার মুক্তিপণের মতো উপহার দেব!”
সাপটি ঈগলকে বলল,”আমি যদি তোমাকে ছেড়ে দেই, তাহলে আমি শামাশকে কীভাবে উত্তর দেব?”
তোমার শাস্তি আমার উপরই আসবে,আমিই তোমাকে শাস্তি দেব!”
সে তার ডানা, ডানা এবং লেজের পালক কেটে ফেলল,
তাকে টেনে তুলে একটি গর্তে ফেলে দিল।
যাতে সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় সেখানে মারা যায়।
এরপর ঈগল দিনের পর দিন শামাশকে মিনতি করতে থাকল,”আমি কি গর্তে মরব?কে জানবে তোমার শাস্তি আমার উপর কীভাবে বর্ষিত হয়েছে?আমার জীবন বাঁচাও! আমি যেন তোমার নাম চিরকালের জন্য প্রচার করি।”
শামাশ কথা বলার জন্য প্রস্তুত হয়ে ঈগলকে বলল,”তুমি দুষ্ট এবং হীন কাজ করেছ। তুমি দেবতাদের নামে ঘৃণার কাজ করেছ, নিষিদ্ধ কাজ। তুমি কি শপথ করে ছিলে না? আমি তোমার কাছে আসব না। তবে
আমি তোমাকে একজন লোক পাঠাবো যাকে আমি সাহায্য করব”।
এদিকে নিশ্ শহরের রাজা এটানা দিনের পর দিন শামাশকে মিনতি করতে থাকে,”ওহে শামাশ, তুমি আমার সবচেয়ে মোটা ভেড়ার মাংস খেয়েছ!
হে পাতাল, তুমি আমার বলি দেওয়া ভেড়ার রক্ত পান করেছ! আমি দেবতাদের সম্মান করেছি এবং আত্মাদের শ্রদ্ধা করেছি,স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীরা আমার ধূপ নষ্ট করেছে,দেবতারা আমার ভেড়ার বাচ্চা জবাই করে খেয়েছে। হে প্রভু, দয়া করো। আমার স্ত্রী বন্ধ্যা আমাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী একটি সন্তান দান করুন। আমাকে জন্মের গাছটি দিন!
আমার বোঝা থেকে মুক্তি দিন, আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দিন!”
শামাশ কথা বলার জন্য প্রস্তুত হয়ে এতনাকে বলল,
“একটি গর্ত খুঁজে বের করো, ভিতরে দেখো,
এর মধ্যে একটি ঈগল নিক্ষিপ্ত। তিনি তোমার কাছে জন্মের উদ্ভিদ প্রকাশ করবেন”।
এটানা তার পথে চলে গেল। সে গর্তটি খুঁজে পেল, সে ভিতরে তাকাল। ঈগলকে এর মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
ঈগল তার দিকে তাকাল….সে এটানাকে বলল,”তুমি এটানা, বন্য পশুদের রাজা,
তুমি এটানা, পাখিদের মধ্যে
আমাকে এই গর্ত থেকে তুলে আন। তোমার হাত দাও,
আমি চিরকাল তোমার প্রশংসা গাইব”।
এটানা ঈগলকে এই কথাগুলো বলল,”যদি আমি তোমার জীবন রক্ষা করি, যদি আমি তোমাকে গর্ত থেকে তুলে আনি তবে তুমি আমার স্বপ্ন সার্থক করবে “।
ঈগল রাজি হল।
এটানা এই কথা শুনে,সে গর্তের সামনের অংশ পাথর দিয়ে পূর্ণ করে দিল,
তারপর সে ভেতরে ছুড়ে দিল লতা গুল্ম রজ্জু। ঈগল…. গর্ত থেকে বেরোনোর জন্য, সে তার ডানা ঝাপটালো,
প্রথমবার এবং দ্বিতীয়বার… গর্তে ঈগল,, সে তার ডানা ঝাপটালো…..তৃতীয়বার চতুর্থবার…পঞ্চমবার এবং ষষ্ঠবার…
সে তার সপ্তম মাসে গর্তে তাকে হাত ধরে নিয়ে গেল। ঈগল ক্ষুধার্ত সিংহের মতো খাবার খেয়েছিল।
অষ্টম মাসে সে লাভ করেছিল শক্তি।
ঈগল কথা বলার জন্য প্রস্তুত হল এবং এটানাকে বলল,
“বন্ধু! চলো আমরা বন্ধু হই, তুমি আর আমি!”
“তুমি যা চাও আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে তা দেব”।
এটানা ঈগলকে বলল, “আমার চোখ স্বপ্নে যা দেখায় যা লুকানো আছে তা খুলে দাও।
এটানা এবং ঈগল বন্ধু হয়ে যায়। এটানা তার স্বপ্ন ঈগলকে বর্ণনা করে। ঈগল এটানার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে। এই স্বপ্নগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে, এটানা ঈগলের পিঠে চড়ে স্বর্গে ওঠে এবং ইশতার তাকে জন্মের উদ্ভিদ দেয়। ঈগল বিশ্বাস করে যে এই স্বপ্নটি তাদের দুজনের জন্য দেবতাদের কাছ থেকে একটি বার্তা যে তারা এই অভিযানে যাতে অংশ নেয়।
এটানা ঈগলকে বলল,”আমার বন্ধু, আমি দ্বিতীয় স্বপ্ন দেখলাম, নলখাগড়া তারা ঘরে স্তূপ করে রাখা, শত্রুরা ছিল বেষ্টিত, তারা দুষ্ট সর্প, আমার সামনে এগিয়ে আসছিল, তারা আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছিল”।
ঈগল এটানাকে স্বপ্নের অর্থ বুঝিয়ে দিল। বলল, তোমার স্বপ্ন শুভ”।
এটানা ঈগলকে বলল তার তৃতীয় স্বপ্ন,”আমার বন্ধু, আমি দেখলাম সেই দেবতা অনু , এনলিল এবং এনকি। আমরা দরজা দিয়ে গেলাম , আমরা সিন, শামাশ, আদাদ এবং ইশতারের দরজা দিয়ে গেলাম, আমরা একসাথে প্রণাম করলাম, তুমি এবং আমি, আমরা জানালা সহ একটি ঘর দেখলাম, যার কোন নামাঙ্কন ছিল না। আমরা ভিতরে গেলাম। একজন অসাধারণ যুবতী সেখানে বসে ছিল, সে ছিল মনোমুগ্ধকর বৈশিষ্ট্যের সুন্দরী। একটা সিংহাসন তৈরি করা হল।
সিংহাসনের নীচে সিংহরা। আমি ভেতরে ঢুকতেই সিংহরা আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি হঠাৎ করেই কেঁপে উঠলাম “।
ঈগল তাকে বলল, এটানাকে: “আমার বন্ধু, স্পষ্ট দেখাচ্ছে আমাদের গন্তব্য। এসো, আমি তোমাকে স্বর্গে নিয়ে যাই, তোমার বুক আমার বুকের সাথে রাখো, তোমার হাত আমার ডানার পালকের সাথে রাখো, তোমার বাহু আমার পাশে রাখো”।
সে তার বুক তার বুকের সাথে রাখলো, সে তার ডানার পালকের সাথে রাখলো, সে তার বাহু তার পাশে রাখলো। যখন সে তাকে এক লিগ উঁচুতে তুলে নিল ঈগল এটানাকে বলল, “দেখো, আমার বন্ধু, ভূমি এখন কেমন। সমুদ্র পরীক্ষা করো, তার সীমানা খুঁজো। ভূমি পাহাড়… সমুদ্র একটি স্রোতে পরিণত হয়েছে”। যখন সে তাকে দ্বিতীয় লিগ উঁচুতে তুলে নিল, ঈগল এটানাকে বলল, “দেখো,আমার বন্ধু, জমিটা এখন কেমন! জমিটা একটা পাহাড়”।
যখন সে তাকে তৃতীয় ধাপ উপরে তুলে নিল, তখন
ঈগলটি এটানাকে বলল, “দেখো বন্ধু, এখন জমি কেমন! সমুদ্র মালির খাদে পরিণত হয়েছে।”
তারা আনুর স্বর্গে ওঠার পর, তারা আনুর দরজা, এনলিল এবং ইএর দরজা দিয়ে গেল,
ঈগল এবং এটানা একসাথে প্রণাম করল।
(এই পর্বের আরেকটি সংস্করণ)
যখন সে তাকে এক ধাপ উপরে তুলে নিল, ঈগল বলল,”দেখো বন্ধু, এখন জমি কেমন!”
এটানা বলল,”ভূমির পরিধি তার আকারের এক পঞ্চমাংশ হয়ে গেছে। বিশাল সমুদ্র একটি প্যাডকের মতো হয়ে গেছে”।
যখন সে তাকে দ্বিতীয় ধাপ উপরে তুলে নিল, ঈগল জানতে চাইল,”দেখো বন্ধু, জমি এখন কেমন!”
এটানা বলল,”জমিটি একটি বাগানের জমিতে পরিণত হয়েছে এবং বিশাল সমুদ্র একটি খাদে পরিণত হয়েছে।
যখন সে তাকে তৃতীয় ধাপ উপরে তুলে নিল,
“দেখো বন্ধু, জমি এখন কেমন!” একটানা বলল,”আমি তাকালাম কিন্তু জমি দেখতে পেলাম না! আমার চোখও বিশাল সমুদ্র খুঁজে পাওয়ার মতো যথেষ্ট ছিল না! বন্ধু, আমি স্বর্গে যাব না। আমাকে নামিয়ে দাও, আমাকে আমার শহরে যেতে দাও”। এই বলে ঝাঁপ দিল।
এক ধাপ সে তাকে নিচে ফেলে দিল ঈগলটি ডুব দিয়ে তার ডানায় ধরে ফেলল। আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল।
দ্বিতীয় ধাপে ঈগল ডুব দিয়ে তার ডানায় ধরে ফেলল, এইভাবে তৃতীয় ধাপে ঈগল ডুব দিয়ে তার ডানায় ধরে ফেলল। তিন হাত মাটির মধ্যে সে তাকে নিচে ফেলে দিল।
তারা দুজন কিশ শহরে ফিরে আসে যেখানে এটানা এবং তার স্ত্রী উভয়েই আবার স্বপ্ন দেখে এবং ঈগল এটানার স্বপ্নকে স্বর্গে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করার আদেশ হিসেবে ব্যাখ্যা করে। সম্ভবত দ্বিতীয় প্রচেষ্টা সফল হয় কারণ তারা স্বর্গের উচ্চতা অর্জন করে এবং একসাথে প্রণাম করার জন্য দেবতাদের আবাসে পৌঁছায় কিন্তু বাকি গল্পটি হারিয়ে যায়। যেহেতু এটানার একটি পুত্র ছিল, বালিখ, যিনি তার উত্তরসূরী হিসেবে রাজা হন (এবং বলা হয় যে তিনি 1500 বছর ধরে রাজত্ব করেছিলেন), তাই বোঝা যায় যে এটানাকে ইশতারের জন্মের উদ্ভিদ দান করার স্বপ্ন সত্য হয়েছিল।
অনুবাদটি বেঞ্জামিন ফস্টারের লেখা, ” From Distant Days: Myths, Tales and Poetry from Ancient Mesopotamia ” থেকে নেওয়া হয়েছে । যা বর্তমান লেখকের নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, উপসংহারের দিকে। প্রতিভাস ম্যাগাজিন
সপ্তম পর্ব
এনকি ও নিনহুরসাগ
সুমেরীয় পুরাণে এনকি এবং নিনহুরসাগ দিলমুন নামে পরিচিত। আসলে দিলমুনের (বাহরাইন) দেবী হিসেবে পূজিত। স্বর্গের বাগানে পৃথিবীর সূচনার গল্প তাই বলে। নিনহুরসাগ, একজন তরুণী এবং প্রাণবন্ত দেবী। সৃষ্টিতে সারাবছর তার ভূমিকার পর শীতকালে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য অবসর নেন। জ্ঞান, জাদু এবং মিষ্টি জলের দেবতা এনকি তাকে সেখানে খুঁজে পান এবং তার প্রেমে পড়েন। তারা অনেক রাত একসাথে কাটান, এবং নিনহুরসাগ গর্ভবতী এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন যার নাম তারা নেন নিনসার (‘উদ্ভিদের মহিলা’)। নিনহুরসাগ শিশুটিকে প্রচুর বৃদ্ধির আশীর্বাদ করেন এবং সে নয় দিনের মধ্যে একজন নারীতে পরিণত হয়। বসন্ত এলে, নিনহুরসাগকে পৃথিবীতে জীবন্ত প্রাণীদের লালন-পালনের দায়িত্বে ফিরে যেতে হয় কিন্তু এনকি এবং নিনসার থেকে যায়।
এনকি নিনহুরসাগের জন্য ভীষণভাবে বিরহ কাতর হয়ে পড়ে এবং একদিন, নিনসারকে জলাভূমির পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে এবং তাকে নিনহুরসাগের অবতার বলে বিশ্বাস করে। সে তাকে প্রলুব্ধ করে, এবং সে আবার গর্ভবতী হয় এবং একটি কন্যা নিনকুরা (পাহাড়ের চারণভূমির দেবী) এর জন্ম দেন। নয় দিনের মধ্যে নিনকুরাও একজন যুবতীতে পরিণত হয় এবং এনকি আবার বিশ্বাস করে যে সে মেয়েটির মধ্যে তার প্রিয় নিনহুরসাগকে দেখতে পায়।
সে নিনসার,একই ভাবে নিনকুরাকে সে প্রলুব্ধ করে, এবং সে উত্তু (‘প্যাটার্নস অ্যান্ড লাইফ ডিজায়ারসের তাঁতি’) নামে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। উত্তু এবং এনকি কিছুক্ষণের জন্য একসাথে সুখী থাকে, কিন্তু নিনসার এবং নিনকুরার মতোই, এনকি যখন বুঝতে পারে যে সে নিনহুরসাগ নয় তখন তাকে ছেড়ে পৃথিবীতে তার কাজে ফিরে যায়।
উত্তু বিচলিত হয়ে নিনহুরসাগের কাছে সাহায্যের জন্য ডাকে, কী ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করে। নিনহুরসাগ উত্তুকে এনকির বীজ তার শরীর থেকে মুছে ফেলতে বলে এবং দিলমুনের মাটিতে পুঁতে দিতে বলে। উত্তু তাকে যা বলা হয়েছিল তা করে এবং নয় দিন পরে, মাটি থেকে আটটি নতুন গাছ গজায়। সেই মুহুর্তে, এনকি আবার ফিরে আসে।
গাছগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, এনকি থামে জিজ্ঞাসা করে যে এগুলো কী, আর ইসিমুদ প্রথম গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ে এনকির হাতে দেয়, সে এটা খায়। সে জানতে পারে, এটি একটি গাছের গাছ এবং এটি এত সুস্বাদু যে ইসিমুদ বাকি সাতটি গাছও ছিঁড়ে ফেলে, যা এনকিও দ্রুত খায়। নিনহুরসাগ ফিরে আসে এবং রেগে যায় যে এনকি সব গাছই খেয়ে ফেলেছে। সে তার উপর মৃত্যুর অভিশাপ দেয় এবং স্বর্গ ও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
এদিকে এনকি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্যান্য সকল দেবতা শোক করে, কিন্তু নিনহুরসাগ ছাড়া। কেউ তাকে সুস্থ করতে পারে না, এদিকে নিনহুরসাগকে খুঁজে পাওয়া যায় না। নিনহুরসাগের সৃষ্টি প্রাণীদের মধ্যে একটি শিয়াল আবির্ভূত হয়, যে জানে সে কোথায় আছে এবং তাকে ফিরিয়ে আনতে যায়। নিনহুরসাগ এনকির পাশে ছুটে যায়, তাকে নিজের কাছে টেনে নেয় এবং তার মাথা তার যোনিপথের সাথে রাখে। সে তাকে চুম্বন করে এবং জিজ্ঞাসা করে যে তার ব্যথা কোথায়, এবং প্রতিবার যখন সে তাকে বলে, সে ব্যথাটি তার শরীরে টেনে নেয় এবং অন্য দেবতার জন্ম দেয়। এইভাবে, মানবতার জন্য সবচেয়ে অনুকূল আটটি দেবতার জন্ম হয়:
আবু – উদ্ভিদ এবং বৃদ্ধির দেবতা
নিন্টুল্লা – মাগানের অধিপতি, তামা ও মূল্যবান ধাতুর শাসক
নিনসিতু – নিরাময়ের দেবী এবং নিনাজুর সহধর্মিণী
নিনকাসি – বিয়ারের দেবী
নানশে – সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ভবিষ্যদ্বাণীর দেবী
আজিমুয়া – আরোগ্যের দেবী এবং পাতালের নিঙ্গিশিদার স্ত্রী
এমশাগ – দিলমুন এবং উর্বরতার প্রভু
নিন্তি – ‘পাঁজরের লেডি’, যিনি জীবন দান করেন
এনকি সুস্থ হয়ে ওঠে এবং গাছপালা খাওয়ার ক্ষেত্রে তার অসাবধানতা এবং মেয়েদের প্রলুব্ধ করার ক্ষেত্রে তার অজ্ঞতার জন্য অনুতপ্ত হয়। নিনহুরসাগ তাকে ক্ষমা করে দেয় এবং দুজনেই সৃষ্টির কাজে ফিরে আসে।
এই পৌরাণিক কাহিনীটি নিনহুরসাগকে সর্বশক্তিমান হিসেবে উপস্থাপন করে যে তিনি সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতাদের একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিতে সক্ষম এবং তিনিই একমাত্র দেবতা যিনি তাকে আরোগ্য করতে পারেন।
তার সম্পর্কে প্রচলিত সকল পৌরাণিক কাহিনীতে, নিনহুরসাগকে জীবন ও শক্তির সাথে যুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু পরে এনকি তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে এবং অবশেষে তার উপর আধিপত্য বিস্তার করে।
এই গল্পটা আবার অন্য রুপে পাওয়া যায়।
এনকি উত্তুকে ত্যাগ করার পর, নিনহুরসাগ তাকে খুঁজে পান এবং তার শরীর থেকে এনকির বীর্য অপসারণ করেন। বীর্য থেকে সাতটি গাছ বের হয়। এনকি পরে এই গাছগুলি দেখে এবং খেয়ে ফেলে এবং তাই তার নিজের বীর্য থেকে গর্ভবতী হন। পুরুষ হিসেবে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম, তিনি মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, নিনহুরসাগ জন্মদেবী হিসেবে—তাকে তার স্ত্রীযোনিতে স্থাপন করেন এবং তাকে সাত কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে সাহায্য করেন, যাদের এনকি পরে আনন্দের সাথে বিভিন্ন দেবতার সাথে বিবাহ দেন। গল্পটিকে সম্ভবত কিছুটা বিস্তৃত হাস্যরস হিসেবে দেখা যায়।
এনকি ও নিন্মাহ
এনকি এবং নিন্মার পৌরাণিক কাহিনীতে , নিন্মুরসাগ দেবতার সাথে সমান মর্যাদায় শুরু হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার মর্যাদা হারায়। এটা জানা যায় যে ব্যাবিলনের হাম্মুরাবির রাজত্বকালে (১৭৯২-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) মেসোপটেমিয়ার নারী দেবতারা পুরুষদের দ্বারা আবৃত ছিলেন। যদি এটি প্রামাণিকভাবে নির্ধারণ করা যায় যে এনকি এবং নিন্মাহর গল্পটি এই সময় থেকেই এসেছে, তাহলে পৌরাণিক কাহিনীটি তখনকার দেবীদের (এবং মহিলাদের ) মর্যাদা এবং সমতার সামগ্রিক অবক্ষয়ের সাথে মিলে যায়। পণ্ডিত জেরেমি ব্ল্যাক যেমন উল্লেখ করেছেন:
সুমেরীয় রচনাগুলির জন্য মোটামুটি সাধারণ ঐতিহাসিক কাঠামো ছাড়া আর কিছুর অভাবের অর্থ হল যেকোনও কালানুক্রমিক পদ্ধতি, যেমন ধারার বিকাশ বা ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া বা ঘটনার সাথে সম্পর্ক।
তবে এটা সম্ভব যে গল্পটি মেসোপটেমিয়ার ইতিহাসের পরবর্তী সময় থেকে এসেছে এবং পৌরাণিক কাহিনীতে দেবীর মর্যাদা হ্রাসের কারণে। যদিও কেউ কেউ এই গল্পটি এনকি এবং নিনহুরসাগের আগে বলে কারণ এই গল্পে তিনি তার পূর্বের নামে পরিচিত, যদিও এই ধরণের দাবি অমূলক। দেবীর নাম গল্প থেকে গল্পে পরিবর্তিত হয়েছে এবং কোনও নির্দিষ্ট পাঠ্যের সাথে সময় চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এটি কোনও সহায়ক নয়।
গল্পটি শুরু হয় ছোট দেবতাদের তাদের সমস্ত অন্তহীন পরিশ্রমের ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে। তাদের খাল খনন করতে, ফসল কাটাতে এবং সকল ধরণের তুচ্ছ শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হয়, যা তাদের আরও বড় কাজ বা কোনও ধরণের অবসর থেকে বিরত রাখে। তারা এনকিকে তাদের সাহায্য করার জন্য কিছু করার জন্য চিৎকার করে, কিন্তু এনকি, যিনি একজন সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি সৃষ্টির প্রচেষ্টার পরে বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং জেগে উঠবেন না। এনকির মা, নাম্মু, তাদের কান্না শুনেন এবং তাদের চোখের জল এনকির কাছে নিয়ে যান, তাকে জাগিয়ে তোলেন। এনকি এই অনুরোধে বিরক্ত হন কিন্তু তার মায়ের ইচ্ছা মেনে নেন যে তিনি এমন প্রাণী তৈরি করুন যারা দেবতাদের বোঝা লাঘব করবে। তিনি তাকে নিন্মাহ এবং অন্যান্য উর্বরতা দেবীদের সাথে কাজ করতে বলেন যাতে তারা মানুষ সৃষ্টি করে এবং তাদের জীবন দেয়।
মানুষ সৃষ্টির পর, এনকি উদযাপনে একটি বিরাট ভোজসভার আয়োজন করে। সমস্ত বয়স্ক দেবতারা তার জ্ঞানের প্রশংসা করেন এবং ছোট দেবতারা তাদের পরিশ্রম থেকে মুক্তি পান। এনকি এবং নিন্মাহ একসাথে পানীয় পান করে এবং অবশেষে বেশ মাতাল হয়ে পড়েন। নিন্মাহ এনকিকে এক ধরণের প্রতিযোগিতার জন্য চ্যালেঞ্জ জানায় যে কীভাবে মানুষের দেহ, এনকির নকশা অনুযায়ী ভাল বা খারাপ হতে পারে তবে তাদের ভাগ্য ভাল বা খারাপ হবে তা সম্পূর্ণরূপে তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এনকি তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বলে, “তুমি ভাগ্য যা-ই স্থির করো, ভালো বা খারাপ, আমি তা উন্নত করব।”
নিন্মাহ এমন একজন মানুষকে তৈরি করে যার হাত দুর্বল এবং এনকি তাকে রাজার দাস বানিয়ে তার জীবন উন্নত করে কারণ সে চুরি করতে পারত না। তারপর সে একজন পুরুষ তৈরি করে এবং তাকে অন্ধ করে দেয়, কিন্তু এনকি তাকে সঙ্গীতের উপহার দিয়ে এবং রাজার মন্ত্রী করে তার জীবন উন্নত করে। একই রীতি অনুসরণ করে নিন্মাহএনকিকে আরও বড় বড় চ্যালেঞ্জ দেয়, যার মুখোমুখি হয় সে। অবশেষে সে এমন একটি প্রাণী তৈরি করে যার লিঙ্গ বা যোনি নেই, কিন্তু এনকি এই প্রাণীর জন্য রাজার কাছে একজন নপুংসক হিসেবে একটি জায়গা খুঁজে পায় যে তার অন্তঃপুরের দেখাশোনা করবে।
নিন্মাহ হতাশ হয়ে তার পরবর্তী মাটির টুকরো মাটিতে ছুঁড়ে মারে, কিন্তু এনকি তা তুলে নিয়ে খেলা শুরু করে, তাকে বলে যে সে এখন কীভাবে একটি প্রাণী তৈরি করবে এবং তাকে তার ভাগ্য উন্নত করতে হবে যেমন সে করেছে। সে তার শরীরের প্রতিটি অংশে আক্রান্ত একজন মানুষ তৈরি করে এবং নিন্মাহকে দেয়। সে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সে খেতে পারে না, দাঁড়াতে, হাঁটতে, কথা বলতে বা কোনওভাবেই কাজ করতে পারে না। সে এনকিকে বলে, “তুমি যে মানুষটি তৈরি করেছ সে জীবিতও নয়, মৃতও নয়। সে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।”
এনকি আপত্তি জানায়, উল্লেখ করে যে সে তাকে বেশ কয়েকটি প্রাণীর সাথে উপস্থাপন করেছিল এবং সে তাদের সকলের উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিল। এই বিষয়ে নিন্মাহর প্রতিক্রিয়া হারিয়ে যায়। এইখানে ট্যাবলেটটি ভেঙে যায়, কিন্তু যখন গল্পটি আবার শুরু হয়, তখন এনকি স্পষ্টতই চ্যালেঞ্জের বিজয়ী হয় এবং কাজটি এই লাইন দিয়ে শেষ হয়, “নিন্মাহ, মহান প্রভু এনকির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। পিতা এনকি, তোমার প্রশংসা অপরিমেয়!” অথচ পুরনো একটি ফলকে এনকিকে পরাজিত হতে দেখা যায় যা মানুষ সৃষ্টি কথায় পূর্বেই বলা হয়েছে।
যদিও এই পুরাণে দেবী মর্যাদা হারান, তবুও তাকে একজন শক্তিশালী দেবী হিসেবে বিবেচনা করা হত যার কাছে বিপদের সময় সাহায্য ও নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করা যেত। নিনহুরসাগের প্রতিটি পুরাণ, কবিতা বা গল্প জীবন, যত্ন, সৃষ্টি এবং মাতৃদেবীর ভূমিকার সাথে যুক্ত। প্রতিভাস ম্যাগাজিন
অষ্টম পর্ব
নিনুরতা এবং কচ্ছপের মিথ
এনকির কৌশল কীভাবে একজন সুমেরীয় বীরকে পরাজিত করেছিল
প্রাচীন শহর এরিদুতে, যেখানে আবজুর পবিত্র জলরাশি গোপন কথা বলত, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ধূর্ততার এক গল্প শুরু হয়েছিল। নিনুরতা এবং কচ্ছপের পৌরাণিক কাহিনী এই রহস্যময় ভূমিতে উন্মোচিত হয়েছিল, যা খণ্ডিত ফলকে লিপিবদ্ধ একটি হারিয়ে যাওয়া সুমেরীয় মহাকাব্যের অংশ। এখানে, দেবতারা সৃষ্টির প্রতিধ্বনির মধ্যে হেঁটে বেড়াতেন, এবং ঐশ্বরিক শক্তির ভারসাম্য একটি সুতোয় ঝুলছিল।
ভাগ্যের ফলক
আমাদের গল্প শুরু হওয়ার অনেক আগে, এনলিল ছিলেন, বাতাসের ভয়ঙ্কর দেবতা। তিনি এমন একটি শিল্পকর্মের রক্ষক ছিলেন যা এত শক্তিশালী ছিল যে এটি ভবিষ্যতের গতিপথ নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।
“আমি” বা “ভাগ্যফলক” নামে পরিচিত এই নিদর্শনটি কোনও সাধারণ ধ্বংসাবশেষ ছিল না। কাদামাটির উপর খোদাই করা কিউনিফর্ম লিপিতে, এতে এমন ভবিষ্যদ্বাণী লেখা ছিল যা বিশ্ব শাসন করতে সক্ষম। ভাগ্যফলক যার নিয়ন্ত্রণে থাকত সে দেবতা এবং নশ্বর উভয়ের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।
কিন্তু এই ধরনের ক্ষমতা সর্বদা হিংসা এবং কলহকে আমন্ত্রণ জানায়, এবং এই ক্ষেত্রেও এটি ব্যতিক্রম ছিল না।
এনলিলের অজান্তেই, ক্ষমতার উপর তার দখল প্রায় নড়ে উঠল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী, আনজু, একজন শক্তিশালী রাক্ষস, একটি গভীর জলাশয় থেকে আসে, যা আবজু নামেও পরিচিত।
নিয়তির ফলক চুরি
আনজুকে আবজু নদীর শান্ত অথচ শক্তিশালী জলরাশি এবং পৃথিবীর প্রশস্ত আলিঙ্গন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এটি ছিল একটি বিশাল পাখি যার মাথা ছিল সিংহের মতো হিংস্র এবং ঈগলের মতো মহিমান্বিত ডানা।
এই প্রাণীটি আগুন এবং জল নিঃশ্বাস নিতে সক্ষম ছিল। সৃষ্টির সৌন্দর্য দ্বারা নয় বরং শক্তির প্রলোভনে এটি আকৃষ্ট হয়েছিল। একটি সাহসী কাজে, আনজু ভাগ্যের ফলকটি দখল করে, আকাশকে অশান্ত করে তোলে।
নিনুরতার বীরত্ব এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, এনলিলের বীর পুত্র এবং তার বীরত্বের জন্য বিখ্যাত যোদ্ধা দেবতা নিনুরতা আনজুর সাথে লড়াই করার চ্যালেঞ্জে উঠে দাঁড়ান। মহাবিশ্বের ভাগ্য ঝুলন্ত অবস্থায়, তিনি আনজুর মুখোমুখি হন এক মহাকাব্যিক সংঘর্ষে যা যুগ যুগ ধরে প্রতিধ্বনিত হবে।
নিনুরতার শক্তি কেবল তার বাহুতেই ছিল না, বরং চুরি যাওয়া ডেসটিনি ট্যাবলেটটি উদ্ধার করার তার দৃঢ় সংকল্পেও ছিল।
নিনুর্তা যখন শক্তিশালী আনজুকে আঘাত করেছিলেন, তখন তিনি ভাগ্যফলক পুনরুদ্ধার করেছিলেন। এই যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ অন্য সময়ের জন্য একটি গল্প।
যাইহোক, এই যুদ্ধ শেষ হয়নি বরং গভীর পরিকল্পনা এবং ছায়াপথের সূচনা ছিল। কারণ দেবতাদের জগতে, বিজয় কেবল একটি মুহূর্ত, এবং আসল চ্যালেঞ্জ হল পরবর্তী সময়ে কী ঘটবে তার মধ্যেই।
এক স্বর্গীয় বিজয় এবং তার ছায়া
আমাদের গল্প শুরু হয় বিজয়ী নিনুর্তা দিয়ে, যিনি পরাজিত আনজুর কাছ থেকে দাবিকৃত ভাগ্যফলক ধরে আছেন। তার হৃদয় গর্ব এবং গোপন উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ফুলে ওঠে। দেবতারা আনন্দিত হন, এবং তাদের উদযাপনের প্রতিধ্বনি মহাজাগতিক সমভূমিতে ভরে ওঠে। অপব্যবহার করা ক্ষমতা দখলের বিশৃঙ্খলা এড়ানো গেছে বলে মনে হল।
তবুও, নিনুরতার উদ্দেশ্য কেবল ভাগ্যফলক উদ্ধারের বাইরেও বিস্তৃত ছিল। তিনি নিজেই ফলকের শক্তি ব্যবহার করে দেবতা এবং মানুষ উভয়ের ভাগ্য গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কারণ তিনি এই প্রবাদটি ভালভাবেই জানতেন যে যিনি ভাগ্যফলক নিয়ন্ত্রণ করেন তিনিই মহাবিশ্বের শাসক। কিন্তু এই শক্তি দ্বিধারী তলোয়ারের মতো – এটি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে অথবা বিশ্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
নিনুরতার মা, পাহাড়ের দেবী, নিনহুরসাগা, গর্বে ভরা হৃদয় নিয়ে তার ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ভাগ্যফলক পাওয়ার স্বপ্নও দেখেছিলেন। এখন, তিনি তার ছেলের পাশে থেকে বিশ্বজগত শাসন করতে সক্ষম হবেন।
নিনুরতা এবং তার মা নিনহুরসাগাকে সাম্প্রতিক বিজয়ে আনন্দিত হতে দেখি, যখন তারা একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরির স্বপ্ন দেখে।
আসুন আমরা গভীর, জলাবদ্ধ অতল গহ্বরের দিকে আমাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে জ্ঞানের দেবতা এনকির দিকে মনোনিবেশ করি। তিনিই ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন।
আবজুর গভীরে, এনকি প্রাচীন চোখ দিয়ে নাটকের উন্মোচন দেখছিলেন। তিনি উপরের অস্থিরতা এবং নীচের আলোড়ন অনুভব করতে পারছিলেন। এক সচেতন দৃষ্টিতে, তিনি নিনুরতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং মহাবিশ্ব জুড়ে যে বিশৃঙ্খল তরঙ্গ ছড়িয়ে দিতে পারেন তা উপলব্ধি করেছিলেন। সময়ের স্রোতে পরিস্থিতি কীভাবে উন্মোচিত হচ্ছে তা তিনি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
নিনুরতা যখন ট্যাবলেটটি কাছে ধরে রাখছিলেন, তখন এনকি তার জলরাশির আবাস, আবজুর ছায়াময় গভীরতা থেকে তাকাল। জ্ঞানী এনকি সময়ের বুননে নিয়তির সুতোগুলি দেখতে পেতেন। তিনি এই ধরণের শক্তির অনিয়ন্ত্রিত বিপদগুলি সম্পর্কে ভালভাবেই জানতেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এমনকি সর্বশ্রেষ্ঠ বীররাও পরম কর্তৃত্বের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হতে পারেন।
তার ঐশ্বরিক জলের শান্ত গর্ভগৃহে, এনকি মহাবিশ্বের ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করছিলেন, যা এখন বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। উদ্বিগ্ন এবং দৃঢ়চিত্ত হৃদয় নিয়ে, তিনি একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। এমন একটি পরিকল্পনা যা সরাসরি সংঘর্ষ ছাড়াই ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করবে।
প্রাচীন জাদুবিদ্যার জ্ঞান ব্যবহার করে, তিনি প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি ভাগ্যের ফলক থেকে শক্তিগুলি সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাদের ধার্মিক স্থানে, তার জলাবদ্ধ অতল গহ্বরে সংরক্ষণ করেছিলেন, এইভাবে ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে থাকে তা নিশ্চিত করেছিলেন।
ড্রাগনদের হত্যাকারী এবং পাহাড় ধ্বংসকারী নিনুরতার সাথে অনিবার্য সংঘর্ষ এড়াতে, তিনি গভীর জাদু এবং সৃষ্টির দেবতাদের কাছে পরিচিত প্রাচীন শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়েন। আবজুর তলদেশে পবিত্র কাদামাটি থেকে, এনকি এমন একটি প্রাণী তৈরি করতে শুরু করেন যা অন্য কোনও প্রাণীর মতো নয়। একটি কচ্ছপ, যাদু এবং উদ্দেশ্য দ্বারা আচ্ছন্ন।
যুদ্ধের প্রতিধ্বনি ম্লান হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, শক্তির এক উত্তেজনা ঐশ্বরিক রাজ্যগুলিকে অস্থির করে তুলল। পরাজিত হলেও, আনজু তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারলেন যে কিছু একটা ভুল হয়েছে। তিনি পরাজিত হওয়ার জন্য নয় বরং একটি ভুতুড়ে বিলাপ করলেন। বরং একসময় ফলকের মধ্যে থাকা ঐশ্বরিক শক্তিগুলি হাত থেকে সরে গিয়ে সে আবজুতে ফিরে এসেছিল।
নিয়তির ফলকটি আঁকড়ে ধরে নিনুর্তার মনে সন্দেহের কাঁপুনি জাগে যখন এই কথাগুলো বাতাসে ভারী হয়ে ওঠে। সে ফলকটি পরীক্ষা করে বুঝতে পারে যে এর মধ্যে একসময় যে শক্তি ছিল, তা এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে।
একই সাথে, নিনুরতার মা এবং পৃথিবীর দেবী নিনহুরসাগা, কী ঘটেছে তা বুঝতে পেরে, এই ক্ষণস্থায়ী শক্তিগুলিকে কাজে লাগানোর সুযোগ হারিয়ে যাওয়ার জন্য শোক করতে শুরু করলেন। দেবতাদের সমভূমিতে তার দুঃখ ছিল এক মর্মস্পর্শী সুর।
তৎক্ষণাৎ, নিনুর্তা পরাজিত আনজুর দিকে ফিরে তাকে আবজুর কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। নিনুর্তা জানতেন যে আনজু হলেন অতল গহ্বরের প্রাণী এবং তাই তিনি এটি তার চারপাশের যে কারও চেয়ে ভাল জানতেন। বিজয়ী যোদ্ধা দেবতার কাছে আত্মসমর্পণকারী আনজু, এনকির সাথে দেখা করার জন্য নিনুর্তাকে জলাবদ্ধ অতল গহ্বরের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে রাজি হন।
দুর্বল আনজুর নেতৃত্বে, নিনুরতা আবজুর গভীরে নেমে আসেন। ভাগ্যের ভারে তার হৃদয় ভারী হয়ে ওঠে। তার উদ্দেশ্য ছিল ট্যাবলেটের শক্তি ধরে রাখা, এর পৃষ্ঠে লেখা ভবিষ্যৎকে নতুন করে আকার দেওয়ার।
নিনুর্তা আবজুর কেন্দ্রস্থলের কাছে পৌঁছানোর সাথে সাথে, তিনি আশা করেছিলেন যে তিনি অতল গহ্বরের মধ্য দিয়ে লড়াই করে তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবেন এবং তার বিশ্বাস ছিল যে তার অধিকার তার। তবে, এনকির মনে ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল।
আবজুর ছায়াময় গভীরতায় এক অভূতপূর্ব জাঁকজমকের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল, যেখানে জলরাশি প্রাচীন গোপন রহস্যের কথা বলে। গভীরতার জ্ঞানী দেবতা এনকি, আনুন্নাকি দেবতাদের সমাবেশকে ডেকে আনজুকে জয় করে ভাগ্যের ফলক “পুনরুদ্ধার”কারী বীর হিসেবে নিনুর্তাকে সম্মান জানাতে।
নিনুর্তা যখন এনকির গভীর দুর্গের কাছে পৌঁছালেন, তখন তার প্রত্যাশিত যুদ্ধের পরিবর্তে, তাকে একজন বীর হিসেবে অভ্যর্থনা জানানো হল। তার সামনে এক বিশাল উৎসবের সূচনা হল, তার সম্মানে। তার পরিচিত এবং অপরিচিত দেবতারা তাকে করতালি এবং প্রশংসার মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানালেন।
ঐশ্বরিক মন্ত্রের প্রতিধ্বনি এবং স্বর্গীয় প্রদীপের ঝলমলে আলোর মাঝে, এনকি দাঁড়িয়ে ছিলেন, তার কণ্ঠস্বর গুহাময় রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। প্রাচীন জলের শক্তিতে ভেসে থাকা শব্দগুলির সাথে, তিনি নিনুরতার সাহসিকতা এবং শক্তির প্রশংসা করেছিলেন।
“আজ, তুমি সবার উপরে দাঁড়িয়ে আছো,” এনকি ঘোষণা করলেন, “বীর, তোমার ভাই দেবতাদের কেউই তুমি যা করেছ তা করতে পারেনি। তুমি যে পাখিকে পরাজিত করেছ তা চিরকাল তোমার পায়ের নীচে থাকবে। মহান দেবতারা তোমার শক্তিকে সম্মান করুন। তোমার পিতা এনলিল তোমার প্রতিটি আদেশ পালন করুন। নিন্মেনা যেন কখনও তোমার সমকক্ষ সৃষ্টি না করে। তোমার মতো আর কোন দেবতা যেন এত সম্মানিত না হয় এবং কেউ যেন তোমার সামনে হাত না তোলে। তোমার ঘর প্রতি মাসে আবজুর মন্দিরে শ্রদ্ধাঞ্জলি গ্রহণ করুক। এবং সম্মানের আসনে তোমার নাম ঘোষণা করুক। “
এইভাবে, এনকি নিনুরতাকে অতুলনীয় শক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জোর দিয়ে বলেছিলেন যে কোনও দেবতা কখনও তার মহত্ত্বের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না এবং তার নাম স্বর্গ জুড়ে সবচেয়ে সম্মানিত হবে।
অন্যান্য দেবতারা করতালিতে যোগ দিলেন, তাদের কণ্ঠস্বর অনুমোদনের এক প্রবল নদী ছিল, যা নিনুরতার নতুন আবিষ্কৃত মর্যাদাকে নিশ্চিত করেছিল।
তারা তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হবে। এটি তার বীরত্বপূর্ণ কাজের এবং ঐশ্বরিক সমাবেশের অনুগ্রহের প্রমাণ।
নিনুরতার লুকানো বিদ্রোহ
নিনুর্তার নামে যে উদযাপন করা হয়েছিল তাতে নিনুর্তা মুগ্ধ হয়েছিলেন। তবুও, সম্মানের ঝর্ণা এবং প্রতিশ্রুতির পাহাড়ের নীচে, নিনুর্তার হৃদয় অস্থিরতায় আলোড়িত হয়েছিল। রাতের আকাশে তারার মতো প্রশংসা তাকে সজ্জিত করেছিল, অসন্তুষ্টির ছায়া তার আত্মাকে অন্ধকার করে তুলেছিল। ভাগ্যের ফলক, যদিও তার হাতের মুঠোয় ছিল, নশ্বর এবং অমর রাজ্যের বাইরের শক্তির কথা ফিসফিস করে বলছিল। আবজুতে ফিরে আসা শক্তিগুলি ছিল অধরা এবং উপহাসকারী।
তার হৃদয়ের শান্ত গহ্বরে, নিনুর্তা চিন্তার এক অশান্ত সমুদ্রকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। সে আনজুর বিলাপ করা হারিয়ে যাওয়া ঐশ্বরিক শক্তির কথা মনে করেছিল। ট্যাবলেটটি নিয়ে যে শক্তিগুলি অতল গহ্বরে ফিরে গিয়েছিল সেই শক্তিগুলিই তার মনে পড়েছিল। যদিও এনকি তাকে পৃথিবী উপহার দিয়েছিল, তবুও তাকে প্রদত্ত সম্মানের চেয়ে হারানো জিনিসের প্রতিশ্রুতি তাকে আরও তীব্রভাবে কুঁচকেছিল।
এই বৃহত্তর শক্তিগুলিকে অন্বেষণ এবং দখল করার ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, নিনুরতা নীরবে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। যে বীর মহাবিশ্বকে রক্ষা করেছিলেন তিনি এখন এমন একটি কাজের কথা ভাবছিলেন যা এনকির এত সাবধানতার সাথে বোনা শৃঙ্খলার সুতোগুলি উন্মোচন করতে পারে। তার অন্তরে, একটি বিদ্রোহ তৈরি হয়েছিল – কোনও শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, বরং ঐশ্বরিক আদেশের বিরুদ্ধে, যে আদেশগুলিকে তিনি বজায় রাখার জন্য শপথ নিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে।
যখন নিনুরতা তুমুল প্রশংসার মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন তার চোখ, প্রচণ্ড এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, দৃশ্যমানতার বাইরে দিগন্তের দিকে স্থির ছিল। তার মনোযোগ ছিল যেখানে অগণিত শক্তিগুলি তাদের দাবি করার জন্য যথেষ্ট সাহসী দেবতার জন্য অপেক্ষা করছে। গৌরবের আবরণের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই অসন্তোষ ছিল সেই স্ফুলিঙ্গ যা হয় ক্ষমতার নতুন পথ আলোকিত করতে পারে। অথবা এমন একটি অগ্নিসংযোগ জ্বালাতে পারে যা স্বর্গীয় রাজ্যগুলিকে তার আগুনে গ্রাস করবে।
আবজুর গুহাঘরে উদযাপনের প্রতিধ্বনি ম্লান হয়ে আসার সাথে সাথে, জ্ঞান ও জলের দেবতা এনকি একটি ঝড়ের আভাস অনুভব করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে উদযাপন এবং নিনুরতাকে প্রদত্ত সম্মান তাকে তার প্রচেষ্টা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ঐশ্বরিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে থাকায়, এনকি জানতেন যে কেবল কথাবার্তা নিনুর্তার হৃদয়ে বিদ্রোহের বাতাসকে আটকে রাখতে পারবে না। আরও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।
এনকি, যার চোখ সময় এবং স্থানের পর্দার বাইরে দেখতে পেত, নিনুরতার গোপন পরিকল্পনার রূপরেখা বুঝতে পারত। অনিয়ন্ত্রিত শক্তি থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলার কথা জেনে, তিনি এই ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখোমুখি হওয়ার সংকল্প করেছিলেন। এই লক্ষ্যে, এনকি তার অনুগত মন্ত্রী ইসিমুদকে ডেকে পাঠান, যিনি তার প্রজ্ঞা এবং কূটনীতির জন্য পরিচিত ছিলেন।
ইসিমুদ ছিলেন অন্য দেবতাদের থেকে আলাদা একজন দেবতা। তাঁর দুটি মুখ ছিল – একটি সামনের দিকে তাকিয়ে, অন্যটি পিছনের দিকে তাকিয়ে। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে তিনি অতীত এবং ভবিষ্যৎ উভয়ই দেখতে পেতেন। এক নজরে, তিনি সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন প্রত্যক্ষ করতে পারতেন, প্রাচীন রহস্যের ফিসফিসানি শুনতে পেতেন এবং ভবিষ্যতের উন্মোচিত ভাগ্য দেখতে পেতেন।
ইসিমুদের ভূমিকা কেবল পর্যবেক্ষণের বাইরেও বিস্তৃত ছিল। তিনি এনকির জন্য একজন বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন, ঐশ্বরিক আদেশ পৌঁছে দিতেন এবং জ্ঞান অন্বেষণকারীদের পথ দেখাতেন। তাঁর দ্বৈত দৃষ্টি তাঁকে সময় এবং স্থানের জটিলতা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিল, যা তাকে দ্বার এবং পরিবর্তনের এক অতুলনীয় অভিভাবক করে তুলেছিল।
এনকির অনুরোধে, ইসিমুদ নিনুরতার কাছে সাবধানতার সাথে যান, স্বর্গীয় সম্প্রীতির জন্য তাকে তার পথ পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন। তবুও, নিনুরতা, তার সাম্প্রতিক প্রশংসার গর্ব এবং আরও কিছু পাওয়ার গোপন আকাঙ্ক্ষায় আচ্ছন্ন হয়ে, অটল ছিলেন। তিনি কেবল ইসিমুদের সতর্কতা এবং নির্দেশাবলী উপেক্ষা করেননি। তিনি অহংকার করে ইসিমুদকে একপাশে ঠেলে দিয়েছিলেন এবং তার যাত্রা চালিয়ে যান।
এই পদত্যাগ অস্বীকৃতি প্রথম ঢেউয়ের সূচনা করে যা শীঘ্রই ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের ঢেউয়ে পরিণত হবে।
নিনুর্তা আবজুর পবিত্র জলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলল, তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আগের চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এনকি তাকে এখানে নিয়ে এসেছিল, মৃদুস্বরে কথা বলে, আবজুর দরজার কাছে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। বাতাস এক অদৃশ্য উত্তেজনায় গুঞ্জরিত হচ্ছিল, কিন্তু ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় অন্ধ নিনুর্তা কেবল সামনের পথ দেখতে পেল। সে লক্ষ্য করল না যে পায়ের নীচে ছায়া সরে যাচ্ছে বা তার নীচে পৃথিবী কীভাবে শ্বাস নিচ্ছে। এবং তারপর, হঠাৎ আঘাতে, ফাঁদটি ফুটে উঠল।
আবজুর কাদামাটি থেকে, এনকি একটি কচ্ছপ তৈরি করেছিলেন – নিরীহ কিন্তু মারাত্মক।
নিনুর্তা যখন এগিয়ে এলো, কচ্ছপটি লাফিয়ে উঠল, তার ধারালো চোয়ালগুলি তার টেন্ডনের চারপাশে বন্ধ হয়ে গেল। ব্যথা তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হল, এবং তার শক্তি ক্ষীণ হয়ে গেল। প্রাণীটির অদম্য খপ্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করে সে ঘুরে দাঁড়াল।
কচ্ছপটি তার নখর মাটিতে খুঁড়ে চারপাশে একটি গর্ত তৈরি করল। তার নখরগুলির প্রতিটি আঁচড় গর্তটিকে আরও গভীর করে তুলল, উভয়কেই অন্ধকারে টেনে নিল।
সেই পরাক্রমশালী বীর, যিনি একসময় আনজু পাখিকে জয় করেছিলেন, এখন তিনি এই নম্র পশুর ফাঁদে আটকা পড়েন।
গর্তের ধারে দাঁড়িয়ে, এনকি ছায়া ভেদ করে এমন দৃষ্টিতে নিনুরতার দিকে তাকাল। সমুদ্রের ভার বহনকারী তার কণ্ঠস্বর শীতল স্পষ্টতায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।
“তুমি, যে আমাকে উৎখাত করার আকাঙ্ক্ষা করেছিলে, যে ‘কাটা ও উঁচু করার’ ক্ষমতার গর্ব করেছিলে, তোমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তোমাকে কী এনে দিয়েছে?”
এনকির তীক্ষ্ণ এবং অনুসন্ধানী কথাগুলো নিনুরতার কানে প্রতিধ্বনিত হলো, যিনি তার অপ্রত্যাশিত কারাগারের অন্ধকারে শুয়ে ছিলেন।
“তোমার বীরত্ব এখন কোথায়?” এনকি তার স্বরে বিদ্রূপ এবং হতাশার মিশ্রণ অব্যাহত রাখল।
“তোমরা যারা বিশাল পাহাড় ভেঙে ফেলেছো, এখন একটা সাধারণ গর্ত থেকেও বাঁচতে পারছো না। এত নম্র পরাজয়ের মুখে তোমাদের দাবির কী মূল্য?”
এই সংঘর্ষ, শক্তির পরীক্ষার চেয়ে অনেক বেশি, চরিত্র এবং উদ্দেশ্যের পরীক্ষা ছিল, যা নিনুরতার লাগামহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রকৃত মূল্য প্রকাশ করে।
নিনহুরসাগার মরিয়া প্রতিক্রিয়া
তার পুত্রের গণনার মুখোমুখি হওয়ার গভীরতা থেকে অনেক দূরে, মাতৃদেবী নিনহুরসাগা নিনুরতার পতনের কম্পন অনুভব করেছিলেন। মাতৃস্নেহ এবং ঐশ্বরিক কর্তব্যের অটুট দড়িতে তার পুত্রের সাথে আবদ্ধ তার হৃদয় হতাশায় ভেঙে পড়েছিল।
তার স্বর্গীয় আবাসস্থলের মধ্যে, নিনহুরসাগার যন্ত্রণা ঝড়ের মতো বয়ে গেল।
“কে এনকিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, যে অদম্য? সে মৃত্যুর মতো যে কোন দয়া দেখায় না।” সে চিৎকার করে উঠল, তার কণ্ঠস্বর আকাশকে ভরে দিল।
“এইরকম নির্মম আদেশের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?” তার আবেদন, মরিয়া এবং গভীর, এনকির করুণা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ঐশ্বরিক ন্যায়বিচারের প্রকৃতিকেই চ্যালেঞ্জ করে।
তার হতাশা কেবল নিনুরতার শারীরিক ফাঁদে আটকে থাকার জন্য ছিল না, বরং তাদের নিজস্ব ত্রুটিগুলির দ্বারা আধ্যাত্মিক ফাঁদে আটকে থাকার জন্য ছিল – যে কোনও গর্তের চেয়েও বেশি সংকীর্ণ বন্ধন।
আবজু নদীর জল যখন ঢেউ খেলানো শুরু করল, তখন মিথ স্থির হতে শুরু করল। এনকির বিজয় ঐশ্বরিক শৃঙ্খলার ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করল। তার কৌশল পবিত্র “আমি” কে রক্ষা করেছিল, বিশ্বের শক্তিগুলিকে তাদের সঠিক স্থানে রেখেছিল।
তবুও, নিন্মেনার বিলাপ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল, এটি মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে কোনও জয় পরাজয় ছাড়া আসে না। পৃথিবী সংকল্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল, যেখানে দেবতা এবং বীরদের ভাগ্য শীঘ্রই তাদের চূড়ান্ত রূপ পায়।
“নিনুর্তা এবং কচ্ছপ” মিথের প্রতিধ্বনি
নিনুরতা এবং কচ্ছপের গল্পটি অন্ধকারে ভেসে গেল, সময়ের সাথে সাথে এর শেষ হারিয়ে গেল। যে মাটির ফলকে একসময় পৌরাণিক কাহিনীর শেষ কথাগুলো লেখা ছিল, সেগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, কেবল তারই প্রতিধ্বনি রেখে গেল যা সম্ভবত ছিল।
নিনুরতা গর্তে রয়ে গেল, কচ্ছপের অবিরাম নখর তার শক্তিকে কুঁচকে ফেলল। তার পরাক্রমশালী কাজ, তার মহৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষা – সবকিছুই তার সাথে অন্ধকার পৃথিবীতে সমাহিত হয়ে গেল। যে বীর পৃথিবীকে খুঁজছিল সে এখন নিজেকে তার নিজের গর্বের বন্দী হিসেবে আবিষ্কার করল।
এনকি উপরে দাঁড়িয়ে ছিল, তার জয় শান্ত এবং সম্পূর্ণ। সে নিনুরতাকে শক্তি দিয়ে পরাজিত করেনি বরং প্রজ্ঞা এবং কৌশল দিয়ে। তার কটূক্তি এখনও অব্যাহত ছিল, যারা শুনেছিল তাদের সকলকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে চতুরতা সবচেয়ে শক্তিশালীকেও পরাজিত করতে পারে। এনকির বিজয় ঐশ্বরিক নিয়মের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করেছিল।
“আমি”—সৃষ্টির সেই পবিত্র শক্তিগুলো—আবজুর ভেতরেই সুরক্ষিত ছিল। জ্ঞানের রক্ষক হিসেবে তার ভূমিকা উজ্জ্বলভাবে উজ্জ্বল ছিল, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপদের বিরুদ্ধে একটি আলোকবর্তিকা। আবজু নিজেই, তার গভীর জলরাশি এবং প্রাচীন কাদামাটি সহ, অনুমোদনের সাথে গুনগুন করছিল বলে মনে হয়েছিল।
অনেক দূরে, নিন্মেনা কেঁদেছিল। সে তার ছেলেকে বীর হিসেবে উঠে আসতে এবং বন্দী হিসেবে পড়ে যেতে দেখেছিল। তার কান্না আকাশ ভরে উঠল, বাতাসে ভেসে যাওয়া একজন মায়ের দুঃখ। সে তার ছেলের পরিবর্তে আরেকটি জীবন দেওয়ার কথা বলল। ত্যাগের এই ধারণাটি মুক্তির কথা বলেছিল, যা অহংকার ভেঙে ফেলেছিল তা নিরাময়ের সুযোগের কথা বলেছিল।
তবুও, এই মতবিনিময় কখনও ঘটেছিল কিনা তা পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়নি। গল্পটি দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, আশা এবং জল্পনা-কল্পনার জন্য জায়গা করে দিয়েছিল।
অমীমাংসিত ফলাফলের উপসংহার
শেষ পর্যন্ত, নিনুরতা এবং কচ্ছপ কেবল জয়-পরাজয়ের গল্পই নয়। এটি পৌরাণিক কাহিনীতে খোদাই করা একটি শিক্ষা হিসেবে দাঁড়িয়েছিল – এটি একটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে কেবল শক্তিই রাজত্ব করতে পারে না, জ্ঞানই সকলের উপরে রাজত্ব করে। এটি উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপদ এবং ঐশ্বরিক আদেশের সামনে নম্রতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। যদিও গল্পের শেষ লাইনগুলি হারিয়ে গিয়েছিল, এর বার্তাটি টিকে ছিল। নিনুরতা যে গর্তে পড়েছিল তা একজন বীর যখন জ্ঞানের ওজন ভুলে যায় তখন কী ঘটে তার প্রতীক হয়ে ওঠে এবং ধীর এবং স্থির কচ্ছপটি শান্ত শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।
নিনুরতা এবং কচ্ছপের মিথ থেকে প্রাপ্ত উপায় এবং শিক্ষা
নিনুরতা এবং কচ্ছপের পৌরাণিক কাহিনী থেকে বেশ কিছু শক্তিশালী উপাত্ত পাওয়া যায়, যা প্রাচীন জ্ঞানের সাথে চিরন্তন শিক্ষার মিশ্রণ ঘটায়:
শক্তির চেয়ে জ্ঞান বেশি
এনকির জয়: এনকি নিষ্ঠুর শক্তি দিয়ে নয় বরং কৌশল এবং ধূর্ততার মাধ্যমে নিনুরতাকে পরাজিত করেছিলেন। কচ্ছপ – একটি নম্র এবং নিরীহ প্রাণী – তার ব্যবহার দেখিয়েছিল যে চতুরতা এবং ধৈর্য অপ্রচলিত শক্তিকে পরাজিত করতে পারে।
শিক্ষা: বুদ্ধিমত্তা এবং দূরদর্শিতা প্রায়শই সেখানে জয়লাভ করে যেখানে কেবল শক্তি জয় করতে পারে না। এটি একটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রকৃত শক্তি কেবল পেশীতে নয়, মনের মধ্যে নিহিত।
উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপদ
নিনুরতার পতন: তার বীরত্বপূর্ণ অতীত সত্ত্বেও, নিনুরতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে একটি বিপজ্জনক পথে নিয়ে যায়। আরও ক্ষমতা দখলের তার আকাঙ্ক্ষা আনজু পাখির উপর তার জয়কে তার নিজের পরাজয়ের ভূমিকায় পরিণত করে।
সতর্কীকরণ: অনিয়ন্ত্রিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ফাঁদে পরিণত হতে পারে। যখন অহংকার বিচারবুদ্ধিকে অন্ধ করে দেয়, তখন সবচেয়ে শক্তিশালী বীররাও পড়ে যেতে পারে।
নম্রতার মূল্য
একজন বীরকে অবনত করা হয়েছে: দেবতাদের দ্বারা একসময় সম্মানিত নিনুর্তা অসহায়ভাবে একটি গর্তে পড়েছিলেন। তার গল্পটি ঐশ্বরিক আদেশের মধ্যে নিজের স্থান জানার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি সতর্কতামূলক গল্প।
শিক্ষা: নম্র থাকা এবং উচ্চতর জ্ঞানকে সম্মান করা অহংকারের ফাঁদ রোধ করতে পারে।
প্রতারক হিসেবে এনকি: প্রতারক দেবতা হিসেবে এনকির ভূমিকা পরিবর্তন এবং অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। প্রতারকরা প্রায়শই অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, নায়কদের তাদের নিজস্ব ত্রুটিগুলি মোকাবেলা করার জন্য চ্যালেঞ্জ করে।
অন্তর্দৃষ্টি: কখনও কখনও, অপ্রত্যাশিত (কচ্ছপের মতো) সবচেয়ে গভীর শিক্ষা দেয়। কৌশলীরা আমাদের স্পষ্টের বাইরে চিন্তা করতে এবং বিস্ময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে মনে করিয়ে দেয়।
মুক্তি এবং করুণা
নিন্মেনার বিলাপ: নিন্মেনার মা নিন্মেনার শোক আবেগের গভীরতার এক স্তর যোগ করে। তার ছেলের বিকল্প খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মুক্তি এবং ত্যাগমূলক প্রেমের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে।
আশা: পরাজয়ের মধ্যেও মুক্তির পথ থাকতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং ত্যাগের সম্ভাবনা মুক্তির এক ঝলক দেয়।
রহস্য এবং ব্যাখ্যা
হারানো সমাপ্তি: পৌরাণিক কাহিনীর অসম্পূর্ণ প্রকৃতি ব্যাখ্যার আহ্বান জানায়। নিনুরতার চূড়ান্ত পরিণতির রহস্য গল্পের বিষয়বস্তু এবং মুক্তি, বিচার বা ক্ষমার সম্ভাবনার উপর প্রতিফলনকে উৎসাহিত করে।
টেকঅ্যাওয়ে: সব গল্পের স্পষ্ট সমাপ্তি প্রয়োজন হয় না। কখনও কখনও, উত্তর না দেওয়া প্রশ্নগুলি গভীর চিন্তাভাবনা এবং ব্যক্তিগত প্রতিফলনকে অনুপ্রাণিত করে।
সামগ্রিকভাবে, নিনুর্তা এবং কচ্ছপ দেবতা এবং প্রাণীদের একটি পৌরাণিক কাহিনীর চেয়েও বেশি কিছু – এটি মানব প্রকৃতির একটি গল্প। এটি আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে নম্রতার সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে, শক্তির চেয়ে জ্ঞানকে মূল্য দিতে এবং বুঝতে শেখায় যে কখনও কখনও, ক্ষুদ্রতম এবং নীরব শক্তি ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।
চরিত্র চিত্রন :-
নিন্মেনা (নিন্মাহ): শোকার্ত মা
নিন্মেনা , যিনি নিন্মমা বা নিনহুরসাগ নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন লালন-পালনকারী দেবী এবং নিনুরতার মা। তিনি ছিলেন একজন স্রষ্টা দেবী, যাকে প্রায়শই জীবন এবং সুরক্ষার সাথে যুক্ত করা হত।
যখন তিনি নিনুরতার পরাজয়ের কথা জানতে পারলেন, তখন তাঁর দুঃখ গভীর হয়ে উঠল। তিনি শোকে তার কাপড় ছিঁড়ে ফেললেন এবং এনকির কাছে চিৎকার করলেন, তার শোক ঐশ্বরিক জগতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। তার বিলাপ একজন মায়ের হতাশা প্রকাশ করেছিল, কারণ তিনি তার ছেলের বিকল্প খুঁজে বের করার কথা ভাবছিলেন।
নিন্মেনার বেদনা গল্পে ট্র্যাজেডির এক স্তর যোগ করেছে, যা দেখিয়েছে যে কীভাবে ঐশ্বরিক দ্বন্দ্বগুলি সবচেয়ে শক্তিশালী হৃদয়েও ছড়িয়ে পড়ে।
এনলিল: ঝড় ও বাতাসের জনক
এনলিল , বায়ুর শক্তিশালী দেবতা, নিনুর্তার পিতা ছিলেন। ঝড়, বাতাস এবং পৃথিবীর শৃঙ্খলার উপর তার কর্তৃত্ব ছিল। যদিও এনলিল এই পুরাণের ঘটনাগুলিতে সরাসরি ভূমিকা পালন করেননি, তবুও তার প্রভাব পটভূমিতে লুকিয়ে ছিল।
তার ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব নিনুরতার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিয়েছিল, কারণ নায়ক ঐশ্বরিক শ্রেণিবিন্যাসে আরও উঁচুতে উঠতে চেয়েছিলেন। এনলিলের উত্তরাধিকার উচ্চ প্রত্যাশা স্থাপন করেছিল, এবং এনকির চতুরতার অধীনে নিনুরতার ব্যর্থতা গল্পের ট্র্যাজেডিকে আরও গভীর করেছিল।
ইসিমুদ: এনকির অনুগত মন্ত্রী
এনকির বিশ্বস্ত মন্ত্রী ইসিমুদ যুক্তি ও সতর্কতার কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছিলেন। নায়ক এনকির রাজ্যের কাছে আসার সাথে সাথে নিনুরতার মুখোমুখি হন এবং তাকে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষায় অন্ধ নিনুর্তা ইসিমুদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করেন।
যদিও ইসিমুদের ভূমিকা সংক্ষিপ্ত ছিল, তবুও সংঘাত রোধে তার প্রচেষ্টা অহংকারের পরিণতি এবং যারা সামনে বিপদ দেখতে পান তাদের কথা শোনার প্রজ্ঞাকে তুলে ধরে।
আনজু পাখি: পরাজিত শক্তির কণ্ঠস্বর
শক্তিশালী আনজু পাখির একটি ছোট রূপ, আনজুদ ছানাটি, একটি হেরে যাওয়া যুদ্ধের প্রতিধ্বনি বহন করছিল। আনজু পাখিটি একবার ঐশ্বরিক শক্তি চুরি করে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দিলেও, এটি নিনুরতার তলোয়ারের হাতে পড়ে। ভঙ্গুর অথচ জ্ঞানী ছানাটি নিনুরতাকে আবজুতে এনকির আবাসস্থলে নিয়ে যায়। এটি প্রকাশ করে যে কীভাবে ঐশ্বরিক শক্তি পবিত্র জলে ফিরে এসেছিল, তাকে ছিনতাই ও বিনীত করে রেখেছিল। নিনুরতার হাতের উপর এর মৃদু আঁকড়ে ধরা বীরকে বিজয়ের দিকে নয় বরং এনকির ধূর্ততার হৃদয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আনজুদ ছানার ভূমিকা ছিল একজন যোদ্ধার নয় বরং একজন বার্তাবাহকের – যে অতীতের বিজয় এবং সামনের বিপজ্জনক পথের কথা ফিসফিস করে বলে।
কচ্ছপ: এনকির নীরব ফাঁদ
আবজুর কাদামাটি থেকে জন্ম নেওয়া কচ্ছপটি কোনও সাধারণ প্রাণী ছিল না। জ্ঞান এবং কৌশলের দেবতা এনকি এটিকে যত্ন এবং উদ্দেশ্যের সাথে তৈরি করেছিলেন। পৌরাণিক কাহিনীর হিংস্র পশুদের থেকে ভিন্ন, এই কচ্ছপটি ধীরে ধীরে চলছিল, তবুও এর শক্তি তার ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে নিহিত ছিল। এটি পিছন থেকে আঘাত করেছিল, নিনুরতার টেন্ডন কামড়ে ধরে তাকে একটি গর্তে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। ধারালো নখর দিয়ে, এটি গভীর খনন করেছিল, যাতে নায়ক পালাতে না পারে। কচ্ছপটি এনকির ইচ্ছার একটি সম্প্রসারণ হয়ে ওঠে, একটি জীবন্ত ফাঁদ যা প্রমাণ করে যে চতুরতা শক্তিকে জয় করতে পারে। এর কামড়ানো নখর এবং অদম্য আঁকড়ে ধরা দেখায় যে ছোট ছোট জিনিসও দেবতাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
আবজু: জ্ঞান এবং লুকানো গভীরতার রাজ্য
পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে অবস্থিত ছিল আবজু, মিঠা পানির এক রহস্যময় রাজ্য। এটি কেবল একটি জলাধারই ছিল না – এটি ছিল জ্ঞানের জন্মস্থান, এমন একটি স্থান যেখানে সৃষ্টি নিজেই শুরু হয়েছিল। জ্ঞানের দেবতা এনকি এই পবিত্র রাজ্য শাসন করেছিলেন। আবজুর জলে ঐশ্বরিক শক্তি ছিল যা একবার আনজু পাখি চুরি করেছিল এবং নিনুরতার বিজয়ের পরে ফিরে এসেছিল।
এখানেই এনকি এক অন্ধকার বন্যার ঝড় তুলে তার চতুর ফাঁদের জন্য মঞ্চ তৈরি করে। এর মাটির ভেতরেই সে কচ্ছপটিকে গড়ে তোলে, একটি নম্র প্রাণী যা একজন বীরকে হাঁটু গেড়ে বসাতে পারে। আবজু কেবল একটি পরিবেশ ছিল না বরং একটি চরিত্র ছিল – ফিসফিস করে গোপন কথা বলা, পরিকল্পনা লালন করা এবং দেবতাদের ভাগ্যকে এর গভীরে ধারণ করা।
এরিদু: সম্মান ও প্রতারণার প্রাচীন শহর
সুমেরের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি, এরিডু, প্রাচীন গৌরবে ঝলমল করছিল। এটি ছিল পবিত্র জল এবং পবিত্র শব্দের একটি শহর, যা এনকির বাসস্থান হিসাবে পরিচিত। আনজু পাখির উপর নিনুরতার বিজয়ের পর, এরিডু উদযাপনের মঞ্চে পরিণত হয়েছিল। এনকি তার দেয়ালের মধ্যে নিনুরতাকে সম্মান জানিয়েছিলেন, প্রশংসা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বর্ষণ করেছিলেন।
কিন্তু এরিডুর সৌন্দর্য ছায়া ফেলেছিল। সোনালী সম্মানের নীচে, নিনুরতার হৃদয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা উজ্জীবিত ছিল। শহরটি একজন বীরের উন্মোচনের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল – যেখানে প্রশংসা উচ্চাকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছিল, এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে এনকির ফাঁদে ফেলেছিল।
মন্দির: ক্ষমতা এবং চক্রান্তের একটি পবিত্র স্থান
আবজুর গভীরে একটি মন্দির ছিল – একটি পবিত্র স্থান যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি ঐশ্বরিক অনুভূতিকে স্পর্শ করত। এই মন্দিরটি কেবল উপাসনার স্থানই ছিল না, কৌশলেরও স্থান ছিল। এনকি এটিকে তার দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, একটি আশ্রয়স্থল যেখানে তিনি তার পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। তিনি এখানে বন্যা-ঝড় উস্কে দিয়েছিলেন, রহস্যে জলরাশিকে মেঘলা করেছিলেন এবং তার আক্রমণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
এই মন্দিরটি শ্রদ্ধা এবং প্রতারণা উভয়েরই প্রতিনিধিত্ব করে, যা দেখায় যে কীভাবে পবিত্র স্থানগুলিও ঐশ্বরিক ইচ্ছার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। এখানেই চক্রান্ত ঘনীভূত হয় এবং আবজুর মৃদু প্রবাহ বিপজ্জনক স্রোতে পরিণত হয়।
দ্য গ্রেট পর্বতমালা: যেখানে কিংবদন্তি এবং অহংকার মিলিত হয়েছিল
নিনুর্তার অতীত বিজয়ের নীরব সাক্ষী হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছিল বিশাল পাহাড়গুলো। সেগুলো ছিল রুক্ষ এবং বন্য, যুদ্ধ এবং তার বীরত্বের গল্পে ক্ষতবিক্ষত। এই পাহাড়গুলো শক্তির প্রতীক ছিল, নিনুর্তা তার শত্রুদের উপর যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তার সমস্ত কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু তারা দীর্ঘ ছায়াও ফেলেছিল। নিনুর্তা যখন নতুন গৌরবের সন্ধান করছিল, তখন পাহাড়গুলো অতীতের বিজয় এবং গর্বের ভারের কথা ফিসফিস করে বলছিল। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেপরোয়া হয়ে উঠলে কোনও উচ্চতা নিরাপদ নয় – এমনকি পাহাড় জয়কারী বীররাও গর্তে পড়ে যেতে পারে।
গর্ত: মাটি এবং চতুরতার একটি ফাঁদ
এনকির কচ্ছপের খনন করা গর্তটি নিনুর্তার গল্পের শেষ অধ্যায়ে পরিণত হয়েছিল। এটি কোনও বিশাল যুদ্ধক্ষেত্র ছিল না বরং একটি ছোট, অন্ধকার জায়গা ছিল যেখানে শক্তির কোনও মূল্য ছিল না। কচ্ছপ যখন তার পা কামড়াচ্ছিল, নিনুর্তার শক্তি ম্লান হয়ে গেল।
গর্তটি ফাঁদে পা দেওয়া এবং পরাজয়ের প্রতীক। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে এবং যেখানে নায়কের গল্প নীরবতায় পরিণত হয়। নম্র নখর দিয়ে খনন করা এই গর্তটি দেখিয়েছিল কীভাবে এনকির জ্ঞান পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে পারে—কীভাবে একটি সাধারণ গর্তও গর্বের সমাধিতে পরিণত হতে পারে। প্রতিভাস ম্যাগাজিন
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)