সুদীপ ঘোষাল
সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ
সুবোধ ঘোষ ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তিনি বিহারের হাজারিবাগে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। জীবনজুড়ে তিনি নানা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন যেমন বাস কন্ডাক্টর, ট্রাক চালক, সার্কাসের ক্লাউন, টিউশন দাতা ও সাংবাদিক। এই বিচিত্র জীবিকা এবং মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে তিনি জীবন ও সমাজের বাস্তব ধারার গভীর অনুধাবন লাভ করেন, যা তাঁর লেখায় স্পষ্ট ঝলক ফেলে।সাহিত্যজগতে সুবোধ ঘোষের প্রবেশ মূলত ১৯৪০ সালের দিকে ঘটে, যখন তিনি ‘অযান্ত্রিক’ ও ‘ফসিল’ নামক দু’টি ছোটগল্প লেখেন, যা বাংলা সাহিত্যে অনন্য আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর সাহিত্য কর্মে মানব জীবনের বস্তুনিষ্ঠ চিত্র ও সামাজিক বাস্তবতার গভীর প্রতিফলন পাওয়া যায়। তিনি আধুনিকতা ও সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন ও জীবনের রহস্য গুলো তাঁর রচনায় উঠে এনেছেন। তাঁর লেখা উপন্যাস যেমন ‘তিলাঞ্জলি’ তিলাক যেমন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়কে ছুঁয়েছে।সুবোধ ঘোষ বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে নবীন ধারার প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং তাঁর লেখায় জীবন, ইতিহাস, নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু দৃঢ়ভাবে প্রতীয়মান। তাঁর সাহিত্যে জাতির জীবন, মানুষের জীবনের নানা সমস্যাকে শিল্পময় ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যাঁর লেখার মাধ্যমে সময়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন চিত্রিত হয়েছে।সাহিত্য রচনার পাশাপাশি সংবাদপত্র আনন্দবাজারের সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পাদকীয়ও লিখেছেন, যা তাঁর চিন্তাশীল ও বিশ্লেষণাত্মক মননের পরিচায়ক। তাঁর মৃত্যু ১৯৮০ সালে হলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী স্থান অর্জন করেছে। সুবোধ ঘোষের রচনাগুলো আজও বাঙালি পাঠকের কাছে প্রাসঙ্গিক এবং তাঁর জীবন ও সাহিত্য আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সুবোধ ঘোষের জীবন সংক্ষেপে মূল ঘটনা সমূহ হলো,১৯০৯ সালে বিহারের হাজারিবাগে জন্মগ্রহণ। আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে .হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজে পড়াশোনা। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে অধ্যয়ন করতেন কর্মজীবন শুরু করেন বিভিন্ন নিয়মিত কাজের মাধ্যমে, যেমন বাস কন্ডাক্টর, ট্রাক চালক, সার্কাসের ক্লাউন, প্রাইভেট টিউটর ইত্যাদি।১৯৪০ সালে বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেন, অনামী সংঘের তরুণ সাহিত্যিকদের অনুরোধে প্রথম ছোটগল্প “অযান্ত্রিক” ও “ফসিল” লেখেন, যা বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৪৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস “তিলাঞ্জলি” প্রকাশ পায়, যা রাজনৈতিক মতাদর্শকে তুলে ধরেছে। ১৯৪৬ সালে নোয়াখালীর দাঙ্গা কালে গান্ধীজির সহচরী হয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংবাদিকতা করেন এবং সহকারী সম্পাদকীয় লেখক হিসেবে কাজ করেন।.তাঁর রচনা “জতুগৃহ” অন্তর্ভুক্ত, যা বিভিন্ন চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। গত শতকের চল্লিশ দশকের প্রায় প্রারম্ভিক কাল ঘেঁষা বাংলা সাহিত্যের কাল পর্বের জীবন শিল্পী সুবোধ ঘোষ। আদি নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটু বেশি বয়সে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা মনন চিন্তা চেতনা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে সুবোধ ঘোষ তার অসাধারণ রচনা সম্ভাবের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। [তথ্যসূত্র: অঞ্জন আচার্য, কালজয়ী কথাশিল্পী সুবোধ ঘোষ, এনটিভি অনলাইন, ১০ মার্চ ২০১৬] বাঙালী পাঠকসমাজে সুবোধ ঘোষ এখনও প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে তার ‘অযান্ত্রিক’ এবং ‘ফসিল’-এর মত বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প। ভাষার ওপর অনায়াস দক্ষতার প্রমাণ মেলে ওঁর বিভিন্ন স্বাদের গল্পে। মহাভারতের গল্পগুলি বলার জন্যে তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার সঙ্গে অযান্ত্রিক বা ফসিলের গল্পে ব্যবহৃত ভাষার কোনও মিল নেই। বিহারের হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করে হাজারিবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজে ভর্তি হয়েও অভাব অনটনের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাকে। বিচিত্র জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলো তার জীবন। হেন কাজ নেই তাকে করতে হয়নি সংসারের ঘানি টানার প্রয়োজনে। পড়াশোনা ছেড়ে কলেরা মহামারি আকার নিলে বস্তিতে টিকা দেবার কাজ নেন। কর্মজীবন শুরু করেন বিহারের আদিবাসী অঞ্চলে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এরপর সার্কাসের ক্লাউন, বোম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণীর কাজ, চায়ের ব্যবসা, বেকারির ব্যবসা, মালগুদামের স্টোর কিপার ইত্যাদি কাজে তিনি তার প্রথম জীবনের যতটা অংশ ব্যয় করেন। বহু পথ ঘুরে ত্রিশ দশকের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী। ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট উত্তর দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালী থেকে তিনি গান্ধীজির সহচর থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন দাঙ্গা এবং দাঙ্গাউত্তর কালপর্বে সাম্প্রদায়িকতার হিংস্রতাকে। অনামী সঙ্ঘ (বা চক্র) নামে তরুণ সাহিত্যিকদের বৈঠকে বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পর পর দুটি গল্প অযান্ত্রিক, এবং ফসিল লেখেন যা বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। সুবোধ ঘোষের প্রথম গল্প অযান্ত্রিক, এরপর ফসিল। তার আর একটি বিখ্যাত গল্প ‘থির বিজুরি’। শুধুমাত্র গল্পকার হিসাবেই সুবোধ ঘোষ অণ্বেষু শিল্পী ছিলেন না। সুবোধ ঘোষ উপন্যাস রচনাও ঋদ্ধ তার যথার্থ প্রমাণ তিলাঞ্জলি (১৯৪৪) সুবোধ ঘোষের ঔপন্যাসিক হিসাবে প্রথম প্রভিভার স্বাক্ষর ’তিলাঞ্জলি’। এ উপন্যাসে তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শকে উপস্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে এই উপন্যাসে। মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত এ উপন্যাসে তৎকালীন কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ ’জাগৃতি সংঘ’র জাতীয়তা বিরোধী চরিত্রের মতবিরোধের রূপরেখা অঙ্কনে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি এই উপন্যাসে।১০ মার্চ, ১৯৮০ সালে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।
১৯৪০-এর দশকে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করে তিনি ‘অযান্ত্রিক’ ও ‘ফসিল’ গল্পের মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই গল্পগুলোতে তিনি মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমাজের অসঙ্গতি এবং মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেন। ‘অযান্ত্রিক’ গল্পে তিনি আধুনিকতা ও যান্ত্রিকতার প্রভাবের বিরুদ্ধে মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ‘ফসিল’ গল্পে সময়ের পরিবর্তন এবং তার সঙ্গে মানুষের মনস্তত্ত্বের বিবর্তন চিত্রিত হয়েছে।
তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহের মধ্যে ‘থির বিজুরি’, ‘মা হিংসী’, ‘ঠগের ঘর’ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এই গল্পগুলোতে তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনযাপন, মনস্তত্ত্ব এবং সামাজিক অবস্থা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
সুবোধ ঘোষের সাহিত্য রচনায় ভাষার প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও দক্ষতা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন ধরনের গল্পে বিভিন্ন ভাষাশৈলী ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর সাহিত্যকে বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ করেছে।
তার রচনা সমগ্রের প্রথম খণ্ড রকমারি থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব। এছাড়া, তাঁর গল্পসমগ্রও ইন্টারনেটে উপলব্ধ, যা পাঠকদের জন্য সহজলভ্য।
সুবোধ ঘোষের সাহিত্য কেবল তাঁর সময়েরই নয়, আজকের দিনেও পাঠকদের জন্য প্রাসঙ্গিক। তাঁর রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রত্ন হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
প্রতিভাস ম্যাগাজিন | Prativas Magazine
