সুপন

বাদার থ্যে ছটক্যান দে এক্কেরে মাটের মদ্যি বেন পোয়তি ক্যাতরম্যাতর হচ্যে। ম্যালা রাইত, আশমানত ঢক্কান চাঁইন্দডাউ টসটস্যা। নজর থাকলি ঠ্যার পাবেন, হুই দিক্কার বিশ বাইশখান দালানরে পাঞ্জা করলি হ্যার মাট, উরির খোলে যেইডা সব্ব ওঁচা কোটা, হেইডা মাঝ। এক্কেরে বেন পোয়তি হদ্দ ছটফটাচ্যে, তাবাদ ধরেন আরু হুইদিক উজোন মারলি প্যাঁচায় হাক্কড় দেচ্যে ট্যাঁও ট্যাঁও। সিথান পাকু্রঠায় হদ্দ প্যাঁচার নিব্যাস, ওডাই নিশেন। রাইত নাম্বলি যাওন মানা, চেরজেবন। জেবন রইতি মায়াডা আর মানাডা, খোয়ানের ডর। যেজনা গ্যাচে বচ্চরঠ্যা পুড়িনি গো, শ্যাষ। ধলাছনিত ধরিচ্যে। টসক্যায় গেচ্যে। ওনার শুনিচ্যি ম্যালাডা রূপ, চক্কে আসলি জেবন খসল্যা। ব্যাটাগো পেলি ঘুড়ন মুড়নে উদল্যা বান্যে দোড় দে টসক্যায় ছাড়েন, বেটিগো ধরলি গা-মাতা হুগলোয় বুগলোয় জেব্যার – কারু বচ্চর গতে না। রাইত নামলি গোটাখান গাঁওয়ের কেউডা মাটদিক্যি মাড়ায় না সেজন্যিত। তয় কিনা সে দিনডায় আমারু বাপ টসক্যান ঠ্যাল। দিনত ঢুকতি বান্ধা। গরমেন পাকড়ায়। বচ্চরভর ঘেড়ন থোয়া, কি না কি এক্কান বানায় দিব্যে, বনডায় হাইত দিল্যি চলবে না, লুক্যে গেলিউ মস্ত ফ্যাসাদ, ধরা খেলি হদ্য সেকস্ত। ছাড়ান নাই, বেড়ন চোট্যে হাগায় ফ্যালায়, উব্বাদ আদায়। ঘরের মানসে ঘটিডো বাটিডো বেইচ্যে আদায়ের জোগান পারলি তয় ছাড়ন। তা আমরে তো ধরিচ্যে নিজির বাপ্যে। এক্কান খাজুর গাচ চাই। জাইতে শাউলি। এক্কান খাজুর গাচের তরে ধলাছনির ডর দাবডায় বাদাড় ঢুড়তিচ্যি কদিন।

বাপ হইল শাউলি, টনক্যায় উইঠত্যি বাপের বামাল প্যালাম। ঝাপন দাঁও, চাঁচ দাঁও, চোট দাঁও, আরু টুকড়ি ছন গজাল কইঞ্চি। দুগ্যির বাজন ধরলি দাঁওয়ে বালি, জার ঢুকতি না ঢুকতি এঘইর ওঘইরের গাচে পোঁইচ দিচ্যি। পোঁইচ লাগন পারলি মাগি মদ্দায় বাছন নি গো, মিডা রস টোপন ধরিব্যে। ঝাপন দে কয়ট্যা দিন আরাম লাগ্যে, তা বাদ চোট লাগ্যায় চাঁচের জন্যিত জাগা উঠ্যায় দিলি আধোখান খতম, বাকি আধানে পোঁইচ, চাঁচ দাঁওয়ে তুলতুলা চালানি লাগিব্যেন, গাচের গতরে ঘাও হব্যে, ব্যাতা ধরিব্যে না, রস টোপান মারিব্যে, উরির তলে খালি হাড়িখান ঝুল্যে দ্যান, রাইত পুরতি লাগ্যে না, ডগডগায় উপচোন ধরিব্যে।  

তা শাউলি বানলিই তো রস জোট্যে না, গাচ লাগে। শাউলির বাঁচতি গাচ মরতি গাচ। বচ্যরটাক আগ্যে পোধানের ব্যাটায় বেনখাইল্যের ধার বরাব্বর একখান টালির কল দেল্যে, তিন মাসটাকের মদ্যি বাড়ন্তু নে কল দইশখান, দেখন্তু দেখন্তু আরু কল। উরি শাল্যো, যার জেব্বায় গচ্চিত ট্যাকা সেই একখান কল বইস্যে ফ্যালে। খালপাড়ের থন মাডি আর খাজুরের মিঠ্যা রইস পুইড়্যা টসল্যা তাত টালিরে চকঝক্যা করি ফ্যালায়। ম্যালা দাম, খাজুর গাচ পড়তিচ্যে ঝপাঝট্য, আমিউ কুড়াল হাকড়্যে দিচ্যি, ফ্যালায় দে খালি কল পর্যন্তি গেলিই ট্যাকা ধর‍্যা দেচ্যে। জার মিটলি কাম বেজুত, হোড্ডাফোড্ডায় ঘইরে ব্যাঘাত, নিত্যি রান্দনের আগে কান্দন বাজ্যে। নগদা নোটের নোলায় কাচাকাচি যা প্যালাম, খাজুর গাচের দ্যাহে দিচ্যি ঝড়্যাম, গেরস্তরাও নোটের তল্যে দেচ্যে গাচ শোয়ায়। তা তদ্যিনে শাউলি মানোর থে পালটায় হইচ্যি কাটলি মানো। খাজুর গাচের সন্ধানটুক পেলিই ঝড়্যাম কোইপ। পলক ফ্যালতি গাঁওয়ের গুচ্চের গাচ খতম, আশপাশের থে আনতি লোক ছোট্টা দেল্যে, আমিউ ছুটিল্যাম। সেগুলান ফুরকতি আরু দূরি গে… সেডাই বা কদ্যিন!

ইদিক জার ফিরতি ঘর ঢনঢনাচ্যে, ওদিক বাপের খালি একোখ্যান মরণি হাউস। খাজুরের পাক্কা গুড় খেয়ি দ্যাহ থোবে। সেক্কালে ওরামই ছ্যাল। বুইলেন না, জার ঢুকলি বুড্ডায় বুঝ নেত ফুরোয় গেচ্যে। আঁচের কোইলে পোঙা ঠুসলিউ যদি কিনা তাত না জাগুন্তি, তাইলি বুঝ ন্যান – হয়ি এয়িচ্যে। তখনে ম্যালা হাউস, হরেক্ক বায়নাক্কা – হ্যারে দেকতি ইচ্চা জাগ্যে, উরির বদন বুকির মদ্যি তড়পাচ্যে – ডেইক্যে আনাও। হেইডা খাওনের তরে বুক ফাটতেচ্যে – যাখানতে পারো জুগ্যান দ্যাও। আমার বাপে ধরিল্যে খাজুর গুড়। ইদিক গাঁও ছাড়াল্যি আরু খানিক দূর পর্যন্তি খাজুর গাচ ঢনঢন্যা, টালির কল পাত্তারি গুটাচ্যে, উরির খোইলে ইটির ভ্যাটা প্যায়দা নেচ্যে। গরমেনের জমির থে ছুপোয় ছাপ্যে দু-এক্কান গাচ ফ্যালায়ে ঘর চলতেচ্যে। সে কতায় বাপের হাউস মিটিচ্যে না, হাউসভোর খালি তার খাজুর গুড়। চিক্কার দেচ্যে – গুড় না প্যালি বাসটুকু-ন্যে আয়… ইদিকি বুড্ডার হাপ উটতেচ্যে, খাতাকানি চপায়েও ঠকঠকি ঘুচতেচ্যে না। তা ভেবি প্যালাম, গাঁও বরাব্বর এতখ্যান বাদার, তা বাদে গরমেনের তাবে অত্যডি বোন ফ্যাকলায় রইচ্যে। উরির খইলে এক্কান খজুর গাচ কি জুটিব্যে না? দিনমান স্যাঁধবার জো নি, রাইতকাল্যে বাদার ঢুড়ি দেকতিচ্যি, গেজেয় খালি দুখ্যান দাঁও। একখান দিন ঝেড়ি দে দুখান দিনির মদ্যি চাঁচ মারলি বুড্ডার হাউস মিটিব্যে। সেটুকখানো পাচ্যি নে। গেরামের গাচ খতম কর‍্যি বনডার হক্কল গাচও উজার হইচ্যে। রাইতকালের হ্যাপাও ম্যালা, সেরাম চাঁইন্দ উঠলি তয় আধা ঠ্যার মেলে, নইলি গুমসে আন্ধার।

সেদিনক্যে চাঁইন্দখানও উটিচ্যে, এক্কেরে টসটস্যা। তা বাদাড়ে সিন্ধোতি পাশ দে হুড়ুম মের‍্যি ছিটক্যান নেল্যে এক্কান পেল্লায় ছায়া। বুকির মদ্দি ধলাছনির কতা হুড়মুড়োয়ে ধকাপক করিচ্যে, এই দেক্যি কি না দেক্যি। ডরের মদ্যি এট্টুসখান হাউসডাও হচ্যে, তেনার ম্যালা রূপ, দেকলি জেবন হুগলোয়। তা সেরাম কিচ্যুই না, ধকাপক নে এগতিউ পারতিচ্যিনে, ফেরব্বু ফেরব্বু ভাবতি আবারু শুনতিচ্যি বইন হুগলোয় কি এক্কান তেড়ি আসতেচ্যে। মরণি বাপ আর পুলাডার কতা ভাবতিচ্যি তহনে, বুঝ পাচ্চি, আমারু হয়ি এয়িচ্যে, আইজ শ্যাষ, তিনি সামনি এক্কার খাড়ালি খতম, ছাড়ান জুড়োন নি। তা কিসির থে কি হয়িচ্যে সিদিনক্যে, কতি পারিনে, একনো তো জীবিত রইচ্যি। উরির খোইল্যে কানের মদ্যি কাতরানি আসতেচ্যে। রাইতকালে সে যি কি চিক্কার, য্যান পোলোয় হয়ি যাচ্যে। ভাবতিচ্যি ফিরন যাই, ঘর তক আগুন্তি হলি রক্যে, পোলাডারে দেখিব্যু। তা দিক্কির ঠ্যার আইস্যে না। হ্যাচড়প্যাচড় মারায়ে উই পাকুরখানের তল্যে পৌচ্যে বুঝিচ্যি কি  বেইচ্যে গিচি। মাট পার দিলি গাঁও। তা সি মাটের মদ্যি সেই কাতরানি হটপটাচ্যে, ইদিক পাকুরেও পেঁচায় বোল দেচ্যে ম্যালা।

টসটস্যা চাঁইন্দের মদ্যি মাটের মাজে বেন পোয়তি চিক্কার দেচ্যে। আমি এক্কাই তো শুনতিচ্যি না। জাইরের রাইত। গাঁওয়ের ম্যালাডা শুনতিচ্যে, কজনা খোজন্তি বেড়ুইচ্যে। দারগা পর্যন্তি শুনিচ্যে, বুইচ্যেন না! মানষেগো নোলা কাতরানি শুইনত্যে পায়, দেখিত্যে না, ইখান ওখেনে নুলা চকচক্যা ওটে, ডাঙ্গায় পেলি চিকুন্যা মাচেরেও ডিম্ব গুলান ছাইরব্যার ফুরসিলা ছাড়্যে না, ইখেনে অত্যডি মাস। সক্কলগে বুইঝতে যেটুক্যান, হামলায়ে ধরিচ্যে তো ছাইড়তেচ্যে না। আমিউ ঝাপ্যে পড়িচি, ফস্কান দিলি ফক্কা। তায় খালি ধরিল্যি তো জোট্যে না, নিজির দিক্যে রাখতিউ লাগে। টাইনবাইন হচ্যে জোইর, কেডায় নেব্যে, কতখান নেব্যে, কতখান দখলাব্যে। তা যাই বলেনগে, জমিনের থে মাইয়ালোকের থে ট্যাকার থে সগ্য নেও মানষেলার টাইনবাইন চলতেচ্যে চিরকাল্য। কতখ্যান নিজির কোল্যে রখবান পারে সে নে হ্যাচড়ানি জুড়লি মাইনষে নিজিউ নিজির‍্যে ঠ্যাকনা মারতি পায় না। কেডায় ব্যাতা পাচ্যে, কাইর তাতে পোঙা ফাটতেচ্যে, বুক উপরোচ্যে, পেরাণ হড়কাচ্যে – টাইনের লোকি ঠ্যার পায় না। জেবন হসকায়ে ভাগায়ে ভগায়ে এইটুসকান খালি মাস। টুসটুসলা মাস খসায়ে গস্ত দিলি আঁইচ উস্কোন নেব্যে, জিভির রস টসকান ধরিব্যে।

ভাবতেচ্যেন পোয়তির মাস নে কিসির সম্বাদ? আচে গো, মাসের টুসটুসানি আর সোয়াদ ছটকান দিলি উদরত পর্যন্তি কুড়ুক কুড়ুক ডাইক ফ্যালায়। ঝাই বলেন গো, পোয়তি হোউক মাগি হোউক কিবা মদ্যা – খাল ক্যালায়ে সাফা মারলি সব্বগুলান খালি মাস, তল্যে আর রস্যে ফারাক নি গো, না দেকিচ্যেন তো ঠ্যার মিলিব্যে না, কুনডা ধারি কুনডা নুলা। পাক চড়ায়ে উদরত ঢোকাল্যি তো সব্ব সুম্যান, দ্যাহে বল জোগাব্যে। তা ধরেন চাঁইন্দের মদ্যি কিসির থে কি হয়িচ্যে, পোয়তির কাতড়ানি লুক জুটাইচ্যে ম্যালা, গাঁওয়ের মাইনষ্যে ধরিচ্যে তো ছাড়ান নাই, হ্যাচড়ায়ে ছিড়্যে ভাগায় নেচ্যে। টসটইস্যা চাঁইন্দের মইদ্যি যতখ্যান দেকাচ্যে তার চে ঘোর লাগতেচ্যে ম্যালা। ইদিক থে খামচাচ্যে তো উদিক থে লাত্থি দে হসকাচ্যে। উরির মইদ্যে দারগায় কখন জানি এসিচ্যে, তিনিউ হাতর দেচ্যেন। ভাবন্তি গেলি তেনার ভাগাটাই আগ্যে যায়, তা আধা ছায়্যাটার মইদ্যে মাইনষ্যে ঠ্যার না পায়, উনার হাতথ্যে খাবল্যে কেড়ি নে দেচ্যে দোড়। দারগা বল্যি কতা, দোড় দে ছাড়ান জোট্যে না। সুয্যিখানেরও উঠ্যিবার ফুরসিলা জোট্যেনি, পুলিস্যে গাঁওখান ঘিরিচ্যে, এক্কেরে সক্কলডির ভাগা সমেত ধরিচ্যেন তো ছাড়ান নাই, চালান দেচেন আমাগের‍্যে, আজম্মা সমেত সবটুকখান মাসরে করিচ্যেন নিজি হেপাজত। একো চালানে সিধ্যা জ্যাল। শাউলি ম্যানোর থে কাটলি ম্যানো হয়ি পালটায় হলাম ফাটক ম্যানো।

উদল্যা হচ্যেন? বুঝিচ্যি। ধীরজ নে আরু এট্যুসখান সবুর ধরেন গো। ছেমরি আইসতাচ্যে, আপনেরাও ইটেল মানোরে খুইজ্যা পাবেন গো। টেম্পোর খালাসির‍্যে খাইলপাড়ের দিক্যে চাঁইন্দ দেখাইত্যে গেচ্যে গো ছেমড়ি, এসি পড়িব্যে। ইখেন তো দেখতিচ্যেন খুলা দুমব্যা, চাঁইন্দ দেখাইত্যে পার‍্যে না। নাতনিট্যো রইচ্যে, ঘুমায়। পাহাড়াটা দিচ্যি। আপোনের‍্যা ইটেল ম্যানোরে চাইচ্যেন, উরির ফ্যারত্যায় কথা উঠিচ্যে, কথার জন তো মেল্যে না গো। খাল্যি একোখান ম্যানো কিসির থ্যে ইটেল ম্যানো হয়িচ্যে, কদ্যিন ইটেল থাকিব্যে সেটুখ্যান না জানিল্যে খুঁইজ্যা পাব্যেন ক্যামনে? 

মোদ্দা কথা হলো, আমরা তিনজন এসেছি, বিশেষ এবং গোপনীয় কাজে। সন্ধান ছিল – ইটেল মানোর কাছে খুব ভালো এবং কড়া জঙ্গুলে তামাকের খোঁজ আছে। কিছুটা স্বাদ বদল আর কিছুটা নিষিদ্ধের টান এই পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে হঠাৎ। জায়গাটা ভীষণ স্বাভাবিক। ছয় লেনের জাতীয় সড়ক, পাশে আরো দুটো লেনের প্রস্তুতি চলছে। উন্নয়নকে থামিয়ে রাখলে চলেনা। পুরো অঞ্চলটাই উন্নয়নের তাগিদে একরোখা নিয়োজিত হয়েছে, শুরুর পরে উন্নয়নের অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে আরো বেশি সন্নিবিষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমাগত। কোনো একসময় অখ্যাত জঙ্গলের মধ্যে কয়েকটা ছোট গ্রাম ছিল, নামহীন। সেই অখ্যাত জঙ্গলের একটা পাশ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সড়কে নিজস্বতা বিসর্জন দিয়েছে। আর ইণ্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট হিসেবে ভবিষ্য পরিকল্পনার সূচনায় জঙ্গলের অধিকাংশ আস্তিত্ব উৎসর্গীকৃত হয়েছে দুয়েকটা ছোট কারখানা, পেট্রল পাম্প, হোটেল রিসর্ট ধাবার চাকচিক্যে এবং সাফাই হয়ে নানা ক্ষুদ্র বৃহৎ প্লটে বন্টিত হয়ে আছে ঘেড়া পাঁচিলের তত্ত্বাবধানে। এইসবের অনুষঙ্গে নামহীন কিন্তু বসবাস প্রবন ছোট গ্রামকটি কোনকালেই না থাকার অবস্থানে হঠে গিয়ে চিরন্তন অজানায় সম্পূর্ণ নিরুপদ্রব। আপাতত ঠিকানাহীন কয়েকজন মানুষ নিজেদের জীবন ও প্রাণের অস্তিত্বে থাকা অস্বস্তিতে হঠতে হঠতে কোথাও ঠিকানা কোথাও পরিচয় খুঁজে হারিয়ে যাওয়ার সুবিধায় একবগ্‌গা অধীশ্বর। নিতান্ত যাওয়ার পথে নতুন ও বেগবান রাস্তায় পেট্রোল পাম্পে তেল নেওয়ার জন্যেই আমাদের এই সামান্য গতিরোধ। পাম্প থেকেই ইটেল মানোর খোঁজ পেয়ে এই না দোকান না ঘর না উঠোনে আসা এবং সন্ধান। কিন্তু এই পর্যন্ত পৌঁছতে আমাদের দম বেড়িয়ে গেছে। মাঝ রাত পেরিয়ে অধিকাংশ ঝুপড়ি বন্ধ, দুয়েকটায় টিমটিমে নচ্ছার আলো, যা নিজেকে দেখানোর বাইরে অন্ধকারের অন্ধ প্রশংসক। এটাতেও আলোর অবস্থা সেরকম, জ্বলছে, পুড়ছে, কিন্তু কোথাও পৌঁচচ্ছে না। যেখানে এখন বসে আছি, খুব নড়বড়ে একটা বেঞ্চ, যার মাথায় চাল তো একটা আছে, কালো এবং আবছায়ায় সেটাকে ধুলো দিয়ে তৈরী মনে হচ্ছে। চারদিকের অনেকটাই উন্মুক্ত, ছেড়া শাড়ি বা চট দিয়ে আব্রু করার চেষ্টা সামান্য আছে কিন্তু সেটায় চেষ্টাটাই সর্বস্ব, স্বার্থকতা না পেয়ে অধৈর্য উদোম। খুব স্বাভাবিক এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে খানিক দূরে রাস্তার বিপুল আলো এবং হোটেল মোটেলে চাকচিক্য ভরা নানা ঢঙয়ের বাহারি উজ্জ্বলতা ঠিক এই পাশটাকে আন্তরিকভাবে এড়িয়ে অন্ধকারকে তুমুল আশ্বস্ত রেখেছে। ছয় রাস্তার লেন দিয়ে এত রাতে হুসহুসিয়ে ট্রাক দৌড়চ্ছে, তাদের হেডলাইট আশ্বস্ত আঁধারকে একটু একটু ছিঁড়ে পসার যোগ্য বিপনীর দিকেই মূলত ফিরে থেকে অভ্যস্ত অস্বীকারে এদিকটাকে অনাগত ঘোষণার মতো তাচ্ছিল্য প্রদর্শনে পারদর্শিতা অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে। মোদ্যাকথা, সড়ক বরাবর একপাশের উন্নয়ন খুবই মান্য পরিস্থিতির মাধ্যমে অন্যপাশকে অবিচলিত আচ্ছন্নতায় রেখে আপাতত সন্তুষ্ট। যতক্ষণ উন্নত সীমায় দখল যোগ্য এবং উন্নতির অবতড়ণ যোগ্য পসার ব্যবস্থার পরিসর বর্তমান ততক্ষণ উল্টোদিককে অব্যহৃততার আচ্ছাদনে অন্ধকারে রেখে নিজ নিজ দিগন্তকে অতি আলোকিত প্রমানের অভিলাষ ব্যবহৃত হয়ে এসেছে, আসছে চিরকাল। তুলনায় এই স্থান বা বাবু ভাষায় কুস্থান নিতান্ত নব্য। আলোর ভেতর থেকে দেখলে সর্বাংশে অগম্য, আলোর সন্তোষ পার হতে পারলে ছেড়া ছেড়া অনমনীয় অস্পষ্টতার মধ্যে অধিকাংশ ঝুপরির বন্ধ ঝাপ ও খোলা ড্রেনের দস্যুপনা চুড়ান্ত সাবধনতায় টপকাতে পারলে এরকম অনিষ্ঠের সাক্ষাৎ সম্ভব। সুতরাং সেভাবেই আমাদের আসা এবং সৌজন্যমূলক আলোর দিগদর্শী সুবিধায় ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছটফটানি নিয়ে এই অপেক্ষা। শিক্ষিতের খোঁজ নেওয়ার ঢঙে তথাকথিত অশিক্ষিতদের চিহ্নিত করার প্রয়াসে যেসব ভদ্রসূচক শালীন প্রশ্ন ও প্রসঙ্গের নিয়ত চর্চা চলে সেসব দিয়েই কথার শুরু। ঝানু বৃক্ষকে নাড়া দিলে যেমন কিছু শ্রুত অশ্রুত সংলাপের তরঙ্গ ছড়িয়ে যায় আকাশ বাতাসে, সেভাবেই মানো বা শাউলি মানো বা কাটাই মানো বা ফটোক মানো অথবা সম্ভাব্য ইটেল মানোর কথা ঝরছে। সড়কের মসৃণতায় উদ্দীপ্ত রাতে গাড়িদের উন্মাদনায় সেসব সংলাপের কিছু ছিঁড়ে হারিয়ে আমাদের শ্রুতিকে অমনোযোগী করলেও একেবারে ছেড়ে দিচ্ছে না। কথা শুরুর কয়েক মূহুর্ত পর থেকেই বুড়োটা হয়তো আমাদের উদ্দেশ্যে আর কিছুই বলছে না, মাঝে মাঝে অন্যের অস্তিত্বটুকু বুঝতে চাইছে মাত্র। আমাদেরও মনে হচ্ছে এখানে আমরা না থাকলে বা কেউ না থাকলেও এই কথার স্রোত থামবে না, চলতে থাকবে, চলতেই থাকবে।

তা বাব্যুরা, খোঁইজ তো নেচ্যেন ইটেল ম্যানোর, সেজনা আচ্যে, না থাকলিউ আচ্যে, হড়ক্যায়েও যেত্যি পারে। ফাটক ম্যানো জ্যাল ঘুইর‍্যে এসি দ্যাখলোম বাদাড় উঠ্যা গেচ্যে, মাট উব্যিচে, পোলায় ছেমড়ি ধইরচ্যে আর বাপ খাজুর গুড়ির হাউস না মিট্যে টসকাইচ্যে। ফ্যারলাম না নত্যুন জাগায় আইসল্যাম ঠ্যার হওনের আগ্যেই গরমেন সেখান্যে একোখান নত্যুন কল বস্যাই দেলে। তারিরথ্যে ই ঝোপট ধরিচ্যি, পেইচ্যি বললি বড় অনেয্য হব্যে। পেরাণ থাকলি প্যাট আচ্যে, এট্যা নাই তো কিচ্যু নাই। নোইটের লেগ্যে ভ্যাটা ধরিচ্যি। চোখ্যে কিচু ঠ্যার নাই, সুয্যি জাগনা নিল্যি ই নাতনিট্যো হাইত পাকড়্যে বস্যায় দিলি হাতড়্যায়ে হাতড়্যায়ে কখ্যান ইট কাট্যি। পোলারে না ফিরল্যি চ্যালায় যেতি হব্যে। বুজতিচ্যেন ফ্যারা? পোলায় শাল্যো বাপের পথট্যাই ধরিচ্যে, ফাটক হইচ্যে, ফাটক ভ্যানো। সক্যলে হরদিন কাট্যে। গরমেনের জাগ্যা, গরমেনের গাচ, কেট্যি দে ফ্যারাই কলে ফ্যালালি চের‍্যাই হয়ি যায়, ছিট গুল্যান ভ্যাটা নে যায়, ট্যাকা মেল্যে। সেই ট্যাকার ফের‍্যে আমার‍্যে ছাড়াই এনিচ্যে, আবারু ট্যাকা দে ই ঝোপট ঘের‍্যা করতি ঘের‍্যা খাইচ্যে। বুজতিচ্যেন না? বাপের বামাল, গাচ কেট্যি ধরা খাইচ্যে, ধরিচ্যে গরমেন, তা বাদ গাচ্যের গুড়ি গে চেরাই কল্যে চোরা তকমা ঘুচ্যই নেচে, ভ্যানো চালান হয়ি পাইচ্যে জ্যাল। ছেমড়ি খ্যানও সেজন্যিত আরু আরু ম্যালা কাম ধরিচ্যে, ভ্যানোরে ছাড়াই কর‍্যা লাগ্যে। উদিকট্যায় য্যাত ভদ্যরলোকের ফুত্যি ব্যওস্থা পাকাটা হইচ্যে ইদিকট্যায় কুত্তায় কুস্তি লড়তিচ্যে। সাঁইঝ ধরলি টেম্পোর খালাসিগ্যে খাইলপাড়ের দিক্যি চাঁইন্দ দেখাত্যি নে যায়, দিনমান ওইডি, আপন্যেরা যা খুঁইজচ্যেন। এত্যডা বসায় থুইচ্যি, রাইতকাল্যেও পেয়ি যাবেন গো। মন চাল্যি ছেমড়ির লগ্যে খাইলপাড়ে চাঁইন্দ দেখতিউ যেত্যি পারেন, তয় গরিবির চাঁইন্দ সেরাম টইসটস্যা ধর‍্যে না, খসল্যা, খসল্যার জন্যি ট্যাকাও কম লাগ্যে গো। ফটক ভ্যানো ফটক ধরলি আমি হইচ্যি ইটেল ম্যানো, ভ্যানোর জহু হইচ্যে বেবুশ্যে। বুঝতিচ্যেন কিনা? ওই কাজ্যে লেগ্যি গে পোয়াত হইচ্যে বচ্যর তিন পিছ্যায়। উরিরথ্যে নাতনিট্যো। উর বাপ্যের হিস্যেবটো ছেমড়িও পাব্যে না, তা ধরেন আমি ইটেল ম্যানো, নাতনিট্যোর দাদা, বেবুশ্যেটোর বাপ হচ্যি। শাউলি ম্যানোর থে কাটলি ম্যানোর থে ফাটক ম্যানোর থে ইটেল ম্যানোর থে বেবুশ্যের বাপ ম্যানোয় হড়কান দিচ্যি তো দিচ্যি। চখ্যু গেলিউ পেরাণ হড়পাচ্যে, থামতিচ্যি না, আপনেগ্যা বাপো দাদায় ম্যানোর খোঁইজ্যে এয়িচ্যে। পেইচ্যে। আপনোগের পোলাপান্যে এস্যি ম্যানোরে খুঁইজ্যা পাব্যে, ম্যানো রহব্যে, সেব্যা লেগ্যে জনম জনম কইলজ্যা বিছায় রহিব্যে, মরিব্যে না গো… 

বুঝতিচ্যেন? আঁইচ্যে সিঁধোলিউ তাত উটতেচ্যে না, খালি হাউস উটতেচ্যে। আরু কখ্যান গেরস্থের পুলাপ্যান জড়ায় মড়্যায়ে টনক্যাতি পেরাণ চাচ্যে, ওগ্যা দ্যাহে ম্যালা তাঁইত। তা ছেমড়ি ম্যালা চালাকিট্যো শিখিচ্যে, ওষুধি নেচ্যে, প্যাটে তুলতেচ্যে না, যা নেচ্যে কোচড়্যে। না নিলি আখ্যান ফুরক্যে যায়। ফটক ভ্যানোরে ছ্যাড়ায় নিতি ম্যালা রেস্তর সেকস্ত। কোট্যের আদায় বদায়ে কোচড় খইস্যা যাচ্যে। গরিবির পোঙা হসক্যায়ে তয় না বিচ্যারডো টসটস্যায়ে বাইচ্যে আচ্যে। দ্যাশ্যে আইন রহিচ্যে, ম্যানো ভ্যানোও রহিচ্যে, না রহিল্যে আইনট্যো উব্যি যায় গো, ম্যানোরে ছ্যাড়ান লেগ্যে ভ্যানোর ফটক জুটিব্যে, ভ্যানোর লেগ্যে ম্যানো বেবুশ্যের গেরাস তুলিব্যে…

উতল্যা হচ্যেন? মন নেচ্যে হয়ি এয়িচ্যে। টেম্পোর খালাসি শ্যায়না না হল্যি এত্যডি সু্মায় ছেমড়ির লাগ্যে না। গিরিবির ঢইসক্যা চাঁইন্দ চুষ্যি ফ্যালালে ছেমড়ি আসিব্যে।  ধরি ন্যান এসি পড়িচ্যে, যেট্যুসখান চাচ্যেন, যেরাম চাচ্যেন পেয়ি যাবেন গো। রাইতকাল্যে অতিথ হয়িচ্যেন, সেব্যার জন্যি জেবন জুড়্যে নে বস্যি রইচ্যি, সুমায় এসি পড়িচ্যে…                           

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *