দীপান্বিতা
আলেকজান্ডার পুশকিন
তাঁকে বলা হয় আধুনিক রাশিয়ান সাহিত্যের জনক এবং রাশিয়ার সর্বকালের সেরা কবি। কিছু মতবিরোধ থাকলেও তাঁর রচনা নিঃসন্দেহে রোমান্টিকতার আদর্শ উদাহরণ। রাশিয়ান সাহিত্যিক ভাষার অগ্রগতির সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ান অভিধানকেও তাঁর কাজ বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। ভাষা ছাড়াও তাঁর প্রতিভা রাশিয়ান সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত। সাহিত্যের সমস্ত ধারাতেই তাঁর অনন্য অবদান রয়ে গেছে। গীতিকাব্য থেকে বর্ণনামায় কবিতা, ছোট গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র তাঁর স্বল্পায়ু জীবনকালে রচনা করে গেছেন পুশকিন। সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কাজ রাশিয়াতে সাহিত্যিক ম্যাগাজিনের সূত্রপাত ঘটায়। লিও টলস্টয় এবং আইভান তুর্গেনেভের মতো দিকপাল ঔপন্যাসিকরা তাঁর কাছ থেকেই নিজেদের লেখার ধরন খুঁজে পেয়েছেন। পুশকিনের আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত রাশিয়ান সাহিত্যিক নিকোলাই ভ্যাসিলিয়াভিচ গোগোল। অন্যদিকে তিনি ছিলেন রাশিয়ান অপেরার প্রাণপুরুষ। তাঁর বহু কবিতা থেকে জন্ম নিয়েছে বহু বিখ্যাত ব্যালে ও সংগীত।

১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে মস্কো শহরে জন্ম। পুশকিনের বাবা সের্জেই পুশকিন ছিলেন এক অভিজাত বংশের সন্তান। তাঁর মা নাদজাও ছিলেন সম্ভ্রান্ত বংশের মেয়ে। পুরো নাম আলেকজান্ডার সের্গেইয়োভিচ পুশকিন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাঁর লেখা প্রথম কবিতা সাড়া ফেলে দিয়েছিল। এ সময় সেন্ট পিটার্সবার্গ-এর কাছে এক নামকরা প্রতিষ্ঠানে তিনি পড়াশোনা করছিলেন। ২১ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর দীর্ঘ কবিতা রুশল্যান্ড লিউডিডমিলা, যার বিষয়বস্তু ও স্টাইল বহু চর্চিত হতে থাকে।
সামাজিক সংস্কারমূলক কার্যকলাপ তাঁকে সরকারের কাছে অপ্রিয় করে তোলে। তাঁকে মস্কো ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। অটোম্যান তুর্কি শাসকদের কবল থেকে গ্রিসকে মুক্ত করার সংগ্রামে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সরকার বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তাঁকে দক্ষিণ রাশিয়াতে তাঁর মায়ের গ্রামের বাড়িতে নির্বাসিত হতে হয়। তখন তাঁর বয়স ২৫। তাঁর স্বাধীন চলাফেরা ও লেখার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপলেও তিনি এ সময় তাঁর বিখ্যাত নাটক বরিশ গোডুনভ রচনা করেন। দু’-বছর পর শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে জার প্রথম নিকলাসের কাছে নিজের মুক্তি প্রার্থনা করে তা পেয়েও যান।
সমালোচকদের চোখে তাঁর অনেক রচনাই মাস্টারপিস। এদের মধ্যে দা ব্রঞ্জে হর্সম্যান কবিতা ও দ্য স্টোন গেস্ট নাটক উল্লেখযোগ্য। পুশকিনের নিজের পছন্দ ছিল বিখ্যাত কাব্য উপন্যাস ইউজিন ওনেজিন, যেখান থেকে সূচনা ঘটে সুসমৃদ্ধ রাশিয়ান উপন্যাসের ধারা।
১৮৩১ সালে তিনি বিয়ে করেন নাতালিয়া গঞ্চারাভাকে। চারটি ছেলেমেয়ের জন্ম হয়। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে পুশকিন রাজসভা ও অভিজাত সমাজে মেলামেশা শুরু করেন। সুন্দরী নাতালিয়ার ছিল অনেক স্তাবক। স্বয়ং জারও ছিলেন নাতালিয়ার রূপমুগ্ধ। তবুও জার তাঁকে সর্বনিম্ন সম্মানে ভূষিত করলে পুশকিন বেশ অপমান বোধ করেন। ১৮৩৭ সাল নাগাদ যথেষ্ট দুরবস্থার শিকার হন লেখক। ক্রমশ দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়তে থাকেন। এসময় নাতালিয়ার প্রণয় নিয়ে বেশ কুৎসা রটনা শুরু হয়। স্ত্রীর প্রণয়ী হিসেবে চিহ্নিত তাঁর শ্যালককে পুশকিন ডুয়েল লড়ার আহ্বান জানান। লড়াইতে দুজনেই আহত হন। পুশকিনের আঘাত ছিল মারাত্মক। দু’দিন পরই তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর গোপনে মধ্যরাতে তাঁকে কবর দেওয়া হয় তাঁরই মায়ের অখ্যাত এস্টেটে। আসলে জার ভয় পেয়েছিলেন, যদি জনপ্রিয় লেখকের মৃত্যু জনতার মধ্যে কোন বিক্ষোভ সৃষ্টি করে। প্রতিভাস ম্যাগাজিন