কৌশিকরঞ্জন খাঁ
আমাদের খোঁজই রাখা হয়নি এখন কেমন আছেন রথীনবাবু। আসলে এখন তো আর আগ বাড়িয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চল নেই। যতদিন একজন মানুষকে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে দেখা যাচ্ছে, বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে লটবহর নিয়ে দূরদেশে যাচ্ছে বা ফিরছে ততদিন মানুষের আর খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন হয়না। কিন্তু রথীনবাবু এবছরের প্রথমেই আটাত্তর পার করেছেন। পায়ের নীচে বড়ো বড়ো কড়া থাকায় খুব একটা হাঁটাহাঁটিও করতেন না। তবে সাইকেল চালাতেন আগে। পুরনো একটা সাইকেল চেপে এখানে সেখানে যেতে দেখা যেত। মাঝে দু’বছর করোনা করোনা করে একেবারে বাড়িতেই খিল এঁটে বসেছিলেন। যৌবনের ঘনঘন বিড়ি খাওয়ার কারনে শেষ বয়েসে এসে শ্বাসযন্ত্রটাই যন্ত্রণার কারন হয়েছে। কাজেই কড়া লকডাউনের সময় রথীনবাবু অনেকের চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিলেন।
সকাল দশটার দিকে জানালাটা খুলেছিলেন। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাল্লাটা যেন ফুলেফেঁপে আয়তনে বেড়ে ফ্রেমে এঁটে বসেছে। জোরে ধাক্কা মেরে খুলতে হয়েছে। মাত্র ঘন্টা তিনেক পর আটকাতে এসে আর পারছেন না। হাত দিয়ে টেনে ধরলেও কিছুটা ফাঁক রয়েই যাচ্ছে। কিছু যেন আটকে আছে। ‘আচ্ছা ঝামেলায় পড়লাম তো’ মনে মনে বলে তিনি চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লেন।
ষাটে রিটায়ার করেছিলেন মিউনিসিপালিটির হেড ক্লার্কের চেয়ার থেকে। দুবছর এক্সটেনশন করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি রাজি হননি। ‘অনেক হয়েছে কাজ! আর দরকার নেই’ ভেবে তিনি সবসময়ের জন্য ফিরে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর নিজের হাতে গড়া জগতে। অনেক কোলাহল হলো! সারাজীবন ধরে ছাদের গাছগুলোর সাথে মিশে থাকতে চেয়েও পারেননি। বড়োবাবুর কাজ সামলে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলে মনটা উসখুস করে উঠতো। বাড়িতে ফিরেই শহরের মানুষের রাজ্যের কাজের কাগজপত্রে ভর্তি চামড়ার বড়ো ব্যাগটা নামিয়ে কোনওমতে জামাকাপড় বদলেই চলে যেতেন ছাদে। সিঁড়ির শেষ ধাপে পা দিয়েই একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিকোটিন ঘেরা ফুসফুসটাকে যথাসাধ্য বড়ো করে নিতেন। এত বড়ো! এত বড়ো! যে রথীনবাবুর ফুসফুসটা একটা বিরাট বেলুন হয়ে তাঁর ছাদ, ছাদ থেকে দেখা পাড়ার বাড়িঘর মানুষজন রাস্তাঘাট ছাপিয়ে তিনতলা মিউনিসিপালিটি অফিসটা পর্যন্ত ঢেকে দিত।
ঘরে সুন্দর ফ্রেমে ইন্টারন্যাশনাল ডালিয়া সোসাইটির শংসাপত্র যত্ন করে বাঁধিয়ে রাখা। এই শহরের ছাদে যখন হাতে গোনা বাগান পাওয়া যেত তখনই রথীনবাবুর নিজের পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ডালিয়ার একটা নতুন ভ্যারাইটির জন্ম দেওয়া হয়ে গেছে। একসময় কেবল পাতা দেখে বলে দিতেন গোলাপের নাম। তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল গাছ। এতটাই ভালোবাসা যে কোনও গাছ মরে গেলেও তাকে ফেলতে চাইতেন না। মৃত গোলাপ গাছ দিয়ে কুটুম কাটাম বানিয়ে তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে কাচের আলমারিতে রেখে দিয়েছেন।
বয়স! বয়স! বয়স তাঁর শখেও থাবা বসিয়েছে। অত অত গাছে জল দেওয়া চাট্টিখানি কথা না। বড় বড় টবের মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে কোমড়ের জন্য। সেসব টানাটানি করতে গেলে বার্ধক্যের শরীরটা আর চোট আঘাত সহ্য করতে পারেনা। এরই মধ্যে মহামারী এসে তাঁকে যেন নিঃসঙ্গ এক নাবিকে পরিনত করে দিল। টবগুলোর ঘাস তুলে তুলে নিখুঁত করে দিয়েও আর সময় কাটেনা। মানুষতো মানুষ! পাখিগুলো আর মানুষ দেখে ছাদে নামে না। অসহায় মনে হতো। অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে মন চাইতো। মানুষ কোথায়? সবকিছু শুনশান নিস্তব্ধতার গ্রাসে চলে গিয়েছিল। যে যার সুরক্ষা বলয়ে ঢুকে পড়ায় মানুষকে আর মানুষ মনে হতো না। সারা পৃথিবীর মানুষ শামুক হয়ে উঠেছিল।
যে জানালাটার পাল্লা লাগাতে পারছিলেন না তিনি সেটা আসলে তৈরি হয়েছিল তাঁর চরম ডিপ্রেশনের সময়েই। বহুবার মৃতপ্রায় গাছকে তিনি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে বাঁচিয়েছিলেন। সে সময় অদ্ভুত তৃপ্তি হতো তাঁর। নিজেকে ঈশ্বর মনে হতো। তিনি খাদের কিনারা থেকে উঠে আসা মানুষ। ডিপ্রেশনের ডুবে যেতে গিয়েও তিনি ভেসে উঠেছিলেন তাঁর সৃজনশীলতার জন্যে। তিনি বাঁচার তাগিদ তৈরি করতে পেরেছিলেন। পুরনো কাঠমিস্ত্রীকে ফোনে ডেকে বাড়ির সামনের বারান্দা ঘিরে ফেললেন। গড়ে তুললেন ‘সবুজায়ন’। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আনালেন জৈবসার, জৈবকীটনাশক, এপসম সল্ট, ট্রাইকোডারমা ভিড়িডি, আরও কত কি যা শহরের অনেক বাগানকরা মানুষেরই অজানা ছিল।
রথীনবাবু নিজেও হয়ে উঠেছিল শামুকের মতো স্লথ। সূর্যটা আকাশ বেয়ে কিভাবে নেমে যাচ্ছে সেটা দেখাই ছিল একমাত্র বিনোদন। এছাড়া কচিৎ সামনের রাস্তায় কারো সাড়া পেলে তা মুখ বাড়িয়ে দেখতে যাওয়াই ছিল সবচেয়ে সহজ বিনোদন। কিন্তু রথীনবাবুর ‘সবুজায়ন’ হয়ে উঠলো অনেকের আশ্রয়। পুলিশের চোখ বাঁচিয়ে একবার কোনওমতে চলে আসতে পারলেই জমে উঠতো আড্ডা। আড্ডা ও ব্যাবসা। গাছের কত নিগুঢ় কথা বলে চলতেন তিনি। অনেকের কাছে তা প্রবচনের মতো হয়ে উঠেছিল। যখন তিনি বলতেন, এতটাই গভীরে নেমে বলতেন গাছের জীবন মানুষের জীবন এক হয়ে যেত। অনবরত একনাগাড়ে টুপটাপ বৃষ্টি পড়ার মতো বলতেন — মানুষ যেমন নানা সমস্যার ভারে ঝুকে পড়ে তেমনি গাছেও মাইটস হলে পাতাগুলো নিচের দিকে গুটিয়ে যায়। থিবসের আক্রমণ হলে পাতা গুটিয়ে উপরের দিকে ওঠে। রোগের হাত থেকে মানুষও ছাড় পায়না, গাছও। গাছের গোড়ায় খুদিশামুক হলে শিকড়গুটি বেঁধে যায়। তখন গাছ আর তড়তড় করে বাড়ে না। শামুকের চলার মতো ধীরে ধীরে বাড়ে। গাছ এবং মানুষ অসুস্থ হলে দুজনের দুজনকে প্রয়োজন।
মানুষ সেসব শুনতে শুনতে ভুলে যেতেন মহামারীর একঘেয়ে মৃত্যুর হাতছানির কথা। মাসের পর মাস কিভাবে দিনগতপাপক্ষয় হচ্ছে সেসব। মানুষ ফিরে যেতেন গাছ কিভাবে আরও সুন্দর স্বাস্থ্যবান করা যায় সে সব কৌশল জেনে। রাতেরবেলা তুলি হাতে পরাগায়নকে নিশ্চিত করতে রথীনবাবুর শ্রোতারা ড্রাগনফুলের উপর ঝুঁকে পড়ত। অনেকের বাগান হয়ে উঠেছিল গবেষণার টেবিল। রথীনবাবুর দোকানে দেদার বিক্রি হতো গাছের সরঞ্জাম এবং গাছ।
কয়েকদিনের বৃষ্টির পর রোদ উঠেছে। বহুদিন হলো মানুষ আবার ব্যস্ততায় অভ্যস্থ হয়েছে। দোকানে দোকানে মাস্ক আর ঝুলে থাকেনা। নিরিবিলি দোকানটায় কেবল বিক্রি না হওয়া জিনিসের গন্ধ তাঁকে অবশ করে দেয়। শরীরটা যেন জমাট বেঁধে বিভিন্ন রকম রোগপোকার আশ্রয় হয়ে উঠেছে। পায়ে শিরাগুলোয় মাঝে মাঝে গিটের মত মনে হয়। টবের মাটিতে সাদাসাদা কেন্নোর মতো পোকা এবং শামুক বাসা বাঁধলে গাছের শিকড়ে যেমন গিট বাঁধে। রথীনবাবু শ্লথ হয়ে পড়ছেন। তাঁর চিন্তাভাবনা, উৎসাহ, বেঁচেথাকা সবই শ্লথ হয়ে পড়ছে।
রথীনবাবুর ছেলে সৌগত ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলে দিয়েছিল — ‘ভালোবাসার ছাদবাগান’। রথীনবাবুকে অ্যাডমিন করে দিয়ে বলেছিল — ঘরে বসে বসেই আড্ডা দিতে পারবে। মানুষের বাগান দেখতে পারবে।
গ্রুপটার সদস্যদের নিজেদের প্রয়োজনেই অল্প দিনে গ্রুপটার হাজার পাঁচেক সদস্য হয়ে উঠেছিল। কয়েকজন মডারেটর হয়েছিল। সবাই অ্যাকটিভ। কোনও পেন্ডিং পোস্ট থাকতো না। পোস্ট আসতে না আসতেই অ্যাপ্রুভ হয়ে যেত। সাত ঝামেলাও লেগে থাকতো। কে বেছে বেছে সুন্দর দেখতে মেয়েদের গাছ গিফ্ট করছে, কোন মডারেটর গ্রুপ রুলস ভায়োলেট করে রাত-বিরেতে ইনবক্সে অবান্তর কথা বলছে, কোন সদস্য অন্য গ্রুপে অ্যাকটিভ হয়ে পড়ছে! সবশেষে রথীনবাবুকে মাঠে নামতে হতো। কিন্তু এসব নিয়ে মেতে থাকার একটা নেশা পেয়ে বসেছিল। এর মধ্যেই কয়েকজন প্রস্তাব দেয় ‘আমরা ভালো জিনিস পাচ্ছি না, আপনিই সব আনার ব্যবস্থা করুন’। কথাটা মনে ধরে তাঁর। দোকানের নাম ঠিক করলেন ‘সবুজায়ন’।
আজকের জীর্ণদশার ‘সবুজায়ন’ সেদিন টগবগে চাঙ্গা। সারা শহর বোবা, ‘সবুজায়ন’ থেকে অনর্গল আড্ডার গুঞ্জন ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়তো চারিদিকে। সেসব ঢেউয়ের তালে রথীনবাবুর ব্যবসায় চলছিল ব্যস্ততা। কেউ একজন ছাদে গ্রীণনেট টাঙ্গিয়ে গ্রুপে ছবি দিল তো গ্রুপের বহু মানুষের কম্পিটিশন শুরু হয়ে গেল কেনার। অর্ডার দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠতেন রথীনবাবু। তবু রিটায়ার্ড লাইফে জীবন এতটা উপভোগ্য উঠবে – কল্পনাও করেননি কখনো। সারাজীবন খোলসের ভিতরে থাকা শামুক মনে হয়েছে তাঁর। খোলস নিয়েই চলা, কখনো খোলসেই ঢুকে পড়া। এর বেশি আর কি?
বছর দুয়েকের অনভ্যাসে রথীনবাবু সাইকেল চালানো ভুলেই যায়। তিনি জানতেন সাঁতার আর সাইকেল একবার শিখলে কেউ ভোলেনা। আটাত্তর বছর বয়সের উপান্তে এসে বুঝলেন বয়স শরীরটাকে জুবুথুবু করে দিলে পুরনো দিন আর ফিরে আসে না। টোটো নিয়ে শহরটা ঘুরতে বেড়িয়ে দেখেন পৃথ্বীশ বলে লোকটির বাসস্ট্যান্ডের ধারে যে ‘গাছ গাছালি’ নামে দোকানটি ছিল তাতে গাঁদাফুলের চেন, রজনীগন্ধা স্টিক, গ্ল্যাডিওলাস রয়েছে। পৃথ্বীশ লম্বা একটা সূঁচে রজনীগন্ধার মালা গাঁথছে। টোটো থেকে মুখ বাড়িয়ে বলেছিলেন ‘নার্সারি তুলে দিলে’?
আর চলছে না। মানুষের গাছ লাগানোর শখ মিটে গেছে। সংসার টানতে দোকান বদলে নিলাম।
তুষারের কথা মনে হলো। তাঁর গ্রুপের মডারেটর। ‘ যা গাছ লাগিয়েছে মানুষ আগামী পাঁচবছরে কেউ আর নতুন করে লাগাবে না’।
কথাটা সত্যিই হচ্ছে। ছেলের মুখে শুনেছেন — যত নার্সারি গজিয়েছিল সব উঠে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
ছাদে উঠে ভাবেন নার্সারি আর কি! মানুষের মন থেকে বোধহয় বাগান করার শখটাই উবে গেছে। আশপাশের বাড়ির ছাদগুলোতে অযত্নের ছাপ। জৌলুসহীন গাছ। কখনো মনে পড়লে জল দিয়ে যেন কোনওমতে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। বাড়ির মানুষ সময় মতো যে যার কাজে বেড়িয়ে গেছে। রথীনবাবু ভাবেন — এর বেশি আর কি হবে! দুদিনের শখ। ঠেলায় পড়ে। এতো আর ভিতর থেকে চাগিয়ে ওঠা ভালোবাসা নয়! অফিস থেকে ফিরে সেই যে আলো জ্বালিয়ে গাছের মধ্যে ঢুবে থাকা। রাতের খাবারের ডাক এলে মুখ তোলা। কোনও আড্ডা নেই। বন্ধু বান্ধব নেই। ছাদের কথা না বলতে পারা গাছগুলোই তাঁকে নির্বাক স্বরলিপি শিখিয়ে নিয়েছিল। সেই ভাষাতেই তো শব্দহীন কথোপকথনে কাটিয়ে দেওয়া এ যাবৎ জীবন।
ঐ যে একতলা সাদা বাড়িটা, তাঁরই বাল্যবন্ধু রামপদর। অ্যাডভোকেট ছিল। আজ বেঁচে নেই। নেমপ্লেটে নামটা রয়ে গেছে। একসময় শুধুই রকমারি ক্যাকটাস করতো। ফুলমেলায় রামপদর ক্যাকটাস গেলে আর অন্য কারও প্রাইজ জেতার সম্ভাবনা ছিল না। আজ তার একটাও নেই। রথীনবাবু উদাস চোখ মেলে শুধু রামপদর ছাদের অবস্থা দেখেই কতবার ভেবেছেন — মানুষ না থাকলে তাঁর শখের গাছও হারিয়ে যায়। সচরাচর শখের কোনও উত্তরসূরীত্ব হয়না।
নিজের সাধের বনসাইগুলো কার হেফাজতে দিয়ে যাবেন? সৌগতর এসবে মন নেই। অথচ জীবন্ত ভাষ্কর্যগুলো তৈরীই হয়েছিল তাঁর তিরিশ থেকে চল্লিশ বছরের জীবনে। রথীনবাবু বনসাইগুলোর সামনে দাঁড়ালে আজও পুরনো চিঠি খুঁজে পাওয়ার আনন্দ পান। কতকিছু বদলে গেল। কত প্রিয়জন, পরিচিত জন হারিয়ে গেল। বদলে গেল তাদের নিজেদের জীবন। ভাই প্রিয়তোষ হঠাৎ রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেল। কোথা থেকে তার উঠিয়ে আনা শেওড়াগাছটা আজও বামন হয়ে বেঁচে আছে। দড়ি পাকানো মিষ্টি তেঁতুলগাছটার পাশে তাঁর মা সোনালী পাটের মতো চুলগুলোয় নারকেল তেল মেখে কতক্ষন ধরে চিরুনি করতো। আজও, আজও তেঁতুল গাছটার পাশে দাঁড়ালে খাটি নারকেল তেলের সুবাস পান। জীবন পূর্ণ হয়ে এলো। চাইলেও আর একটি বনসাই তৈরি করতে পারবেন না। তাঁর অবর্তমানে এগুলো নিয়মিত জল পাবে কিনা কে জানে!
বাড়ির ভেতর থেকে স্ত্রী রমার গলা পেয়ে রথীনবাবুর স্থবির ভাবনার জগৎটা ভেঙে যায়। ‘বেলা গড়িয়ে গেল, স্নানটা সেরে নাও এবার’। ও বেলায় আর দোকান খোলার প্রয়োজন হবে না ভেবে জানালাটা আবার আটকাতে গিয়ে দেখেন জানালার পাল্লায় একটা বড়ো শামুক উঠে এসেছে। এতক্ষন তাহলে এটার জন্যই পাল্লা আটকানো যাচ্ছিল না! ফেলে না দিলে ঘরের মধ্যেই রয়ে যাবে। পাল্লায় একটা জলের দাগের শেষে শামুকটা মনে হচ্ছে স্থির হয়ে আছে। শামুকের কথা মনে এলেই রথীমবাবুর শরীর থমকে যায়। এত শ্লথ প্রাণী অথচ এই দুর্দান্ত গতিশীল মানুষের ব্যবস্থাপনার তোয়াক্কা করে না। নিজের মতো নিজের সীমিত গতি নিয়েই বাঁচে। তাঁর মনে হয় — ‘ কোনও তাড়াহুড়ো নেই, এভাবেও তো বাঁচা যায়’। রথীনবাবু দেখছেন শামুকের অ্যান্টেনার মতো শুড়দুটো নড়ছে। মনে হয় ঈশারায় কিছু বলতে চাইছে।