পাঠক মিত্র

শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ এবং স্বাধীনতা

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুধু সাহিত্যিক ছিলেন না । তদানীন্তন রাজনৈতিক আন্দোলন মানে স্বাধীনতা আন্দোলনের তিনি একজন সক্রিয় কর্মীও ছিলেন। সাহিত্য চর্চা ছেড়ে রাজনীতিতে কেন–এ প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘দেশ হল সবচেয়ে বড় । দেশের আন্দোলনে না এলে যত ক্ষতি হত, সাহিত্যসাধনার ক্ষতি তত বড়ো নয় ।’ দেশের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে তবে এ কথা বলা যায় । শরৎচন্দ্রের কাছে দেশসেবাই হল ধর্ম । তাই তিনি বলতে পারেন , ” দেশসেবা জিনিসটা যতদিন ধর্ম হয়ে না দাঁড়ায়, ততদিন তার মধ্যে খানিকটা ফাঁকি থেকে যায়। একথা আমি মর্মে মর্মে অনুভব করি–।”

হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন শরৎচন্দ্র । কংগ্রেস সভাপতি হয়ে গান্ধীজীর প্রতি শ্রদ্ধা থাকা সত্বেও তিনি আপোসহীন ধারার আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন, অথচ আপোসকামী ধারাকে ঘৃণা করেন নি । বিপ্লবের প্রতি তাঁর এই সমর্থনের ছবি এঁকেছেন ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে । সম্ভবত এই উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম রাজনৈতিক উপন্যাস । রাশিয়ার লেনিনগ্রাদে এশিয়ার জাতিসমূহ সংক্রান্ত গবেষণা কর্মী লিদিয়া স্ত্রিজেভস্কাইয়া শরত্চন্দ্র প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘বাংলা সাহিত্যের প্রথম রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পথের দাবী ‘ । এই উপন্যাসটি জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতি শরৎচন্দ্রের আনুগত্য এবং সেইসঙ্গে অসহযোগ ও সত্যাগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর মোহমুক্তির ফসল ।

এই উপন্যাসের নায়ক ডাক্তার সব্যসাচীর মতে, বিপ্লবের পথে স্বাধীনতা আসবে, যে বিপ্লবকে অনিবার্যভাবেই দমনপীড়নের মুখোমুখি হতে হবে । যাই হোক উপন্যাসটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বিপ্লবকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অথবা এর পরে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে সে বিষয়ে গ্রন্থকার অথবা নায়ক কারোরই কোন পরিষ্কার ধারণা ছিল না । তদুপরি, বিপ্লবের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে দু’ভাগে বিভক্ত করে সব্যসাচী শুধু প্রথমটিকে স্বীকার করে নিয়েছিল ।’ 

বিপ্লবের প্রাথমিক লক্ষ্য যে স্বাধীনতা তা ‘পথের দাবী’ তে সব্যসাচী বলছেন, ‘—ভারতের স্বাধীনতাই আমার একমাত্র লক্ষ্য, আমার একটিমাত্র সাধনা । এই আমার ভাল, এই আমার মন্দ,–এ ছাড়া এ জীবনে আর আমার কোথাও কিছু নাই ।’

একদল স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিবর্তে সমাজসেবার উপর গুরুত্ব দিত যেন স্বাধীনতা আন্দোলনের চেয়ে তাদের কাছে এটাই আসল কাজ । এই সব দেখে সব্যসাচী ভারতীকে বলেছেন, ‘দেশের মধ্যে এমন অনেক ছোটবড় প্রতিষ্ঠান আছে, যারা দেশের ঢের ভাল কাজ করে । আর্তের সেবা, নরনারীর পুণ্য সঞ্চয়ে প্রবৃত্তি দান করা, লোকের জ্বর ও পেটের অসুখে ঔষধ জোগানো, জল-প্লাবনে সাহায্য ও সান্ত্বনা দেওয়া–তারাও তোমাকে পথ দেখিয়ে দেবেন, ভারতী, কিন্তু আমি বিপ্লবী । আমার মায়া নেই, দয়া নেই, স্নেহ নেই— পাপ-পুণ্য আমার কাছে মিথ্যা পরিহাস । ‘

সত্যি কি দয়া-মায়া-স্নেহ নেই সব্যসাচীর । তা না । এগুলো শুধু ইংরেজ শাসকের জন্য । ব্রিটিশরা তাই প্রচার করত, বিপ্লবীরা নিষ্ঠুর, নির্দয়, দয়ামায়াহীন । এমনকি গান্ধীবাদীরাও তাই প্রচার করত । অথচ অপূর্ব বিপ্লবী দলের গোপন কথা পুলিশকে ফাঁস করে দেওয়ায় দলের সকলেই তাকে মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত নিল । কিন্তু সব্যসাচী তা হতে দিলেন না, অথচ যার ফলে তাঁরই জীবন বিপন্ন হচ্ছিল । 

সেই যুগে শরৎচন্দ্র মার্কসবাদী নন অথচ গান্ধীজীর রাজনীতির শ্রেণীচরিত্র চিনেছিলেন, তাঁর কথায়, ‘তাঁর (গান্ধীজীর ) আসল ভয় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে । তাঁকে ধণিক, ব্যবসায়ীগণ ঘিরে রয়েছে । সমাজতান্ত্রিকদের কীভাবে গ্রহণ করবেন ।’ 

তাই স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশের রাজনীতিতে ধনীদের নিয়ন্ত্রণ তাদের স্বার্থেই তা তিনি দেখতে পেয়েছেন বলেই ‘তরুণের বিদ্রোহ’ ভাষণে বলেছেন, ‘এখন রাজা নেই, আছে রাজশক্তি । এবং সেই শক্তি আছে জনকয়েক বড় ব্যবসাদারদের হাতে । হয় স্বহস্তে করেন, না হয় লোক দিয়ে করান । বণিক বৃত্তিই এখন রাজনীতি শোষণের জন্যেই শাসন ।’ সেদিন এভাবে শরৎচন্দ্রের মত দেশবাসীদের কেউ সতর্ক করে দিতে পারেননি । 

চরকা কাটা নিয়ে একদিন গান্ধীজীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি attainment of Swaraj can only be done by soldiers, not by spiders. অহিংসা আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে কাদের খুশি করে, সে ব্যাপারে ‘পথের দাবী’ তে সব্যসাচীর একটি কথা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ‘–সুন্দরবনের মধ্যে নিরস্ত্র দাঁড়িয়ে শান্তির বাণী প্রচার করলে বাঘ-ভালুকের খুশি হবারই কথা—।’

তিনি শুধু সংস্কারবাদী আন্দোলনকে সমালোচনা করেননি, বিপ্লবীদেরও দেখিয়ে দিয়েছেন তাদের পথ । ‘পথের দাবী’ তে দেখিয়েছেন যা তিনি ছাত্র যুব সমাবেশ বারবার বলতেন, ‘বিপ্লবের সৃষ্টি মানুষের মনে, অহেতুক রক্তপাত নয় । তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় । ক্ষমাহীন সমাজ, প্রীতিহীন ধর্ম, জাতিগত ঘৃণা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, মেয়েদের প্রতি চিত্তহীন কঠোরতা এর আমূল প্রতিকারের বিপ্লবপন্থাকতেই শুধু রাজনৈতিক বিপ্লব সম্ভবপর হবে ।’ সুতরাং তখন এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সকল মতবাদীরা অবহেলা করেছেন । ‘পথের দাবী’ তে বলছেন শশী কবিকে, ‘তুমি প্রাণ খুলে শুধু সামাজিক বিপ্লবের গান শুরু করে দাও । যা কিছু সনাতন, যা কিছু প্রাচীন, জীর্ণ, পুরাতন, —ধর্ম, সমাজ, সংস্কার, –সমস্ত ভেঙ্গেচুরে ধ্বংস হয়ে যাক ।’ যে বিপ্লবে আসবে প্রকৃত স্বাধীনতা যা ভিক্ষার পথে, আবেদন নিবেদনের পথে আসে না, তার জন্য প্রয়োজন বিপ্লবের পথে যুবকদের রক্ত । যা তিনি ‘তরুণের বিদ্রোহ ‘ বক্তৃতায় বলেছেন, ‘স্বাধীনতা শুধু একটা নামামাত্রই নয় । দাতার দক্ষিণ হস্তের দানেই তো একে ভিক্ষার মতো পাওয়া যায় না । এর জন্য মূল্য দিতে হয় । কোথায় মূল্য? কার কাছে আছে ? আছে শুধু যৌবনের রক্তের মধ্যে সঞ্চিত ।’ সেই যৌবনের রক্ত তখনই মূূল্য দেবে যখন সে হয়ে উঠবে যথার্থ মানুষ । এই যথার্থ মানুষ হওয়া বলতে কি বোঝায় তা পথের দাবীতে বলেছেন, ‘মানুষ হয়ে জন্মানোর মর্যাদাবোধকেই মানুষ হওয়া বলে । মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তি পাওয়াকেই মানুষ হওয়া বলে ।’

সশস্ত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে যারা অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলছেন, তাদের চরিত্র আরো একবার চিনিয়ে দিলেন সব্যসাচীর কথার মধ্য দিয়ে– ‘শান্তি! শান্তি! শান্তি! শুনে শুনে কান একেবারে ঝালাপালা হয়ে গেছে । কিন্তু এ অসত্য এতদিন ধরে কারা প্রচার করেছে জানো । যারা পরের শান্তি হরণ করে, পরের রাস্তা জুড়ে অট্টালিকা প্রাসাদ বানিয়ে বসে আছে তারাই এই মিথ্যা মন্ত্রকের ঋষি । বঞ্চিত, পীড়িত, উপদ্রুত নর নরীর কানে অবিশ্রান্ত এই মন্ত্র জপ করে করে তাদের এমন করে তুলেছে যা তারাই আজ অশান্তির নামে চমকে ওঠে । ভাবে এ বুঝি পাপ, এ বুঝি অমঙ্গল ।–বাঁধা গোরু অনাহারে দাঁড়িয়ে মরতে দেখেছো ? সে দাঁড়িয়ে মরে, তবু সে জীর্ণ দড়িটা ছিঁড়ে ফেলে মনিবের শান্তি নষ্ট করে না ।’

এমনকি বিপ্লবী উদ্দেশ্যবর্জিত নিছক অর্থনৈতিক দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘটকে সমালোচনা করে বলেছেন, ‘কোথাও কোন দেশে নিছক বিপ্লবের জন্যই বিপ্লব বাধানো যায় না, একটা কিছু অবলম্বন তার চাইই চাই । সেই ত আমার অবলম্বন । যে মূর্খ একথা জানে না, শুধু মজুরির কমবেশি নিয়ে ধর্মঘট বাধাতে চায় সে তাদেরও ক্ষতি করে, দেশেরও করে ।’

যখন বিপ্লবীরা বিপ্লবের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে তুলছে আত্মবলিদানে, তখন তাঁদের পাশে দেশের জনগণ ছিল না, অনেকে আশ্রয়ও দিতে চাইত না । সেই দুঃখে সব্যসাচী সেদিনের দেশবাসী সম্পর্কে বলছেন, ‘–তারা ত এ কাজ করতে আমাদের বলে না । বরং আমরা তাদের স্বস্তির বাধা, আরামের অন্তরায় ।–দাদার যদি ফাঁসি হয়েছে শোনো, জেনো, বিদেশীর হুকুমে সে ফাঁসি তার দেশের লোকই তার গলায় বেঁধেছে ।’ এই হচ্ছে এদেশের স্বদেশি আন্দোলন যুগের প্রথম অধ্যায়ের বিপ্লবীদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞত । ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকেও এই দুঃখ, এই যন্ত্রণা ছিল আরও কষ্টকর । 

দেশকে ভালবাসার পুরস্কার হিসেবে বিপ্লবীরা তখন কি পেয়েছে তা ‘পথের দাবী’ তে আরো এক জায়গায় বলছেন, ‘পরাধীন দেশের সবচেয়ে বড় অভিসম্পাতই তো হল কৃতঘ্নতা । যাদের সেবা করবে তারাই তোমাকে সন্দেহের চোখে দেখবে, প্রাণ যাদের বাঁচাবে তারাই তোমাকে বিক্রি করে দিতে চাইবে । মূঢ়তা আর অকৃতজ্ঞতা প্রতি পদক্ষেপে তোমায় ছুঁচের মতো বিঁধবে । শ্রদ্ধা নেই, স্নেহ নেই, কেউ কাছে ডাকবে না, কেউ সাহায্য করতে আসবে না, বিষধর সাপের মত তোমাকে দেখে লোকে দূরে সরে যাবে । দেশকে ভালবাসার এই আমাদের পুরস্কার ।’

আদর্শের প্রশ্নে কখনো তিনি কারো সাথে compromise করেননি । একবার দেশবন্ধু শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করেছেন, তিনি সশস্ত্র বিপ্লবীদের কাছে আবেদন করেন তাঁরা যেন কিছুদিন নিরস্ত থাকেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি । আর একবার দেশবন্ধুর বাড়িতে গান্ধীজী বিপ্লবীদের traitor বলেছেন । সাথে সাথে শরৎচন্দ্র দৃপ্তকন্ঠে প্রতিবাদ করে বলেছেন, ‘মত পার্থক্যের কারণে আপনি যদি তাদের traitor বলতে পারেন, তাহলে একই কারণে আমিও আপনাকে তা বলতে পারি ।’

তাই ‘পথের দাবী’তে সব্যসাচী এক জায়গায় বলছেন, আমি মিথ্যা বলিনি, আমি প্রয়োজনে সত্য সৃষ্টি করি ।

চৌরিচৌরা ঘটনায় পুলিশের গুলিতে মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে জনতা উত্তেজিত হয়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন তুলে নেন এই বলে যে আন্দোলন সহিংস হয়ে পড়ছে । তখন শরৎচন্দ্র অত্যন্ত রেগে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এ অবস্থায় আন্দোলনকে স্থগিত রাখার মানে টুঁটি টিপে আন্দোলনের অপমৃত্যু ঘটানো–। এতবড় বিরাট দেশের মুক্তি সংগ্রামে রক্তপাত হবে না ? হবেই তো । রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে চারিদিকে—সেই শোণিত প্রবাহের মধ্যেই তো ফুটবে স্বাধীনতার রক্তকমল ।’

ভারতবর্ষের এই রক্তকমলে ইংরেজের ভয় । তাই ‘পথের দাবী’ প্রকাশ হওয়ার পরে ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করে । এর প্রতিবাদ করার জন্য রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করেন শরৎচন্দ্র । রবীন্দ্রনাথ উত্তরে বলেন, ‘ বইটি উত্তেজক । অর্থাৎ ইংরেজের বিরুদ্ধে পাঠকের মনকে প্রসন্ন করে তোলে ।—শক্তিমানের দিক দিয়ে দেখলে তোমাকে কিছু না বলে তোমার বইকে চাপা দেওয়া প্রায় ক্ষমা ।’ তাঁর অনুরোধে রবীন্দ্রনাথের এই প্রত্যাখ্যানের উত্তরে তিনি লিখেছেন, ‘–বাঙলা দেশের গ্রন্থকার হিসেবে গ্রন্থের মধ্যে যদি মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে থাকি , এবং তৎসত্ত্বেও যদি রাজরোষে শাস্তি ভোগ করতে হয় ত করতেই হবে—তা মুখ বুজেই করি বা অশ্রুপাত করেই করি, কিন্তু প্রতিবাদ করা কি প্রয়োজন নয় ? প্রতিবাদেরও দন্ড আছে এবং মনে করি তারও পুনরায় প্রতিবাদ হওয়া আবশ্যক । নইলে গায়ের জোরকেই প্রকারান্তরে ন্যায্য বলে স্বীকার করা হয় ।’

পথের দাবী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী ধারাকে প্রচার করলেও, অপর ধারাকে কেবল যুক্তিহীন ভাবাবেগ দ্বারা ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেন নি ।

স্বাধীনতা আন্দোলনের সব ধারাতেই তখন নেতারা ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত ছিলেন না । যদিও আগেই ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত মানবতার ঝান্ডা তুলে ধরেছিলেন প্রথম বিদ্যাসাগর । কিন্তু তারপর যখন আধ্যাত্মিক পথে হাঁটলেন বঙ্কিমচন্দ্র, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, ঠিক এই পরিবেশে শরৎচন্দ্র সম্পূর্ণভাবে আধ্যাত্মবাদ ও ঐতিহ্যবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠভাবে দাঁড়ালেন । সে যুগে বিপ্লবীরা গীতা হাতে শপথ নিতেন । ফলে, ধর্মীয় চিন্তার প্রভাব বিপ্লবীদের মধ্যেও প্রচন্ড ছিল । কিন্তু ‘পথের দাবী’তে সব্যসাচীকে দিয়ে বলালেন, সমস্ত ধর্মই মিথ্যা—-আদিম যুগের কুসংস্কার, বিশ্ব মানবতার এতবড় শত্রু আর নেই ।

ধর্মীয় চিন্তা থেকে মুক্ত না থাকার ফলে বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক ছিল সেদিন । শরৎচন্দ্রই প্রথম ‘পথের দাবী’ তে বিপ্লবী নারীচরিত্র সৃষ্টি করে দেখালেন সুমিত্রাকে । আর সেই চিন্তায় প্রভাবিত হলেন মাস্টারদা । যাঁর প্রভাবে আজ প্রীতিলতার নাম সকল মানুষের হৃদয়ে ।

বিপ্লবী কল্পনা দত্ত আর প্রীতিলতা আলোচনা করেছেন, তাঁদের মাস্টারদা কি সব্যসাচীর চেয়ে বড়, না সব্যসাচীর মতো ।

শরৎচন্দ্র এক সভায় বলেছেন সব্যসাচী চরিত্র তিনি কাউকে দেখে সৃষ্টি করেননি । অনেক চরিত্রের গুণাবলি থেকে নিয়েই তার চরিত্র । তাই ছাত্র-যুবকদের বলেছেন, আমার ইচ্ছা-আকাঙ্খা-কল্পনা তোমরা সব্যসাচী হও ।’

ভারতবর্ষের বিপ্লবীদের তথা বাংলার বিপ্লবীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র । তাঁর ‘পথের দাবী’ বিপ্লবীদের কাছে ছিল আর এক গীতা । প্রতিভাস ম্যাগাজিন | Prativas Magazine

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *