অমিতাভ সরকার

বাঁশি শুনে কি ঘরে থাকা যায়

পান্নালাল ঘোষ 

১৯৩৪ সাল। রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সের সূচনা হলো। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হলে পরের বছর সেই শিল্পী পরবর্তী বছরে এই কনফারেন্সে অনুষ্ঠান করতে পারবে- এইরকম নিয়ম ছিল। বাবাসাহেব আলাউদ্দিন খাঁ, ফৈঁয়াজ খাঁ প্রমুখ দিকপাল সঙ্গীতসাধকদের বিচারে সে’বছর প্রথম হয়েছিলেন যিনি, তাঁর নাম পান্নালাল ঘোষ। একাধারে সঙ্গীতশিল্পী অন্যদিকে শরীরচর্চাতেও তুখোড়। 

গায়েও বেশ জোর ছিল। ১৯৩৬ সালে পান্নালাল ঘোষ  ভারোত্তোলনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।   

তবে সারা পৃথিবী পান্নালাল ঘোষকে চেনে বাঁশির জন্যই।

ভারতীয় সংগীতে বাঁশিকে চিনিয়েছেন তিনি। হারমোনিয়াম তবলা সেতার এস্রাজ – এইসব বাদ্যযন্ত্রের পাশে বাঁশির আওয়াজেরও যে একটা আলাদা আবেদন আছে; ধ্রুপদী সঙ্গীতে বাঁশির ভূমিকাও যে কোনো অংশেই কম নয়, যে কোনো কনসার্টে সারেঙ্গী, সরোদ, সানাইয়ের মতো অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে বাঁশিও যে বাজানো যায়- নতুন করে সেই ভাবনা সংস্কৃতিপ্রাণ ভারতীয় জনমানসের মনের মধ্যে যিনি চিরস্থায়ীভাবে তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন, তিনি অমলজ্যোতি ঘোষ, তবে মানুষটি কিন্তু বিখ্যাত হয়ে আছেন পান্নালাল ঘোষ নামেই।

সে সময় পল্লীগীতি, লোকসঙ্গীতেই বাঁশির ব্যবহার ছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কিংবা ভারতীয় সঙ্গীতের অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে বাঁশির ব্যবহার করা যায়, সেই ধারণাও তেমনভাবে কারোর ছিল না বললেই চলে। ছোটো ধরনের  ছাড়া বাঁশির রকমফেরও সেরকম কিছু ছিল না। পান্নালাল ঘোষই প্রথম সাত ছিদ্রযুক্ত ৩২ ইঞ্চি লম্বা বাঁশের বাঁশি তৈরি করেন। ভারতীয় রাগরাগিনীতেও যে বাঁশির ব্যবহার করা সম্ভব সেটা ওঁরই দেখানো।

১৯১১ সালের ২৪শে জুলাই বাংলাদেশের বরিশালে তাঁর জন্ম। কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে ছিল তাঁর পৈত্রিক বাড়ি। মায়ের নাম সুকুমারী দেবী। পিতা অক্ষয়কুমার ছিলেন বিখ্যাত সেতারবাদক, হরকুমার ছিলেন বিখ্যাত ধ্রুপদগায়ক। মা ছিলেন ঢাকার বিখ্যাত মজুমদার পরিবারের মেয়ে, মামা ভবরঞ্জন ছিলেন সেসময়ের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী। মায়ের ভালো গানের গলা ছিল। মা সুকুমারী দেবী ছেলেকে ‘পান্না’ ডাকনামে ডাকতেন, এই নামেই সবার কাছে পরবর্তীকালে পরিচিত এবং বিখ্যাত হন।

সংগীতজীবনের শুরুটা হয়েছিল পারিবারিক পরিবেশ থেকেই। বাবা অক্ষয়কুমারের কাছেই পান্নালালের সঙ্গীত শিক্ষার প্রথম গুরু। বাবার কাছে সেতার, মায়ের কণ্ঠে ভক্তিমূলক গান -এসব তো ছিলই, এছাড়া পল্লীগীতির প্রতিও পান্নালাল নিবিড়ভাবে অনুরক্ত হয়ে পড়েন। 

কণ্ঠসঙ্গীতের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে সেতার, তবলা, পাখোয়াজ যেমন পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন, তেমনি চোদ্দ বছর বয়স থেকে বাঁশি বাজাতে শুরু করেন (শোনা যায়, ন’বছর বয়সে কীর্তনখোলা নদীতে সাঁতার কাটার সময় একটা লম্বা বাঁশ পান, যার অর্ধেকটা বাঁশির মতো, অর্ধেকটা লাঠি। বাঁশির অংশটা সাধারণ বাঁশির থেকে অনেকটা বড়। উনি এই বাঁশি দিয়েই বাজানো অভ্যাস করতেন। এছাড়া যখন ওঁর এগারো বছর বয়স, শ্মশানে একজন সাধুর সঙ্গে দেখা হলে উনি পান্নালালকে বাঁশি আর শঙ্খের মধ্যে কোনটা পছন্দ জিজ্ঞেস করলে উনি বাঁশির ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব করলে ওই সাধু পান্নালালকে আশীর্বাদ করেন। তখনই ওঁর বাঁশি নিয়ে সাঙ্গীতিক উত্তরজীবনের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে যায়, বলে কথিত আছে।) 

অনেক সঙ্গীতজ্ঞের কাছে গান শিখেছিলেন। পান্নালালের বাবা অক্ষয়কুমার সেইসময়কার বিখ্যাত বাঁশিবাদক রামপ্রসাদ ঘোষের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রথাগত তালিম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়া কলকাতায় আসার পর ছায়াচিত্র কোম্পানিতে কর্মরত থাকাকালীন অমৃতসরের বিখ্যাত হারমোনিয়ামবাদক ও ধ্রুপদীশিল্পী ওস্তাদ খুশি মহম্মদ খানের কাছে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেন। দু’বছর পর হঠাৎ গুরুজীর মৃত্যু হলে বিদেশফেরত পান্নালাল পণ্ডিত গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে আবারও গান শেখা চালিয়ে যান। তবে ওস্তাদ আব্দুল করিম খাঁ এবং ওর পিতার কাছেও তালিম নিয়েছেন। আবদুল করিম খাঁ-র প্রভাব পান্নালাল চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেছেন। সঙ্গীতের ব্যূৎপত্তির জন্য আলাউদ্দীন খাঁয়ের কাছে ১৯৪৭ সালে সঙ্গীতে তালিম নেন এবং দেড় বছর এই প্রশিক্ষণ বজায় ছিল। কিন্তু কণ্ঠসঙ্গীত, সেতার থেকে ক্রমশ বাঁশিতে প্রাণসঞ্চার করাই হয়ে উঠলো তাঁর ধ্যানজ্ঞান।  

১৯২৮ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন। কুস্তির ময়দানে মার্শাল আর্ট, লাঠিখেলা সবই শিখেছেন। 

কিশোরবয়সকালেই ব্রিটিশ পুলিশদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য কলকাতায় পালিয়ে আসেন।এইসময় টিউবওয়েলের কোম্পানি, প্রেসের কাজ- ইত্যাদি বিভিন্নভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছে। পান্নালাল ঘোষ মাত্র তেরো বছরে বিবাহ করেন বন্ধু অনিল বিশ্বাসের (পরবর্তীকালের বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক) ছোট বোন পারুল বিশ্বাসকে(১৯১৫-১৯৭৭)। এই দম্পতির সন্তান শান্তিসুধা, জামাই দেবেন্দ্র, দেবেন্দ্র-শান্তিসুধার পুত্র আনন্দও সঙ্গীতজগতে বংশীবাদকরূপে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। সাংসারিক জীবনেও পান্নালাল ঘোষ যথেষ্ট দায়িত্ববান ছিলেন। কাজের জন্য স্ত্রী-কন্যাকে সময় দিতে কখনো ভুল করেননি। 

(স্ত্রী পারুল বিশ্বাস(ঘোষ) নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বেশ নাম করেছিলেন, জোয়ার ভাটা, মিলন, হামারি বাত, নমস্তে প্রভৃতি হিন্দি চলচ্চিত্রে সাফল্যের সঙ্গে কণ্ঠদান করেছেন। ‘পাপিহা রে’ ওঁর গাওয়া চিরস্মরণীয় গান, যা দাদা অনিল বিশ্বাসের সুরে ‘কিসমত’(১৯৪৩) সিনেমায় গেয়েছিলেন।

১৯১৫ সালে বরিশালে জন্ম। মা সত্যভামা বিশ্বাস ছিলেন বিখ্যাত ধ্রুপদ গায়িকা এবং কীর্তনিয়া। গান ওঁর বংশগত ভাবে পাওয়া। অল্প বয়সেই মাকে ভজন, বাংলা গান গাইতে শুনতেন। গানের প্রতি অনুরাগও ছিল অদম্য।  

পরবর্তীকালে দাদা অনিল বিশ্বাসের সঙ্গে পারুল ঘোষ স্বামী পান্নালাল ঘোষকে নিয়ে তিরিশের দশকে কলকাতায় চলে আসেন। অনিল বিশ্বাস হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানিতে গায়ক ও সুরকার হিসাবে কাজ করতেন, পারুল ঘোষ আর পান্নালাল নিউ থিয়েটারসে সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে নিযুক্ত হন।

নিউ থিয়েটারস প্রযোজিত ‘ধুপ-ছাঁও’ চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় নেপথ্য সঙ্গীত ব্যবহারের চিন্তা নীতিন বোসের মাথায় এলে সুরকার রাইচাঁদ বড়াল নীতিন বোসের ভাই মুকুল বোসের সহযোগিতায় এই চলচ্চিত্রে কৃষ্ণচন্দ্র দে, হরিমতী, সুপ্রভা সরকারের সঙ্গে পারুল ঘোষকেও প্লে-ব্যাক করান।

মূলত ১৯৩৫ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত পারুল ঘোষ বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্রে গান গেয়ে স্বনামধন্যা হয়েছিলেন। অর্থাৎ ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম যুগের প্রথম নেপথ্য মহিলা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পারুল ঘোষ ছিলেন অগ্রগণ্যা।

হামনে তুমনে কিয়া, সুহানি বিরিয়া বিত যায়, গুনগুন গুনগুন বোলে ভানওয়ারা, তুম প্যাস বুঝানা ভুল গ্যায়ে, ম্যায় কিসকি লাজ নিভায়ু, ভুল যানা চাহতি হুঁ, উম্মিড উনসে ক্যা থি, ক্যায়সে ছুঁপায়ু – ইত্যাদি প্রচুর হিট গান পারুল ঘোষের কিন্নরকণ্ঠে আজও বিখ্যাত।

পারুল ঘোষ কিছু বাংলা চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন।  

চল্লিশের দশকে পান্নালাল ঘোষের সঙ্গে পারুল ঘোষও বোম্বে চলে আসেন; তখন বোম্বেতে বোম্বে টকিজ নবাগত সঙ্গীতশিল্পীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য অডিশন নিচ্ছিল, তাতে পারুল ঘোষ সসম্মানে উত্তীর্ণ হন। সেইসময় বোম্বে টকিজ পারুল ঘোষকে তাদের চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার জন্য মাসে ১০০০ টাকা মাইনে দিত। স্বামী পান্নালাল ঘোষকেও বাঁশি নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

দাদা অনিল বিশ্বাসের সুর এবং স্বামী পান্নালালের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘বসন্ত’(১৯৪২) সিনেমায় ওঁর গান দারুণ সাফল্য পায়। এই চলচ্চিত্রে ৮ টি একক এবং ৪ টি দ্বৈতসঙ্গীত ছিল। একে একে হামারি বাত, কিসমত, নমস্তে, মুসকুরাহাট, নাজমা, লেডি ডক্টর, ইনসান, রৌনক, প্রতিমা, ছামিয়া, পারিন্দে, সীধা রাস্তা, শান্তি, নাতিজা- ইত্যাদি চলচ্চিত্রে কণ্ঠদান করেছিলেন। অনিল বিশ্বাস ছাড়াও নৌশাদ, সি রামচন্দ্র, জ্ঞান দত্ত প্রভৃতি সুরকারদের জন্যেও গান গেয়েছেন। সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে পারুল ঘোষের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। এরপরে পারুল ঘোষ গান গাওয়া ছেড়ে সংসারে মনোনিবেশ করেন। তবে ১৯৫১ সালে ‘আন্দোলন’ চলচ্চিত্রে পান্নালাল ঘোষ ওঁকে শেষবারের মতো প্লে ব্যাক করান। সুরকার হিসাবে এই চলচ্চিত্র ছিল পান্নালাল ঘোষের শেষ ছবি। এই বছর ওঁদের ছোটো মেয়ে নূপুরের মাত্র দুবছর বয়সে গুটিবসন্তে মৃত্যু হয়। ত্রিশের অধিক চলচ্চিত্রে একশো মতো গান গেয়েছিলেন, তবে সর্বাধিক গান অনিল বিশ্বাসের সুরে। 

তবে জাগতিক সমস্ত সুখ-দুঃখ সামলে শিল্পী-দম্পতির সম্পর্কও ছিল সঙ্গীতের মতোই মধুর। ভালো রান্না করতেন, নিজের সংসার ছাড়াও পান্নালালের শিষ্যদের প্রতিও সমান আন্তরিকতা রেখে গেছেন। ওঁর হাতের খাবারও ছিল বেশ সুস্বাদু এবং প্রশংসার।

১৯৫৬ সালে পান্নালাল দিল্লি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে চলে আসেন। ১৯৬০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পারুল ঘোষ মুম্বাইয়ের মালাডে চলে আসেন। সেখানেই কাটিয়েছেন জীবনের বাকিটা।

১৯৭৫ -য়ে মেয়ে শান্তিসুধার ক্যান্সারে মৃত্যু ওঁকে প্রচণ্ড শোকগ্রস্ত করে তোলে, নিজেও এই আঘাত সামলে না পেরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। দুই ভাগ্নী অনুরাধা বিশ্বাস, মহাশ্বেতা বিশ্বাস এবং পান্নালাল ঘোষের শিষ্যরা ওঁর দেখভাল করতেন। এই অবস্থাতেই ১৯৭৭ সালের ১৩ই আগস্ট মুম্বাইয়ের মালাডে ওঁর দেহান্ত হয়। সঙ্গীতজগতে পান্নালাল ঘোষের সঙ্গেই পারুল ঘোষের অবদানও শ্রদ্ধার সঙ্গেই স্মরণ করতে হয়। পরবর্তীকালে সঙ্গীতসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরও তাঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি অ্যালবামে পারুল ঘোষের ‘পাপিহা রে’ গেয়ে এই কিংবদন্তীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন।) 

কলকাতায় এসে নিউ থিয়েটারসে সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্রী হিসাবে কাজও করেছেন। তখনো সবাক ছবির যুগ আসেনি। তবে সিনেমার সঙ্গে কনসার্ট বাজানোর প্রচলন ছিল। পান্নালাল সেখানে বাঁশি বাজাতে গিয়ে উপলব্ধি করলেন, ভারতীয় রাগসঙ্গীতে বাঁশি যেন অনেকটা ব্রাত্যই। মন থেকে একটা চেতনা দারুণভাবে কাজ করলো।  

বাঁশিকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিভিন্ন রাগরাগিণীতে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য তিন বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলেন। পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে ধনুর্বিদ্যা শিখে নিলেন। বিনিময়ে তাদের উনি ব্যায়াম শেখাতেন। ডায়মন্ড হারবার থেকে বাঁশ নিয়ে এসে একজন খেলনাদারের সঙ্গে নির্মাণ করলেন লম্বা ৩২ ইঞ্চির বাঁশি। লম্বা এই বাঁশিটাও ধরতেন আড়াআড়িভাবে। 

পান্নালালের বাঁশি মানেই তা অভূতপূর্ব নিবিড় অনুধ্যানযুক্ত সুন্দর সাঙ্গীতিক আবেদনমুখর পরিবেশের এক অনাস্বাদিত আনন্দ নির্মাণ। বাঁশিকে ঘিরেই ১৯৩৮ সালে ‘সরই-কলা-নৃত্য’ দলের হয়ে ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন। ১৯৪০ সালে বোম্বে গিয়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে জে পি আডবাণীর পরিচালনায় ‘স্নেহবন্ধন’(১৯৪০) ছবিতে প্রথম এককভাবে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই সিনেমার ‘আবরু কে কমানোঁ মে’,’স্নেহ বন্ধন মে বান্ধ হুয়ে’(খান মস্তান ও বিব্বো গানদুটো গেয়েছিলেন।) বেশ জনপ্রিয় হয়।  

এই সময় বোম্বে টকিজের ‘আনজান’(১৯৪১) সিনেমায় অমিয় চক্রবর্তীর পরিচালনায় উনি কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। ১৯৪২ সালে ‘বসন্ত’ চলচ্চিত্রের গানও বেশ খ্যাতিলাভ করেছিল।  

১৯৫২ সালে ‘আঁধিয়াঁ’ ছবিতে আলি আকবর খানের সঙ্গীত পরিচালনার রবিশঙ্করের সঙ্গে সহকারীর দায়িত্ব পালনও করেছেন। নামযশ সবই হয়েছিল, কিন্তু আর্থিক দুরবস্থা থেকেই গেছিল। কলকাতায় ফিরে ১৯৫৬ সালে আকাশবাণীতে কলিঙ্গবিজয়, ঋতুরাজ, জ্যোতির্ময় অমিতাভ ইত্যাদি বিখ্যাত অর্কেস্ট্রা তৈরি করলেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ন্যাশনাল অর্কেস্ট্রা কন্ডাকটরের কাজ ছাড়াও আনজান, নন্দকিশোর, বসন্ত, বসন্ত বাহার, মুঘল-ই-আজম ইত্যাদি কয়েকটি সিনেমার জন্য গান এবং আবহসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। পরবর্তী জীবনে এসে আকাশবাণী দিল্লিতেও সঙ্গীত নির্দেশনার দায়িত্ব সামলেছেন। 

রামকৃষ্ণ দেব, বিবেকানন্দের ভাব-আদর্শের অনুগামী ছিলেন। 

রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। হিমাংশু দত্ত, কমল দাশগুপ্ত, শচীন দেববর্মন, তারাপদ চক্রবর্তী, অসিত বরণ সবার সঙ্গেই বাঁশি বাজিয়েছেন। 

নিখিল ঘোষের তবলাবাদনের সঙ্গে পান্নালালের বাঁশির কয়েকটা ফটোগ্রাফি পাওয়া গেছে। 

হিন্দুস্থান রেকর্ডিংয়ে রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বেতারে কীর্তন গাইতে সম্মতও হয়েছিলেন। নজরুলের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে এইচএমভি, কলম্বিয়া কোম্পানি থেকে ডাক পেয়েছিলেন। নিউ থিয়েটারসের পাতালপুরী সিনেমায় অর্কেস্ট্রাবাদক সুরকার রাইচাঁদ বড়াল পান্নালাল ঘোষকে বাঁশিবাদক হিসাবে পরিচিত করান। নিউ থিয়েটারসে মাসিক ৪৫ টাকা করে বেতন পেতেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত এখানেই তৈরি হওয়া সব চলচ্চিত্রের সঙ্গীতসৃষ্টিতে উনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।  

মানুষ হিসেবেও পান্নালাল ঘোষ ছিলেন সহজ সরল। এ ব্যাপারে একটা ঘটনা শোনা যায়। কলকাতার অক্রূর দত্ত লেনে হিন্দুস্তান রেকর্ডসের স্টুডিও। গান রেকর্ডিংয়ের জন্য রিহার্সাল হচ্ছে।

একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত(সে কি ভাবে, গোপন রবে), আরেকটির সুর শৈলেশ দত্তগুপ্তের। স্টুডিওয় একজন বংশীবাদক শিল্পী নিজের কাজ করতে এসে হঠাৎ মনিটরে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পীর গান শুনে এমনই মোহিত হয়ে পড়েছেন, যে তিনি নিজে থেকে যেচে তরুণ কণ্ঠশিল্পীটির সঙ্গে বাঁশি বাজাতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। বংশীবাদক করজোড়ে বলছেন, ‘আমাকে ওই গানের সঙ্গে একটু বাজাতে দিন’। সেশন-বংশীবাদকের কাছে পরম বিনীতভাবে অনুমতি চাওয়ার পর তরুণ শিল্পীটির কাছেও সম্মতি নিয়ে সেই বংশীবাদক যেই বাঁশিতে সুর লাগালেন, অমনি গোটা স্টুডিও এক অসাধারণ সুরমূর্ছনায় ভরে উঠলো। সেশন-বংশীবাদক সেই অসাধারণ বাঁশুরিয়াকে নমস্কার করে জানালেন, ‘তারা সবাই ধন্য’। আবেগে বাকরুদ্ধ কণ্ঠশিল্পী বয়সে বড়ো হয়েও তাঁকে প্রণাম করেছিলেন। সেদিনের কণ্ঠশিল্পী ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (বর্তমান প্রজন্মের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী গানওয়ালা কবীর সুমনের পিতা), আর অবাক করা বংশীবাদক ছিলেন স্বয়ং পান্নালাল ঘোষ। গ্রামোফোনের রেকর্ডে এই বলে ছাপা হয়েছিল, ‘বাঁশিতে পান্নালাল ঘোষ’। অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রীদের ছিল অনুল্লিখিত। পাঠক-পাঠিকারা ভাবতে পারছেন, সেসময় যখন গ্রামোফোন রেকর্ডের শিরোনামে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ছাড়া কারোর নাম থাকতো না; সুরকার, গীতিকার, বাদ্যযন্ত্রীরা উপেক্ষিতই থেকে যেতেন, সেই যুগেও এই পান্নালাল ঘোষকে রেকর্ডের শিরোনামে উল্লেখ করে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে গ্রামোফোন কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরাও বাধ্য হয়েছিলেন। এটা কম গৌরবের কথা নয়। 

পান্নালাল ঘোষ প্রতিদিন ধ্যান করতেন, প্রত্যেক বৃহস্পতিবার মৌনব্রত পালন করতেন। আধ্যাত্মিকতার কারণে সন্ন্যাসী হওয়ার ভাবনাও জেগেছিল। স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য বিরজানন্দ মহারাজের কাছে পান্নালাল দীক্ষা নিয়েছিলেন।       

১৯৫৫ সালে বাবাসাহেব আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গে মাইহার কলেজ অব মিউজিক প্রতিষ্ঠা করেন। পদ্মশ্রী, সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। সঙ্গীতের বহুমুখী প্রতিভার সার্থক উত্তরসূরী প্রকৌশলী পান্নালাল ঘোষ ছয় তারের তানপুরা তৈরি করেছিলেন (যদিও অনেকে ওঁকে এই কৃতিত্ব দিতে চাননি।)। এছাড়া নূপুরধ্বনি, দীপাবলি, চন্দ্রমৌলি, আন্দোলিকা, জয়ন্ত, কুমারী, পঞ্চাবতী, শুক্লাপলাশী, হংস নারায়ণী ইত্যাদি বহু রাগ সৃষ্টি করেছেন। সুরপেটিও পান্নালালের অবিস্মরণীয় কীর্তি। এটি হারমোনিয়ামের মতো যন্ত্র,  যেখানে ব্যাগপাইপ বা সানাইয়ের পোঁ ধরার মতো বেলোর হাওয়ায় ষড়জকে সহজেই ধরা যায়। আমীর খাঁ পঞ্চাশের দশকে ছয় তারের তানপুরা ব্যবহার করতেন। সুরপেটি সেসময় অর্কেস্ট্রার সানাই-দলগুলোই সর্বাধিক ব্যবহার করতেন। 

এছাড়া ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের বিভিন্ন সংস্কারও করেছেন। খেয়াল সঙ্গীতের বাজানোয় পান্নালালের দক্ষতা ছিল অনন্য। উনি তিন সপ্তকের জন্য আলাদা তিন রকমের বাঁশি ব্যবহার করতেন। রাগের ভাব প্রকাশ তো বটেই, এছাড়া মানুষের বিভিন্ন ধরনের কণ্ঠস্বরকেও সুনিপুণ মুন্সীয়ানায় পান্নালাল ঘোষ বাঁশিতে সুরদান করতে পারতেন।

কারো কারো মতে, পান্নালাল ঘোষ দুটো আঙুলের মধ্যে অপারেশন করে গ্যাপ বাড়িয়েছিলেন। আগে ছয়টা ছিদ্র দিয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সব স্বরগুলোকে ভালোভাবে বাজানো ছিল অসুবিধাজনক। একমেবাদ্বিতীয়ম উনিই সহজাত দক্ষতাতে প্রথাগত ছয় ছিদ্রের বাঁশিতে একটা অতিরিক্ত ছিদ্রযুক্ত করে বেহাগ, বাগেশ্রী, ইমনের মীড় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুললেন। এছাড়া বাগেশ্রী, বাহার, ভৈরবী, পিলু, মারওয়া, কেদার, ভীমপলাশি, তোড়ি প্রভৃতি সিদ্ধ রাগ অসাধারণ নৈপুণ্যের সঙ্গে বাজাতেন। বাঁশি দিয়ে রাগের প্রাণসঞ্চার করানোর সূক্ষ্ম বোধ তাঁর ছিল যথেষ্টই। এই কৃতিত্ব তাঁর নিজস্ব।

ওঁর ছাত্রগোষ্ঠীও বিখ্যাত। হরিপদ চৌধুরী, আমিনুল রহমান, গৌর গোস্বামী, ফকিরচাঁদ সামন্ত, ভি জি কার্ণাড, মুকুল রায়, ত্রিভুবন গোন্দকার, রাসবিহারী দেশাই, চন্দ্রকান্ত যোশী, নিত্যানন্দ হলদিপুর, সুরজ নারায়ণ, দেবেন্দ্র মুরুদেশ্বর(পরবর্তীকালে এঁর সঙ্গে পান্নালালের মেয়ে শান্তিসুধার বিবাহ হয়, সেইসূত্রে উনি বাঁশুরিয়া পান্নালালের জামাই)। বিখ্যাত তবলিয়া নিখিল ঘোষ ছিলেন পান্নালাল ঘোষের নিজের ভাই। 

শিল্পীর আর্থিক সমস্যার খবর পেয়ে তৎকালীন ভারতের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী বালসাহেব বিশ্বনাথ কেসকার পান্নালাল ঘোষকে চাকরি দিয়ে দিল্লিতে নিয়ে এসেছিলেন। শোনা যায়, কেসকার

যখন তাঁর বাড়ি এসেছিলেন, পান্নালালের তখন কেসকারকে এক কাপ চা দিয়েও অভ্যর্থনা করার সামর্থ্য ছিল না। সঙ্গীতের জাতীয় কার্যক্রমে যুক্ত করতে সেই সময় একজন মন্ত্রী একেবারে সশরীরে শিল্পীর বাড়িতে চলে এসেছেন, এটা সেইসময়ে ছিল যথেষ্ট গৌরবের ব্যাপার। সেইসময় কেশকরের মনে হয়েছিল, চিত্রগীতির আগ্রাসনের ক্রমবর্ধমান দাপট রোধ করার জন্য আকাশবাণীর নিজস্ব উদ্যোগে রাষ্ট্রের খরচ থেকে প্রত্যেক কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রাদেশিক আঞ্চলিক ভাষায় কিছু আধুনিক গান তৈরির প্রচলন ঘটানোর আশু প্রয়োজন। এটা তিনি করেও দেখিয়েছিলেন।

বাংলায় এভাবেই রম্যগীতি শুরু হয়- রম্যগীতির হাত ধরে অসামান্য সব গানের জন্ম হয়েছিল। 

শোনা যায়, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ এই রম্যগীতি বিভাগেই কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পান্নালাল ঘোষকেও রম্যগীতির উৎকর্ষসাধনে নিযুক্ত করার ইচ্ছা কেসকরের ছিল। কিন্তু পণ্ডিত পান্নালাল ঘোষের অকালে চলে যাওয়ার সঙ্গে সেই সম্ভাবনা অচিরেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েও উনি সঙ্গীতকর্ম চালিয়ে গেছেন। অসুস্থ শরীর নিয়েও ভ্রুক্ষেপ করেননি সঙ্গীতপ্রেমীদের দুর্ভাগ্য যে, এই ‘বঙ্গাল কা শের’(বড়ে গোলাম আলি পান্নালাল ঘোষকে এই নাম দিয়েছিলেন) এই প্রাণঘাতী অসুখেই(মতান্তরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে) মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৬০ সালের ২০শে এপ্রিল দিল্লিতে মারা যান। 

সেইসময়টায় বাংলা-হিন্দি চলচ্চিত্রে ভালো ভালো গান তৈরি হচ্ছে, বাংলা বেসিক গানে এসেছে রম্যগীতির যুগ। সুর তৈরি করছেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, ভি বালসারা, পান্নালালের নিজের ভাই নিখিল ঘোষ। নিখিল ঘোষের তবলাবাদনের সঙ্গে পান্নালালের বাঁশির কয়েকটা ফটোগ্রাফি পাওয়া গেছে। 

যে সময়টা তাঁকে বেশি করে দরকার ছিল, তখনই তিনি চলে গেলেন, তাঁর ডাকাতিয়া বাঁশির সুরে আচ্ছন্ন করে রেখে গেলেন আগামী পৃথিবীকে – বুঝিয়ে গেলেন বাঁশি দিয়েও অন্তরের প্রেমের সাধনাকে মূর্ত করে তোলা যায়, যা সুর হয়ে প্রাণে বাজে, অনুরণিত হয় ভাবের স্বাদে-বিস্বাদে- এ সাধনার কোনো শেষ নেই। জন্মের শতবর্ষ পেরিয়ে কিছুটা বিস্মৃতপ্রায় হলেও পান্নালাল ঘোষ তাই অমর। পান্নালাল ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ওঁর সাঙ্গীতিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। পরবর্তীকালে ওঁর কিছু গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। পান্নালাল ঘোষের রচিত সঙ্গীত, রেকর্ডিং এবং তার সংরক্ষণ আজ যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। 

যতদিন বাঁশি থাকবে, বাঁশির সুরে মুগ্ধ হবে বিশ্ববাসী, ততদিন শ্বাসের মূর্ত যাদুকর পান্নালাল ঘোষও বেঁচে থাকবেন সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মনে। এত বিবিধ সুরের এই বিস্ময়কর ব্যতিক্রমী সঙ্গীতসাধকের বিচিত্র ধরনের আবেশ জড়ানো বাঁশি শুনে লতা মঙ্গেশকর আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই সময়ের সব বিখ্যাত সঙ্গীতসাধকদের সঙ্গেই পান্নালাল ঘোষ বাঁশি বাজিয়েছেন। ফৈয়াজ খাঁ, পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, ভীমসেন যোশী, বেগম আখতার থেকে রাধাকান্ত নন্দী,  মান্না দে, সুরশ্রী কেশরবাঈ কেরকার সবাই যেমন ওঁর গানের গুণগ্রাহী ছিলেন, তেমনি ওস্তাদ আমির হোসেন খাঁ, আল্লারাখা প্রভৃতিরাও ওঁর তালজ্ঞানের প্রশংসা করেছেন। 

রাগসঙ্গীতে বাঁশির ব্যবহার করা নিয়ে সমকালে বিতর্কের সম্মুখীনও হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ পান্নালাল ঘোষের জন্মের একশো বছর পরেও এই ক্ষণজন্মা স্রষ্টাকে ভোলেনি। তাহলে ইছামতীর এ পারের চটুল বাকসর্বস্ব, ঐতিহ্যের বৃথা আড়ম্বরপ্রিয়, মূঢ়, আস্ফালনকারী ভুলোমনা বাঙালিরা সে জায়গায় ভারতীয় সঙ্গীতের প্রাণভোমরা এই অবাক ‘বাঁশি’কে কি সত্যিই ভুলেই থাকবে? প্রতিভাস ম্যাগাজিন | Prativas Magazine

তথ্যসূত্র:

১.‘বাঁশির যাদুতে হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি, বাঙ্গাল কা শের পান্নালাল ঘোষকে কি আদৌ মনে রেখেছি আমরা’, সোমনাথ শর্মা, প্রহর ওয়েবজিন

২. সুমনামি, কবীর সুমন,

৩. মেহফিল মে মেরি -আয়েভি ওহ গায়েভি ওহ- পারুল ঘোষ

৪. সববাংলায়- পান্নালাল ঘোষ

৫. বঙ্গাল কা শের- (ডেইলি স্টার বাংলা) – মহম্মদ আল-মাসুম মোল্লা 

৬. গুগুল

বিভিন্ন অন্যান্য জায়গা থেকে প্রাপ্ত সাঙ্গীতিক ঋণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *