মানস সরকার

(১)

কুমারেশ চৌধুরীর নাম আগে শুনেছিল। এখন সামনে থেকে দেখে অবাক হল অর্চন। সাধারণত শিল্পী বলতে যে রকম ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, একেবারেই ইনি তা নন। তোবড়ানো গাল, মুখে ঘন দাড়ি, রোগাভোগা চেহারা, উস্কোখুস্কো চুল বা কুঁচকে যাওয়া পাঞ্জাবি – কোনও চিহ্নই এনার মধ্যে চোখে পড়ল না। প্রতি নমস্কার করে সামনের ছোট রিভলভিং-এ হাত দেখিয়ে বসতে বলল। বাঁ দিকে সিঁথে করে আঁচড়ানো চুল, নিট অ্যান্ড ক্লিন শেভিং আর গুঁজে পরা ফুল হাতা জামা-প্যান্টে বরং বেশ একটা করপোরেট লুক। চেয়ারে কুমারেশ বসতে নাকে সুন্দর সুগন্ধও ভেসে এল। এত সাজানো গোছানো মানুষ। অথচ চোখের প্রবল অস্বস্তি পড়তে পারছিল অর্চন। পনেরো বছরের প্র্যাকটিশে সে ইতিমধ্যেই সাইকোলজিস্ট হিসাবে নিজের নাম এ শহরে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। অথচ সে সবে চল্লিশ। আয়নায় নিজেকে দেখলে স্পষ্ট বুঝতে পারে তাকে আসলে দেখতে লাগে তিরিশ। মনের চিকিৎসা করতে গিয়ে সে শুধু নিজের মন নয়, শরীরকেও তরতাজা রেখেছে। অর্চনের পাশের চেয়ারে এসে নিঃশব্দে বসল মৌমি। ওর সেক্রেটারি। পাস করে ইনটার্ন করছে অর্চনের কাছেই। কোলে ল্যাপটপটা বসিয়েছে বাধ্য শিশুর মতো। কি বোর্ডে হিরের ঝলকানি ছড়িয়ে মাখন আঙুলগুলো তিরের মতো ছুটবে পেশেন্টের কেস-হিস্ট্রি লোড করার জন্য। – “বলুন, মিঃ চৌধুরী, ঠিক কীভাবে আপনার সাহায্যে আসতে পারি”, মোলায়েম স্বরে আশ্বাসবাণী কুমারেশের দিকে ছুঁড়ে দিল অর্চন।

(২)

অন্যদিকে এক সেকেন্ড তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন কুমারেশ, – “আমি একজন সাধারণ মানুষ হলেও শিল্পী হিসাবে আমার একটু নাম ডাক আছে।” নিঃশব্দে ঘাড় নেড়ে সমর্থন করল অর্চন। – “শিল্পী হিসাবে আমার বিশেষত্ব হচ্ছে, আমি ‘প্রোট্রেট’ মানে মানুষের প্রতিকৃতি… মুখ আঁকি। প্রতি সেকেন্ডে আজকের পৃথিবীতে যেখানে শয়ে শয়ে সেলফি ওঠে, মানুষ নিজেদের মুখ আঁকানোর জন্য আমাকে ডাকেন। তবে বিখ্যাত মানুষেরা। আমরা যাদেরকে ভি.আই.পি. বলি।” সৃষ্টিশীল মানুষেরা সাধারণত নিজেদের বক্তব্য খুব একটা গুছিয়ে বলতে পারেন না। এঁর বলার ভঙ্গীমা বেশ আকর্ষক। কিন্তু টানা বলতে দিলে হবে না। জরুরী প্রশ্নগুলো এই ফাঁকেই সেরে রাখতে হয়। সেই অনুযায়ী মৌমি নোট নেয় ল্যাপটপে। সিটিং-এ পেশেন্টের সঙ্গে বসার আগে এই তথ্যগুলোতেই চোখ বুলিয়ে নেয় নিজে। কুমারেশকে বাধা দিল অর্চন, – “এটাই নিশ্চই আপনার পেশা?” – “না, এ ছাড়াও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে ডেকে পাঠানো হয় মাঝে মধ্যে। ওঁদের বর্ণনা অনুযায়ী কিছু অপরাধীর মুখ এঁকে দেবার জন্য,” সামান্য হাসলেন কুমারেশ, – “সামাজিক দায়বদ্ধতা।” – “একটা অনুরোধ করব আপনাকে। বেস্ট রেজাল্ট পেতে আমরা সবসময় বলি, আপনারা কিন্তু তথ্য লুকিয়ে যাবেন না। গেলে আমাদের অ্যাডভাইস অনেক সময় অ্যাকুরেসি মেনটেন করতে পারে না। একটু মনে রাখবেন প্লিজ। হ্যাঁ, তারপর?” অনেকগুলো বাঁধা বুলির একটা আউড়ে নিল অর্চন। – “সেটা বুঝতে পারছি। আমি আপনাকে পুরোটাই বলব। কিন্তু এখানে এমন কিছু মানুষ জড়িয়ে আছেন, ওঁদের নাম নিতে পারব না।” একটু কুঁচকে গেল কুমারেশের মুখটা। সহজ গলায় অর্চন বলল, – “বেশ। আপনি বলুন।”

(৩)

– “এমনিতে সব ঠিকঠাকই চলছিল। মানে, করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত। লক-ডাউন মেটার পর কাজে ফিরতেই দেখলাম, নিজের মধ্যে একটা সাংঘাতিক পরিবর্তন ঘটে গেছে।” – “পরিবর্তন! আপনি নিজে বুঝতে পারলেন, আপনার মধ্যে পরিবর্তনটা ঘটে গেছে?” – “হ্যাঁ, তবে আপনি পরিবর্তন না বলে সেটাকে যদি আমার কোনও মানসিক রোগ বলেন, তবে তাই হল।” প্রেসক্রিপশন প্যাডের উপর ডটপেনটাকে ক্লকওয়াইজ আঙুল দিয়ে অনবরত ঘোরায় অর্চন। পেশেন্টের সঙ্গে কথা বলার সময় এটা ওর অভ্যেস। করলে মনঃসংযোগ বাড়ে। সে ভাবে ঘোরাতে ঘোরাতেই বলল, – “আচ্ছা, কী পরিবর্তন ঘটল?” এক সেকেন্ডের জন্য চোখ দু’টো বুজেই আবার খুলে ফেললেন কুমারেশ, – “লকডাউনের সময়েই পোট্রেট আঁকার ব্যাপারে কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সেই মতো কাজও শুরু করলাম। এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি। অন্যরা যে ভাবে আঁকে, তাদের থেকে আমি একটু আলাদা। সাধারণত, যিনি প্রোট্রেট আঁকাবেন, তিনি আমার মেলে ওঁর একটা হাফ বাস্ট ছবি পাঠিয়ে দেন। আমি ছবিটাকে দিন দুয়েক অবজার্ভ করি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ক্যানভাসে তার বেসিক ফর্মটা এগিয়েও রাখি। এরপর ক্লায়েন্ট চাইলে তাকে সামনে এনে বসিয়ে কাজ শেষ করি। না হলে ওই ফটো অনুযায়ী কাজ প্রায় শেষ করে, কাজের একটা নমুনা ছবি তুলে রিটার্ন মেল করি।” গলাটা অল্প খাঁকড়ে নিয়ে অর্চন প্রশ্ন করল, – “‘প্রায়’ মানে?” – “ওই ফাইনাল টাচ দেওয়ার আগে কনসেন্ট বলতে পারেন।” – “বুঝলাম।” – “সব সমস্যা হল এখানেই। একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা। মাফ 

(৪)

করবেন, দলের নামটা বলতে পারব না। তিনি আমাকে দিয়ে আঁকানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে একটা ফটো সেন্ড করেছিলেন। কাজটা একদম ঠিকঠাক এগিয়েছিল। ফাইনাল করার আগে পাঠালে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে আমাকে ফোনও করেছিলেন। ফাইনাল টাচ দিতে গিয়ে বুঝলাম সব শেষ।” – “শেষ!” পেন ঘোরানো বন্ধ করল অর্চন। – “হ্যাঁ শেষ। ভাল করে তাকাতে দেখি ওঁর মুখটা একটা কেউটে সাপের হয়ে গেছে।” চাপা শ্বাস ফেললেন কুমারেশ। – “হ্যাঁ, হতে পারে অবচেতনে ওটাই আপনি এঁকেছিলেন।” নিজের সিংহাসনের মতো রিভলভিং-এ পিঠ রেখে হেলান দিল অর্চন। মৃদু প্রতিবাদ করে উঠলেন কুমারেশ, – “তা কী করে হবে। আমার স্ত্রী, অ্যাসিসট্যান্ট বা মেয়ে তারা কিন্তু আমার কাজ দেখে বলেছে খুব অ্যাকিউরেট।” – “আবার যখন দেখলেন, তখনও কি একই জিনিস দেখলেন?” – “প্রতি বার। এমনকী দিনে বা রাতের আলাদা আলাদা সময়েও পরীক্ষা করে দেখেছি, একই রকম দেখছি।” প্রফেশনে প্যাশনের লেভেলটা শুরু থেকে আজও একইরকম আছে অর্চনের। প্রতিটা কেস এখানে আলাদা। তাদের বিহেবিহার প্যাটার্ন আলাদা। রিসার্চ চলছে মৌমির। বার বার এ কথাটা ওকে বোঝায়। কুমারেশকে বলল, – “তারপর?” – “প্রথমে মনে হয়েছিল, এটা একসেপশনাল। ফলে পরের যে অফারটা ছিল, সেটায় হাত দিই।” নিজের হাতঘড়িটা একবার দেখে নিয়ে জানতে চাইল অর্চন, – “অফার?” – “হ্যাঁ, ইনি একজন তাবড় সরকারি অফিসার। খুব বড় আমলা। রাজ্য কি কেন্দ্রীয় জানতে চাইবেন না। তো ইনিও নিজের ফটো পাঠিয়ে আমাকে দিয়ে ছবি আঁকানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তা ধরলাম ওঁর কাজটা। এবার ওঁকে পাঠানোর আগেই দেখি আমার চোখে সে মুখ পুরো একটা বলদের হয়ে গেছে।”

(৫)

– “বলদ!” – “হ্যাঁ। কাজ বন্ধ করতে হল।” – “এবং আপনি আমার কাছে ছুটে এলেন। তাই তো?” – “না”, বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কুমারেশকে, – “হতাশ না হয়ে আবার চেষ্টা করলাম।” উৎসাহটা জাঁকিয়ে বসছিল অর্চনের উপর। চেয়ারের দু’হাতলের উপর কনুই রেখে হাতের তালু দু’টো ঘষে নিয়ে বলল, – “এবার কী করলেন?” – “এবার আমি নিজেই দু’জনকে অফার দিলাম। একজন আমার পাশের পাড়ায় থাকে। বেশ কম বয়স। স্টার্ট আপ বিজনেস-ম্যান। টাকা পয়সার ডিল হল না। কিন্তু দু’জনেই রাজি হয়ে গেল নিজেদের ছবি আঁকাতে।” – “আর অন্যজন?” – “একজন চিত্র পরিচালক। ইয়ং। কিন্তু নিজের ফিল্ডে ইতিমধ্যেই বেশ নাম করেছে। চারপাশে অসংখ্য উঠতি নায়িকা ঘুরে বেরায়।” – “তা আঁকলেন এই দু’জনের প্রোট্রেট?” – “হ্যাঁ। একটা নেশা চেপে গেসল ততদিনে। আমিও দেখতে চেয়েছিলাম, এদের মুখ আমার হাতে কী আসে।” – “কী এল?” – “স্টার্ট আপ বিজনেসম্যান ইঁদুর আর ফিল্ম ডিরেকটর হয়ে গেল কুকুর”, হতাশায় মাথা নাড়লেন কুমারেশ। চেম্বার জুড়ে নিস্তব্ধতা। দ্রুততার সঙ্গে ল্যাপটপের কি-বোর্ডে আঙুল চলছে মৌমির। তার শব্দ আসছে। শীত শীত করছে অর্চনের। রিমোট টিপে এসির তাপমাত্রা দু’ডিগ্রি বাড়িয়ে দিয়ে অর্চন বলল, – “একটা কথা বলুন মিঃ চৌধুরী। যাদের ছবি আঁকতে চেষ্টা করলেন, তারা সবাই কোনও না কোনওভাবে এ সমাজে পরিচিত। কোনও সাধারণ মানুষ, মানে যাঁর সে ভাবে আইডেন্টিটি নেই, তার ছবি 

(৬)

আঁকতে চেষ্টা করেছেন আপনি?” – “হ্যাঁ, সে চেষ্টাও করেছি। আমার পাড়াতেই থাকে একটা ফ্যামিলি। মধ্যবিত্ত। সাতে-পাঁচে থাকে না। ছেলেটা বউ আর ছেলেকে নিয়ে থাকে। প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি করত। লক-ডাউনের পর চাকরি গেল। আমিই বলে কয়ে একটা মলে চাকরি করে দিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে একটা সেলফি তুলেছিল। তা সে ছবি দেখে আঁকার চেষ্টা করেছিলাম ওর মুখটা।” – “পারলেন?” – “না, ওর মুখটা একটা পিঁপড়ে হয়ে গেল।” কপালের শিরা ফুলে গেল কুমারেশের। মুখ লাল। সামনে ঝুঁকে টেবিলের চাপা দেওয়া জলের গ্লাস এগিয়ে দিল কুমারেশের দিকে অর্চন, – “রিল্যাক্স। সব ঠিক হয়ে যাবে।” জলে চুমুক দিতে মুখের শান্ত ভাবটা ফেরত এল কুমারেশের। চোখ তুলে একটু উদাস গলায় জানতে চাইলেন, – “আমার শিল্পী সত্তা কি আমাকে ছেড়ে চলে গেল ডক্টর? এত খাটনি… সব কি জলে যাবে…” – “আপনাকে বলছি না, মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার। আমাকে একটা কথা বলুন, লক ডাউনের সময় কি আপনি নিজেকে সবার থেকে খুব বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন?” একটু সময় নিয়ে ভাবলেন কুমারেশ। তারপর বললেন, – “তা তো করেই ছিলাম। না করে উপায়ও ছিল না। তা ছাড়া শিল্প সৃষ্টির জন্য নিজেকে একটু একা করতেই হয়।” – “কোনও ভয় বা ফিয়ার ফ্যাক্টর কাজ করে আপনার মধ্যে?” – “সাকসেস তো সবার মধ্যেই ফিয়ার তৈরি করে। আপনি ভাল বলতে পারবেন। তবে কী বলব, একটা অবসাদ যেন ভেতরে থাকতই। কেন হত বলতে পারব না।”

(৭)

– “কোনও ক্লিনিকে বা কারোর সঙ্গে এ নিয়ে কনসাল্ট করেননি?” – “এত গভীরভাবে তো ভাবিনি। এ রকম শুরু হতেই আপনার কাছে আসা। আপনি এই মুহূর্তে বেস্ট এ শহরে।” মৌমির দিকে ফিরে ইশারা করতে, ল্যাপটপ টেবিলে চলে আসে। টাইপ করা অংশে একবার হালকা করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্চন বলল, – “মিঃ চৌধুরী, এই যে ভয়ের কথা আপনি বললেন না, এখান থেকেই আপনার ডিসঅর্ডার বা ব্যাধির সৃষ্টি। এর সিমটম হচ্ছে, আপনার হ্যালুশিনেশন অর্থাৎ আপনি যা দেখছেন এখন। আমাদের ভাষায় এটাকে আমরা ‘পিটিএসডি’ বলি – পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস অর্ডার। তবে সুখবর এটাই, আপনি এখনও ইনিশিয়াল স্টেজেই আছেন।” কুমারেশের মুখটা বেশ ঝলমলে হয়ে উঠল, – “সলিউশান?” – “সলিউশন আমি আপনাকে দু’রকম দেব। একটা প্রথা মেনে আর অন্যটা প্রথার বাইরে গিয়ে। আয়াম সিওর, আপনি রেজাল্ট পাবেন। তবে আপনাকে তিন-চারটে সিটিং-এ বসতে হবে আমার সঙ্গে। এবং সেটা বেশ কিছুটা টাকা খরচ।” – “খরচটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। আমাকে সুস্থ করে তুলুন।” কুমারেশকে দেখে মনে হচ্ছিল আত্মবিশ্বাসটা ফেরত আসছে। অর্চন খুশি হল। বলল, – “যে কাউন্সিলিং নিতে আমার কাছে আসছে, এই আত্মবিশ্বাসটা থাকলে, কাজটা ফিফটি পার্সেন্স এগিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মেডিটেশন মেন থেরাপি। এ ছাড়া আই মুভমেন্ট ডিস্যানিটাইজেশন বা রেসপন্স প্রিভেনশনের মতো ট্যাকটিসের হেল্পও আমরা নিই। এতে আপনি যে লক্ষণগুলো বললেন, সবটাই কমে আসবে। প্রথম ধাপে আপনাকে রোজ বেশি নয়, দশ মিনিট করে মেডিটেশন করতে বলব। আমি সিওর আপনার উদ্বেগটা অনেক কম লাগবে।” কৃতজ্ঞ গলায় কুমারেশ বললেন, – “সো কাইন্ড অফ ইউ। আর কিছু?” – “হ্যাঁ, এখন অন্যের পোট্রেট করা বন্ধ রাখুন কিছুদিন। পারলে নিজের করতে পারেন। কিন্তু অন্যের নয়।”

(৮)

# # # দু’টো দিন চেম্বার বন্ধ অর্চনের। ও আর মৌমি চলে এসেছে ফলতার একটা রিসর্টে। দু’দিন এখন এখানেই কাটাবে। বাড়িতে অনিতাকে কনফারেন্সের কথা বলে এসেছে। বউ হিসাবে অনিতার তুলনা হয় না। একটা ফোন পর্যন্ত করে ডিসটার্ব করে না। বিছানায় শুয়ে আছে মৌমি। ওকে কথা দিয়েছে অর্চন, ডঃ গুপ্ত’র সঙ্গে কথা বলে এ মাসের শেষেই রিসার্চ পেপারটা অ্যাপুভ করিয়ে দেবে। বাথরুমে ঢুকল মুখ হাত পায়ে জল দেবার জন্য। অনেকক্ষণ আদর করেছে মৌমিকে। গরম করছে। আলো জ্বেলে আয়নার দিকে তাকাতেই আঁতকে মেঝেতে পড়ে গেল অর্চন। দৌড়ে ওর কাছে এল মৌমি। – “কী হয়েছে?” ঠক ঠক করে আধশোয়া অবস্থাতেই কাঁপছিল অর্চন। কোনওক্রমে বলল, – “জোঁক, জোঁক হয়ে গেছে আমার মুখটা।” অনেক মাইল দূরে কুমারেশ তখন আর একটা ক্যানভাস ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। তিনি নিজের মুখ আঁকতে চেয়েছিলেন। ঘুঘুর নয়। বাড়ির কার্নিসে যে দোয়েল পাখিটা বসে আছে, গান গাইছে, শুনে মনে হচ্ছে কোনও মানুষ গাইছে। পাখিটাই আঁকবেন উনি। এবং উনি নিশ্চিত যা আঁকতে চাইছেন, তা এবার ফুটিয়ে তুলতে পারবেনই…  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *