মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস
পর্ব – ২৭
আমাদের ডাঙ্গাপাড়ার বাড়িতে নানা সময়ে নানা পোষ্যর আগমন ঘটে আমাদের জীবনকে আনন্দ -দুঃখের বাঁধনে বেঁধেছিল। আমার একদম ছোটবেলায় কিছু মুনিয়া পাখি বাবা কিনে দিয়েছিল। তখনও আমরা ডাঙ্গাপাড়ায় আসিনি। রাস্তার উল্টোদিকে বাবুন কাকাদের বাড়িতেই থাকতাম। সেই মুনিয়া পাখিগুলোর চেহারা আমার এখন একটুও মনে নেই। ওদের সাথে বেশিদিন ঘর করাও হয় নি কারণ আমি নিজেই মুনিয়া পাখিগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বায়না করাতে বাবা উড়িয়ে দিয়েছিল। ছোট্ট থেকেই দেখে আসতাম ডাঙ্গাপাড়ার বাড়িতে দাদুর তত্ত্বাবধানে বেড়াল কুকুরের সহবস্থান। এরা কেউই যে সারাদিন বাড়িতেই থাকতো এমন নয়, কিন্তু এরা নিয়মিত সময়ে সময়ে খাবার খেতে আসতো এবং নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করত। কিন্তু অবাক কান্ড এটাই যে কুকুর বিড়ালের মধ্যে যে টম জেরি ব্যাপারটা থাকে সেটা এদের মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিত ছিল।
আমার বাবার এক সব সময়ের সঙ্গী কুকুর ছিল। সেটা অবশ্য আমার জন্মের আগের কথা। তাকে নেড়ি কুকুরই বলা যেতে পারে। কিন্তু বাবার আদর যত্নে সেটি যথেষ্ট হৃষ্টপুষ্ট ছিল। এর নাম ছিল টম। এই টমের অনেক গল্প আমি পরে বাবার কাছে শুনেছি। বাবা যেখানে যেখানে যেত টম বাবার পেছনে পেছনে ছুটতো। তাই জন্য বাবা যখন কোন রোগীর বাড়িতে কলে যেত তখন টমকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজায় শিকল দিয়ে যেত। তা সত্ত্বেও কখনো যদি সুযোগ পেতো, কেউ যদি সেই দরজা খুলে দিত টম ঠিক বাবার গন্ধ শুঁকে শুঁকে আশেপাশে বাবাকে খুঁজে খুঁজে চলে যেত।
একবার হয়েছে কি বাবা নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে নৃসিংহপুরে রোগীর বাড়িতে গেছিলেন। কালনাই তখন পুরো দস্তুর শহর হয়ে ওঠেনি আর নৃসিংহপুর তো বলতে গেলে গ্রামই ছিল। সেই সময়ে সেখানে ডাক্তারের অভাব ছিল এবং ডাক্তার দেখাতে হলে সেখানকার মানুষজনকে হয় নদী পেরিয়ে কালনায় আসতে হতো অথবা শান্তিপুর কৃষ্ণনগরের দিকে যেতে হতো। এরকমই এক সময়ে বাবা কোন একটি বাড়িতে নিয়মিত অসুস্থ একজন মানুষকে দেখার জন্য যেত। সেরকমই একদিন বাবা টমকে দরজা বন্ধ করে কাজে গেছিল নৌকা পেরিয়ে।
রোগীর বাড়ি ঘাটের কাছাকাছিই। পাড় না বাঁধানো নদীর ধার থেকে বালি মাখা সামান্য পথ হাঁটলেই তাদের উঠোন।
রোগী দেখে রোগীর বাড়ির বারান্দায় বসে বাবা তাদের সাথে কথা বলছে এমন সময় ঝপ করে কে কোলে লাফ দিল! যারা খেয়াল করেছিল তারা বলল, কুকুরটা নদীর দিক থেকে ছুটতে ছুটতে এসেছে। বাবাকে খুঁজে পেয়ে আহ্লাদিত টম তার বালিকাদা মাখা শরীরটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাবার কোলে। এটা অদ্ভুত হলেও ঠিক যে কোনভাবে ছাড়া পেতেই টম গন্ধ শুঁকে সাঁতরিয়ে গঙ্গা পেরিয়ে এসে পৌঁছেছিল। আমার জন্মের আগেই সে মারা গেছিল। ওর গল্প আর ছবিই থেকে গেছে।
কিন্তু কখনই আমাদের বাড়িতে পোষ্যের কোন অভাব ছিল না। বিড়াল এবং কুকুরদের আনাগোনা বাড়িতে লেগেই থাকতো। আগেও বলেছি, আমার দাদুর কুকুর এবং বেড়াল না হলে চলত না। ওদের জন্য ‘এস’ বিস্কুট পকেটে নিয়ে ঘুরতেন।
দাদু অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের খাতির কমেনি। কুকুরগুলো রাস্তাতে থাকলেও দুবেলা খাবার খেয়ে যেত। বিড়ালদেরকে আটকে রাখা না হলেও ওরা কয়েকজন বেশ ঘাঁটি গেড়ে থাকত ঘরে। তাদের মধ্যে পটকার কথা আগেই বলেছি। ও ছিল আমার সব চেয়ে প্রিয়। তবে ও যখন আসে তখন আর আমি ছোট ছিলাম না। কলেজে উঠে গেছিলাম। মলি বলেও খুব আদরের একটা বিড়াল ছিল। তাছাড়া আরও অনেক হুলো মেনি আর তাদের ছানাদের আনাগোনা লেগে থাকত। আমাদের বাড়ি ছাড়াও ওরা প্রশ্রয় পেত মৃত্যুন (মোদক) জেঠার বাড়ি আর ঝুমাদের বাড়িতে। ঝুমা এখনও বিড়ালদের খুব যত্ন করে।
ওরা পাঁচিল টপকিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি যাতায়াত করত। আমাদের উঠোনে একটা কুয়ো ছিল। সেই কুয়োর উপর দিয়ে ওরা লাফিয়ে ময়রা বাড়ি চলে যেত। কখনো আমাদের রান্নাঘরের চালে রোদ পোহাতো। উঠোনের মাঝখানে কুয়োটা উঁচু করে বাঁধানো ছিল এবং দুপাশে থামের মাঝে চওড়া কাঠের তক্তার সাথে কপিকল, কপিকলে দুলতো দড়ি আর তাতে বাঁধা এলুমিনিয়ামের বালতি। বিল্লিগুলো টুকটুক করে কুয়োর ওপরে উঠে কপিকলের কাঠ বেয়ে পাশের পাঁচিলের উপর লাফিয়ে উঠে যাতায়াত করতো।
মাঝে মাঝে কি জানি কেমন করে যেন ব্যালেন্স হারিয়ে কেউ না কেউ দুম করে কুয়োর মধ্যে পড়ে যেত। দিনের বেলায় যদি সেরকম ঘটনা ঘটতো তাহলে আমাদের তৎক্ষণাৎ নজরে পড়তো এবং নজরে পড়লে ওদেরকে তোলার ব্যবস্থা করতে হতো। কিন্তু যদি রাতের বেলায় এরকম হতো কখনো তাহলে তো ভয়ানক মুশকিল হতো। কোন কোন দিন রাতের বেলায় ক্রমাগত বিড়ালের ম্যাও ম্যাও শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমাদের আন্দাজ করতে হতো যে কেউ না কেউ বোধহয় কুয়োতে পড়ে গেছে। তখন আলো জ্বালিয়ে নেমে আসতে হতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টর্চ মেরে দেখা যেত ঠিক ওর মধ্যে একটি মাথা ভাসছে। জলের মধ্যে ভেসে থাকার চেষ্টা করত কিন্তু বেশিক্ষণ পারত না। তাই বাঁচার জন্য ক্রমাগত চিৎকার করতে থাকতো। সাঁতরে সাঁতরে হাঁপিয়ে কুয়োর রিংগুলো ধরে ভাসার চেষ্টা করতো। কিন্তু শ্যাওলা ধরা রিঙের থেকে নখ ফসকে যেত। তাড়াতাড়ি তাকে উদ্ধার করার জন্য নানা ব্যবস্থা নিতে হতো। প্রথমে বালতি নামিয়ে দিতে হতো। বেশির ভাগ সময় দেখা যেত বালতিটাকে ধরে ওরা শরীর ভাসিয়ে দিত, তখন ধীরে ধীরে কপিকলের সাহায্যে টেনে টেনে বালতিকে তুলে আনতে হতো। কখনও ছোট্ট ছোট্ট ক্লান্ত হাত ছেড়ে গিয়ে আবার ঝুপ করে পড়ে যেত। ফলে আবার বালতি নামতে হতো। বালতি যেই ধীরে ধীরে ব্যালেন্স করে করে ওপর পর্যন্ত উঠিয়ে আনা হতো তখনই লাফ মেরে বালতি থেকে একেবারে উঠোনে নেমে ভিজে বিড়াল পগার পার হয়ে যেত। অবশ্যই বাবাকেই ওদের উদ্ধারকর্তা হিসাবে অবতীর্ণ হতে হতো বারবার।
কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এই যে অনেক সময় শীতের গভীর রাতে ওদের কেউ যদি কুয়োতে পড়ে যেত কেউ তাহলে আমাদের জানালা দরজা বন্ধ থাকার কারণে করুণ কান্না আমাদের কানে পৌঁছাতো না। কোন কোন দিন সকাল বেলায় উঠে আমরা কুয়েতে বালতি ফেলতে গিয়ে দেখতাম বিড়ালের নিষ্প্রাণ দেহ ভাসছে। খুব মন খারাপ হয়ে যেত।
যখন আমাদের বাড়িতে মিউনিসিপ্যালিটির কলের লাইন আসেনি তখন এইভাবে হঠাৎ বিড়াল মারা পড়লে সকালবেলা থেকে জল ব্যবহারের প্রচুর অসুবিধা তৈরি হতো। বিড়ালের মৃতদেহকে তুলে, সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করে ফিটকিরি চুন এইসব দিয়ে জলকে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হত। এক বেলা জল ব্যবহার করা বন্ধ রাখতে হত এবং ততক্ষণের জন্য কোন পথের ধারে নলকূপ থেকে বাড়ির জলের ব্যবস্থা করতে হতো।
একবার আমি আর ভাই রাস্তা থেকে তুলে একটা নেড়ি কুকুরকে পোষার জন্য জন্য আটকে রেখেছিলাম, অবশ্যই বাবার প্রশ্রয়ে। তখন দুজনেই স্কুলে পড়ি। সেই ছোট্ট কুকুরসোনাকে দেখে আমাদের খুব মায়া পড়লো। আমরা ওকে বাড়িতেই রাখবো ঠিক করলাম। কুকুরটার নাম দিলাম ভিকু। নামটা অবশ্য বাবার দেওয়া। বাবা বলেছিল যে ওর আসল নাম ভিক্টর, ডাকনাম ভিকু।

কয়েকদিন ভিকুকে নিয়ে আমাদের আদিখ্যেতার শেষ ছিল না। প্রকৃতপক্ষেই আদিখ্যেতা বলা যেতে পারে কারণ ওকে আমরা গলায় বেল্ট বেঁধে রাখলাম। এবং তার আদর যত্নে আমাদের দুই ভাই বোনের বেশখানিক সময় ব্যয় হতে লাগলো।
একদিন হয়েছে কি, মা সকাল-সকাল স্নান করে কোথাও পুজো দিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। আমাদের বাড়ির পেছনের দরজার সামনে একফালি গলির পর তিন ধাপ সিঁড়ি রাস্তায় নেমেছে। সেই গলির কোথাও ভিকু সকাল সকাল তার প্রাত্যহিক কান্ডটি কখন করে রেখেছিল। ফলে মা চান করে পুজোর সামগ্রী নিয়ে বার হতেই নোংরাতে পা দিল। মা তো ভীষণ খাপ্পা। কারণ মাকে আবার নতুন করে স্নান করে পুজো দিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। মায়ের সেই তর্জন গর্জনের পরে বাবা এবং আমরা দুই ভাই বোন কেউই আর ভিকুকে বাড়িতে রাখার সাহস করিনি। ওকে আমরা পথেই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এসবের মাঝে মাছ পোষার বাই আমাদের কম ছিল না। আমাদের পাড়ার দুই দাদার কথা আগেই বলেছি যারা একটু ডানপিটে ছিল। ঘুড়ি ওড়ানো খেলাধুলো এসবের পাশাপাশি তারা মাছ পোষাও শুরু করেছিল। কার্তিকদা আর অসীমদা বাড়িতে মাটির ডাবায় রঙিন মাছ যেমন গাপ্পি, মলি এসব ছেড়ে ছিল। এছাড়াও বেশ কয়েক রকম রঙিন মাছ তাদের সংগ্রহে ছিল। ওদের দেখে আমার ভাইয়েরও ইচ্ছা হয়েছিল মাছ রাখবার। আমরা বাবার কাছ থেকে একটা অ্যাকোরিয়াম আদায় করেছিলাম। অবশ্য সেই অ্যাকোরিয়ামটা এমন কিছু দামী ছিল না। অ্যাকোরিয়ামটা কখনো দোতলার বারান্দায় কখনো বা সিঁড়ির মাঝে কুলুঙ্গিতে আবার কখনো বা ঘরেতে রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। পছন্দমতো মাছ মাঝে মাঝে কিনে আনা হতো। তাতে অক্সিজেন গাছ দেওয়া হয়েছিল। কৌটোর দানা খাবারের ব্যবস্থা হয়েছিল। অনেক দিন ছোট জায়গায় মাছ রাখার পরে ভাইয়ের ইচ্ছা হল একটু বড় অ্যাকোরিয়াম নেবার এবং তারপরে একটা বড় অ্যাকোরিয়ামও যোগাড় হল। খুবই ইচ্ছা করতো অন্যের বাড়িতে বড় বড় অ্যাকোরিয়াম দেখে ইলেকট্রিকের নল লাগানো বুদবুদি কাটা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু আমাদের সে ইচ্ছে তখনই মেটেনি। আমরা চক বাজারের কাছ থেকে এবং সিদ্ধেশ্বরী মোড়ে রাজদার কাছ থেকে মাছ নিয়ে আসতাম। যখন টিউশন করে কিছু হাতে এলো তখন রবিবারের অপে়ক্ষায় থাকতাম। সন্ধ্যাবেলা রাজদা নতুন মাছ দোকানে আনলেই ভাই কিছু বেছে আনতো। কেবিন, গোল্ড ফিস ফাইটার কিসিং এই সব পুষে যেমন আনন্দ হতো, তেমনি হঠাৎ করে একটা কেউ মরে গেলে মনটা ব্যাথাতুর হয়ে উঠতো। এই সেদিনও রাজদার দোকানে চমৎকার চমৎকার ফাইটার মাছগুলো কাঁচের জারে দেখলে কেনার জন্য মন ছটফট করতো। কিন্তু ততদিনে বাড়ি থেকে মাছের পাট উঠে গেছিল ভাই কালনার বাইরে পাকাপাকি ভাবে চলে যাওয়া আর আমার বিয়ে হয়ে যাবার পরে।
একবার পাখি পোষার ইচ্ছে হতে বাবা টিয়া কিনেছিল। মিঠু নামের সেই টিয়াটাকে কথা বলা শেখাতে পারিনি। তবে সে বেশিদিন ছিল না। আমাদের পুরোনো বাড়ি অনেক মুক্ত পাখির আস্তানা হলেও খাঁচায় পাখি আটকে রাখার ব্যাপারে আমাদের একটু অনীহাই ছিল। বারান্দার টালির ছায়ায় থামের ফাঁকে কত ঘুঘু বাসা বাঁধতো, ডিম ফোটাতো। উঠোনের রঙ্গনে কত টুনটুনির বাসা করল। পেয়ারা আর জামরুল গাছে গাছে সবজে টিয়ার ক্যাঁচ ক্যাঁচ, ভরদুপুরে কলতলার এঁঠো বাসনে ভাতের দখল নিয়ে ছাতারদের ঝগড়া, চড়ুইদের উঁকিঝুঁকি আমাদের পাখির পিপাসা মেটানোর জন্য কিছু কম ছিল না। অনেকে বাড়িতে ঘুঘুর বাসা নিয়ে আপত্তি করার আমি যুক্তি দিয়ে গর্জে উঠতাম। বাইবেলে ঘুঘু কতটা পবিত্র মর্যাদা পেয়েছে তার ফিরিস্তি দিতাম। আজ যখন আর বাড়িটাই আমাদের থাকল না তখন যেন মনের তিতির কান্নার মাঠে কেউ কেঁদে কেঁদে বলে, ভিটেটাও গেলে ঘুঘু চড়ে কোথায়!
এর মাঝে কোথা থেকে আমাদের বাড়িতে জোগাড় হয়েছিল দুটি গিনিপিগ, লাকি আর মিতা। লাকি আর মিতাকে রাখার জন্য একটা বড় খাঁচা কেনা হল। পাখির খাঁচা কিন্তু সাইজটা বেশ বড়। লাকি আর মিতা মূলত শসা খেত। কেননা আমাদের বাড়ির আশেপাশে ঘাস সংগ্রহ করার মতন যথেষ্ট জমি ছিল না। যখন নিতান্তই শসার দাম আকাশচুম্বী হত তখন ওদেরকে বাজার থেকে শাক এনে খাওয়ানো হতো। লাকি মিতার ধীরে ধীরে অনেক অনেক ছানাপোনা হলো। বেশ কিছু ছানাপোনাকে আমরা রাখলাম, বড় হলো। আবার অতিরিক্ত ছানাপোনা কোথায় রাখবো এই চিন্তাতে কেউ চাইলে দিয়ে দিতেও থাকলাম। ওদেরকে আমাদের ছোট্ট ছাতে ছেড়ে দেওয়া হতো। ওরা ওখানে সারাদিন ঘোরাফেরা করতো। যখন সন্ধ্যে হয়ে আসত তখন ওদেরকে খাঁচায় ঢুকিয়ে আমাদের ঘরে রেখে দেওয়া হতো। আমরা ভাই বোন যে ঘরে থাকতাম সেই ঘরেই ওদেরও আশ্রয় ছিল। সদ্য জন্মানো গিনিপিগ ছানা যদি কেউ দেখেছো তো নিশ্চয়ই জানো যেন এক একটা রসগোল্লা বা কমলাভোগের মতো গোলগোল। খুব মায়ার। কিন্তু এক এক করে লাকি ও মিতা দুজনেই আমাদের ছেড়ে চলে গেল। ছাদে দুটি ড্রেন ছিল। খোলা মুখ ড্রেন, তাতে কোন পাইপ ছিল না। সেই ড্রেনটা থেকে পড়ে গিয়ে লাকি মারা গেল। তারপর একদিন মিতাও মারা গেল।
লাকি মিতা মারা যাবার পর আর গিনিপিগ পুষিনি। এখনো যদি কোথাও কমলা সাদা কালো রঙে মাখা গিনিপিগ কারোর কাছে দেখতে পাই লাকি মিতা আর ওদের ছানাপোনাদের জন্য মনটা হু হু করে ওঠে। প্রতিভাস ম্যাগাজিন
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)