মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস
পর্ব – ২৫
ছড়াপত্র পরতের সঙ্গে ঘর করা তখন দারুণ আনন্দের সাথে চলছে। কত নতুন নতুন পত্রিকা, শুধু বইয়ে পড়া নামগুলির সাথে আলাপ হচ্ছে। যদিও একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে এই সময়টা একটু চাপেই ছিলাম। ভাই তখন দুর্গাপুরে অপটোমেট্রি পড়া শুরু করেছে। তবুও ত্রৈমাসিক পরত নাচতে নাচতে ছুটছে। রোজ রোজ ডাক অফিসের খাম আসছে ছড়া ভরা। কত পত্রিকা আসছে নানা বিষয়ের।
দেখতে দেখতে পাঁচ বছর পূর্তির সময় হয়ে এল। এই বিশেষ ঘটনা পালনের কথা একটু আগেভাগেই ভাবা হয়েছিল। সেই মতো নাম নথিভুক্তি করণের আবেদন করা হয় পরতের পঞ্চম বর্ষের প্রথম সংখ্যায়। কালনা পৌরসভার অতিথি নিবাস পান্থনীড়ে আসর বসবে বলে ঠিক হল। ২০০৪ এর ১৮ ই এপ্রিল দিন ধরা হল। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের জন্য বিশেষ ব্যাজের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এক খুদে কেক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবে, তার জন্য পাঞ্জাবি বিশেষভাবে ফেব্রিক রঙে সাজলো। আরো নানা পরিকল্পনা চলতে থাকলো বাড়িতে। বাবার মাথায় নানা আইডিয়া আসে। সব বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব নয়। তবু আলোচনা হয়। পরতের যে কোন সিদ্ধান্ত বাবাই নিত। আমি আর ভাই একটু মিনমিন করে মতামত জানাতাম মাত্র।

যাই হোক, সেই দিনটি গুটি গুটি পায়ে উপস্থিত হল। সকাল সকালের পান্থনীড়ে উপস্থিত হয়েছে সবাই। এই মহা আনন্দযজ্ঞে সঙ্গে ছিল বর্ধমানের ‘কবিতা সন্ধ্যা’ সংস্হা আর আমাদের ডিসপেনসারি-ওষুধের দোকানের বারান্দায় জমে ওঠা আড্ডা আসরের দাদারা। অর্থাৎ অনুপ কাকার বন্ধুদের দল, বাবুদা, সোমনাথদা, রাজুদা, সুজয়দা, অর্ণবদা, দুলুদা আরও সবাই।
বেলা বাড়তে বাড়তে মাননীয় অতিথি আগমনে পান্হনীড় সরগরম। কালনা সাহিত্য নক্ষত্রের মধ্যে জগদীশচন্দ্র রায় ও লেখক মানবেন্দ্র পাল সভার মধ্যমণি হয়ে উঠলেন। জনপ্রিয়তার আলোয় সভা আলোময় করে তুললেন ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। একাধারে অধ্যাপক, গবেষক ও সাহিত্যিক মিহির চৌধুরী কামিল্যা অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দিলেন। পরতের খুদে সদস্য ইন্দ্রনীল মল্লিক কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করল। বিশিষ্টদের সুললিত কণ্ঠের ছড়া কবিতা পাঠ ও সংগীত মোহিত করল শ্রোতাদের।

অনুষ্ঠানের আরেকটি আকর্ষণ ছিল ভবানী কাকুর পরিচালনায় তাৎক্ষণিক ছড়া গড়া প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হাজির হলো অনেক কচিকাঁচা।
কালনা বর্ধমানের গণ্ডি ছাড়িয়ে নানা জেলার বিশিষ্ট কবি লেখকেরা সেদিন উদ্ভাসিত করেছিলেন আমাদের মঞ্চ। কালনা পত্র পত্রিকা ও সংস্কৃতি জগতের মানুষদের মধ্যে তরুণ সেন তরুণ ভট্টাচার্য গোবিন্দ রায় কমলেশ ভট্টাচার্য উত্তম সরকার অসীম ঘোষ যেমন ছিলেন তেমনি বর্তমান ছিলেন অমল ত্রিবেদী দিগম্বর দাশগুপ্ত অলোক কৃষ্ণ চক্রবর্তী বিবেকানন্দ সেনগুপ্ত নির্মলেন্দু গৌতমের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সম্পাদকরা। গুণীজন সম্বর্ধনা ও সম্মানজ্ঞাপন পর্ব ছাড়াও ছড়া পাঠের আসর উঠেছিল জমে। সেই সেদিনের উৎসাহী সমবেত কিশোর ও তরুণরা আজ অনেকেই লেখালেখির বা সম্পাদনার জগতে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।
এখন ভাবতে বড় ভালো লাগে সেই সময় সাহিত্যচর্চায় আঙিনায় আসা শ্যামাচরণ কর্মকার, আমার শ্যামাদা আর ভাই কমলেশও (কমলেশ কুমার) এই অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকায় ছিল। আজ ওদের জনপ্রিয়তার কথা ভাবলে সত্যি বড় আনন্দ হয়। জানি, পরত একটা আবেগ হয়ে আছে আজও ওদের মনে। প্রতিভাস ম্যাগাজিন
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)