শরদিন্দু সাহা

লেখক পরিচিতি

বাংলা কথা সাহিত্যের সুপরিচিত লেখক শরদিন্দু সাহা। লেখক সত্তা ও জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে তিনি অভ্যস্ত নন। নিছক লেখক হওয়ার জন্য তিনি কলম ধরেননি, সামাজিক দায়বদ্ধতাই তাঁকে সৃষ্টিকর্মে উদ্বুদ্ধ করে। শৈশব থেকে সৃষ্টিশীল মন লালন করে প্রস্তুতি পর্ব সারলেও নয়ের দশকের গোড়া থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। এ-পর্যন্ত শতাধিক গল্প, গোটা কয়েক উপন্যাস এবং অন্যান্য গদ্য মুদ্রিত হয়েছে। দশটি উপন্যাস আর সাতটি গল্পগ্রন্থ সহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা ষোলো। ১৯৯৮ সালে ‘কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগার পুরস্কার’ পান। ২০০৪ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত সোমেন চন্দ পুরস্কার’ পান। ওই  বছরেই কাটোয়া লিটল ম্যাগাজিন মেলা কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘হল্ অব্ ফেম’-এ সম্মানিত করেন। ২০০৫ সালে ‘ভাষা শহিদ বরকত স্মরণ পুরস্কার’ পান। ২০০৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি’র আমন্ত্রণে গৌহাটিতে বাংলা-অসমীয়া গল্পকার সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে ‘আমি’ পত্রিকা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বিশেষ সম্মান দেন। প্রসার ভারতী’র আমন্ত্রণে নানা সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিলিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যেই নিজস্ব এক ঘরানা সৃষ্টি করে তিনি পাঠকের মন জয় করেছেন।

বিষয় পরিচিতি

(নিত্য সমাজ সংসারের যে স্রোত আমরা চাক্ষুষ করছি তার অন্দরমহল জুড়ে ঘুমিয়ে রয়েছে কত তো কথাকাহিনী, যার পরতে পরতে  তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে গোপনে কত তো নারীর জীবনযন্ত্রনা, ধারক বাহক হয়ে গোটা সমাজকে যাঁরা ছাতার মতো আগলে রেখেছে, নিজের পরিচয় খুঁজে নিয়েছে, সকল ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে দিচ্ছে মুক্তি যুগ যুগ ধরে। কয়জনের কথাই বা আমরা মনে রাখি। তাঁদের গোপন ব্যথা, অনুচ্চারিত কথা গুমড়ে মরে যায়, চোখের জল কেউ মুছিয়ে দেয় না, গণ্ডীবদ্ধ শৃঙ্খলিত জীবনই তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। এমনই এক সাধারণ গ্রাম্য নারীর কথকতা ও চেতনায় চেনা জীবন ও সমাজপিষ্ট অব্যক্ত যন্ত্রনার পাঁচালি ‘দেশের গর্ভে স্বদেশ ‘ উপন্যাস।)

       ঘরের মইদ্যে আগুন লাইগ্ছে

       হরেরে দোষ দি নিজে বাঁচি

       দ্যাশের গায় ঘুণে ধইর্‌ছে 

       কী অইব আর ধম্ম যাচি

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের হরে হাকিস্তান সরকার হুব হাকিস্থানে হত্তুর সম্পত্তির যে গাছ রুইছে, হেই গাছের বিষ হল্ তছনছ করি দিছে কত হিন্দু হরিবার। যেসব হিন্দুরা জমিজমা হালাই ভারতে  চলি গেছে হেগুনের বেক্ সম্পত্তি হত্তুর সম্পত্তি ঘোষণা কইর্‌ছে সরকার, আর আইন করি দিছে ভারতে চলি যাওইন্না হিন্দুগ এদ্যাশের কাছের আত্মীয়রা এই সম্পত্তি হত্যেক বছর সরকাররে ট্যাঁয়া দি লীজ লই ভোগ কইর্‌ত হাইর্‌ব। হেই সময় বিহার তুন্ অনেক মোছলমান রিফুজি অই আঁঙ্গ দেশে চলি আইছে। যিয়ানে হত্তুর সম্পত্তির গন্দ হাইছে, হিয়ানে হ্যাতারা হরিবার লই খুঁডি গাড়ি বই গেছে। আর এদেশের কিছু দুষ্ট মানুষ হ্যাতগ এই কামে ইন্দন যোগাইছে। সরকার তুন্ লীজ লই রিফুজিগরে জাগার তুন্ উডাইবার লাই  হিন্দুরা কোট কাচারীত্ দৌড়াদৌড়ি কইর্‌তে কইর্‌তে অনেকে ট্যাঁয়া হইসা খোয়াই হঁতে বই গেছে। রিফুজিরা হঁতেঘাডে আঁডে বাজারে হিন্দুগরে অপমান অপদস্ত কইর্‌ত। বাড়িঘরে বউঝিগরেও নানান বাজে কতা কইত। কেউ কেউ রিফুজিগ অইত্যাচার সইহ্য না কইর্‌ত হারি হাণের ভয়ে রাইতের আঁন্দারে ভারত চলি গেছে। আঁর স্বামী হত্তুর সম্পত্তি লই কোটে মামলার মুসাবিদা করইত। শনিবারে বাড়ীত্ আইলে হ্যাতেনের মুয়ে মানুষের দুখ্ যন্তণার কতা হুইনলে চয়ের জল আই যাইত। হিন্দুগ নিজেগ নিজেগ মইদ্যেও এসব সম্পত্তি লই ঝগড়া বিবাদ, মামলা মকদ্দমা লাগিই থাইক্‌ত। আঁঙ্গ হরিবারেও এই লই কম ঝামেলা অয় ন। আঁর দেয়র ছোডগা হেই যে ভারতে চলি গেছিল তেষট্টি সালে, আর হিরত আইয়ে ন। হেই সম্পত্তির লীজ লই মেজ দেয়রের লগে যত কাইজ্জা। এই লই হ্যাতেনের হোলারা নিজের জেডারে অপমান কইর্‌তে, ছোডবড় কতা কইতে হেগুনের বিবেকে বাঁধে ন। কী করুম আর, ঢোক গিলি আর অজম করি, রক্তের সম্পর্কের মইদ্যে এরুম বেয়াদবি ব্যবহার ঘোর হত্তুরের চাইতেও ঘিন্নার, বলি আর কারে। এই লই ভাইয়ে ভাইয়ে মামলাও অইছে। এ মামলা কি আর শ্যাষ অয়। যুদ্দের হরে মনে কইর্‌লাম হেগুনের মনের হরিবর্তন অইব। অন্ দেই উল্টা, হেগুনের অইত্যাচার দিনদিন সীমা ছাড়াই গ্যাছে। অনেক সালীশ দরবার করিও হেগুনেরে থামান যায় ন। দ্যাশ স্বাধীন অইছে ঠিক কতা, আমরা যে হরাধীন অই গেছি। আঁর অইন্য দেয়ররা হোলামাইয়া লই ক্যাম্পে তুন্ কন্নাই যে গেছে আইজ্ও কোন খবর হাই ন। হেগুনে থাইক্‌লে আঁঙ্গ এত দুরাবস্থা অইত না, আর মেজডার মত এত বদ্ ব্যবহারও কোনদিন করে ন।

     স্বাধীনের হরে হথ্যম নির্বাচন আইছে। এও য্যান্ এক যুদ্দ, যুদ্দ বলি যুদ্দ, ঢাকঢোল হিডাই দ্যাশের মাইন্ষ্যেরে নিমন্ত্রণ দিছে। আগের নির্বাচনে আছিল স্বাধীনতার ডাক, এবারের নির্বাচনে দ্যাশ গড়নের ডাক, সরকারের হচারে কতরমের হতিশ্রুতি, মাইন্ষ্যের মনে খুশির জোয়ার। আঁর স্বামীর মনও টগ্‌বগ্ করি উইঠ্ছে। আঁরে বুজায়, সরকার এই সময়ে কত কামই না কইর্‌ছে – মদ তৈয়ারি, ব্যবসা নিষিদ্দ কইর্‌ছে, জুয়া খেলা বন্দ কইর্‌ছে। কত রাষ্ট্র আঁঙ্গ দ্যাশেরে স্বীকৃতি দিছে, জাতিসংঘের সদস্যপদ হাইছে, একশ বিঘার বেশি মালিকেগ জমি এবং নোয়া চর বিনা হইসায় ভূমিহীন চাষিগ মইদ্যে বিলাই দিছে। খাই খালাসী আইন করি ঋণগ্ৰস্ত কৃষকেগ মুক্তি দিছে। পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোড কইর্‌ছে, তিরশ লাখ ট্যাঁয়ার রিলিফ দিছে, দশ লাখ বসতবাড়ি বানাইছে। কম ত করে ন, আরও কতকিছু কইর্‌ব কইছে। নেতারা বাড়ি বাড়ি আই য্যাতারা নতুন ভোটার অইছে হেগুনেরে বুজায়, প্রাথমিক শ্রেণী হইয্যন্ত বিনা হইসায় হড়ানোর হুযুগ করি দিছেনি কও, কম দামে বই হাইচনি কও। হোলারা ত খুশিতে লাফায়, নাচে, তাইলে কাইলের তুন্  নৌকা মার্কা হোষ্টার, হেলাগ লাগাইবার কামে লাগি হড়, এই কতাগাইন বেকের মইদ্যে হচার কর যাতে আওয়ামী লীগেরে বেকে ঢালি ভোট দেয়। ভোটের দামামা ত বাজি গেছে। মাইন্ষ্যের মনের মইদ্যে আশা ভরসা জাইগ্ছে, জমি বাড়ির খাজনা মকুপ করি দিব, গ্ৰামে গঞ্জে স্বাস্থ্য কেন্দ্র অইব, বড় শহরে ছুইড্ত অইত ন, চাইল ডাইল তৈল লবনের দাম কইম্‌ব, মাডির রাস্তা কাডের হোল হাকা অইব, সার সস্তা অইব, হসলের বেচাবাট্টা ভালা অইব। এইবার হশ্চিমা হাটি ত নাই, দ্যাশের হাটিরা মিলি ভোটে লইড়ব। কামার কুয়োর যুগীরা নিজেগ কামকাইজ লই দিন রাইত হড়ি থায়। যুদ্দ্যের সময় হেগুনে দূরে দূরে হলাই হলাই আছিল, মিলিটারি রাজাকাররা টের হায় ন, লুটহাট যে হেগুনের ঘরবাড়ি করে ন এরুম না, লুটহাটও কইর্‌ছে। জয়ন্ত, রবি মাথা চাপড়াই কয়, কিচ্ছু আস্ত রায় ন গ জেডি। এদ্দিনে ঘরদোর মেরামত করি লইছে, যন্ত্রহাতি কলকব্জা গুছাইগাছাই লইছে। হুইনছি সরকার তুন্ কিছু সাহায্যও হাইছে। হেগুনে এত চিন্তা করে না, গতর যে কদিন আছে, খাডি খাইত হাইর্‌ব, ইয়ার হরে আইজও হৈর কাইলও হৈর। হোলাগুনরে ইস্কুলে ভর্তি করাই দিছে, হইসাকড়ি ত লাগে না, যদি হড়ালেয়া শিখ্ত হারে, আর গাধার খাড্নি খাইড্ত অইত ন, বাজারহাতিও অন্ আর ভালা নাই। সরকারের কাছে চাইব যে হেরুম বিদ্যাবুদ্দিও নাই।  দুহের কতা কইত গেলে বড় মাইন্ষ্যেরা এদ্দিন মশ্করা কইর্‌ছে, এই অবস্থা তুন্ রেহাই হাইব কিনা স্বাধীন দেশে কে জানে। জাইল্লা মাঝিগ দশা এর তুন্ ভালা ক্যাম্‌নে অইব। বাবুগ হকেটে হইসা থাইক্‌লে ত দরদস্তুর কইর্‌ব। তয় এইডা হেগুনে বুজে, বাবুগ হোলাগ চাকরি বাকরি অইলে বাজার চরচর করি চইড়ব। বড় রাস্তা ধরি মিছিল যার, মিছিল তুন্ আবাজ আইয়ে, আওয়ামী লীগকে নৌকা চিহ্নে ভোট দিন। জাসদ আঁঙ্গ এলাকায় হেরুম হচার করে ন। দুই এক জাগায় মশাল মার্কার হোষ্টার মাইরছে কেউ কেউ। ভাসানির দল ন্যাশনাল আওয়ামী হাটি নামে ন।

    আওয়ামী লীগ ত ২৯৩ টা আসন হাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতল। মানুষজনের উল্লাসও কম অইল না। ঢিমেতালেই চইল্‌ল কদিন। কারও ধারণা অইল, বাংলাদেশের গা’ত্ যে নতুন হালক জুইড়্ল, প্ত্পত্ করি বাতাসে উইড্‌তেই থাইক্‌ব। কন্নাই য্যান্ গোলমাল আছে, আশার লগে বাস্তবের মিল খার না। যেদিন ইয়াসিন আলীর বাড়িত্ হুলিশ আইল, সরেজমিনে তদন্ত অইল, বুজা গেল যত সোজা ভাইব্ছিল তত সোজা ন অবস্থাডা। হ্যাতেনের ধান চাইলের ব্যবসা, তেজারতি ব্যবসা, তিন চাইরহান গুদাম, তৈলের মিল, ধানগমের কল, কাহড়ের ব্যবসা লই এলাহী কারবার, মাইন্ষ্যে এক ডাকে চিনে, ইস্কুল বোডের মেম্বার, গ্ৰামের মুরুব্বী। গ্ৰামের গরীব মাইন্ষ্যেরে ঘডা করি খাওয়ায়, চাইর গ্ৰামের মানুষ আই হাত হাড়ি খায়, কাহড়জামা দান করে দুইআত ভরি। ঘর তুন্ গদিত্ যাইবার হঁতে রাস্তার দুই হাশে খাড়াই সেলাম দেয় মাইন্ষ্যে। এরুম মাইন্ষ্যে যে তলে তলে মদ জুয়া খেলার কারবার করে, হুলিশ  আই তল্লাশি না কইর্‌লে জাইন্‌তাম ক্যাম্‌নে। হায় হায় দ্যাশের একী হাল অইল! ইয়াসিন আলীরে হুলিশ আতকড়া হরাই লই গেল, দশ গ্ৰামের মানুষ খাড়াই খাড়াই দেইখ্ল, কেউ সেলাম দিল না। হুনা যায়  হেই বেডা নাকি হাকিস্তানি চর, দ্যাশের ট্যাঁয়া বারের দ্যাশে হাচার করে। কারে আর বিশ্বাস কইর্‌ব মানুষ। হজ্ব করি আইছে গত সন, মাইন্ষ্যে হাজী কওয়া শুরু করি দিছিল। দোয়ানদাররা বলাবলি শুরু কইর্‌ছে, এরুম এক্কান কাণ্ড ঘডাইল, লাজশরম বলি কিছু নাই। আবার কেউ কয়, বড়লোকের ব্যাপার স্যাপার বুইজ্‌ত না, হ্যাতাগ কাছে দ্যাশের আর কী দাম আছে, অন্ আঁঙ্গরে না মাইন্ষ্যে ডাকি ডাকি কয়, আম্‌নেগ গ্ৰামের বদনামের কতা মাইন্ষ্যের মুয়ে মুয়ে হিরে, রেডিওত্ কইছে, খবরের কাগজে বার অইছে। অন্ কতা অইল ইয়াসিন আলীর এরুম সব্বনাশডা কে কইর্‌ল, গোপন কারবারের কতা হাঁস করি দিল। হিয়ানেও কী রাজনীতি আছে! আমরা সাধারণ মানুষ এসবের আর কী বুজি। দ্যাশের মানুষ যদি এভাবে বেইমান অয়, দ্যাশ চইল্‌ব ক্যাম্‌নে। এই ইয়াসিন আলী আগে দুই তিনবার জমিজমা সংক্রান্ত আইনি হরামর্শের লাই আঁর স্বামীর কাছে আইছিল। মক্কলেরে যেরুম জিজ্ঞাসাবাদ কইর্‌তে অয়, হেরুমই কইর্‌ছে, আঁচ কইর্‌ত হারে ন। অন্ ইয়াসিন আলী মানুষ হাঁডাইছে এই কেইস মুসাবিদা কইর্‌বার লাই। আঁর স্বামী কয়, এরুম এক্কান কেইস আঁই লই ক্যাম্‌নে। রাইতভর হ্যাতেনের ঘুম অয় ন, ছট্হট্ কইর্‌ছে।  আসলে হ্যাতেনের এক সিদ্দান্তের লগে জড়াই রইছ অনেকের ভাইগ্য, এতগুন হিন্দু বাড়ি, যা কিছু অইত হারে। আবার চিন্তা কইর্‌ল আইন আইনের হঁতেই চইল্‌ব, আঁই ত উপলক্ষ মাত্র।

     আঁর মাইয়া যেই ইস্কুলে হড়ায়, হেই ইস্কুল তুন্ হাঁচজন বৃত্তি হাইছে। হেইডা দেই অনেক চাষী দিনমজুরের বাড়ির হোলারাও ইস্কুলে ভর্তি অইছে।  যত্ন করি হড়ায় ত, হেতির হুনামও ছড়াইছে গ্ৰামে গ্ৰামে। হিন্দু মোছলমান বেক্ বাড়ির মা বাপেরা আই দ্যায়া অইলেই কয়, মাইয়া আম্‌নের রত্ন। ভাবি, এই মাইয়া ভাইগ লগে হড়ার লাই একদিন জান দি হালাইছে, তহ্‌ন কী বুইজ্জি নি হেতি একদিন মাষ্টরনি অইব, দশ গ্ৰামের মাইন্ষ্যে ধইন্য ধইন্য কইর্‌ব। হেতির বাংলা ইংরাজি হড়ানোর ধরন দেইবেলে ইস্কুলের ইন্সপেক্টর হশংসায় হঞ্চমুখ। একদিন ইস্কুল তুন্ আই কয়, মা, আঁই সহপ্রধান শিক্ষক অইছি, আঁই হথ্যম মাইয়া এই সন্মান হাইছি, আম্‌নে আঁরে আশীর্বাদ করেন য্যান্ অনেক দূর আগাইতাম্ হারি। মাইয়ার গুণের কতা হুনি হেনির তুন্ বিয়ার সম্বন্ধ লই আইছে স্বয়ং হোলার বাপ। আঁর স্বামীর ত আনন্দ আর ধরে না। হ্যাতেনে কয়, আঁই ত বেশি কিছু দিতাম থুইতাম হাইর্‌তাম ন, মাইয়ারে হাঁজাই গুছাই খাড আলমারি দি হাঁডাইয়ুম, তাতে যদি আম্‌নেরা রাজি থায়েন, এই সম্বন্ধ অইত হারে। হোলার বাপ এক কতায় রাজি। আঁর জা’রা কয়, রাজি অইত ন আবার, এরুম চাকরিঅলা মাইয়া জিলা দি খুঁজলেই ত হাইত ন। ধুমধাম করি বিয়া অইল, আঁর মাইয়া আঁঙ্গরে কাঁদাই হৌড় বাড়ি চলি গেল, হ্যাতাগ গঞ্জের ইস্কুলে হোষ্টিং অইল হেতির। হুনিয়ের হেই ইস্কুলের হ্যাড্মাস্টার ত এরুম মাষ্টর হাই খুব খুশি। হ্যাতেনে আবার বড়াই করি ছাত্রগরে কয়, তোঁঙ্গ দিদিমণি জিলার মইদ্যে মাষ্টরির হরীক্ষায় হথ্যম অইছে। মনে অইল, আঁর মাইয়া আর নিজের মাইয়া রয় ন, বেকের মাইয়া অই গেছে, হেই মান রাইখ্ত হাইর্‌লে হয়। 

দুই হোলা দুই জাগায় থায়, আঁই হড়ি থাই এক কোনায়। স্বামী হপ্তাহান্তে একবার বাড়ি আইয়ে। খালি খালি লাগে। হোলা ত হড়ালেয়ার চাপে আইতই হারে না। মন কাঁদে, আবার ভাবি না আইয়নই ভালা। দ্যাশ গ্ৰামের হাল আগের মত নাই। বেকের মনের মইদ্যে হত্রুতামি। আঁর দেয়র হোলারা দিন দিন এক্কান রাক্ষস অই উইঠ্ছে। বেক্গাইন চোলাই ভোলাই খাইত চায়, হিছন তুন্ আঁর দেয়র উস্কানি দেয়। কারে কী কইয়ুম, ছ্যাপ ছিডাইলে নিজের গা’ত্ আই হড়ে। হৌড়ি বাঁচি থাইক্‌লে না হয় দুহের কতা কই মনের জ্বালা জুড়াইতাম্, অন্ আর কারে কই। আঁর জেডা হৌড়ের ঘরের মেজ জা ডাকি কয়, দিদি, মাইয়াডা ত সোমথ্য অইছে, অন্ ত বিয়া দিত অইব, কদ্দিন আর ঘরে রাওন যায় কিন্তু এক্কান দন্দে হইড়ছি, মাইয়ারে কন্নাই বিয়া দিমু। বঙ্গবন্ধু ত চেষ্টা কইর্‌ছে বেকে যাতে মিলিমিশি থায়, কিন্তু বাস্তব কতা অইল হিন্দুরা কালে কালে এই দ্যাশে থাইক্‌ত হাইর্‌ত ন। মাইন্ছি আঁঙ্গ গ্ৰামের মোছলমানরা ভালা। কিন্তু অইন্য জাগায় আগুন লাইগ্‌লে হেই তাপ তুন্ আমরা ক্যাম্‌নে বাঁচুম। অইন্য দলের মাইন্ষ্যেরা ত আঁঙ্গরে দেইখ্ত হারে না।  আঁই ত দিদি, হিয়ের লাই ঠিক কইর্‌ছি মাইয়ারে এই দ্যাশে আর রাইখ্তাম ন। আঁর বইনের দেয়র হেই দ্যাশে থায়, হিগার হালার লাই অগ্গা হজাতির মাইয়া খুঁইজ্ছে, হোলা সরকারি চাকরি করে, সম্বন্ধডা ভালাই আইছে, ভাইব্ছি বিয়া দি দিমু। আমরা নিজেরা মইর্‌লে মরুম, মাইয়ারে হাঁডাই দিমু। যুদ্দের সময় ত রাজাকারেগ আত তুন্ মইর্‌তে মইর্‌তে বাঁচি গেছি। কতাগাইন ত হাঁচা, মনডা মাইন্‌ত চায় না। আঁই ত এক হোলারে হাঁডাইছি কইল্‌কাতায়, হ্যাতে ত বারে বারে কয়, মা, বাবা আর ভাইরে লই কইল্‌কাতা চলি আইয়েন, মোছলমানরা আম্‌নেগরে থাইক্‌ত দিত ন। হ্যাতেরে বুজাইতাম্ হারি না বারের হত্তুর ত একদিন মাইর্‌ব, ঘরের হত্তুর ত রোজ যন্তণা দি যে মারের হিয়ার তুন্ রেহাই হাইয়ুম ক্যাম্‌নে ক। আত্মীয় হজনেরে হালাই যাওন যায় নি। হোলার কাছে হেই কতার উত্তর নাই, হিয়ের লাই অন্ আর চিঁডি লেয় না। আঁর ঘর, আঁর বাড়ি, ইয়ান তুন্ দৌড়াই দেক্ দেই। আঁঙ্গ জগা ত ব্যবসা করি চইল্ছিল, টুক্ করি ক্যাম্‌নে মরি গেল চয়ের সামনে, বউডাও আর বেশিদিন বাঁইচ্ত ন, যাক্ মইরলে নিজের ভিডাতেই মইরব, হরম শান্তি। মনে কয় মাডি কামড়াই হড়ি থাই। ধম্ম দি কী মাডির রঙ চিনা যায়, নাড়ির টান বড় টান এই কতাহান কাউরে বুজাইতাম্ হাইর্‌লাম্ না।

আঁর খুড়া হৌড়ের বড় হোলা রাম ক্যাম্‌নে ক্যাম্‌নে বড় ব্যবসা হাঁদি বইছে। হইসাকড়িও কামাইছে দুই আত ভরি। গ্ৰামের মাইন্ষ্যে নাম দিছে ধনীরাম। এরুম সুন্দর নাম হুইনলে হ্যাতেও গলি হড়ি যায়। বড়লোক অইছে হাবেভাবে বুজাইতে অইব ত। আতে ছড়ি এক্কান লই হুল আতা তসরের পাঞ্জাবি আর চিয়ন হাইড়ের  ধূতি হরি আতে সোনার আংটি হায়ে নাগ্ৰা জুতা আর চয়ে  রূয়ালী চশমা লাগাই গট্গট্ করি আঁডে। কাডের হোল তুন্ হেই আবাজ হুনা যায়। সিলেটের ব্যবসায়ীগ লগে হ্যাতের কাজকারবার। ব্যবসায় লাভের মুখ দেয়ন ত ন হাতীর কলাগাছ দেয়নের হমান। উঠ্তি কাঁচা হইসার মালিক অওনে ইয়াসিন আলীর লগে গলায় গলায় ভাব, মাডিত্ হা হড়ে না। আঁঙ্গ বাড়ির কদরও বাড়ছে। ধনীরামের বাড়ির মানুষ বলি বেকে তোষামোদও করে। আঁর স্বামীরে সদরে আইনের মানুষ বলি ডাক খোঁজ করে ঠিকই কিন্তু ট্যাঁয়া না থাইক্‌লে  জ্ঞানী মাইন্ষ্যেরে কে আর কদর করে। হ্যাতেনের কাছে আত হাইত্লে ত অভাব মিট্‌ত ন, জ্ঞান লই কি আর জল ধুই খাইব। মক্কলরা আই ভিড় করে ঐ হইয্যন্ত। তয় ধনীরাম আঁর স্বামীরে বড়ভাই বলি মাইন্যগইন্য করে। তাবৎ এলাকায় হ্যাতেনে হথ্যম আইন হাশ কইর্‌ছে কইল্‌কাতা তুন্, এত বছর বাদে কে আর খবর রায়। হুব হাকিস্তান আমলে হশ্চিমারা বাঙালিগ বুটের নিচে রাইখ্ত, হিন্দু বাঙালিগ অবস্থা ত কইবার ত ন, হেনা হুইরের মাছের মত, মুখ বাড়াইতে গেলে ঘেঁডি ধরি মচ্কাই দেয়। অন্ মাইন্ষ্যে হাতির হাঁচ হা দেইখ্ছে, কেউ কাওরে তোয়াক্কা করে না, কে কারে টপ্‌কাই গাছের আগায় উইঠ্‌ব, হেই চিন্তায় থায়, ভাব ভালবাসা চুলায় যাক্। দ্যাশ অন্ স্বাধীন অইছে, কত রমের হুযুগ সুবিধা দের সরকার, হকেট না হুইরলে কী চলে! বঙ্গবন্ধু কইত, দাবাই রাইখ্ত হাইর্‌ত ন, অন্ নতুন বড়লোকরা দাবড়ানি দেয়। এত রক্ত দি দ্যাশের স্বাধীনতা আইছে কিয়ের লাই, কাগ লাই, হেই কতা কে আর মনে রায়। যত জ্বালা গরীব মাইন্‌ষ্যেগ লাই। চুনার বাপ কয়, বদি হুটকি মাছের হেরুম আর লাভ নাই বিধায় মাস মাইনা দিতে দেরি করে মালিক। লাভের ট্যাঁয়া হাইলে আতে কয়ডা ট্যাঁয়া দেয়, হাঁচ ছয়ডা হোলা মাইয়ার সংসার, ক্যাম্‌নে চালাইয়ুম্ কহ্‌ন এই ট্যাঁয়ায়। কইলাম, নিজে এক্কান ব্যবসা কর না। হুঁজির ট্যাঁয়া কে দিব কন্, ধারে নিলে সুদ শোধ কইর্‌তে গেলে লাভের গুড় হিঁমড়াই খাইব। বন্ধক রাই যে ব্যাঙ্ক তুন্ লোন নিমু হেই জমিও ত নাই, শ্যাষ সম্বল আধ কানি জমি মে মাইয়ার বিয়ার সময় বেচি দিছি হে ত আম্‌নে জানেন। আঁঙ্গ বাড়ির চাইর হাঁচ ঘর এরুম আধ হ্যাডা খাই থায়, হেগুনে কেউ চাষবাস করে, কেউ আবার দোয়ানদারি করি হ্যাড্ চালায়। ভদ্রঘরের হোলারা লাজ শরমের মাথা খাই দিন মজুরিও কইর্‌ত হারে না, গুদামঘরে সরকারি করি কোনমতে টানাটানি করি সংসার চালায়। আসল কতা অইল বাস্তুচ্যুত অই হেই যে মাজা ভাইঙছে, অন্ও উডি খাড়াইত হারে ন, শুধু ত ঘর হোড়ে ন, কোয়ালও হুইড়ছে। আঁর স্বামীর রোজগার আগের মত নাই, ঘর তুন্ শহরে চাষের চাইল, লাউ, কুমড়া, মাইরার ডোগা, ঢুল্লার হাগ হাডাই দি হনের দিন বাদে বাদে। আঁর হোলারে ত বেক্ কতা কইতাম্ হারি না। হ্যাতের বাপের অজান্তে হোলারে কই, সুয়ারি নাইরকলগুন আঁডে লই যা, যা বেচাবাট্টা অয় হেই হইসা দি তৈল নুন, মশলাহাতি কিনি আনিচ্, হারা মাস চলি যাইব। চুলা ধরাইবার কাড হর্মুল নাই, মাডের তুন্ নারা তুলি না আইনলে ত হাক্ অইত ন। আঁর হোলা চখ বুজি বেক্গাইন সইহ্য করে, কোন কতা কয় না। হড়ালেয়ার হোলা ঐ চড়া রইদের মইদ্যে ঘামি ঘরে আইলে আঁই চুপ্পে চয়ের জল হালাই।

     আঁর বড় হোলা এক যুগ হরে বন্ধুগ লগে লই কইল্‌কাতা তুন্ নোয়া বাংলায় আমরা কেরুম আছি দেইখ্ত আইছে। হ্যাতে ত দেই অবাক অই গেছে, কয়, এই কী চেহারা অইছে বাড়ি ঘরের! ভাইব্‌তাইম্ও হারিয়েন না ইয়ানে আঁই জন্মাইছি, কন্নাই গেল আঁঙ্গ এত বড় ঘর। হ্যাতের বন্ধুরা হ্যাতের দেয়াদেয়ি আঁঙ্গরে হন্যাম কইর্‌ল। জাইন্‌ত চাইল, ক্যাম্‌নে আমরা ইয়ানে হড়ি রইছি! আঁর হোলার মুই চাই কয়, মাসীমা মেসোমশাইরে ভারতে লই চল।  আঁই কইলাম, কী যে কও তোঁরা, আঁর চাওনের উপ্‌রে কী বেক্ কিছু চলে? বাবা, বিষয় সম্পত্তি  যদিও বিষ, বাড়ি ঘরদুয়ার ছাড়ি যাওন ত মুয়ের কতা ন। আইচ্ছা, যা হোক, হেইসব কতা হরে অইব, গরীবের বাড়ি আইছ, বইবার মত জাগাও দিতাম্ হারিয়েন্ না। আগে আতমুখ ধুই চাইরগা মুয়ে দাও, এক দ্যাশ ছাড়ি অইন্য দ্যাশে যাওন ত মুয়ের কতা ন। হেগুনে খাইতে খাইতে আঁর দেয়রের ঘরের দিগে নজর গেল।‌ হ্যাতেনের হোলারা যে আঁর স্বামীরে জ্বালায় হেগুনে আঁর হোলার মুখ তুন্ হুনি হালাইছে। ভাইয়ে ভাইয়ে এরুম তিতা সম্পর্ক  লই হোলার বয়সীগরে ক্যাম্‌নে কই। আঁঙ্গ বাড়ির ছুটকিয়ারা কইল্‌কাতার মানুষ চাইবার লাই ঘরের আড়াল তুন্ চখ বড় বড় করি এরুম করি চায় য্যান্ ভিন্ গ্রহের আজব মানুষ আইছে। হেগুনে বার বার করি কী য্যান্ খুঁইজ্তে লাইগল। মিলাইবার চেষ্টা কইর্‌তে লাইগ্‌ল হুনা কতার লগে। আঁঙ্গ হুরা বাড়িডা ঘুরি ঘুরি দেইখ্ল। আঁঙ্গ বাড়ির মাইয়া বউরা কত যে কতা জিগ্গাইল, হুরাইতে যাইও হুরায় না। আঁরে হথ্যমে দ্যাশ ছাড়ি চলি যাইবার লাই কত যুক্তির কতা কইল, অন্ নিজেরাই এই গ্ৰামের মায়ায় এরুম জড়ান জড়াইল, হিন্দু মোছলমানের কতা আর মুয়ে দিও আনে না। উল্টা আঁর হোলারেই হুনায়, এরুম দ্যাশ ছাড়ি হ্যাতে গেল ক্যাম্‌নে। হেগুনে বুইজ্ত হারেন না, ইয়ানের মানুষগুনও বড় ভালা। কিয়ের লাই যে মানুষগুনের মইদ্যে এক্কান ছোডমোড আগ্নেয়গিরি ঘুমাই রইছে।  কিয়ের লাই ঘুমাই রইছে কেউ জানে না, থাই থাই যহ্‌ন জাগি যায়, জ্বালাই হোড়াই বেক্গাইন শ্যাষ করি হালায়। হেগুনে কয়, আম্‌নেগ যেরুম মাডি হেরুম ভাষা। আঁই কইলাম যেরুম ভাষা হেরুম মানুষ। করিম হেগুনের আতে হাইঙ্গল দিল, বরই দিল, গয়াম দিল – খান খান, আঁঙ্গ দ্যাশের মিডা হল্, এই স্বাদ মিল্ত না অইন্য দ্যাশে। হেগুনে চিবায় চাবাই খাইল। আমেনার বাপ ডিঙি নৌকায় চড়াইল। কিয়ের লাই জানি কইল, এই নৌকা আওয়ামী লীগের হতিক ন? জলায় জলায় ঘুইর্‌ল, তালগাছ দেইখ্ল, গাছের তুন্ হাড়ি খাজুর খাইল। ডুয়র গাছে সবুজ হলুদ লাল হল্ দেই আনন্দে হা দোলাইল। দিগির জলে গা ভাসাইল। হাট হাতা আতে ঘষি গন্দ শুঁইক্‌ল। অগ্গা উদ্ উডান তুন্ আনারস বনের মুই দৌড়ি চলি যাওন দেই অবাক অই চাই রইল – এইডা কী!

     দাদার আওনের খবর হাই মাইয়া তড়িঘড়ি ইস্কুল তুন্ ছুটি লই বাপের বাড়ি আইল। বইনেরে দেই হেতির দাদা ত খুব খুশি। কত ছোড দেইখ্ছিল, আইজ্ এদ্দিন বাদে বৌয়ের হাঁজে দেইখ্ছে, নিজের চয়েরে বিশ্বাস কইর্‌ত হারেন না। কয়, মাষ্টরনি অইছচ্, তোরে ছাত্ররা কী চয়ে দ্যায়! হেতি কয়, দাদা তুই দেইয়ের এদ্দিন বাদেও আঁঙ্গ দ্যাশের কতা ভুলি যাছ্ ন। ভুলন কী এত সোজা রে! কইল্‌কাতা শহররে মাইন্ষ্যে নাকি তিলোত্তমা কয়। এত কী আছে রে হিয়ানে মাইন্ষ্যে দেইখ্বার লাই ছুডি যায়। বইত্ হইড়ছি আগে নাকি ভারতের রাজধানী আছিল। হ্যাঁ ঠিক কতা, অন্ মাইন্ষ্যে কয়, সাংস্কৃতিক রাজধানী। হেইডা আবার কী? এক কতায় বুজান্ যাইত ন। কত ভালা ভালা লেখক, গায়ক, পরিচালক, অভিনেতা, নাট্যকার, শিল্পী কইল্‌কাতা শহরে বই হ্যাতেনেগ সৃষ্টির কাম করি গেছে, অন্ও করের। ভারতের কোনায় কোনায় ছড়াই গেছে হেইসব সৃষ্টি, ধইন্য ধইন্য করের বিদ্যাশেও।  বিভূতিভূষণ, মাণিক বন্দোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর, জীবনানন্দ, সইত্যজিৎ রায়, মৃনাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, যামিনী রায়, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেনের নাম হুইনছচ্, আরও অনেকে আছে, কতজনের নাম কইয়ুম। এনারা বাঙালির গর্ব। হেতি জবাব দেয়, আঁঙ্গ দেশের রাজ্জাক শাবানা কবরীর কতা বুজি হেই দেশে হুনা যায় না, নজরুল ইসলাম ত আঁঙ্গ জাতীয় কবি। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ত আঁঙ্গ হরানের মানুষ।  মাইকেল মধুসূদন, জীবনানন্দ ত আঁঙ্গ দ্যাশে জন্মিছে, তোঁঙ্গ দ্যাশের কবি অইল ক্যামনে। ঋত্বিক ঘটক ত হুরা আঁঙ্গ দ্যাশের মানুষ, ঢাকার হোলা। আর কত কইয়ুম, লিষ্টিডা বাইড়্তে বাইড্‌তে তল খুঁজি হাইতা ন। আঁর হোলার মুয়ে কোন কতা নাই। কোন দ্যাশ লই গর্ব কইর্‌ব বুজি উইঠ্ত হারেন না। শুধু হ্যাতের বইনেরে কয়, তুই এত জাইন্লি কোনান্ তুন্? হ্যাতের বন্ধুরা কয়, তোর বইনের এই হাড়াগাঁয়ে থাই এত জানার খুদা জন্মাইল কিভাবে। আঁই ত হেগুনের কতা হুনি আঁইস্‌লাম। হেতির হড়াহুনার বহর ত হেগুনে জানে না, একবার কওন শুরু কইর্‌লে কী আর থাইম্‌ব। রামায়ণ মহাভারত বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথ নজরুল কোনডারে বাদ দেয় ন, গিলি খাইছে। আঁর হ্যাডে ধইরছি বলি কইয়ের না, আঁর মাইয়ার যে কোন ধাতু দি বানাইছে আঁই নিজেও জানি না। যিয়ানে যা দেইখ্ছে টানি লইছে। না অইলে ক্যাম্‌নে কয়, দেই রাইও বঙ্গবন্ধুরে একদিন ক্ষমতার লিপ্সায় কাছের মাইন্ষ্যে দূরে ঠেলি দিব। সামনে বড়ই দূর্দিন আইয়ের, মানুষ মাইন্ষ্যেরে টানি ছিঁড়ি হালাইব, কেউ কারোগরে মাইন্‌ত ন। ক্যাম্‌নে যে হেতি এরুম ভবিষ্যতের কতা আগাম কই দেয়, ঈশ্বর জানে।  হেতি দুখ্ করি কয়, তোরা ত চলি যাই বাঁচি গেছচ্, আঁঙ্গ কী দশা অইব, কী জানি। হোলা জিগ্গায়, তোরে ছাত্ররা কী কয়। হেগুনে আঁর ইংরাজি হড়ানোর হুনাম করে, কয়, কী সুন্দর হড়ান, এরুম করি কেউ বুজায় না। হিন্দু মাষ্টর বলি কেউ উঁচানিচা কতা কয় না? মাথা খারাপ নি, হিগাইন মুয়েও আনে না। তাইলে দ্যাশডা হাল্টাই গেছে কছ্। হেই কতা কইতাম্ হাইর্‌তাম ন। জীবনানন্দ ‘সুচেতনা’ কবিতাতে কইছে না সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলেপথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে; সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ। হেগুনে আর এক্কান কতাও বাড়ায় ন, কী জানি জ্ঞানের বড়াই কইর্‌ত যাই কী কইতে কী কই হালায়। হেতি ত দ্যাশডা স্বাধীন অইবার আগে আঁন্দারের মইদ্যে বই আলো খুঁইজ্ছিল, অন্ ত স্বাধীন অইছে, হেতি অন্ সূর্যের দিগে চাই থাই আঁন্দাররে দৌড়াইত চায়, কয়, মা, এই দ্যাশ আর কবে মানুষ অইব। 
     আঁর হোলা আঁঙ্গরে অনেক বুজাই নিরাশ অই কইল্‌কাতা চলি গেল। কইছিল, বিষয় সম্পত্তির এক্কান মিটমাট করি আঁঙ্গ লগে চলেন। হোলারে কইলাম,  আত্মীয় হজন মাইয়া জামাই নাতি নাতকুরেগ ছাড়ি ক্যাম্‌নে যাই, ক। মাইন্ছি হোড়া ভিডা, হৌড়-হৌড়িগ ভিডামাডি ত ছাড়ি যাইতে মন চায় না রে। হ্যাতে কয়, একদিন না একদিন আম্‌নেগরে ইয়ের লাই হস্তাইতে অইব। আবারও কয়, যেদিন মোসলমানরা তাড়াই দিব, হেইদিন বুইজ্‌বেন। মনে মনে কই, আঁই ত বিপদ দেইয়ের অইন্যহানে, আঁর কাছের মাইন্ষ্যেরাই আঁঙ্গরে ঘরছাড়া কইরব, মোছলমানরা ত হরের কতা। আঁর হোলা আঁরে বুজায়, চিরকাল কী বঙ্গবন্ধু আম্‌নেগরে বাঁচাইতে হাইর্‌ব, জামাতিরা যদি ক্ষমতায় আইয়ে তহ্‌ন আম্‌নেগরে কে রক্ষা কইরব। এত দূরের কতা ত ভাবি ন কহ্‌নও, ভাইব্ছিলাম আগে, হশ্চিমারা ত হরের দ্যাশের মানুষ, জোর করি বাংলারে শাসন করের, শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন করের, হেইডার জবাব দিব আইজ্ না হয় কাইল। আঁঙ্গ নিজের দ্যাশে ভাত খাই, ডাইল খাই মাডি কামরাই হড়ি থাইয়ুম্।  হুব্ব হুরুষের গা’র গন্দ মিশি আছে না এই বাতাসে, শ্বাস প্রশ্বাস নি ত সকাল সইন্দ্যা, তোরা জোয়ান হোলা, গেছচ্ গেছচ্ বিদ্যাশ বিভুঁইয়ে, আমরা বুড়া বুড়িরা কিয়ের লাই যামু নিজের দ্যাশ ছাড়ি? এই দ্যাশ মোছলমানেগ যেরুম দ্যাশ, হিন্দুগও দ্যাশ, বঙ্গবন্ধু আঁঙ্গ জাতির পিতা। এই জমিন, রাস্তাঘাড, খালবিল আঁঙ্গ নিজের জিনিস। হোলা চলি যাইবার হর  নিজের মনের লগে লইড়্ছি, হোলারে কষ্ট দি হালাইলাম্ না ত, কবে আর আইব, কবে আর দেইয়ুম্, দুইহান দ্যাশ, দুইরম মন, দুইরম ভাব, তবু মিল এক্কান ত আছে। কদ্দিন ধরি হোলার মুখহান চয়ের সামনে ভায়। মনে হয় ছুডি চলি যাই কিন্তু কারা য্যান্ হাঁ টানি ধরে, আঁর লগে কত কতা কয়। মনডারে ভুলাইতাম্ চায়। বেয়ানে ঘুম তুন্ উডি উডানে গোবর জলের ছিডা দি, গাছের গোড়ায় জল দি, খাঁচার তুন্ আঁস বার করি হুইরে ছাড়ি, চুলা ধরাই ডেকচির মইদ্যে ধান হিদ্দ করি, উডানে নাইর্‌কলের হিছাদি ঝাড় দি।  মাডির মইদ্যে মিশাইন্না ধান বার অই আই ধানমাডির গন্দ ছড়াইলে বাড়িঘররে মনে অয় কত আপন, কত কাছের। বুয়ের মইদ্যে আন্চান্ করে, ক্যাম্‌নে এই দ্যাশ ছাড়ি যাওন যায়! রতন পাল আইছে কদ্দিন বাদে। কীরে তোর দিদির কতা মনে অইড়ল? বড় বিপদের মইদ্যে আছি গ দিদি, আঁঙ্গ মাডির হাতিল, কাপ, হুতুলের হেরুম আর চাহিদা নাই, কেউ বায়নাও করে না, অভাবের সংসার আর টাইন্‌তাম্ হারিয়েন না যদি কিছু ট্যাঁয়া ধার দিতেন। হ্যাতের কতা হুনি কষ্ট লাইগ্‌ল। দুই একদিন আগে মতিন আইছিল, হ্যাতে মাইন্ষ্যের বাগান হরিষ্কার করে, জঙ্গল সাফ্ করি বেড়ায়, অন্ নাকি কাম কাইজ হেরুম নাই। দিন চলের না, হরনে ছিঁড়া লুঙ্গি আর উদাম গা, সেরহানেক চাল দি কইলাম অন্ কোনরমে চালাই নে। ব্যবসাবাণিজ্য মন্দা, কারখানার ঝাঁপ বন্দ অই যার, উৎপাদন গেছে কমি, সরকার  আমদানি করি কত আর খাওয়াইব, ভাঁড়ারও শূন্য, মাইন্ষ্যের কেনাকাডির ক্ষমতা ক্যাম্‌নে থাইক্‌ব, রোজের জিনিষ কিনি পকেট খালি অই যার। বঙ্গবন্ধু আর কত বুজাইব, কয়, আম্‌নেরা আগাই আইয়েন বেকে, না অইলে আঁই আর বন্দু দ্যাশের তুন্ চাই চিন্তি কত চালাইয়ুম্, অনেক রক্ত দি আমরা স্বাধীনতা হাইছি, অন্ গড়নের কাম কইর্‌ত অইব হুরা শক্তি দি। দ্যাশে অন্ও হশ্চিমাগ চর ঘাপটি মারি বই রইছে, হেগুনে চায়, বাংলাদেশ ভাঙি চুরমার অই যাক্। আঁই ত রাস্তা ঘাড বানাইছি, ব্যাংক বিমারে জাতীয়করণ কইর্‌ছি, বন্দ কারখানা খুইল্ছি, ওষুধের ব্যবস্থা কইর্‌ছি, আরও করুম। বেক্গুনে আত না লাগাইলে সোনার বাংলা গড়ুম ক্যাম্‌নে, আঁই প্রধানমন্ত্রী অইতাম্ চাই না, আঁর দ্যাশের মানুষ সুহে শান্তিতে থাক্‌লেই আঁই খুশি। গ্ৰামের মাইন্ষ্যের উন্নতির লাই ইউনিয়ন হরিষদ বানাইছে। অন্ যদি সষ্যের মইদ্যে ভূত থায়, হ্যাতেনের নজর দিবার সময় আছে! ইগাইন আঁর কতা ন, আঁর স্বামীর কতা। তাইলে কী দ্যাশডা রসাতলে যাইব? এইডা বুজিয়ের এত সহজে এই দ্যাশের গরীব মাইন্ষ্যের দুখ দূর অইত না, মুনাফাখোর ব্যবসাদার, কালোবাজারি আর চোরাকারবারিরা লুডিপুডি খাইব। মনের মইদ্যে কী য্যান্ আই ধাক্কা খাইল, গুড়ুম গুড়ুম শব্দ অইল। গাছের তুন্ তাল হড়ার শব্দ অইল, দিনদুহরে কোমরে গামছা বাঁধি চোর হলাইল। জগার মা চেঁচাই বাজিমাত কইর্‌ল, আঁর কী সব্বনাশ অই গেল রে, তাল সুয়ারি চুরি করি লই গেল, মাসভর আঁর চইলব ক্যাম্‌নে, দ্যাশডা চোর ডাকাইতে ভরি গেল। চিন্তা করিও না গ জগার মা, আঁই তোঁর দাদারে দি ইউনিয়ন বোডে নালিশ জানাইয়ুম্, এই ত কেবল চুরি নয়, সিন্হা চুরি।

দিন যায় রাইত যায় কথা না হুরায়

        মানুষ তবু রই যায় বাঁইচ্বার আশায়

মরা মানুষের কান্দন জীবনে কহ্‌নও হুনি ন। অন্ দুই চখ বুজলেই হেই কান্দনের শব্দ আঁর বুয়ে বাজে। আইজ্ হাঁচজন মরে, কাইল দশজন মরে, হরু কুড়িজন মরে। না খাইত হারি বাঁচি থাওনের তুন্ মরি যাওন ভালা। দুই গরস্ ভাতের লাই দূয়ারে দূয়ারে ঘুইর্‌তে ঘুইর্‌তে বেকের চয়ের সামনে দুই চখ উল্টাই হালাইল, জ্যান্ত চখ মরা অইল, হরানডা বার অই গেল, কাউরে কিছু জিগ্গাইল না হইয্যন্ত। আঁঙ্গ দ্যাশের মানুষ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ হুইন্ছে, হাঞ্জাবিগ গুঁতা, বুটের লাথি খাইছে, দ্যাশ স্বাধীনের স্বপ্ন দেইখ্ছে, ভারতে শরণার্থী অই ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুইর্‌ছে, মশার কামড় খাই ম্যালেরিয়ায় ভুইগ্ছে, কলেরা অই কোনরমে বাঁচি রইছে হাঁড় কগা লই দ্যাশের মাডিত্ জীবন দিবার লাই। মঙ্গা কতাহান যে এত দাগ দিত হারে এর আগে বুজি ন। তেতাল্লিশের দূর্ভিক্ষ আঁই নিজের চয়ে দেইখ্ছি, ভারত তহ্‌ন হরাধীন আছিল, কত মানুষ যে না খাইত হাই মইর্‌ছে, হেই চেহারাগাইন মনে অইড়লে গা শিউরি উডে। আইজ্কাইল আবার হেই অভাব আই দরজাত্ কড়া লাড়ের। দুহের কতা আর কী কমু, চিন্তায় আর ঘুম আইয়ে না, ক্যাম্‌নে বাঁচি থাইয়ুম্, কী খাইয়ুম্। দেইখ্তে দেইখ্তে চাইরদিগের অবস্থাডা হাল্টাই গেল, হাহাকার আর হাহাকার। অইত হারে মুনাফাখোরেগ কেরামতি, কাওরে কিছু কইবার নাই, সরকার ত হুঁশিয়ারি দিছে, আমলাগ দূর্নীতি বরদাস্ত করা অইত ন, কিন্তু হুনে কে। বিদ্যাশ তুন্ চাইল ডাইল আনি হামাল দিব তার কি জো আছে! হুরা হিথিবীতে বলে খাইদ্যের আকাল। স্বাধীনতার যুদ্ধ শ্যাষ অইছে  দুই বছর তিন মাস খানেক অইল, ভাঙাচোরায় অবস্থা অন্ও হামাল দি উইঠ্ত হারে ন সরকার, বাজারের অবস্থাহানও খারাপ, ট্যাঁয়া হইসা হেরুম বিশ্যাষ কিছু নাই, ক্যাম্‌নে কী কইর্‌ব। 

     আইজ্ও মরে, কাইলও মরে। আঁঙ্গ ইয়ানের অবস্থা অইন্য জাগার তুন্ একটু ভালা বিধায় আঁর মাসীর ছোড হোলা হরিবার হরিজন লই আঁঙ্গ বাড়িত্ আই উইঠ্ছে। গরীব মানুষ, কানি খানেক জমি চাষ করি আর দোয়ানে কামকাইজ করি কোনরমে দিন চইল্ছিল। বানের জলে হসলও নষ্ট অই গেল, বাজার মন্দা অওনে মালিক কাজে আর রাইখ্‌ল না। আঁর আত ধরি কয়, দিদিগ আঁর হোলাহাইন গুনরে বাঁচা, না অইলে না খাইত হারি মরি যাইব। আতে কানাকড়িও নাই যে নৌকাত্ করি আইব, মাইল হনের আঁডি আঁডি আইছে। রাস্তায় হড়ি মরিও যাইত হাইর্‌ত। হোলামাইয়াগুনের হ্যাডে ভাত হড়ে ন হপ্তাহ খানেক অইল, মাইন্ষ্যের কাছে চাইচিন্তি হেন খাই বাঁচি রইছে, বুয়ের হাড়গুন এরুম অইছে বার তুন্ গণা যায়। কইলাম, আরও আগে আইলি না  কিয়ের লাই, দিদি কী এতই হর, হোলামাইয়াগুনের কী অবস্থা কইর্‌লি, নিজেও আদা মরা অইলি। হ্যাতে কয়, নারে দিদি দ্যাশের অবস্থা ভালা ন, জামাইবাবুর রোজগারহাতিও আগের মত নাই, আঁই ত বুজি। ভাত ডাইল বাড়ি দিলে হাভাতের মত খাইল, দেই আঁর চয়ে জল আই গেল। কইতে ত হারিয়ের না, আঁঙ্গ নিচু জমির হসলও জলের তলায় চলি গেছে, উঁচা জমির হসল বুদ্দি করি বর্গাদাররা কাডি হালাওনে হাত আট বস্তা ধান ভাগে হাইছি। এরুম দৃশ্য ত কহ্‌নও দেই ন, ক্ষণে ক্ষণে হাল্টাই যার। দলে দলে কারা আইয়ের, কারও মুখ ত আঁর চিনা নাই। বাঙালির মুয়ে আজ কত ক্ষত, কত দাগ, এই দাগ তোলা যাইত ন কী কোনদিন, হেগুনে কাঁদে, আঁসি নাই, কন্নাই যাইব জানা নাই, কালাই করা থালা লই খাড়াই রইছে, হ্যাড্ ভরাইবার লাই দুইডা ভাত নাই, বাড়ি নাই, ঘর নাই, এক দুয়ার তুন্ আর এক দুয়ার, হঁতের ধুলা গা’ত্ মাই হঁতেই হড়ি থায়। আঁই ত বেকের হ্যাড্ ভরাইতাম্ হাইর্‌তাম্‌ ন, খালি হ্যাডে হিরাই দিত অইব, হেগুনে চিল্লাই চিল্লাই চখ উল্টাই মরি যাইব আরও হঁত হার অই গেলে।

     আঁঙ্গ বাড়িত্ থাইক্‌বার ত ঘর নাই। গোয়াল ঘরের হাশে দুইহান ঘর আছে, এক্কান ঘরে বাড়ির হুরুষ মাইন্ষ্যে কামকাইজ না থাইক্‌লে গপ্পস্বপ্প করে, আর এক্কান ঘরে বদইল্লারা বই ওক্কা টানে। অভাবের জ্বালায় আত্মীয় স্বজনরা য্যাতারা দূর দূর তুন্ আইছে হ্যাতাগ লাই হেই ঘরে  মাথা গুঁইজবার ব্যবস্থা অইছে। নিজেগ ঘরবাড়ি ছাড়ি আঁঙ্গ বাড়িত্ আই উইঠ্ছে, শত অইলেও হরের বাড়ি, হ্যাডে খুদা আছে বুজে, লাজশরম ত বিসর্জন দেয় ন। বাইচ্চাকাইচ্চারা ডুয়র ফল, ঢেউয়া, গুলাবজাম খাই হ্যাড্ ভরায়। আঁঙ্গ বাজারেও জিনিসহত্র শাক্‌সবজির দাম আগুন, মূলামূলি কইর্‌লে দোয়ানদার চাষীরা খ্যাঁক করি উডে। এরুম দশা অইছে হশ্ন যে কইর্‌ব হেই হুযুগ নাই। দূর্‌বিত্তরা  গোপনে গোপনে মানুষ মারার কল কইর্‌ছে। গুদামে চাইল ডাইল মজুত করি দাম বাড়াই দিছে চতুরগুণ। হেগুনেরে যে ধরি ধরি শাস্তি দিব, সরকারের আতে হেই ব্যবস্থা নাই। অগইত্যা দ্যাশের মাইন্ষ্যের মরণ। দূর্ভিক্ষ আই আস্তে ধীরে গ্ৰাম কে গ্ৰাম উজাড় করি দের। আঁর সেজ বইনের বাড়ির অবস্থা খুব এক্কান ভালা না, দিনে আনে দিন খায়। বানের জলে ঘরবাড়িও জলের তলায় চলি গেছে। হরানডা কোনরমে বাঁচি আছে। কদ্দিন এভাবে থাইক্‌ব কে জানে। এই কারণে বেকের এরুম করি মাজা ভাইঙছে, উডি যে দাঁড়াইব হেই ক্ষমতা নাই। 

     আগুন যে এত তাড়াতাড়ি আঁঙ্গ ঘরের কাছে লাগি যাইব কে জাইন্‌ত। খলিলুর রহমান এনায়েতহুরের বাসিন্দা। ঘরামির কাম করি দিন কাডে। এই দুর্ভিক্ষের সময় হ্যাড্ চলে না, ঘর ছাইব কে। মাডেঘাডে যে বদইল্লাগিরি করি খাইব হেই হুযুগ নাই। হায় হায় রে হ্যাতের হোলাডা কলেরায় ভুগি চাইর দিনের মাথায় ভবলীলা সাঙ্গ কইর্‌ল। কারে আর দোষ দিমু, মাইন্ষ্যে যহ্‌ন রাইক্ষস অই যায়, তহ্‌ন ঈশ্বরের কাছে আত আতন ছাড়া উপায় থায় না। খবর আইছে, আঁঙ্গ বাড়ির তুন্ মাইল হাঁচেক দূরে কালিনগরের রাধা বোষ্টমীও হ্যাডের ব্যারামে দেহ রাইখ্ছে। কোয়ালে তিলক কাডি আঁঙ্গ মন্দিরের সামনের চাতালে নাচি নাচি কত্তাল বাজাই হরি সংকীর্তন কইর্‌ত। চাইল কুমড়া আলু যে যাই দিত খুশি মনে হোট্লা করি ঝোলাত্ ভরি নিত, কোনো উচ্চবাইচ্য কইর্‌ত না। যদি কইতাম্ আর এক্কান গান গাও না। আহা হেই যে টান দিত আর থাইম্‌ত না, কী সুর কী কতা, কে আর হুনাইব। কত চেনা অচেনা মানুষ এই অসময়ে ধরাধাম ছাড়ি চলি যার, আমরাই এই অনাচার দেওনের লাই হড়ি রইলাম, ভগবান আঁঙ্গরে তুলি নেয় না কিয়ের লাই। জীবনের কাছে মাইন্ষ্যের এরুম হরাজয় মানি নেওন যায় না।  আমেনার মা আঁঙ্গ বাড়িত্ আইছে, হেতির মুয়ের দিগে চাওন যায় না। শামলা রঙের গাহান য্যান্ চাম্টি বাঁধি গেছে, চুলে তৈল হড়ে ন কদ্দিন কে জানে, জট্ হাকাই গেছে আগায়। বাড়ির মাইয়ারা হেতিরে ঘিরি ধরি কত কতা জাইন্‌ত চায়। কত কষ্ট করি যে বাঁচি আছে, ডিম বেচি হেরুম আর সংসার চলে না।

বইও গ মাসি, এদ্দিন বাদে আইলা? আইত ত মন চায়, শরীল দেয় না যে। আঁর হ্যাতেনে দিনমজুরি করি যা কামাই করে, সংসার আর চইল্ত চায় না, হোলামাইয়াগুনরে আর বাঁচাইতাম্ হাইর্‌তাম্ ন। তোঁর লগে আইত তোঁর মাইয়া আমেনা, বিয়ার লায়েক অইছে ত। এই দুর্দিনে কে আর শাদি কইর্‌ব কও, বেকের ঘরে ত অভাব অনটন লাগিই আছে। আঁর কী হেরুম কোমরের জোর আছে, বেকের কাছে চাইচিন্তি বাঁচি আছি। খোদার গজব লাইগ্ছে গ, আর কইও না, গত মাসে আঁর বড় ভাইয়ের মেজ হোলাডা চট্ করি মরি গেল, এট্টুও সময় দিল না । শুধু কচুর হাগ্ আর লতি খাই ক্যাম্‌নে মানুষ বাঁচে। চয়ের জল হালাইও না গ, বড় কষ্ট লাগে। কবে যে মাইন্ষ্যে হ্যাড্ ভরি খাইত হাইর্‌ব, মনের সুহে দিন কাটাইব, কী জানি।

উত্তর দিগের বাড়ির রতনের মা আর লইড়্ত চইড্‌ত হারেন না। মাস দুয়েক অইল স্বামীর শরীল অবশ অই বিছ্নায় হড়ি রইছে। হেতির একমাত্র হোলা শহরে কামের খোঁজে যাই আইজ্ দুই মাস অইছে হেরত আইওনের নাম নাই। খাল হার অই হাঁ টিপি টিপি মাথাত ঘোমটা টানি অশ্বত্থ গাছের হাশ দি হেতিগ ঘরে যাই দেই ঘরে কেউ নাই, কুত্তাডা ঘেউ ঘেউ করে। দরজাডা ঠেলি ভিত্‌রের ঘরে উঁই মারি চাই। এক কোনায় হেতি ডুক্‌রি ডুক্‌রি কাঁন্দে, বুক চাপড়ায়, এরুম দৃশ্য দেইয়ুম্ ভাইব্তাম্ হারি ন, মন খারাপ অই গেল। থালাবাসন হাঁড়িকুড়ি মাডির মইদ্যে ছড়াই ছিডাই রইছে, বিলাই এক্কান বাসনে মুখ দি চাডের, ছোড হোলাহাইনগুন উডানে কিত্ কিত্ খেলের। অইন্য গিরির বউঝিরা কেউ ঘর হরিস্কার দের, কেউ বাসন মাজের, কেউ কচুর হাগ্ চাপাইছে, কারও মুয়ে রা নাই। আকাশডা কালা অই আছে, ঝম্ঝম্ করি বিষ্টি নাইম্‌ব এট্টু হরেই। জিগ্গাইলাম কোন খবর হাও ন অন্ও? কাঁথা ঘোরা দি হাহান গুডাই হড়ি রইছে, মুখ দি কতা হরে না, চিঁ চিঁ গলায় কইল, না গ দিদি, যতিন খুড়া কানাঘুষা হুইনছে, কোন এক্কান চালের গুদামে কাম কইর্‌ত হোলা, মালিক গরুর মত খাডাইত, হইসাকড়ি হেরুম দিত না।  ব্যবসাহাতি মন্দা অওনে ছাড়ি দিছে। মনের দুঃখে হোলা আঁর কন্নাই যে চলি গেল, বাঁচি আছে না মরি গেছে কিচ্ছু জানি না গ দিদি। এই জীবনে আর হোলার মুখ দেইখ্তাম্ ন। দুইডা হইসার লাই হোলারে শহরে হাডাইলাম্, এই কী অইল! আঁর কোয়াল মন্দ, অন্ আঁই কী করি। হেতির অসহায় মুখহান কালা অই গেছে। দিনকাল এরুম অইছে, কেউ যে অন্যের খবর নিব, মনের হেই অবস্থা নাই, চিড় ধরি গেছে। তবু দন্দে দন্দে কইলাম, হোলাডার খবর তোঁরা কিছু কী জান? একজন আরেকজনের মুয়ের দিগে চায়। একজন খালি মুখ খোলে – কইয়েন না কাউরে দিদি, আঁর ভাইয়ুর খবর হাইছে, কামকাইজ না হাই হ্যাডের জ্বালায় রতন মরি গেছে। কে যে কহ্‌ন মরি যাইব কেউ জানে না। রতনের বাপ মারে অন্ কে চাইব, বেচারি আশায় আশায় বই রইছে, রতন হেরত আইব, হেতিগ অভাব ঘুইচ্ব, হ্যাড্ ভরি ভাত খাইত হাইর্‌ব। দ্যাশের কিয়ের লাই যে এই হাল অইল, এইডার উত্তর কে দিব। কত জনে কত কতা কয়, কোন্‌ডা হাঁচা কোন্‌ডা মিছা কে জানে। রতনের মারে আঁই কী সান্তনা দিমু, নিজের মনের ঘোরে নিজেই আঁই নাজেহাল। রতনের মা আবার ডুক্‌রি কাঁদি উইঠ্ল। হেতির কান্দনের শব্দ হুইন্‌তে হুইন্‌তে আঁই হামা হার অইত যাই হিছল্ খাইলাম্। 

     আঁঙ্গ দ্যাশের হাল হকিকত্ আঁর ভালা ঠেয়ের না। গরুগোতান বানের জলে ভাঁই গেছে। জমির হসল জলের নীচে চলি গেছে। আলের গরুও আর নাই যে চাষ করি খাইব। মনোরঞ্জনের অগ্গা হাটনাইয়া তৈলতৈলা তাগ্ড়া গরু আছিল, দশ বার সের  দুধ বাড়ি বাড়ি বেচি হাঁচ জনের টানাটানির সংসার চলি যাইত। অন্ হ্যাতে নিজেও জানে না, কাইল্যা কোনদিন অপেক্ষা করি আছে। সরকার হথ্যম হথ্যম কিছু ট্যাঁয়া হইসা দি সাহায্য কইর্‌ছে, কত আর কইর্‌ব, অন্ আঁর দিন চলে না। আঁঙ্গ বাড়িহান উঁচা বিধায় জলে ডুবে ন। হ্যাতে আঁর আতে হায়ে ধরি কয়, জেডিমাগ এবার হুয়াই আঁই মরি যামু। কত মানুষ ত না খাইত হারি মরি যার, কদ্দিন আর হাগ হাতা খাই বাঁচুম। আঁই মরি গেলে আঁর হোলামাইয়াগুনের দিগে কেউ হিরিও চাইত ন, ভিক্ষার ঝুলি লই দুয়ারে দুয়ারে হিয়াল কুত্তার মত ঘুইর্‌ব। ক্যান, সরকার তুন্ যেই হাঁচ গণ্ডা জমি হাইছচ্ হেই জমির কী অইল? হেই জমি চাষ কইর্‌ত গেলে সার বীজ লাইগ্‌ব, হেই হইসা হাইয়ুম্ কন্নাই। জমি কী ইয়ানে, একে ত জলা জমি, মাইল খানেক দূরে, কোনরমে এবার ধারদেনা করি গায়েগতরে খাডি চাষ কইর্‌ছিলাম্, উহরআলা রাইখ্ল নি। গরীবের লাই কেউ নাই গ। আঁঙ্গ লাই কেউ নাই। এত কতাও হ্যাতের মনের মইদ্যে জমা আছিল। হ্যাতেরে ক্যাম্‌নে আঁই সান্তনা দিমু, যা কইছে বাস্তব কতাই ত কইছে। হ্যাতে অন্ বাঁইচ্ব ক্যাম্‌নে। মাইন্ষ্যের কাছে আত হাতন ছাড়া আর কোন উপায় নাই। হ্যাতেরে বয়াই আস্তে আস্তে ডোবার ধারে যাই মাচার তুন্ লাউ আর ক্ষেতের তুন্ মাইরার ডাঁটা তুলি আতে দি কইলাম্, এগুন লই যা, বউরে কইছ্ তরকারি রাঁধি দিত। আঁই আর কিইবা কইর্‌তাম হাইর্‌তাম্, আঁর ঘরেও দিবার মত কিছু নাই। 

    আঁর স্বামী হপ্তাহান্তে বাড়ি আইছে। হ্যাতেনের মনডাও ভালা নাই। বঙ্গবন্ধু নাকি বেকেরে কর, দ্যাশে আইজ বড় দুর্দিন, আম্‌নেরা একতাবদ্দ অই কাম করেন, অবস্থার হুযুগ নিয়েন না, ভাঙা দ্যাশেরে আঁই অন্ও গইড়্তাম হারি ন, চোরাচালানকারীগ দাপাদাপি, বেশি বেশি হরিশ্রম করি উৎপাদন না বাড়াইলে এই দ্যাশ্‌রে কেউ বাঁচাইত হাইর্‌ত ন। আঁই বন্দু দ্যাশ তুন্ কত চাইচিন্তি আনুম। হাকিস্তান আঁঙ্গরে গোলাম করি রাইখ্ছিল এদ্দিন, যাইবার সময় সব ট্যাঁয়া চুরি করি লই গেছে, রাস্তাঘাড ভাঙি দিছে, রেললাইন ভাঙি দিছে, বন্দর ভাঙি দিছে, নিজের দ্যাশে বাঁন বানাইছে, আঁঙ্গ দ্যাশে বানায় ন, হঙ্গু করি কলোনী বানাই রাইখ্ছিল। অন্ দেশডারে আঁর বাঙালি ভাই বইনেগ নোয়া করি গড়্ইত অইব, সোনার বাংলা বানাইত অইব। আহা কত কাতর অই দ্যাশবাসীরে কইছে কিন্তু কারও হুঁশ অর বলি ত মনে অয় না। স্বামীরে জিগ্গাই আঁঙ্গ গ্ৰামের মাইন্ষ্যে ত আর বাঁইচ্ত ন, শহরেও কী একই অবস্থা। আঁর কইও না, হেইসব অবস্থার কতা হুইনলে তুঁই সইহ্য কইর্‌তে হাইর্‌তা ন। অভাবের তাড়নায় চরের তুন্ বাঁচার আশায় দলে দলে মানুষ সর্বশান্ত অই শহরে ছুডি আইয়ের। কে এত মাইন্ষ্যেরে খাওন দিব কও ত। হোছন আলীরে চিন ত! আঁঙ্গ চরের এক কানি জমি চাষ করে, বইন্যায় হসল হুদ্দা ঘরবাড়ি বেক্গাইন জলের তলায় চলি গেছে, হরিবার লই মাইল দশেক হাঁডি সোমত্ত মাইয়ার লগে আঁর কাছে আই উইঠ্ছে। আঁর রোজগার গেছি কমি, তবুও কী হিরাই দিতাম হারি এই বিপদে। হঁতের মইদ্যে কে আর খাওন দিব, মুখহান হুকাই আম্শি অই গেছে, সইহ্য করন যায় না। মানিকরে কইলাম ভাত বইয়া, ঘরে আলু আছে, ডাইল আছে, রাঁধি হেগুনেরে খাইতে দে আগে। বিশ্বাস কইর্‌তে হাইর্‌তা ন, গপাগপ্ খাইল য্যান্ রাজভোগ আতে হইড়ছে। হিন্দু মোছলমান বাছবিচার করি ন, হিছের ঘরে থাইক্‌তে দিলাম, এত বছর ধরি জমি চাষ করে, কিছু দিক্ না দিক্ জমিডা ত রক্ষা কইর্‌ছে, ন ত তের ভূতে খাইত। কামের কামই ত কইর্‌ছেন, নয় ত নিজের কাছে নিজে অপরাধি অই যাইতেন। বঙ্গবন্ধুর কতাহান আঁর মনে ধইর্‌ছে, হাঁচা কতাই ত, এই যে আমরা এত লেয়াহড়া শিখছি, কার ট্যাঁয়ায়, গরীব মাইন্ষ্যের খাড্নির ট্যাঁয়ায়। সরকার আর কোন্ জাগার তুন্ ট্যাঁয়া হাইব। নিজের গুণকীর্তন নিজে করি লাভ নাই, হেগুনের লাই আঁঙ্গ অনেক কিছু করন লাইগ্‌ব, যদি দ্যাশডারে বাঁচাইতে অয়। ঐ বেইমানগুন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নডারে সাকার অইতে দিত ন, দ্যাশ গড়ার নাম নাই, ধম্ম লই মরে, মাইন্ষ্যে মাইন্ষ্যে একতা না থাইক্‌লে দ্যাশের কোন উন্নতি অয়! এই যে হত্যেক দিন  কাতারে কাতারে ভিক্ষুক  শহরে আইয়ের, ক্যামনে  সামাল দিব, ঈশ্বর জানে। শহরের মাইন্ষ্যে নাক ছিট্কায় আদা লেংডা মানুষগুনরে দেই, কিন্তু হেগুনেই বা যাইব কন্নাই, এই দায় আমরা কী এড়াইতাম্ হারি, সরকার আর কত কইর্‌ব।

     কদিন অইল মাইয়াডা আঙ্গ বাড়িত বেড়াইত আইছে। মাইয়া ত কত কতা লেয়ে। মনের কতা মনেই থাই যায়, কওয়া কী আর অয়। এইবার ইস্কুলের হড়ালেয়া লই দুই চার কতা লেইখ্ছে। হেতির ক্লাসে ছাত্ররা দিন দিন কমি যার, বুইজ্ত হারে ন ব্যাপারহান কী। হড়ালেয়ার বারে ঘরের কতা ক্যাম্‌নে জিগ্গাই। এক ছাত্ররে বাবা সোনা করি মাথায় আত বুলাই হ্যাতের বন্দুর ইস্কুলে না আইবার কারণ জিগ্গাইলে কয়, দিদিমণি আঁই কইছি কাওরে কইয়েন না, হ্যাতের বাবা ত রিক্শা চালাই খায় হসপিটাল বাড়ি বাজার ব্যাংক বাস স্ট্যান্ডে। অ্ন্ মাইন্ষ্যে রিক্শায় উইঠ্ত চায় না হইসা কড়ির অভাবে, সংসার চালাইত হারে না, আঁডি চলি যায়। আব্বা চাইল কিনত হারে না, খানা খাইত হারে না, ইস্কুলে আইব ক্যাম্‌নে। মাইয়া ত হুনি থ। হরে হরে জাইন্‌ত হাইর্‌ল, ঘরে ঘরে এরুম হাল এই মঙ্গার বাজারে। ইস্কুলে ছাত্ররা না আইলে ইস্কুল চইল্‌ব ক্যাম্‌নে। সরকার বিনা বেতনে হড়ায়, হস্তায় বই খাতা হিন্সুল কিনি দেয় যাতে করি মুরুখ্য না অই থায়। হেতিগ ট্রেনিং-এ বার বার করি বুজাইছে কোন অবস্থাতেই ছাত্ররা ইস্কুল ছুট্ য্যান্ না হয়, মাষ্টরগ যেরুম করি হোক খেয়াল রাইখ্তে অইব। বঙ্গবন্ধু জোর দিছে হত্যেক ঘর তুন্ ছোড ছোড হোলামাইয়াগুনেরে ইস্কুলে আনি হড়ালেয়ারে ভালবাইসতে শিখাইতে অইব, হইক হড়ার মত কইছে বাইচ্চাকাইচ্চারাই জাতির ভবিষ্যৎ, এই কতা য্যান্ ভুলি না যায়। মাইয়া অইড়ছে বিপদে, কী কইর্‌তে কী করা যায়। মাথার চুল ছিঁড়ে আর ভাবে। একদিন আঁই কইলাম এক কাম কর, দেখ না হোলামাইয়াগুনরে ইস্কুলে খাওনের ব্যবস্থা কইর্‌তে হারচ্ নি। আঁর কতাগাইন হেতির মাথায় হাঁদাই গেল। কিন্তু মুশকিলটা অইল ট্যাঁয়া জোগাড় অইব ক্যাম্‌নে? হেতি দেশে যাই স্কুলে সহশিক্ষকেগ লগে হরামর্শ করি ঠিক কইর্‌ল মাস মাহিনার তুন্ কিছু কিছু ট্যাঁয়া দি বেকে মিলি অভাবী ঘরের ছাত্রগরে দুহরের খাওনের বন্দোবস্ত কইর্‌ব। ইস্কুলডাও টিকি থাইক্‌ব, হেগুনেও না খাই মইর্‌ত ন, হড়ালেয়াও বন্দ অইত ন, দ্যাশডাও চরচর করি আগাই যাইব। এত এক্কান ভালা কামেও কত রাজ্যের বাঁধা বিহত্তি, এলাকার মাতব্বররা কত ওজর আপত্তি জানাইল। ইস্কুলের মইদ্যে খানাহিনা, তাও আবার হিন্দুর হোলারা আর মোসলমানের হোলারা একলগে বই খাইব, এইডা ক্যাম্‌নে মানন্ যায়। আঁর মাইয়া অইড়ল মহা সমইস্যায়, প্রস্তাবডা হেতির তরফ তু্‌ন্ আইছিল কিনা। কেউ কেউ কইল হড়ালেয়া ভালা কতা, তাই বলে জাত ধম্ম টঙে তুলি অইত হারে না। আঁর মাইয়া আর এক ধাপ আগাই যায় কইল, দ্যাশের তুন্ আম্‌নেগ কাছে জাতধম্ম বড় অইল। কে হুনে কার কতা, কিন্তু মাইয়ার কতার কাছে বেকে হার মাইন্ল, অকাইট্য যুক্তি কেউ খণ্ডাইত হারে ন। বাড়ি বাড়ি ঘুরি ঘুরি বাপমাগ আতে হায়ে ধরি কইল, একবার খালি আম্‌নেরা হোলামাইয়াগ মুয়ের দিগে রেনি চান, কন্ ত হেগুনের কী হড়ালেয়ার অধিকার নাই, একবার যদি হিছাই যায় আর জীবনেও ত মাথা তুলি দাঁড়াইত হাইর্‌ত ন। হ্যাতেনরা শ্যাষমেশ ইস্কুলে হাঁডাইল। আইজ মনে অইল মাইয়ারে শিক্ষা দেওন আঁর সার্থক অইছে।
     ওমা এ দেইয়ের এক বিপদের উপর আর এক বিপদ। এদ্দিন এই মহাবিপদের কতা মুয়েই হুইন্ছি। গ্ৰামকে গ্ৰাম উজাড় অই যার। কত ওষুধ সরকার তুন্ দের, কুলাই উইঠ্ত না, খাওনের জল ক্যাম্‌নে যে বিষাক্ত অই গেল, কে কইব। এদিগে যুগী পাড়ায়, মোল্লা পাড়ায় ম্যালেরিয়া কামড়াই ধইর্‌ছে, মাইন্ষ্যের দুরবস্থা দেই ব্যাদিশা অইবার জোগাড়। এক ঘরে ম্যালেরিয়া আর কলেরা দুইডাই এক লগে ধইর্‌ছে, এই রোগের তুন্ রেহাই হাওনের কারও কাছে কোন ওষুধ দূরে থাক তুক্‌তাক্ও জানা নাই। গ্ৰামের তুন্ মরা কান্না ভাঁই আইয়ে। ভয়ে আঁঙ্গ বেকের বুক কাঁপে। রাইতেও মাইন্ষ্যের চয়ে ঘুম নাই। ভোর অইতে না অইতেই আঁর খুড়া হৌড় ঘরের তুন্ এক মাইয়া হ্যাডের ব্যথার যন্তনায় মেদিনী হাঁডায়। লাজ শরম বিসর্জন দি হেতি দৌড়ায় হায়খানায়, শোয়ার ঘর তুন্ দুইশ আড়াইশ আত দূরে। দৌড়াই আইয়ে, দৌড়াই যায়, মাইয়া এক সময় কাহিল অই হড়ে। আমরা ছুডি যাই। ডাক্তর হাইব কন্নাই, দশ গ্ৰাম দি এক্কান ডাক্তর বাঁচি আছে, হরিহরি ডাক্তর। ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি করিও ত উপায় নাই, হ্যাতেনে কোন মুই যাইব। লবন চিনি জলে মিয়াই সরবত বানাই খাওয়াইলাম্, কিন্তু কোন কামে আইয়ে ন। মাইয়া আরও জোরে চেঁচায়। চেঁচাইতে চেঁচাইতে এক সময় নির্জীব অই যায়। স্যালাইনের খোঁজ মিলছে চাইর মাইল দূরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। যাইত অইব নৌকাত্ চড়ি, কে আইনব, আইন্‌তে হাইরলেও লাগাইব কে। মাইয়া ততক্ষণে শ্যাষ। বেকে ইষ্টনাম জইপ্‌ল, ইয়ার হরে গলা ছাড়ি কাঁইন্‌ত শুরু কইর্‌ল। বাড়ির কুত্তা বিলাইও কাঁদে। রোগের কতা হুনি আঁর স্বামী ছুডি বাড়ি চলি আইছে। ওমা এই দুষ্ট গ্ৰহ কী আঁঙ্গ বেক্গুনেরে শ্যাষ করি দিব। হশ্চিম কোনার দিগে খুড়াত শেজ দেওরের ঘর। হেই মরণ রোগ কী হ্যাতাগরেও ধইর্‌ছে, না অইলে এত বিলাপ কিয়ের লাই – আঁর যাদু আঁঙ্গরে ছাড়ি চলি গেল গ। দৌড়ি যাইতে না যাইতেই হেই বিলাপও থামি গেল। হুরা ঘরে বাহ্যি বমিতে থক্ থক্ কইর্‌ছে, গন্দে টিকা যায় না। তিনজন মানুষ নিস্তেজ অই হড়ি রইছে। কে কার লাই আর কাঁইনব, তিন জায়ে মিলি কাঁদাকাডি করি বুক ভাসাইলাম্। আতঙ্কে ভোগের হুরা বাড়ি, কহ্‌ন কার ডাক আইয়ে। বাড়ি হুদ্দা বেকে কী মনে করি এক লগে কাঁইনতে লাগিল – কী এক্কান মরণ রোগ আইল গ, আঁঙ্গ বংশ নির্বংশ করি দিব। ঘুরি ঘুরি বেলা হইড়লে ডাক্তর চাইর বাড়ি ঘুরি ব্যাগ আতে করি ঢুইক্‌ল। ডাক্তরের মুখ দেই বেকে য্যান্ চাঁন আতে হাইল।  আতে হায়ে ধরি কইল, আঁঙ্গরে বাঁচান ডাক্তরবাবু। ডাক্তর হতভম্ব অই গেল – বাঁচা মরা আঁর আতে আছে নি। আকাশের দিগে আত তুলি হন্যাম করে। হ্যাতেনেও মাইন্ষ্যের রোগ সারাইবার লাই উপরওয়ালার আশীব্বাদ চায়। মুয়ে কয়, হে ঈশ্বর আঁরে আর এত মৃত্যু দ্যায়াইও না। ঘরে ঘরে বুকহাঁডা চিৎকার, কোন ঘরে যাইব, এও টানে, হেও টানে। বাঁচানর লিপ্সায় বেক্গুনে এক্কারে ভুলি গেল, হেগুনে এক গুষ্টির মানুষ। দুই তিন দিনের মইদ্যে বেক্ ঘরে একজন দুইজন করি খালি অই গেল। এই দৃশ্য আর দেওন যায় না, বেক্গুনে কোয়াল চাপড়ায়,কে কার চয়ের জল মোছাইব।  বাড়ির অবস্থা দেই আঁরও মৃত্যুভয় অইল, কী জানি এইবার কারে লই টান দেয়, হুরা দ্যশডা না শ্যাষ অই যায়।

ক্যাম্‌নে চিন্‌ব দ্যাশ কন্নাই রে স্বদ্যাশ 

        মনের ঘরে বসত করে এরুমই বিদ্বেষ

মরি যাইতে যাইতে মাইন্ষ্যে ভাবে যদি আর একবার বাঁইচ্তাম হারি তাইলে চাইরদিক ভালা করি জীবনডারে উল্টাই হাল্টাই দেইয়ুম্। আঁঙ্গ দ্যাশডার অন্ কী যে কষ্ট, ল্যাংরাই ল্যাংরাই আঁডে, জানে না কবে হা সোজা করি হাঁইডব। দুন্নাই হুদ্দা মানুষ কত সুয়ে শান্তিতে আছে, আঁঙ্গ দ্যাশের মাইন্ষ্যের ভাইগ্যে সুখ লেয়া নাই, কোয়াল মন্দ। তয় এক্কারে কিছু হয় ন ক্যাম্‌নে কই। কত ঝড় ঝাপটা আঁঙ্গ উপ্‌রে দি গেছে, সইহ্য ত কইর্‌ছে আশায় আশায়। হেই আশায় জল ঢালি দি গোড়ায় কুড়াইল মাইর্‌ছে। হিয়ের লাই বঙ্গবন্ধুর চেষ্টার কসুর নাই, দ্যাশের মাইন্ষ্যেরে ডাকি ডাকি কয়, আম্‌নেরা আঁর স্বপ্নরে সার্থক কইর্‌তে রাজি আছেন ত, এই দ্যাশের মাইন্ষ্যের ভালার লাই আঁর হুরা যৌবনহান বিলাই দিছি, আইয়েন কাঁধে কাঁধ মিলাই কাম্ করি। আঁই কতাগাইন হুনি আর হুডাইন্না জলের মত উত্লাই উডি। কত মাইন্ষ্যে ত হ্যাতেনরে কত নিন্দা মন্দ করে, আঁই এক কান দি হুনি, আর এক কান দি বার করি দি। ১৯৪৮ সাল তুন্ হ্যাতেনের লড়াইহান নিজের চয়ে দেই আইছি, চব্বিশ বছর ধরি এই লড়াই  দেইয়ের, ১৯৩৮ সালে বাইচ্চা বয়সে জেলে গেছে।  কত মাইন্ষ্যে ত বেইমানি কইর্‌ছে, হ্যাতেনে দমে ন, লড়াই ত চালাই গেছে, তুড়ি মারি উড়াই দিছে, বারে বারে কইছে বাঙালিরা কোন অংশে কম ন, বাঙালিরা সংখ্যায় বেশি, বুদ্দিতে ভালা, লেয়াহড়ায় ভালা, আক্কলে খড়খড়ে, মাইর খাই গেছে সামরিক শক্তি নাই। মনে ত আছে ১৯৫৪ সনে শেরে বাংলা ফজলুল হকের লগে হ্যাতেনরে যহ্‌ন ঘরের মইদ্যে অন্তরীন করি রাইখ্ছিল, হাঁচ হাজার কর্মীরে জেলে হাঁডাইছিল, হেই সময় কেউ কারো বাড়িত্ জায়গা দে ন, আত্মীয় হজন ডরাইত, কেউ এক্কান হইসা দি সাহায্য করে ন। হেই সংগ্ৰাম আইজও করের। কত মানুষের রক্তে রাজহঁত ভিজি গেছে, কত মা বইনের ইজ্জত গেছে, কত মা হারাইছে হোলারে, কত মাইয়া স্বামী হারাইছে, কত বাবা সন্তান হারাইছে, কে কইব।

     আইজ দ্যাশে নোয়া সূর্য উইঠ্ছে ঠিক কতা। সবুজ মাডের বুয়ে সূর্যের লাল রঙ আর মুক্তিযোদ্ধাগ তরতাজা রক্ত খালি দশ ছয়ের হতাকায় নাই, বাংলার মাইন্ষ্যের মনের মইদ্যে গাঁথি রইছে। কে গাঁথি দিছে, আঁঙ্গ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উর্দু চাপাইতে চাইছে ত শতানরা, হারে ন।  আঁঙ্গ মুয়ের ভাষা হুরা দ্যাশডাতে যে লেপ্টাই রইছে হ্যাতারা বুজ্তেই হারে ন, আঁঙ্গ হোলারা ত রক্ত দিছে মায়ের ভাষারে বাঁচাইব বলি, হেই রক্ত যে একদিন হতাকার রঙ অই যাইব কেউ ভাইব্তও হারে ন।  ভাবনায় আছিল শয়নে স্বপনে, হিয়ের লাই হ্যাতেনে কহ্‌নও অনুভূতির কতা, অনুভূতির হ্যাডের ভিত্‌রে জন্ম নিছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কতা। হ্যাতেনের মাথায় ঘুরে নোয়া এক গণতন্ত্রের কতা, শোষিতের গণতন্ত্র, শোষকের নয়। সমাজতন্ত্রের কতা কইত যাই শোষণহীন সমাজতন্ত্রের কতা কন্, বেকের ধম্ম হালনের অধিকারের নাম দিছেন ধম্মনিরপেক্ষতা, ধম্মরে রাজনীতির কামে ব্যবহার করা যাইত ন। হ্যাতেনে বিশ্বাস করেন কৃষক-মজুরের যে অধিকার, সরকারী কর্মচারীগ হমান অধিকার, কারো বেশি কম ন। হ্যাতেনে ত কয়, আমরা জনগণের সেবক, মাষ্টর ন। খারাপ ত কিছু কয় ন। আমরা এরুম জাতির পিতা কন্নাই হামু, যিনি জাইন্‌ত চান – তোঁরা না খাই মরছ, হরনের কাপড় নাই, কিয়ের লাই আমারে দেইখতে আইছ, কিয়ের লাই আমারে ভালবাস? আমার কাজ আমি করেছি, এইবার আমারে ছুডি দেওকিছু মানুষ আছে হেইসব কতার বিরোধ করের, হ্যাতেনরে ভুল বুজের। মানুষডারে সময় দিত অইব ত, রাতারাতি আঁঙ্গ হরিবারের সমস্যাগাইন কী সমাধান অই যায়, কন্ চাই! কী কও গৌরিনাথ, তোমরা ত সরকারি মাষ্টর, বঙ্গবন্ধু কতাগাইন কিছু ভুল কইছে নি? মাইন্ষ্যেরে দ্যাশের কাজে লাগানের লাই আতে হায়ে ধইর্‌ত বাঁই রাইখ্‌ছে বঙ্গবন্ধু। কয় ত ভালা ভালা কতা কিন্তু হুনে কে। ঘুষখোর আর চোরাচালানকারীরা ত মাথা চাড়া দি উইঠ্ছে। হেই দুষ্টগুনরে হামলাইতে গেলে মাইন্ষ্যের সহযোগিতা দরকার। দ্যাশের শিক্ষিত মাইন্ষ্যেরা ত উল্টাদিগে আঁডের। গৌরিনাথ মাষ্টর ত ভাইব্তেও হারের না, ক্যাম্‌নে এত সহজে মাইন্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাগ বলিদানের কতা ভুলি গেল! 

     গড়গড় করি মাষ্টর কই গেল, হুইন্ছেননি দ্যাশের মইদ্যে নোয়া এক গণ্ডগোল লাগি বইছে, হাঁচা কতা না গালগপ্পো ক্যাম্‌নে কইয়ুম্। রক্ষীবাহিনী গইড্‌ছে না বঙ্গবন্ধু, হ্যাতাগ লগে সেনাবাহিনীর কারো কারো  মাইনাকড়ি আর উঁচা নিচা হোষ্ট লই হিংসাহিংসি শুরু অই গেছে। এই রেষারেষি একদিন দ্যাশের ইতিহাস ভূগোল হাল্টাই দিব। কীরম বজ্জাত্ দেইখ্ছেন, স্বাধীন অইছে আর কদ্দিন অইল, অনে হাঁডু ভাঙি হড়ি যার। শোধরাইবার লাই বঙ্গবন্ধু শাসন ব্যবস্থায় হরিবর্তন আইন্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়ি রাষ্ট্রপতি অইছেন, হেইডাও কেউ ভালা চয়ে দেয়ের না। আঁর কাছে কিন্তু ভালা ঠেহের না বুইজ্জেন নি। তোঁর এত বুদ্দি ক্যামনে অইল, মাষ্টর আগাম বুইজ্তে হারে। আঁর কী মাইয়া বলি বুদ্দি কম, ইয়ের লাই টের হাই না! মাইয়াগ ভগবান ক্যাম্‌নে এত কম বুদ্দি দি হিথিবীত্ হাডাইছে।

     এইডা আবার কী কতা কইলেন, হুরুষেগ তুন্ মাইয়াগ বুদ্দি ঢের ভালা। দেয়েন না, আম্‌নের মাইয়া এট্টু হুযুগ হাই আইজ্ মাষ্টর অইছে, আঁঙ্গ গ্ৰামের মাথা উঁচা করি দিছে। ইন্দিরা গান্ধী ভারতের মত এত বড় দ্যাশ হামলার, বিপদের সময় কেরুম বুদ্দি করি আঁঙ্গ দ্যাশের হাশে খাড়াইছে, আঁঙ্গ দ্যাশেরে স্বীকৃতি দিছে, না অইলে এত তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা আইত নি। বঙ্গবন্ধু বেক্ বক্তিতায় বড় বড় করি এই কতাহান কয়। আর এক প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকে। হেই বেডি আবার কে? শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, আর এক্কান হরিচয় অইল বিশ্বের হথ্যম নারী প্রধানমন্ত্রী। পোলিশ বিজ্ঞানী মেরি কুরি’র এর নাম হুনেন ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের মাইয়া মানুষ ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা  মহাকাশে হৌঁছি গেছে। কীসব আজব কতা কও। আঁই ক্যাম্‌নে হুনুম্ উনাগ কতা, অল্পস্বল্প বিদ্যাবুদ্দি লই এত কিছু জানা যায় নি, মোল্লার দৌড় মসজিদ হইয্যন্ত, রেডিও আর হপ্তাহান্তে এক্কান খবরের কাগজ, হ্যাতেনে শহর তুন্ লই আইয়ে। আঁর মাইয়াডায় আঁর আগ্ৰহ দেই এক্কান দুইহান বই আনি দেয়। তোঁরা ত জান আঁই মাইন্ষ্যের লগে মিশি, কতা কই, ভালবাসি বেকেরে। এক্কান কতা হাঁচা মাষ্টর, মাইন্ষ্যেরে ভালবাসলে অনেক কিছু শিখন্ যায়। হেই জ্ঞানে বুজি তুঁই ঠিক কতাই কইছ, মাইন্ষ্যের মুখ চখ দেই বুইজ্তাম হারি, দ্যাশডার অবস্থা বিশ্যাষ ভালা না, শীগ্‌গীরই বড় এক্কান গোলমাল লাইগ্‌ব।

      ঘুম তুন্ উডিই এরুম এক্কান অবস্থা দেইয়ুম, ভাইব্তাম হারি ন। ওমা, কি দেইয়ের, যে যে মুই হারের, ছুডের। কিয়ের লাই ছুডের কী জানি। একজন আরেকজনের কানে কানে কতা কয়। কতা হুনি চয়ে মুয়ের ভাবহান হাল্টি যায়, দৌড় মারে। আতঙ্কে আঁই নিজেও ঘর বার কইর্‌লাম। যারে জিগ্গাই হেই আত লাড়ে। কইব কইব ভাব, কিন্তু কইত হারে না। মাইন্ষ্যে য্যান্ খাওন দাওন ভুলি গেছে, বদইল্লারা কামে যার না, ওক্কাও টানের না। আঁঙ্গ হুইর হাড় দি সোজা রেইনলেই ডাইন হাশের বাড়ির বেক্গাইন দেয়া যায়। হেই বাড়ির জোয়ান হোলারা খাড়াই খাড়াই বিড়ি টানে আর হায়চারি করে, কোয়ালও চাপড়ায় থাই থাই। কী যে অইল, বুইজ্তাম হারি না। নোয়া করি বিষয় সম্পত্তি লই কোনও গোলমাল হাকাইল কিনা কী জানি। হেগুনের মইদ্যে গলাবাজি হাতাহাতি লাডালাডি মারামারি দিন দুহরে নোয়া কতা ন। আইজ্কার চলাহেরা কতা ছোড়াছুড়ি দেই মনে হয় কোন ঘরে য্যান্ আগুন লাইগ্ছে, হেগুনে বাল্তি বাল্তি জল লই নিবাইত যাইব। জয়নাল হাড়ার তিন চাইর জন মোছলমান হোলারাও ছুডি আই হেগুনের লগে শলা হরামর্শ করের। এই হোলাগুনরে আঁই ভোটের সময় জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু কই মিছিল করি যাইতে দেইখ্ছি। আইজ্ এরুম কী অইল, গাছের হাতা লড়ের না, ধান গাছের ডগা রইদের জ্বালায় ঢুলি হইড়্ছে মাডে মাডে, হুইরের জল শান্ত অই রইছে, তির্‌তিরে ভাবহানাও নাই, হুকনা হাতা উড়ি উড়ি নাচ কইর্‌তে কইর্‌তে যিয়ানে হড়ার কতা আছিল না উড়ি মাঝ হুইরের জলে যাই হড়ের, হেই দৃশ্যগাইন  বক ডাহুকরা হাড়ে বই বই দ্যায়, আঁইও দেই। আঁঙ্গ ঘরের চালও মচর্ মচর্ শব্দ করের না, মন খারাপ অই গেছে বুজি বেকের। ইউনিয়ন বোডের মেম্বার ইদ্রিস মিঞা ডাইন আতে লুঙ্গি চাপি ধরি হানের হিক হালাইতে হালাইতে থম্কাই খাড়াই যায়। সদর দরজার সামনের তুন্ তাল গাছের নীচে খাড়াই থাইক্‌তে দেই আঁরে ডাকে, ও বদি হুনেন, জরুরি কতা আছে, গজব অই গেছে গ। আঁই মাথার ঘোমটাহান টানি দি। আতের তালডা ঘাসের উপ্‌রে রাই হুনার চেষ্টা করি। হ্যাতেনের কিছু কতা আঁই হুইনছি, বেশি কতাই বুইজ্তাম হারি ন। কইলাম, ভাই, জোরে কন্, আর এট্টু জোরে কন্। চিল্লাই মিল্লাই যা কইল, যা কানের গোড়ায় আই থামি যায় – সাবধানে থাইয়েন, ঘোর বিপদ। কিয়ের লাই কইল এরুম কতা। আঁর আত হাঁ কাঁইপ্‌তে লাইগ্‌ল। দূর তুন্ রেনি দেই কমল আইয়ের হন্তদন্ত অই। এই সময়ে কমল ত হিরে না, তাইলে কী ইদ্রিস মিঞার কতার লগে হ্যাতের আইয়নের কোন সম্পর্ক আছে। চাঁন মাঝি খালের কিনারে খুঁডি হুঁতি নৌকা ভিড়াইল। কমলরে দেই জিগ্গায়, এত চিন্তা করেন কিয়ের লাই, কী অইছে। কোনও অঘটন ঘইট্ছে নি? কমল কয়, তুঁই হুন ন বুজি। ঝাঁপ বন্ধ করি দোয়ানদাররা ঘরে চলি গেছে, হাঁচা মিছা জানি না, মাইন্ষ্যে ত বলাবলি করের, মানুষডারে বংশে নিব্বংশ করি দিল, গুল্লিতে গুল্লিতে ঝাঁঝরা করি দিছে ধানমন্ডির বাড়িত্, কারা এই কুকাম কইর্‌ছে, কিয়ের লাই কইর্‌ছে, এইবার দ্যাশ কন্ মুই যাইব। কার কতা কইতে আছেন বাবু? আঁঙ্গ রাষ্ট্রপতির কতা গ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির জনক আর বাঁচি নাই। কাছ তুন্ মারি হালাইছে। দ্যাশ  চালাইবার মত আর কে আছে। আঁঙ্গ ভাইগ্যে কী লেয়া আছে কী জানি। কন্ কী! এই মানুষডা দ্যাশের স্বাধীনতার লাই এত লড়াই কইর্‌ছে, তাঁরে হশুর মত মারি হালাইল, খোদা হ্যাতাগ গুনাহ মাফ্ কইর্‌ত ন। আল্লার কসম, হারামিগুনরে হাইলে হাঁসির কাডে ঝুলাই দিতাম। হুদা কী মুজিবুররে মাইরছে, বাইচ্চা হোলাডারেও রেহাই দে ন। আড আডহান হরান শ্যাষ কইর্‌ছে। হুনা যার আরও অনেক মাইন্ষ্যেরে  মেশিনগান রাইফেল গ্ৰেনেড চালাই মারি হালাইছে। মোট জনা আডার অইব। হায়, হায়, আল্লাহ রে। এই খুনিগ একদিন না একদিন বিচার অইবই অইব, দেই রাইয়েন।

                ১৯৭৫ সালে ঐ নিদারুণ 

                ঐ নিদারুণ আগস্ট মাসে

                ১৫ তারিখে রাইতের শ্যাষে 

                কী কলঙ্ক অইল হেই দিন 

                জাতীয় ইতিআঁসে।

আঁই ত হুনি আকাশ তুন্ হইড়লাম। কমলরে আর কী জিগ্গাইয়ুম আঁই ত বোবা অই গেলাম। আঁর হার নীচের মাডি কই গেল। কমলরে কইলাম তুই ঘরে যা। মাথাহান ঠাণ্ডা রাখ, বড় এক্কান বিপদ আইয়ের। আবার শতানেরা হিন্দু মোছলমানের মইদ্যে উস্কানি দি গোলমাল লাগাই দিব। বঙ্গবন্ধু শত কষ্টের মইদ্যেও গুছাইগাছাই আইন্ছিল, অন্ ত ভাঙিচুরি একসার করি দিব। কী অইব দ্যাশের মাইন্ষ্যের? কী অইব রাস্তাঘাডের? কী অইব রেললাইনের? কী অইব ইস্কুলের? কী অইব ওষুধ হত্রের? হ্যাতেনের মুয়ের দিগে চাই অইন্য দ্যাশেরা আঁঙ্গরে সাহায্য কইর্‌ছিল, মরি যাইব গ, গরীব মাইন্ষ্যেরা মাডে মারা যাইব। চিনির কল, আডার কল, হাডের গুদাম, হোশাক আশাক বেক্ কিছু হাকিস্তান আমলের মত অই যাইব। গৌরিনাথ তুঁই ঠিকই কইছ, এই চোরারা হাকিস্তানের লগে আত মিলাইব। মাষ্টর, দ্যাশডারে কেউ আর ভালবাইসল না, নিজের হাওনা গণ্ডা লই হাপলুডু খেইল্‌ল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড লই ইন্দিরা গান্ধী কিছু কয় ন। রসময় চুপ করি থাই কইল, রাষ্ট্রনেতারা কতা না কইও অনেক কতা কয়। আঁই মরি অন্ আঁর চিন্তায়, হিন্দু বলি আঁরে ঘাড় ধাক্কা দি ইস্কুল তুন্ না বার করি দেয়। মাষ্টর ত মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে চলি গেল। কিন্তু হিগার কতার ত অর্থই বুইজ্লাইম্ না, চুপ করি থাই আবার ক্যাম্‌নে কতা কয়! 

     দ্যাশডা এবার কার আতে যাইব এই চিন্তায় ঘুম আইয়ে না। আবার হিন্দুরা যে গর্তে আছিল হেই গর্তেই হড়ি যাইব। কেউ কেউ হয়ত কইব আঁই হিন্দুগ কতা লই আলাদা করি ভাবিয়ের কিয়ের লাই? কিয়ের লাই ভাবিয়ের এইডার কোন উত্তর নাই, তয় ভাবিয়ের। এই কতাগাইন মনের মইদ্যে আই এদ্দিন বাদে  ধাক্কা মারের। হাঁচা কতা কইছি, আওয়ামী মুসলিম লীগ যহ্‌ন তুন্ আওয়ামী লীগ অইছে তহ্‌ন তুন্ দ্যাশডা বেশি করি আপন অই গেছে, ভাইব্‌লাম হিন্দুগরেও দ্যাশের মাইন্ষ্যের মইদ্যে ধইর্‌ছে এই দ্যাশের মাইন্ষ্যে। না অয় বড় ধাক্কা ত খাইছিলাম যহ্‌ন মোছলমানগরে লই হাকিস্তান অইছে, নিজের মইদ্যে নিজে গুম্ড়াইতাম্, তাইলে আমরা কোন দ্যাশের মানুষ! নেতারা ভাগ কইর্‌বার সময় আঁঙ্গ কতা একবারও ভাইব্‌ল না, তাইলে আঁর ছোড দেয়র কোন্ দ্যাশ স্বাধীন কইরবার লাই ইংরেজেগ গুঁতা খাইল, জেলের ঘানি টাইন্‌ল, এর উত্তরহান আঁরে কে দিব। এই দ্যাশের হিন্দুরা যে কংগ্রেস দলের ছাতির তলে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ডাকে হরান দিল তার কী অইব? বেক্ জবাব মোছলমানরাই চাইব, এই দ্যাশের হিন্দুরা কিছু চাইত ন? হেই যে এত উতালহাতাল সময় বেক্গাইন মিছা, বেক্ স্বপ্ন, ইতিহাস তুন্ মুছি যাইব? জোর করি চাপাই দ্যাশের ম্যাপ মুছি দি ত মাইন্ষ্যের মন দুইভাগ করা কী যায়, কন্ চাই। এই কেরুম বিচার কইর্‌ল নেতারা? বঙ্গবন্ধু যহ্‌ন তুন্ কইল, বাঙালি জাতির মুক্তি চাই, মনডা আঁর দুলি উইঠ্ল, এদ্দিন বাদে আঁই এক্কান দ্যাশ হাইয়ুম যিয়ানে এক কতা কওনের মাইন্ষ্যের এক্কানই হরিচয় অইব, বাঙালি, হিন্দু ন, মোছলমান ন, কেউ কেউ কয় বাঙাল। বাঙাল আর বাঙালির মইদ্যে কী তফাৎ হেইডা ত বুইজ্লাম্ না, হুবের বাঙাল আর হশ্চিমের বাঙাল? আঁর মাথাডায় এসব চিন্তা আই গুলাই যায়। এই কতাডা একশ ভাগ হাঁচা মানুষডা মরি যাওনে আঁর দ্যাশের স্বপ্ন জলাঞ্জলি অইল চির জনমের মত, এরুম স্বপ্ন দেইখ্বার মানুষ কই, বেক্ ত ভেক্ধারী। অন্ আঁই  দ্যাশ হাইয়ুম কন্নাই? এগুনে ত হাকিস্তানের লেজুড় অই যাইব। দ্যাশডা আবার হাকিস্তানের মইদ্যে ভরি দিব। তাইলে আঁরে কী নোয়া করি দ্যাশ খুঁজি বেড়াইত অইব? এইরম দ্যাশ এক্কান হাইয়ুমই বা কন্নাই?

     আইজ্কাল আঁর এরুম অইছে যহ্‌নই কোন কাম কইর্‌তাম যাই, দ্যাশ আই আঁর ঘাড়ে চাপি বইয়ে। আঁরে ভুলাই দেয়, আঁই কোনও হরিবারের মানুষ, আঁই কারও বউ, কারও স্বামী, দ্যশডারেও নিজের করি না ভাইব্‌লে ঘরের মইদ্যে জাগা দিমু ক্যাম্‌নে। বঙ্গবন্ধুর এই তিনটা শব্দ ক্যাম্‌নে আঁর মাথার ভিত্‌রে ঢুকি গেল, কোনমতেই তাড়াইতাম্ হারিয়েন না। এত কঠিন কঠিন শব্দ হ্যাডে মোচড় দেয়, মাথায় আই খচ্খচ্ করে – আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি। কত ভাবি, এই যে ঘরের মইদ্যে যে মন লই চলাহিরা করি,ইয়ার তুন্ রক্ষা হাইয়ুম্‌ ক্যাম্‌নে, ডানা ত আঁরে মেলতেই অইব, ডানা মেইল্‌লেই ত মুক্তি, ভাগাভাগি করি চলনের মইদ্যেও আসল চলা। আঁর স্বামীর চয়ে আঁই অইন্যরকম লাগি, স্বামীরে জিগ্গাই ভিত্‌রে না বারে। হ্যাতেনে কয়, হেই উত্তর আঁই ক্যাম্‌নে দিমু। তয় তোঁর জীবন, তুঁই বেশি করি বুইজ্‌বা, তুঁই যে আল্‌গা অইতেছ এইডা হলফ্ করি কইতাম্ হারি। যে ঘর ঘর করি, যে বাড়ি বাড়ি করি আঁই এদ্দিন লাফাইছি, হেই ভাব কন্নাই য্যান্ মাডি ছাড়ি গাছের আগায় উডের। নিজের লাই এই হথ্যম আঁর দুখ্ অইল। আঁর যে হোলা কোনদিন মুয়ের উপ্‌রে কতা কইত না, আইজ্ সাহস করি চট্ করি কতা কই হালার। কী বিপদ! মুয়ে মুয়ে তর্ক করের। আঁর জা’গরে কইলাম, তোরা ত আঁরে এদ্দিন ধরি দেইখ্‌ছচ্, কোনো হরিবর্তন লইক্ষ্য কইর্‌ছচ্ নি আঁর মইদ্যে। কিন্তু কিন্তু করের যহ্‌ন, এক্কান কিছু ত অইছে হেগুনরে কইছি বটে, নিজেই আঁই টের হাইয়ের। কইলাম্ তোরা যে যা কইবি ক, আঁই যে আগের মত নাই হেইডা চাঁদ সূর্য উডনের মতই হাঁচা। আঁর শেজ জা কয়, দিদি আম্‌নের কতার মইদ্যে আগের তুন্ ঝাঁজ বাড়ি গেছে, আঁঙ্গ ভালা মন্দের কতা, সুখ দুহের লই আম্‌নের হেরুম চিন্তা নাই। কতাডা ভুল ন।  নোয়া নোয়া চিন্তা আঁর মাথায় আই বন্ বন্ করি ঘুরে। 

     মাইন্ষ্যে আরও বলাবলি করি কত কতা কয়। কতার বইন্যা বহায়, দোষ কাউরে দিতাম্ ন। এত এত রক্তের ঢল নামি যদি হা’র গোড়ালি হইয্যন্ত টল্‌টল্ করে, মাইন্ষ্যের মাথা ক্যাম্‌নে ঠিক থায়। ব্রাশফায়ার, গ্ৰেনেড্, ডিনামাইট এসব শব্দগাইন য্যাতারা আগে কোনদিন হুনে ন, অন্ দিনরাইত হ্যাতাগ মুয়ের মইদ্যে এই শব্দগাইন ঘুরাহিরা করে। মাইন্ষ্যের চলাহিরায় হেই ঢঙ আর নাই। য্যাতারা এদ্দিন দাপাই বেড়াইত রাস্তাঘাডে, হেই মুখগুন আর দেয়া যায় না, অইন্য চুল, অইন্য চখ, অইন্য নাক, অইন্য গোঁফ, মানুষ চিনন্ বড় দায়। গায়ে রঙ মাই আছে ক্যম্‌নে কই, কৈ মাছের মত এক ঝাঁক আইয়ে এক ঝট্কায়, অইন্য ঝাঁক চলি যায়। কতার লগে কতার কোনও মিল আছে নি, নাই ত, কিয়ের লাই নাই জানি না। বড় বেসামাল অই যায়, বড় অচিনা। রঙ হাল্টাই যার, চাইর হাশের আকাশে কত ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ, যেরুম খুশি উড়ে, যেরুম খুশি গুজরায়। এই নামগুন আঁই হুনি ন, ডাকি ডাকি কয়, এরিও হুইন্‌ছেন নি, হুইন্লাম ভালা আমন ধান অইছে আম্‌নেগ ক্ষেতে, বদইল্লা দি এক বস্তা হাডাই দিয়েন, বদি। করিমরে কইলাম্, মানুষডা থায় কন্নাই, আগে ত কোনদিন দেই ন? বোডের মেম্বার অইছে নোয়া, ইয়াসিন আলী, দেমাগে হা মাডিত্ হড়ে না। আম্‌নে কিছু কইয়েন না, আঁই হৌঁচাই দিমু, না অইলে হুরা জমির হসল কাডি লই যাইব রাইতের বেলা, নোয়া সরকার ক্ষমতায় যে আইছে, হ্যাতাগ তল্পিধারী। 

    তুই ক্যাম্‌নে জাইন্লি করিম? আঁসে আর কয়, আঁঙ্গ লগে বদইল্লাগিরি কইর্‌ত, অন্ নোয়া নেতা অই হা ভারি অইছে। দেয়েন না কেরুম হুকুম জারি করে য্যান্ হ্যাতের বাপের জমির ধান। তুই ঠিক কইছচ্, আঁঙ্গ দ্যাশডাও কী কারো বাপের? তাইলে কার?  কার আবার, তোর, আঁর, তোর বাপের, আঁর বাপের।  এই ত আম্‌নে  কতার মত কতা কইছেন, এরুম করি ভাবি দেই ন ত!

     তুই কিয়ের লাই আর ভাইব্‌বি, আইয়ুব খান, ইয়াইয়া খান কোনদিন ভাবি দেইখছে? গদিত্ বই আঁঙ্গ দ্যাশডারে নিজের কই হা দোলাইছে। বঙ্গবন্ধু যহ্‌ন দ্যাশডারে মাইন্ষ্যের দ্যাশ ভাইব্তে গেল, তাও সইহ্য অইল না, গুল্লি খাইল, কোন মুই যাইব, ক চাই। যাইবার জাগা কন্নাইও নাই। ঐ যে গরু, ঐ যে লাঙ্গল, ঐ যে মাড, ঐ যে খালের জল, ঐ যে মই এইডাই আঁর দ্যাশ। আম্‌নেরা যারে দ্যাশ কন্, হেইডা ত আঁই চিনি না, কেউ ত কোনদিন চিনাই ন।  আঁইও ত এদ্দিনেও চিনতাম্ হারি ন, তোরে কী চিনাইয়ুম্।  হুইন্ছি দ্যাশের বলে কত রঙ, দুইন্নাইজোড়া কত দ্যাশ, তাইলে ক্যাম্‌নে ঠিক হয় রঙ, হেই দ্যাশের মাইন্ষ্যের গায়ের রঙের লগে মিলাই মিলাই ঠিক হয় বুজি। তাইলে আম্‌নে কন্ চাই ক্যাম্‌নে আঁই আঁঙ্গ দ্যাশের রঙ চিনুম। হাইরতি ন রে, হেইডা এত সোজা কাম ন। দেয়চের না এক মাস আগেও বঙ্গবন্ধু বাঁচি থাইক্‌তে এই দ্যাশডার রঙ যেদিগেই রেইনতাম সবুজ সবুজ লাইগ্ত, অন্ রাতারাতি কেরুম হাল্টাই গেল, যেদিগেই রেনি কালা আর কালা।  আঁই ত উপ্‌রের রঙ দেইখ্তা্ম্ হাই না, ভিত্‌রের রঙডাই দেই।  তুই ত দশ কতার এক কতা কইছচ্। ক্যাম্‌নে ভাইব্‌লি তুই? 

কী যে কন্ আমরা ত এরম করিই ভাবি, নেতারাই ত আই কয়, ওই হালা, এত সোজা হঁতে আঁডিস না, ঘুরহঁতে আঁডি যা, খেরের চালের জাগায় মালিকগ মত টিনের চাল অইব, চাইরডা গরু অইব, চাইরডা ছাগল অইব, চাইরডা রাজআঁস অইব। হিয়ের লাই ত ভাবা টাবা বন্দ করি দিছি,  অন্ হ্যাতেনরা যেরুম করি ভাবায়, হেরুম করি ভাবি।  আঁই ত মুরুখ্য মানুষ, এক্কান কতা আঁর ভিত্‌রে মোচ্ড়াই মোচ্ড়াই উডে। তাইলে কই হালাই, গোঁস্যা করিয়েন না।  না, না, ক না, ক। আঁই এট্টুও রাগ কইরতাম ন। কতাহান অইল, আম্‌নেরা  যে হিন্দু অইলেন, আমরা মোছলমান অইলাম, কিয়ের লাই অইলাম, আম্‌নেগ মন্দির, আঁঙ্গ মসজিদ, আম্‌নেগ  দুগ্গা হুজা, আঁঙ্গ ঈদ, আঁই বদইল্লা, আম্‌নেরা মালিক, কিয়ের লাই ভিন্ন ভিন্ন অইল?

     করিমের কতাগাইন হুনি মনে অইল কে য্যান্ আঁর হিডে চাবুক দি হিডাইছে। ভিত্‌রডা যন্তনায় হালা হালা অই যার, হ্যাতে এক্কান বদইল্লা অই এরম ভাইব্তে হাইরল, আর আঁই গৃহস্থ বাড়ির বউ অই ভাইব্তাম্ হাইর্‌লাম্ না, কন্নাই ন কন্নাই খাম্তি আছে, আঁরে যে করি হোক খুঁজি বার কইর্‌তই অইব, দ্যাশডা এরম অইল কিয়ের লাই? এই হশ্নের জবাব করিমরে আঁর দিতেই অইব। আঁর স্বামী বাড়ি আইলে হ্যাতেনরে জিগ্গাইলাম্ কন্ চাই এই হশ্নের উত্তর। হ্যাতেনে কইল, ভাইব না বেশি, তোঁরে এক্কান সোজা উত্তর আঁই দি, মনে ধরে হয় কিনা দেহ। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী ১২০৪ সালে লক্ষণ সেনরে আরাই বাংলা জয় কইর্‌বার হর তুন্ মুসলিম ধম্ম হচার হয় এই দ্যাশে, কারো কারো মতে ইয়ারও আগে। করিম কী আর বুইজ্‌ব হেইসব কতা। করিমের বুজা ত দূরের কতা, আঁইও বুইজ্তাম হাইর্‌লাম্ না। আঁর স্বামীর কতার লগে করিমের হশ্নের মিল খুঁজি হাইলাম্ না। মাইন্ষ্যের মনের ভাগাভাগিতে আরও কত যে কাডাকুডি আছে, কে তার খবর রায়, না অইলে এরুম এক্কান দিন দেইখ্তে হয়, করিমরে হেই কতা আঁই ক্যাম্‌নে কইয়ুম্। এক দ্যাশের মইদ্যে আরও কত দ্যাশ যে চোর হুলিশ খেলের হেইডা না দ্যাশের মাইন্ষ্যে জানে, না য্যাতারা থাবা বয়াইত চায় তারা জানে, হিয়ের লাই ত তলা খুঁজি হায় না। কত দ্যাশের কত জল আই মিশ্‌ছে সাগরে, হিয়ান তুন্ নদীত্, নদীর তুন্ খালে, খালের তুন্ হুইরে। আমরা কই আঁঙ্গ হুইর, হুইরের চাইরদিগে বাড়ি, এরুম করিই না কত বাড়ি, বাড়ির মইদ্যে কত মানুষ, মাইন্ষ্যের মইদ্যে কত মন, মনের মইদ্যে কত কালের কত মাইন্ষ্যের কত ভাব, কত চিন্তা, এত মানুষ এত চিন্তার এক্কান দ্যাশ। না বোধ হয়, হুরাটা বুজাইতাম্ হাইর্‌লা্ম্ না, মনের কোনায় খোঁচা খোঁচা মারে।

     ইগাইন ভাইব্‌তে ভাইব্তে আঁর চখ বুজি আইয়ে। বালিশ হিডে দি ড্যালাম্ দি হা ছড়াই বই থাই কিছুক্ষণ। আঁর এক নাত্‌নি আই খেইল্তে খেইল্তে আঁরে লাড়া দিলে টের হাই বড় ঘরের চইয়ের হাশে কুলার মইদ্যে আম্শির লোভে হেতি ঘুর ঘুর করের। এট্টুহানি মাইয়া, হেতির লোভ অইত ন কার অইব, আঁঙ্গও ত কত লোভ, হেতির আর দোষ কী। লোভে লোভে দ্যাশডা ছাই গেল। এরুম অরাজকতা জম্মে দেই ন। খালি মনে হয় দ্যাশ আবার হুড়ি ছাই অই যার, কারা হোড়াইত চায়, কিয়ের লাই হোড়াইত চায় কে কইব। আঁর হিশীহৌড়ি নরসিংদী তুন্ আইছে কদ্দিন বাদে। মরার আগে বাপের বাড়ীত্ আই ভাইয়ের সংসার দেই যাইব মনের বাসনা, কী জানি কে কদিন বাঁইচ্ব, শ্যাষ ইচ্ছাডা হুরন কইর্‌ত হাইর্‌লে মনের সাধহান ত মিট্‌ব। বাপের বাড়ির ভিডায় হা রাইখ্তে না রাইখ্তেই হেই বেডি এক ধাপ কাঁদি ভাসাইল। কিয়ের লাই কাঁদি ভাসাইল বুইজ্তাম হাইর্‌লাম না, আঁঙ্গরে দেই আনন্দে ভাই যাইবার ত কতা আছিল, অইল উল্টা, কেরুম য্যান্ ছাড়া ছাড়া। কী জানি বাপের বাড়ি ঘিরি কত দুখ্ জমা অইতে অইতে এরম চেহারা অইছে। এই দুহের কোন নাম দেওন যায় নি। কত দিন ত কত কিছু দেয় ন, কত কিছু ছুঁই চায় ন, কত মুখ চয়ের সামনে তুন্ আরাই গেছে, কত হুরান হুরান কাড হুড়ি শ্যাষ অই গেছে, দুই এক্কান বাপ দাদার আমলের ঘরের আদা হোড়া জান্লা নোয়া ঘরে দেই আত বুলায়। দুই তিন হুরুষের দুই তিনহান ছবি কোনরমে বাঁচাই রাইখ্ছিলাম, হেই ছবির দিগে চাই বেডি আর কোন কতা কয় না। আই জিগ্গাই, কীগ কী খোঁজেন? কয়, ঐ হঞ্চাইশ বছর আগের সময়ডারে খুঁজি। ঐ যে কৃষ্ণের হটোহান, মুরলী বাজার দুই আতে, হা দুইহান ভাঁজ করি, আর মারে দেইখ্ছি এই ফটোহানরে মালা হরাইতে, ভক্তি ভরে গান কইর্‌তে, কন্নাই চলি গেল কী জানি। ইয়ানেই আছে, আঁরে নিশ্চয়ই দেয়ের।  কী কন্ আম্‌নে, হ্যাতেনে অন্ আছে নি, স্বগ্গে গেছে কবে। হ্যাতেনরে আর কন্নাই হাইবেন, সময়ের তলায় চলি গেছে। হাইয়ুম্ রে হাইয়ুম্, তুই কী আর অত শত বুজ্‌বি। এই ঘরের আশহাশেই ঘুরি ঘুরি বেড়ার। আম্‌নের ভাইয়ের হোলা গয়ায় পিণ্ড দি আইছে না। আরে পিণ্ড দিলে কী অইব, মাডির টান, বড় টান, যিয়ানেই যাক, নিজের দ্যাশে ঘুরি ঘুরি আইব, তুই দেই রাইছ্, এট্টু বয়স হোক আঁর মত, মনের কোনায় জ্বালা ধইর্‌ব, যিয়ানে যিয়ানে তুই যাবি, মায়া লাগি যাইব, ছাড়াইতে ত হাইর্‌তি ন, তোর নিজের অই যাইব, তহ্‌্ন বুজ্‌বি ওই জায়গাহান তর নিজের।

     হিশীহৌড়ির কতাগাইন মনে লাগি গেল। হ্যাতেনে যিয়ানে যায় আচম্কাই খাড়াই যায়। কিয়ের লাই খাড়াই যায় নিজেও জানে না। ছোড মাইয়ার মত ছুডি ছুডি চলি যায়। একশ বছরের এক্কান হুরান অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় যাই কিছুক্ষণ বই থায় আর কাঁদে ,আবার চলি যায় ঢেঁই ঘরের গোড়ায়। হুরান ঢেঁই ঘর ভাঙি অন্ চৌচালা অই আছে, অনের বৌজিরা ঘুরিও চায় না। ইয়ানে কত হা অইড়ছে হ্যাতেনের, হ্যাতেনের মা ঠাম্মার। মাথা নিচু অই হাল্কা চুল ছড়াই কোয়াল ঠেঁয়ায়। আত বুলাই মাথায় মোছে, চয়ের জল হড়ে টপ টপ করি। ভিতর তুন্ দুই চাইর কলি গান বার অই আইয়ে। নিজেরে নিজে আড়াল করি হেই গান গায়। গানের মর্ম কে বুইজ্ল আর কে বুইজ্ল না, এই লই মাথা ঘামায় না। গাছহালা বাড়ি ঘর মানুষ বেক্ মনের ভিত্‌রে ঢুকি হাঁক খাইতে শুরু করে –

       মন কিসের জন্য ডুবে রইলি 

       অসার মায়ার সংসারে ।

       এই মায়া কীসের মায়া 

       শেষ বেলায়ও শেষ হয় না।

       কত যে খুঁজি মরি

       চোখে যে দেখি না।

       বুজতে পারবি দুদিন পরে

       কে তোরে জিজ্ঞাসা করে ।

       এই সুখ নয় তোর সুখের মত

       আরো সুখ আছে কত।

       ডাকলি না রে মনের মত

       জয় রাধে গোবিন্দ বলে ।।

     আঁই কী চখ থাইক্‌তেও অন্দ। ইয়ের লাই কই আঁই চুপ করি বই থাইক্‌তাইম হারি না। আইজ্ কদ্দিন অইল, আঁই আর নিজের মইদ্যে নাই। হেগুনে নিজের মইদ্যে কী য্যান্ কতা চালাচালি করের — কী কইর্‌বেন কন্। এক্কান উপায় ত খুঁজি বার কইর্‌ত অইব। আমরা কী আবার হরাধীন অই গেলাম? হেই হরাধীন দ্যাশের চেহারাহান কী অইব। কেউ আর কইত হারে না। আঁর হিশীহৌড়ি এক্কান নিদান দিল – চয়ের চশমাহান হাল্টাই হালা, অনেক দূরের জিনিস দেইখ্তি হাইরবি। হ্যাতেনের কতাডার এক্কান মূল্য ত অবশ্যই আছে । কতার হিডে এই কদিন কত মানুষ ত কত কতা কইছে। ভাবি চাইত অইব কোন্ কতাগাইন হাঁচা, কোন্ কতাগাইন মিছা। কত লড়াই ত দেইখ্ছি, এইডা ত এক্কান নোয়া লড়াই। কেউ ত কারোগরে চিন্‌তই হারেন না, এরুম কিয়ের লাই অইল। মাইন্ষ্যের মনডা ধীরে ধীরে হাল্টাই গেল। যে যেরুম কতা কইত হে আর হেরুম কতা কয় না,  ভাষাডাই অইন্যরম অই গেছে, চয়ের সামনে দুহের ছবিডাই ভাঁয়, হলাই যাইত হাইর্‌লে বাঁচি। কন্নাই যাই বাঁচি। কারা য্যান্ দিন রাইত কয় হরানে যদি বাঁইচতে চাছ্ হলাই যা। একাত্তরের হর আবার ঘুমের দ্যাশে যাওইন্না মানুষগুন বড় বড় চখ করি আঙুল উঁচাই শাঁসাইত চলি আইয়ের। জিগ্গাইলে কয়, তোগ বাপেরা আর কিছু কইর্‌ত হাইর্‌ত ন, অন্ আঁঙ্গ জমানা। কী কয় হেগুনে! আঁর আর এক দেয়রের হোলা চাঁটগা বিশ্ববিদ্যালয়ে হইড়ছিল, কী এক্কান ঝামেলা অওনে বাড়ি চলি আইছে, আঁর হোলারে কয়, দ্যাশের অবস্থা ভালা না, যদি বাঁইচতে চাছ্ জেডিরে লই তোর মাসির বাড়ি কুমিল্লা টাউনে চলি যা, আর এই মুই আইছ্ না, আঁর কাছে খবর আছে, বাড়িঘর ভাঙচুর অইব। আবার হামলা অইব! আর কইচ্ না, হুযুগ হাইছে এবার আঁঙ্গরে তাড়াই আবার ভিডার দখল নিব। আঁইও আঁর মা ভাই বইনরে লই শাঁখারীবাজারে আঁর হিশীর বাড়ি যাই ওডুম। ইয়ার হরে যা অইবার অইব।

     হিছনের ঘর তুন্ হেগুনের কতা হুনি মনের মইদ্যে কত যে ভাঙচুর শুরু অই গেছে ক্যাম্‌নে বুজাই, কারে বুজাই। কত চিন্তাই ত ঘুরি ফিরি আইয়ে। দ্যাশে যহ্‌ন আগুন জ্বলে, কিয়ের লাই জ্বলে হেইডা কেউ বিচার কইর্‌ল কি কইর্‌ল না, কোপডা আই আগে আঁঙ্গ উপ্‌রে হড়ে। ঘিন্না হিত্তা এরুম এক্কান বস্তু, কারণ নাই অকারণ নাই বাঁধ ভাঙি গেলে জল যেরুম ছোঁডে, এইডাও এরুম করি ছোঁডে, বেকেরে ভাসা লই যায়। আঁর হোলা যহ্‌ন কইল এবারও যাইত অইব, উৎপাত শুরু অই গেলে হামাল দেওন যাইত ন। আঁই ভাইব্‌লাইম্ এই আবার কেরুম কতা!  অইন্য ঘরের কত্তারা অইন্য জাগাত্ যাইবার লাই হোট্লাহুট্লি বাঁধের, আঁর এক্কান কতা আই মনের মইদ্যে খচ্খচ্ কইর্‌ল, মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা আঁঙ্গ ঘর হোড়াইল, দ্যাশ স্বাধীন অইল, জনে জনে জাইন্‌তে চাইল, হিরি যান্ কিয়ের লাই, ভিডা কী আম্‌নেগ নিজের ভিডা আছে নি, হিরি যাইয়েন না, হোড়া বাড়ি কহ্‌ন আবার হোড়াই দিব, কে জানে। তহ্‌ন বিশ্বাস কইর্‌তে মন চাইল না, হেইডা অইতেই থাইক্‌ব। নিজের দ্যাশে থাই বার বার হর অই যাইয়ুম ক্যাম্‌নে, কত ভালা ভালা মানুষ আছে আঁঙ্গ দ্যাশে, কত সোন্দর কতা কয়, হেগুনে আঁঙ্গরে না দেই থাইক্‌ব ক্যাম্‌নে, আঁঙ্গ ভাব, হ্যাতাগ ভাব, আঁঙ্গ আঁসা, আঁঙ্গ কাঁদা, হ্যাতাগ আঁসা, হ্যাতাগ কাঁদা বেক্গাইন মিলিমিশিই ত এতকাল বাঁচি রইছি, হশ্ন অইল বাঁই জীবনডা বাঁচুম্ ক্যাম্‌নে, হ্যাতারাই বা বাঁইচ্ব ক্যাম্‌নে, ভাঙা মানুষ দি কোন গোডা দ্যাশ গড়ন যায়? য্যাতারা আঁঙ্গরে তাড়াইত চায়, অল্প দিনের মইদ্যে বুইজ্‌ব, সময় হ্যাতাগর লাই অপেক্ষা কইর্‌ত না মোডেই, জবাব দিব। বাড়ি ছাড়ি আঁঙ্গ বাড়ির মাইন্ষ্যে কোন মুই যার, কী জানি, মনের দুঃখে বনে চলি যার, একলা থাইয়ুম্ ক্যাম্‌নে? আঁর দুষ্ট দেয়রের হোলারা আহ্লাদে আডখানা, হুরা বাড়ি ভোগ কইর্‌ব, য্যাতারা দ্যাশডারে খাইত চায় হ্যাতাগ লগে এগুনের কত মিল, শুধু নিজেরে লই য্যাতারা বাঁচে, হ্যাতাগ কোন দ্যাশ থায় না, হুযুগ হাইলেই অইন্যের দলে নাম লেয়াই আখের গোছায়, হিয়ানে হিন্দুও নাই মোছলমানও নাই, জাত ন, বজ্জাত। য্যাতারা জড়াই জড়াই থায়, হ্যাতাগই তের মুশকিল।  আঁর হোলা কয়, মা অন্ও সময় আছে চল, না অইলে, হেগুনে আইয়ের দল বাঁধি আঁঙ্গ ঘর ভাঙি দিব। আগের বার চয়ের সামনে হুইড়তে দেও ন, এবার দেইখ্বা, তহ্‌ন বুকডা হাঁডি গেলে টের হাইবা কত জ্বালা। আঁর স্বামী কয়, হোলা তোঁর খারাপ কতা কয় ন, আবার ভাবি দেখ। স্বামীরে কইলাম্, আম্‌নে বুইজ্তেন ন, এইডা আঁর হৌড় হৌড়ির ভিডা, কোন্ ছোড বেলায় বউ অই আইছি, ইয়ানে হোলা মাইয়ার জন্ম দিছি, ভাইঙছি, গইড়ছি, খাইছি, হুইছি, হুজাআচ্চা কইর্‌ছি, ঘর কন্, বাড়ি কন্, গ্ৰাম কন্, দ্যাশ কন্, এই ভিডা আঁর, কেউ আঁরে হিয়ান তুন্ দৌড়াইত হাইর্‌ত ন। আম্‌নেরা যিয়ানে ইচ্ছা যান, আঁর হৌড় মইর্‌ছে, হৌড়ি মইর্‌ছে, আঁর বেলায় অইন্যরম অইব কিয়ের লাই। আঁর স্বামী আঁরে অনেক করি বুজাইল, হিয়ানে নাকি চাইরহাশে হিন্দুর বাস, রাজাকাররা চাইলেও বিশ্যাষ সুবিধা কইর্‌তে হাইর্‌ত ন। নোয়া করি ঘরবাড়ি বানাই সংসার হাইত্‌ব। কতাডা ভুল কইছে আঁই কিন্তু মনের সায় হাইলাম্ না, কন্ চাই নিজের দ্যাশ ছাড়ি ক্যাম্‌নে অইন্য দ্যাশে যাই। স্বামী কইল, দ্যাশডা ত হাল্টাই যার না। আঁই কইলাম্, আরে আম্‌নে ক্যাম্‌নে বুইজ্জেন এক দ্যাশের মইদ্যে কত দ্যাশ ঘুমাই রইছে। মাইয়া মানুষ ছাড়া হেইডা আর কে বেশি বুইজ্‌ব, আমরাই ত চব্বিশ ঘন্টা মাডি কামড়াই হড়ি থাই, মাডি আঁঙ্গ লগে কত কতা কয়, আঁসে খেলে, দেয়েন না। কোনহানে গেলে ভিডায় হিরতে না হাইর্‌লে মনডা কেরুম আন্চা্ন্ আন্চান্ করে, কারো সাইধ্য আছে নি আলাদা করে। একবার আলাদা অইবার জ্বালা সইহ্য কইর্‌ছি, আর সইহ্য  কইর্‌তাম্ হাইর্‌তা ন, তাইলে শোকেই ত আতর অই মরি যাইয়ুম্, আর নিজের ভিডায় থাই হ্যাতাগ ছোরার ঘাঁই খাই মরুম্। ভাবি দেইখ্লাম, মইর্‌তে যহ্‌ন আঁরে অইবই, নিজের ভিডায় মরি, আগে আর হরে, হুদা হুদা হালাইয়ুম্ কোন দুখে। আঁর কতা হুনি স্বামীর মন হাল্টাই গেলে কইল, এক কাম করি, হোলারে হাঁডাই দি, আঁই তোঁর লগে থাই। আঁই না কইর্‌লাম্। কইলাম্, আম্‌নে চলি যান, আঁর সামনে আম্‌নের মরণ আঁই সইহ্য করুম ক্যাম্‌নে? দুইন্নাইত্ কহ্‌ন কী ঘডে কে কইত হারে। আম্‌নে হোলামাইয়ার লাই বাঁচি থান। আঁই না হয় ভিডামাডির লাই বাঁচি।

     আঁঙ্গ বাড়ির আত্মীয়রা যাইবার কালে কত কতা কইল। ইনাই বিনাই বুয়ে জড়াই চয়ের জলও হালাইল। কী জানি আঁর মনের জ্বালা কতডা জুড়াইল। ঘরের জানালাহান খুলি দিলে এক চিল্তা আলো আই হইড়ল তেছ্ড়া অই চৌকাডে। আঁর নজর চলি গেল হেই দিগে। আঁর স্বামী থাইক্‌লে জল চইত্ বই গা তাঁতাইত। আইজ্ চাইরদিগের আলোও য্যান্ কত আঁন্দার। মাইন্ষ্যের মুখ আঁই আর দেইখতাম্ হাই না, যেগুন আছে, ছোড অইতে অইতে আরও ছোড অই যার, কিছু দিশা খুঁজি না হাই বাড়ির এ মাথা ঐমাথা ঘুর ঘুর করে। আঁই ত ভালা করিই জানি, হেগুনের কন্নাইও যাইবার জাগা নাই। মইর্‌লে ইয়ানেই মইর্‌ব, বাঁইচ্লে ইয়ানেই বাঁইচ্ব। কী আর কইয়ুম, খালি মনের মইদ্যে এক নোয়া আশা জাগে। য্যাতারা রই গেছে কোনও কতা কয় না, চুপ মারি থায়, না জানি কে কহ্‌ন আই কোপ মারে। বিপদের উপ্‌রে বিপদ, এভাবেই কী বাঁচা যায়! বেক্ সময় কারা য্যান্ আই উঁইঝুঁই মারে, হাইর্‌লে বেক্গাইন ছোলাই নিত চায়। বুইজ্লাম, কালা কালা মাথাগুন আর কেউ না, ওই বেইমানের দল। আঁঙ্গরে সুয়ে শান্তিতে থাইক্‌ত দিত চায় না, শেখ মুজিবুর রহমান এর মরণের হরে আঁঙ্গরে মারি হালাইত চায়। কতদিন আগে আমরা টুকরা টুকরা অই গেছি, বুড়াবুড়িরা মরি ভূত অই গেছে, আঁই অন্ও হ্যাতাগ নিঃশ্বাসের শব্দ হুইন্‌তাম্ হাই। হ্যাতেনরা আঁর কানে কানে কতা কয়। ওমা কারা গ ইয়ানে? কোন সাড়াশব্দ নাই। আসলে উডানের কোনায় কোনায় হাতাহুতা হড়ি বোট্কা গন্দ বার অর। কত ত ছায়া, ছায়ারাই ডাইনে বাঁয়ে ঘুরে। চয়ের ভুল অইত হারে। হিয়াল নয় ত, শিয়ার ধইর্‌বার লাই ঘাপটি মারি রইছে। মচ্মচ্ শব্দে ঘুম ভাঙি যায়। চখ কচ্লাইতে কচ্লাইতে মনে অইল যেতারা চলি গেছে হ্যাতারা বুজি হ্যারত আইছে। হায়ের শব্দের মচ্মচানিতে অস্থির করি হালার। এরুম করি হা টিপিটিপি চইল্‌লে কী মাইন্ষ্যেরে চিনা যায়! যে যার ঘরে আছিল ছুডি চলি আইয়ে হরানের ভয়ে, একজন অইন্যজনের আত ধরি যদি বাঁইচত হারে। তোরাও আঁচ কইর্‌ছচ্ বুজি। হেগুনে গলা নীচু করি কয়, জেডিমা কী করুম, শতানরা আইছে, আঁঙ্গরে মারি হালাইব, বাঁচুম ক্যাম্‌নে? আলোর আঁন্দারে ভয় আই জাপ্‌টাই ধরে। নাইরকল সুয়ারির ঠাইলগুন জাগি উডি লম্বা অই ডাকে, আয় আয়।  গাঁ গাঁ আওয়াজ তুলি হাতুড়ির ঘা আঁর মাথায় য্যান্ মারে। কতরমের হন্দিই না শতানরা জানে। এরুম যে অইত হারেেআঁই কোনদিন ভাবি ন । কারা জানি কয়, ইয়ান আঁঙ্গ দ্যাশ, ইয়ানে তোগ জাগা অইত ন। তোগরে বাড়ি ছাড়া কইর্‌তাম্ না হাইর্‌লে আঁঙ্গ শান্তি নাই। এই কতা হুনি হেগুনে ঠক্ ঠক্ করি কাঁইপতে শুরু করে। কারা য্যান্ লাডিসোডা লই বন্ বন্ করি ঘুরায়। আর বুজি নিস্তার নাই। হেগুনেরে ক্যাম্‌নে বুজাই, ডরাইও না, আন্দারের জালে জড়াইলে মাইন্ষ্যের মুখ দি এরুম শব্দ হুনা যায়। এক কাম কর, জানালা দরজা খুলি দে, আর যত জোরে হারছ্ বেক্গুনে এক লগে আবাজ তোল্, দেইখ্বি বেক্ জিন ভূতেরা দৌড়াই হালাইবার হঁত খুঁজি হাইত ন। এই ভিডা কারও বাপের ভিডা ন, আঁঙ্গ বাপ চইদ্য হুরুষের ভিডা, আঁঙ্গ নিজের দ্যাশ, স্বাধীন দ্যাশ, ইয়ানে মোছলমানেগ রক্ত লাগি আছে, হিন্দুগ রক্তও লাগি আছে, কার সাইদ্য আছে আঁঙ্গরে তাড়ায়, বাঁইচ্তাম না হারি, মইর্‌তাম ত হারুম। হেগুনে সাহস করি কয়, হাঁচা কতা কইছেন জেডি, মনের মত কতা, এরুম সাহস করি কেউ ত কহ্‌নও বুজায় কয় ন। আমরাও চাইয়ুম্ আঁঙ্গরে বেইমানরা কত মাইর্‌ত হারে। করিম কয়, ভয় হাইয়েন না, আঁইও আম্‌নেগ লগে আছি। য্যাতারা গেছে গেছে, আম্‌নেরা যাইয়েন না। এইডা বঙ্গবন্ধুর দ্যাশ, আঁঙ্গ বেকের দ্যাশ, আমরা এক লগে থাইয়ুম্, এই দ্যাশেরে  আঁই এতদিনে চিন্ছি, বুইজ্তাম হাইরছি দ্যাশ কারে কয়। দ্যাশের মইদ্যে  আর এক্কান দ্যাশ আঁর মনে বাসা বাঁধি রইছে, হেই দ্যাশে আম্‌নেগরে জাগা দিমু।     বড় দুখ্ অইল এই ভাবি, করিমরে আঁই আগে চিন্‌তাম হারি ন কিয়ের লাই! না বুজি, না চিনি আমরা কত ভুল করি হালাই, ঈশ্বর জানে। দ্যাশের মাইন্ষ্যেরে না ভালবাইসত হাইর্‌লে হেইডা ক্যাম্‌নে নিজের দ্যাশ হয়! এদ্দিন নিজের চখ দি দ্যাশেরে দেইখ্ছি, এইবার করিমের চখ দি দেইউম্, দেই না দ্যাশের ভিত্‌রে অইন্য কোনও দ্যাশের খোঁজ হাই কিনা।

সমাপ্ত 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *