শরদিন্দু সাহা
বাংলা কথা সাহিত্যের সুপরিচিত লেখক শরদিন্দু সাহা। লেখক সত্তা ও জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে তিনি অভ্যস্ত নন। নিছক লেখক হওয়ার জন্য তিনি কলম ধরেননি, সামাজিক দায়বদ্ধতাই তাঁকে সৃষ্টিকর্মে উদ্বুদ্ধ করে। শৈশব থেকে সৃষ্টিশীল মন লালন করে প্রস্তুতি পর্ব সারলেও নয়ের দশকের গোড়া থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। এ-পর্যন্ত শতাধিক গল্প, গোটা কয়েক উপন্যাস এবং অন্যান্য গদ্য মুদ্রিত হয়েছে। দশটি উপন্যাস আর সাতটি গল্পগ্রন্থ সহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা ষোলো। ১৯৯৮ সালে ‘কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগার পুরস্কার’ পান। ২০০৪ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত সোমেন চন্দ পুরস্কার’ পান। ওই বছরেই কাটোয়া লিটল ম্যাগাজিন মেলা কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘হল্ অব্ ফেম’-এ সম্মানিত করেন। ২০০৫ সালে ‘ভাষা শহিদ বরকত স্মরণ পুরস্কার’ পান। ২০০৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি’র আমন্ত্রণে গৌহাটিতে বাংলা-অসমীয়া গল্পকার সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে ‘আমি’ পত্রিকা তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বিশেষ সম্মান দেন। প্রসার ভারতী’র আমন্ত্রণে নানা সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিলিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রে ও ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যেই নিজস্ব এক ঘরানা সৃষ্টি করে তিনি পাঠকের মন জয় করেছেন।
(নিত্য সমাজ সংসারের যে স্রোত আমরা চাক্ষুষ করছি তার অন্দরমহল জুড়ে ঘুমিয়ে রয়েছে কত তো কথাকাহিনী, যার পরতে পরতে তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে গোপনে কত তো নারীর জীবনযন্ত্রনা, ধারক বাহক হয়ে গোটা সমাজকে যাঁরা ছাতার মতো আগলে রেখেছে, নিজের পরিচয় খুঁজে নিয়েছে, সকল ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে দিচ্ছে মুক্তি যুগ যুগ ধরে। কয়জনের কথাই বা আমরা মনে রাখি। তাঁদের গোপন ব্যথা, অনুচ্চারিত কথা গুমড়ে মরে যায়, চোখের জল কেউ মুছিয়ে দেয় না, গণ্ডীবদ্ধ শৃঙ্খলিত জীবনই তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। এমনই এক সাধারণ গ্রাম্য নারীর কথকতা ও চেতনায় চেনা জীবন ও সমাজপিষ্ট অব্যক্ত যন্ত্রনার পাঁচালি ‘দেশের গর্ভে স্বদেশ ‘ উপন্যাস।)
কে ধইর্ব হাল দ্যাশে উথাল হাতাল
মাইন্ষ্যে কয় ডর নাই, অইব না বেহাল
আঁঙ্গ দ্যাশের হিন্দুরা যে হামুকের খোলসের মত নিজেরে গুডাই হালার এইডা তাদের মিন্মিনানি দেই টের হাওন যার। মনের মইদ্যে বেকের আশংকা কী অইব, কী অইব, কোন হঁতে আগাইলে এই দ্যাশ, দ্যাশ থাইক্ব, ভাব্নাডা ভাব্নাই থাই গেল। চাইরহাশে শুধু আঁন্দার আর আঁন্দার, মনের ভিত্রে আঁন্দার বারে আঁন্দার, ইয়ের লাই কই মানুষ চইল্ছে না, চইল্ছে, বেবোলা অই যার দিন দিন, আগা নাই মাথা নাই, উল্টাহাল্টা বকে যিহানে, হিয়ানে। জিগ্গাই যদি কী কও, উত্তর আইয়ে, কিছু কইনি ত। আঁর মগজে ক্যান যে কত খেলা খেলি যার, নিজেরে কিছু বুজাইতাম্ হারিয়েন না, এরুমডা অর কিয়ের লাই। আঁর এক বেয়াই কয়, আম্নে বেশিই ভাবেনের বেয়াইন, যেমন চইল্ছে ঠিকই চইল্ছে, কোনও গড়বড় নাই, চুপ থান্ দেই। হ্যাতেনে কী করি বুইজ্ব, এরুম এরুম সময় আইয়ে চুপ থাইক্তে চাইলেও চুপ থায়ন যায় না। মাইন্ষ্যের হাবভাব দেই হ্যাতেরা বুজি কিছু বুইজ্তেই হারেন না, আশ্চর্যের কতা ত! আরও চম্কাই যাওনের কতাহান অইল, কতার হিডে কত রকমের কতা বয়াই দের, এত হাবিজাবি অই যার, আসলে যেইডা কইত চায়, হেইডা আর কই উডি হারেন না। দ্যাশের নেতারা কী ঠিক করে, হেইডাই বা বুইজ্তাম কী হারি, হ্যাতেনরা কি হাঁচা কতা কর, না মিছা কতা কর, হেইডাই বা ক্যাম্নে বুজুম। হ্যাতেনগ আবার কত জ্ঞানগম্মি, হেরুম কী আঁঙ্গ আছে? হুইন্তে হয় হুনেন, না হুইন্তে চান, হুনিয়েন না, এরুমই ত মেজাজ মর্জি। যাই হোক হেইডা আঁঙ্গ গ্ৰামের বিষয় ন, তয় কিনা মেঘনা নদীর ঢেউ খাল বাই বাই হুইরে হাঁদাই যার, হিয়ানে আমরা ছেন করি, ডুবাই ডাবাই, হেই জল হ্যাডে হাঁদাই যায় না, যায় ত। তাইলে ক্যামনেই বা কই আমরা চখমুখ বন্দ করি রাইয়ুম্।
আওয়ামী লীগের নেতাগ মনে কী চইল্তে আছে, হ্যাতেনরাই জানে। খেজুর গাছের নলির তুন্ বেক্ রস কি আর আঁড়িত্ হড়ে, কত রস চুয়াই চুয়াই গোড়ায় হড়ে, তার ঠিকানা আছে নি। হ্যাতাগ বেক্ কতা কি আর আঁঙ্গ সদর দরজায় আই হৌঁছায়, কত কতা মুহে হিরি হিরি মাইজ রাস্তায় গড়াগড়ি খায়, অত আর কেউ ইসাব রায় নি। এক কোনায় হড়ি থাই আমরা, দুইন্নাইদারি কোন মুই ছোডের, কেরুম হেইডার ইশারা, বুজন ত যায় না। তয় এক্কান কতা বুজি মাইন্ষ্যের মুয়েরে হেলাফেলা করন যায় না। হেইডা লই ত দ্যাশের কাইজ কারবার, যেই দ্যাশ দ্যাশ করি আমরা মাথা খুডি মরি। কিন্তু কতাগাইন ইয়ানে শ্যাষ অই যায় না। ওমা হাপেও দেই চুক্ চুক্ করি রস খায়। রসের ভান্ডার ছড়াই ভরাই আছে আনাচ কানাচে, যে যতডা হায়, ছোলায় ভোলাই খায়। কে আর দেইখ্ত যার কে আর কতডা খার। টের হায়, যহ্ন দেয় মাডে হসল নাই, বাজারে আনাজ নাই, দোয়ানে তেজারতি জিনিস নাই, রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়া নাই, ইস্কুলে মাষ্টর নাই, ছাত্র নাই, মাইয়ামাইন্ষ্যের হরনের মত কাহড় নাই, হ্যাডে ভাত নাই। তাইলে কী অইব আঁঙ্গ দ্যাশের, কন্ চাই। এই লই না আঁর অষ্টপ্রহর চিন্তা, হেইডা আর কেউ বুইজ্ল কই। একবার ভাবি বেক্গাইন ছাড়িছুড়ি চলি যাই, বুজি ন হ্যাতারা ক্যাম্নে হা হালার। মিছিলের কতা হুনি না বুজি, হুনি, কিন্তু ভাষা যে বুজি না, কতায় হ্যাতাগ কত ওজন।
হোলারা মাডে ফুটবল খেইল্লে হেই বল ত গড়াবই গড়াইব। দেয়নের বিষয় কোন মুই টপ্কাই চালের মইদ্যে হড়ি ভাঙিচুরি না দেয়। হাল্টি যাওনডা খারাপ ন, কিন্তু যহ্ন দেই আঁঙ্গ সম্পর্কে মাইয়ার এক হোলা চাঁটগা তুন্ আই পটর পটর কতা কয়, তহ্ন চিন্তা লাগে। ওমা হ্যাতে আবার কেরুম ধরনের কতা কয়। আগে ত হ্যাতেরে কহ্নও এরুম কতা কইতে হুনি ন, কতার মইদ্যে ঝাঁঝ আছে, মিষ্টি নাই, রাগ ভর্তি হুরা শইর্ল্যে। হ্যাতেরে জিগ্গাই তর আবার এরুম অবস্থা অইল কিয়ের লাই, কামের জাগায় কোন গোলমাল অইল কিনা। হ্যাতে চুপ করি থায়। গলায় গামছাহান হেঁচাই সদর দরজার দিগে আঁডা শুরু করে। হ্যাতের মা কয়, জানেন ত মাসি শহর তুন্ আই আঁর হোলা হারাক্ষণ মন মরা অই থায়, খায় না দায় না। কয় আর কামে যাইত ন। হ্যাতে এক কাহর চোহরের ব্যবসায় ম্যানেজারের কাম করে, মোডা ট্যাঁয়া রোজগার করে। হুইন্তেছি কর্মচারীরা হ্যাতের বিরুদ্ধে ট্যাঁয়া চুরির অভিযোগ আইন্ছে। বেক্গাইন নাকি মিছা কতা, হাঁসাইবার লাই বদনাম রডাই দিছে। আসল কতা হিয়ান ন। বঙ্গবন্ধুর দলে নাম লেহাইছে বিধায় হ্যাতেরে সরাই দিত চায় মালিক, না অয় যে হশ্চিমাগ দলের কোপে হড়ি যাইব। দ্যাশের যে এরুম দুরবস্থা অইব আগে ত কোনদিন ভাবি ন। আঁঙ্গ বাপ ভাইরা ত কামকাইজ কইর্ছে গদিত্, এরুম দুরছাই ত কোনদিন কেউ করে ন। হ্যাতে কয়, বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন যত বড় বড় শহর তুন্ গ্ৰামেগঞ্জে ছড়াই যার হ্যাতাগ টনক তত লড়ের, আর ত চুপ করি থাইক্ত ন, এই দ্যাশের মাইন্ষ্যের ডানা ছাঁডি দিব । হিন্দুরা আওয়ামী লীগরে সমর্থন করে বলে বাছি বাছি অইত্যাচার করা শুরু করে হিন্দুগ উপ্রে বেশি। বিপ্লবী, ছাত্ররা, বুদ্দিসুদ্দি আছে এরুম মানুষজন হ্যাতাগ চক্ষুশূল। হশ্চিমাগ বাড়া ভাতে ছাই দিতে আছে, আঁঙ্গ দ্যাশের ধন সম্পত্তি লুডি লই যার, এই কতাহান দিন দিন আরও হচার হর দেই হ্যাতেরা হাগলা কুত্তার মত অই গেছে। হেগুনে এম্নে এম্নে ছাড়ি দিত ন, ভাতে মাইরব, হানিতে মাইরব। হিয়ের লাই ত ঢাকা, চাঁটগা, রাজশাহী, ময়ময়নসিংহ লই বাঁই জিলার মানুষজন জোড বাঁধের। তাইলে ত আঁঙ্গরে হ্যাতেরা আস্ত রাইখ্ত ন। হ্যাতের মুয়ে এবার বোল হোডের। না গ দিদিমা, এত সহজে বঙ্গবন্ধু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ি দিত ন। আম্নে খালি দেইখ্তে থাহেন, যা দিন আইয়ের দ্যাশের মানুষ বেকে রাস্তায় নামি হইড়ব। তাতি রইছে, জল হইড়লেই হুইট্ব হট্ হট্ করি। ভাষা আন্দোলন যহ্ন অইছে, হশ্চিমা শাসকরা হাইর্ছেনি উর্দু চাপাইতে, লেজ গুডাই ঘরে হাঁদাই গেছে। দ্যাহেন না, কেরুম হয়। হ্যাতের কতায় আগুন আছে, এই হোলা দেইয়ের কোমর বাঁধি নাইম্ছে, এক্কান হেস্তনেস্ত করি ছাইড়ব। আঁই ভাইব্ছি হ্যাতের মার কতা, যদি ভালামন্দ কিছু অই যায়, হেতির কী অইব।
আঁই আঁর মেজ বইনের বাড়িত্ দিন হাতেক বেড়াই ট্রেইন ধইর্ছি, আঁর মেজ বইনের ছোড হোলা জন্টু আই উডাই দি গেছে। হোলা ত মন খারাপ করি হালাইছে। কতদিন বাদে আইছি আবার কবে আইয়ুম – আবার আমু রে, চিন্তা করিচ্ না। আই ত মরি যাইয়ের না। কতা কইতে শুরু কইর্লে কি আর থামে। গৌরিনাথ মাষ্টররে ট্রেইনে দেই ত আঁই চম্কাই উইঠ্লাম। আঁই ত চাঁন আতে হাইলাম্। কুমিল্লা তুন্ বাড়িত্ যার। ইয়ানে এক ইস্কুলে গৌরিনাথের এক কলেজের বন্ধু মাষ্টরি করে। গরমের ছুডিত্ বেড়াইত আইছে। উল্টা দিগে বইছে এক মাড়োয়ারি, লগে বউ আর হোলামাইয়া। মাষ্টরের বন্ধুডা কতা কইতেছিল। মাইঝ হঁতে কন্ ইষ্টিশনে নামি য্যান্ হিশীর বাড়ি যাইব। দেড় মাইল রাস্তা আঁডি যাইত অইব। মনের আনন্দ চাপা না রাইখ্ত হারি কয়, আঁঙ্গ দ্যাশহান হাঁচা হাঁচা যদি কোনদিন রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা অইত। বাঙালিগ লাই এক্কান দ্যাশ অইত, বাংলা ভাষায় বেক্ কাম অইত, কী ভালাডাই না অইত। রেল হুলিশ কান খাড়া করি হুইন্ল। এরুম করি চখ বড় বড় করি চাইল য্যান্ হাইর্লে অন্ই ভষ্ম করি দেয়। এইডা য্যান্ হরাধিন দ্যাশ, মনের কতা কইবার অধিকারডাও নাই। গৌরিনাথ মাষ্টর রাগ চাপি রাইখ্ত হাইরল না।
হশ্চিম হাকিস্তান কী আঁঙ্গ মালিক, উইঠ্তে বইতে চখ রাঙাইব। হুলিশ ব্যাডার আতহান ইস্পিস্ করি উইঠ্ল। কয়, কী কইলি হালার ব্যাডা হালা, যার নুন খাচ্, তার বদনাম করচ্। হটান করি এক চড় কষাই দিল মাষ্টরের গালে আঁঙ্গ হাড়ার মাষ্টরের অপমান! নিজেরে ধরি রাইখ্তাম হাইর্লাম না, দিলাম হুলিশ ব্যাডার গালে উল্টা চড়। চড় খাই ব্যাডা থতমত অই গেল। এরুম একহান কাণ্ড যে ঘইট্ত হারে হ্যাতে স্বপ্নেও ভাবে ন, আঁইও ত ভাবি ন। ট্রেইনহুদ্দা মানুষ হো হো করি আঁসি উইড্ল। ব্যাডা আঁরে কিছু কইবার হুযুগই হাইল না। লাজ শরমের মাথা খাই হরের ইষ্টিশনে নামি গেল। আঁই বুজি গেলাম মানুষ চাইলে কিনা হারে। দ্যাশের মাইন্ষ্যে এক থাইক্লে হশ্চিমারা একদিন বাপ বাপ করি হলাই যাইব। দুই একজন ভিন্ন ঢঙে কতা কইল বটে, দোহে টিক্ল না। হুরা ট্রেইনের মইদ্যে কিছুক্ষণের লাই একহান হিন হড়ার শব্দও অইল না। ট্রেইনডা কিছু তোয়াক্কা না করি হুশ হুশ করি চইল্তে আরম্ভ কইর্ল। কইলার ইঞ্জিলের ধুঁয়া খোলা জানালার হাঁক দি আই আঁর চয়ে মুয়ে হাঁদাই গেল। হরের ইষ্টিশনে আই ট্রেইন থাইম্লে আঁই ভাইব্লাম সব্বনাশা কিছু এক্কান অইব। গৌরিনাথ মাষ্টর নিজের কাঁধে দায় নিতে চাইলে কিছু কতা আপ্সে আপ আঁর মুহে দি বার অইল – মাষ্টর, ভাইব্বার কিছু কারণ নাই, আঁঙ্গ দ্যাশের মাষ্টরের গাত্ আত তুইলব আর আঁই চুপ করি থাইয়ুম্ এইডা অইত হারে না। ব্যাডারা বুজুক এট্টু কত ধানে কত চাল। আর বেশিদিন এরুম লাথিঝাঁডা খাই আঁঙ্গ দ্যাশের মানুষ চুপ করি থাইক্ত ন। বদি, আম্নের মইদ্যে যে এরুম জিদ আছে কোনদিন ত ভাবি ন।
মাড়োয়ারি লোকডা কিছুক্ষণ চাই থাই কইল, আঁইও বাঙালি আঁর বাপদাদা চইদ্দ হুরুষ দেড়শ বছর ধরি এই দ্যাশে আছে, হশ্চিমাগ আত তুন্ এই দ্যাশরে বাঁচাইতে আঁইও আম্নেগ লগে আছি। কোনার সিট তুন্ একজন কইল, ইনশাআল্লাহ্ অইবই অইব। দ্যাশের স্বাধীনতার লাই জান কবুল।
এবার বইনের বাড়ি বেড়াইতে না যাইলে নোয়া বাতাসডারে কোন মতেই বুইঝ্তাম হাইর্তাম না, মাইন্ষ্যের ভিতরডা ধীরে ধীরে কেরুম হাল্টাই গেছে। মুখ বুজি আর থাওনের মত অবস্থা নাই অন্। নিজেরেই নিজে হশ্ন কইর্লাম এইডা ক্যাম্নে অয়? সমাজ মানুষ এই যে হাল্টাই যার হ্যাতেনরা কী টের হায় না! আঁর কাছে বেক্ কিছু বড় আজব লাগে। এই দ্যাশের মাইয়া মাইন্ষ্যের মনেও কি কোন নোয়া চিন্তা আইছে, না কি হোলামাইয়া হামলাই, রাঁদাবাড়ি করি জীবন কাডাইতেই মাইয়াগ আনন্দ। হেগুনের মনের গতি আদ্যি কালের বদ্যি বুড়ির মতই ঘুমাই আছে, ঘরের চৌহদ্দির বারে চলি হিরি ঘোরাডা কলের হুতুলের চাবি দেওনের মত। ডাইনে যাইব, না বাঁয়ে যাইব কোন হোদবোদ নাই, বাঁইচতে হয় বাঁচি আছে। আঁর বইনের লগে কতা কই বুইজ্লাম ঘরবাড়ি, থালাবাসন, কাঁতা কম্বল, হাঁড়িকুড়ি ছাড়া দুইন্নাইর কোন খবরই য্যান্ হেতির গায়ে আঁচড় কাডে না; আঁর মুয়ে দুই-চাইরহান কতা হুনি আঁসি উড়াই দেয়। আঁরে ধাক্কা মারলে মাইরব, মরি ভূত অই যাইয়ুম্, কার কি আইব যাইব।
কতাডা উড়াই হালাইবার মত ন, কারও ত কিছু আওন যায় না, য্যাতের আছে মাথা, হ্যাতের খালি মাথা ব্যথা। বুইজ্বার চেষ্টাও কইর্ল না। এই না বুজ্নই হেতিগরে একদিন হিসি মাইরব। আঁর বইন ত মনেও কইর্ত হারে না দ্যাশের লাই কোন মাইয়ারা হরান দিছে, মাষ্টরদার দলের মাইয়া প্রীতিলতার কতা, কল্পনার কতা কহ্নও হুনেও ন। আঁর মুয়ে হুনি মুখ বন্দ করি চাই থাওন ছাড়া হেতি কিইবা কইর্ত হারে। আঁই না হয় ইস্কুলের মুখ দেইখ্ছি বলি কিছু বিদ্যাবুদ্দি অইছে, কত জ্ঞানের কতা স্বামীর মুয়ে হুইনবার ভাইগ্য অইছে, এরুমডা কজনের জোডে। বইনের বেলা অইছে উল্টা। মাইয়া মাইন্ষ্যের ভাইগ্য চিয়ন হুতার উপ্রে ঝুলে, ছিঁড়ি যাইলে আর উপায় নাই। দেইখ্তে হুইন্তে হেতি মন্দ আছিল না, ভালা ঘর হাই বাইচ্চাকালে বিয়া দি দিছে মা বাপ ভাইরা হছন্দ করি। চাইর হোলামাইয়ার জম্ম দি স্বামী গেল হরকালে। যা অইবার তা অইল। কষ্টমষ্ট করি হেগুনে বড় অইল। হেতি অন্ রোগে হড়ি আধামরা অই বাঁচি আছে। আঁর বইনের মতই গ্ৰামগঞ্জের বেক্ মাইয়াগ অবস্থা। বইন আঁর দিনরাইত বিছ্নাত্ হড়ি থায় আর কেউ আইলে শ্বাস টানি টানি কতা কয়। কি আর সান্ত্বনা দিমু। নিজেরে হামলাই তুলি হেতির আতহান আঁর আতের তাইল্লার উপ্রে রাই পঞ্চাইশডা ট্যাঁয়া দি কইলাম, তোর যে হল্ খাইত মন চায় হোলারে দি আনাই লই খাইছ্। বইন হেতির ঠোঁড দুইহান লাইড়ল, কোন কতা কইল না। চইর তুন্ কোনরমে নামি আই আঁর হায়ে আত দি হন্যাম কইর্ল। হেতির এই অবস্থার লাই কারে দোষ দিমু, ভাইগ্যরে না মাইন্ষ্যের হাগলামিরে! দ্যাশের বাঁদরামিরে না অয় নেতারা সোদ্রাইব, কিন্তু সমাজের নিয়মরে কারা ঠিক কইর্ব, হেরুম মানুষ অন্ কন্নাই আছে?
মাইয়াডার কতা চিন্তা কইর্লে আঁর মাথা ঘুরি যায়। সোমত্ত মাইয়া ঘরে থাইক্লে কোন্ বাপ মায়ের না চিন্তা অয়। হেতিরে কত করি সাবধান করি যহ্ন তহ্ন ঘরের বার অইচ্ না, বিপদ কিন্তু হায়ে হায়ে ঘুরের। আঁঙ্গ দ্যাশের হালচালও ভালা ন, চাইরদিগে অরাজকতা। কহ্ন যে কোন্ ঘটনা ঘডি যাইব, কেউ কী আগাম কইত হারে? হিন্দুর মাইয়ার উপ্রে কারও কারও বাজ হইকের মত নজর। কত কিছুই ত হুনা যার, এই ত তোর ভাইও কইল, তোরে কইতে যদিও মানা কইর্ছে, টাউনে চৌধ্রী হাড়ার কোন মাইয়ারে বলে রাস্তাঘাডে টিট্কারি কইর্ছে, হেই লই হিন্দু মোছলমানের মইদ্যে এক রাইজ্যের অশান্তি। আঁর মাইয়ার কী রাগ, ঐটুক্ মাইয়ার চোহা কম ন। কয়, মাইয়া মানুষ মাইয়া মানুষ হাঁজি থাইক্লে এরুমডা অইবই, মুয়ের উপ্রে কড়া জবাব দিত জাইন্লে এত সাহস অইত ন। আইয়ুক্ না আঁর লগে লাইগ্ত, বাপের নাম ভুলাই দিম্। তুই একদিন সব্বনাশ করি ছাইড়বি। মাইন্ষ্যে কইব যেরুম মা হেরুম মাইয়া। আঁর মাইয়া যে একশ ভাগ ঠিক কইছে হেইডা জাইন্লেও লায় দিলাম না। হড়ালেয়া শিখ্ছে ঘরে বই, মনের জোর যদি না বাড়াইল, এই শিক্ষার কী দাম! এই বাড়ি হেই বাড়ির মাইয়ারা এক লগে জড় অই কত খোশগল্প করে। হেগুনের মা বাপেগ কত দুশ্চিন্তা দিনরাইত ক্যাম্নে হাত্রস্থ কইর্ব। যাও দুই এক্কান সম্বন্ধ আইয়ে, জুইতের ন, হোলা ভালা ত ঘর ভালা ন, কারও ট্যাঁয়ার জোর নাই, কারও আবার কুষ্টি মিলাই দ্যায়ে মঙ্গলের দোষ, ঘটক আবার হুলাই হাঁপাই ইঁদুরেরে বাঘ বানাই দেয়, কারও আবার মাইয়ারে হছন্দ অয় না। এত আয়োজন করি মাইয়া দ্যায়াইল, ভাইগ্যের সিকা ত ছিঁড়ল না। শ্যামলী ত হাউমাউ করি কাঁদি ভাসার, বার বার মাইয়া দ্যায়ার চইদ্দ বছর বয়স থুন, কুড়ি ছুঁই ছুঁই অন্ও কোন গতি অইল না। কতায় আছে কুড়িত্ বুড়ি, আবার গায়ের রঙ কালা অইলে ত কতা নাই, মাইয়ার আতে দশডা ট্যাঁয়া দি মণ্ডা মিডাই খাই অইন্য বাড়িত্ দৌড়ায়। শাশ্বতীর মনের মইদ্যে আনন্দে খই হোডের, হেতির আতে কুড়ি ট্যাঁয়া দি গেছে হোলার বাপ, এবার এক্কান গতি অইব। অঞ্জলি ত লইজ্জায় মরি যায়, ক্যাম্নে বিয়ালের গালগপ্পে মুখ দ্যায়াইব। মাইয়া সন্তান কী বাজারের আনাজহাতি, দরদাম করি বাজার তুন্ কিনি আইন্ব, ঘরে আনি হঁচাগলা মনে অইলে মেলা মারি হালাই দিব। মাইয়াগ এরুম দশা দেই বুয়ের মইদ্যে খাঁ খাঁ করে। হেগুনেরে ক্যাম্নে হঁত দেয়াইয়ুম চিন্তায় ঘুম আইয়ে না। বাপ মার কত চিন্তা মাইয়ার বিয়ার বন্দোবস্ত কইর্ত হারেন না, এদিগে বয়স বাড়ি যার, কত দুখ করি কয়। বাপ মার চিন্তা দ্যাই মাইয়াগ কম চিন্তা! হড়ালেয়া জানে না, হরের বাড়ি যাই ডেগ্ মাষ্টরি কইর্ত অইব, অইন্য উপায় ত নাই। বয়সের জ্বালা ত কম ন, হিয়ালেরা মুখ বাড়াই রইছে কহ্ন খপ করি ধরি টানি লই যাইব, হেগুন ত তক্কে তক্কে থায়।
লক্ষ্মীহুর তুন্ খবর আইছে। হিয়ানে এক লম্বা মিছিল বার অইছিল, মিছিলের উপ্রে হুলিশ গুল্লি চালাই দিছে। দুই চাইর জন মারাও গেছে। হেই লই কী কম কাণ্ড! বেগমগঞ্জ হইয্যন্ত অশান্তির জের চলি আইছে। মানুষজন ডরে আঁড্বাজারে বার অয় না, কি জানি ভালা মন্দ কিছু যদি অই যায়। য্যাতাগ হোলারা হঁতেঘাডে আছে, হ্যাতাগ মাথাত্ বাজ ভাঙি হড়ের। যদি হুলিশ ধরি লই যায়, হাজত বাস করাইব তিন দিন তিন রাইত, আর ভাইগ্য খারাপ থাইক্লে জেলের ঘানি টানাইব। আঁর হোলার মাথায় আওয়ামী লীগের ভূত হাঁদাইছে, কহ্ন আতে হোষ্টার লই দলে ভিড়ি যাইব, মাইক লই হশ্চিমাগ আকাম কুকামের বিরুদ্ধে গলা হাঁডাইব, কে জানে। আঁই মাইয়া মানুষ, ঘরের এক কোনায় বই থাই আকতা কুকতা ভাইব্তেই থাই। গুল্লি চইলছে বিধায় দোয়ানহাড্ বন্দ করি আঁঙ্গ বাড়ির কত্তারা বাড়ি চলি আইছে। হশ্চিমাগ সহযোগী ভাইরা আমোদ আহ্লাদে মাতি রইছে, হ্যাতারা তাল মিলাই চলে, গোপন খবরাখবর দি নিজেগ আখের গোছায়। দ্যাশের মাইন্ষ্যে হরান দেয় আর ব্যাডারা হুর্তি করে, এরুম বেইমান জম্মে দেই ন। চাইর মুই আগুন জ্বলের। আঁর স্বামী এক মুহুরী দি খবর হাঁডাইছে আঁই য্যান্ শীঘ্রই বাড়ির কাওর লগে টাউনের বাসায় চলি আই। হুলিশের লাডির বাড়ি খাই হোলার হাঁ ভাঙ্গি গেছে। এরুম দুঃসময়ে আঁই মাইয়ামানুষ ক্যামনে যাই। আঁর দেয়রের হোলারে লই বার ত অইলাম ঘর তুন্। বুইজ্লাম সোজা হঁতে যাওন যাইত ন, ঘুরহঁত ধইর্লাম। আঁর হৌড়ি বার বার করি সাবধান করি দিছিল – বৌ দিনকাইল ভালা ন, হঁতেঘাডে যদি কোন বিপদ হয়, কে তোরে বাঁচাইব, গোপাল ড্যাগা হোলা, কোন ভরসা আছে নি। কি কন্ আম্নে অনের ষোল বছরের হোলা দুইন্নাই উল্টাই হালার, হ্যাতে হাইর্ত ন! আঁই অ্গ্গা বুড়ি মাইয়া কেউ কিছু কইর্ত ন । তুলসী তলায় হন্যাম করি মুয়ে ঈশ্বরের নাম লই আঁডা শুরু কইর্লাম। হাঁচ মাইল গ্ৰামের হঁত দি আঁডার হর এক হান-বিড়ির দোয়ানে বইলাম। দোয়ানদার কইল, আম্নেরা হাগল অইছেন নি, টাউন ইয়ান তুন্ আরও দশ মাইল দূর, হৌঁছাইতে হৌঁছাইতে রাইত অই যাইব, এক কাম করেন রতনহুরের বাজারে চলি যান, হিয়ান তুন্ রিক্শা করি হাকিমহুরের গঞ্জ, দুই তিন মাইল আঁইড্লেই ইষ্টিশন, হরে আর চিন্তা নাই। কোন দুর্ঘটনা ঘইট্লে সইত্যহীরের নাম জইপ্বেন, বিপদ কাডি যাইব, হীরবাবারে জান হরান দি্ ডাইক্লে কেউ হিরে না। বাসাত্ হৌঁছাই দেই হোলা আঁর যন্তনায় কাত্রার। হাঁড়ভাঙা তৈল লই গেছিলাম লগে। আঁরে দেই হোলার বেদনা অদ্দেক য্যান্ কমি গেল। যাইতে যাইতে দেইখ্লাম মানুষ ক্ষেপি গেছে। এই সরকারের উৎখাত করি ছাইড়ব।
আঁর স্বামীরে কইলাম, আম্নে অন্ও ডাক্তর ডাহেন ন। অইছে কি হ্যাতেনে হোলার এই অবস্থা দেই থতমত খাই গেছে। কোনদিগে হোতাইলে হোলার হা রাইখতে সুবিধা অইব, হেইডাও বুই্জ্ত হারেন না। বারে অন্ ঘোর আঁন্দার, কোন্ ডাক্তর আইব অসময়ে। আঁর মনের অবস্থা দেই, ছুইড্ল মাইল খানেক দূরে মোয়াজ্জেম ডাক্তাররে ডাইক্ত। হ্যাতেনে ত আইতই চায় না, কত বলি কই আতে হায়ে ধরি ডাকি আইন্ল। কারণডা হুনি ত চমকাই গেছে – এরুম বেআক্কলে কাম আম্নের হোলা কিয়ের লাই কইর্ত গেছে। হ্যাতের হা সারাইত যাই আঁই না ধরা খাই যায়। হারিকেলের দঁইডা বাড়াই দিলে ঘরডায় আলো ছড়াই যায়। হোলার মুখহান এতক্ষণ দেয়াই গেছিল না। এরুম হুয়াই গেছে য্যান্ কদ্দিন অইল খায় ন। হ্যাতেনেরে দুই কতা হুনাই দিলাম। তোঁর হোলা আঁর কতা হুনে নি। এরুম বাচাল, কোন কতা কওন যায় না। য্যান্ হ্যাতেই বেক্গাইন বুজে, আর বাঁইগুন মূরুখ্য। ডাক্তরের ওষুধ আর আঁর তৈল মালিশে শ্যাষমেশ হোলা হাহান লাড়াইত হাইর্ল। চই তুন্ উডাই চেয়ারে বয়াইলাম। হায়ের জোর বাড়াইলে ত শুধু অইত ন, শরীল আর মনের জোরও ত বাড়াইতে অইব। মা অই আঁই ত চুপ করি বই থাইক্তাম হারি না। ছনের ছানি আর মুলি বাঁশের বেড়ার এই ঘরহান নোয়া অইছে। সামনের ঘরে দুইহান চই হাতা আছে। এক চইয়ের উপ্রে খোকন্ হোতে। খোকন্ বাড়ি দেখভাল করে। আর এক চইত্ হোলা আর হোলার বাপ ঘুমায়। মাইঝহানে গোলটেবিল আর দুইদিগে মোট তিনহান চেয়ার। চেয়ারে বই হ্যাতেনে মক্কলগ লগে মুসাবিদা করে। কতরকমের মানুষ যে আইয়ে। হ্যাতাগ পটর পটর কতা হিচন তুন্ হুনা যায়। জমি জমার মামলা, খুনাখুনি, রাহাজানি কোনডা আর বাদ যায়। হুইন্তে হুইন্তে কানে তালা লাগি যায়। কিছু ত কন্ যায় না, এইডা ত হ্যাতেনের হেশা, হেই ট্যাঁয়ায় আঁঙ্গ সংসার চলে।
রাস্তার হাশে আঁঙ্গ ঘর। দিনরাইত কত কতা না হুইন্তাম হাই। কেউ বলাবলি করে, মুজিব বড় বাড়াবাড়ি শুরু কইর্ছে, ইয়ার হল্ ভালা অইত ন। এত বড় কতা হেগুনে কইত হাইর্ল! হুইন্তাম চাই না, তবুও য্যান্ কানে চলি আইয়ে। আরে না না, বঙ্গবন্ধু য্যাতারা বানাইছে, বানাইতে দে। কয়, হিন্দু মোছলমান বেকের এক লগে থাইক্ব, অইত ন। এইডা মোছলমানের দ্যাশ, মোছলমানরাই থাইক্ব, হিন্দুরা থাইক্ব কিয়ের লাই? কী কতার যুক্তি আছে নি? বাংলা ভাষা শিখনের কী দরকার! সরকার যেরুম কয় উর্দু শিখত অইব, অইব, দুরকম কতা চইল্ত ন। হিন্দুরা বাঙালি অইত চায় হোক, আমরা অইতাম্ না। মুসলীম লীগ আঁঙ্গ হাটি, হাকিস্তান আঁঙ্গ দ্যাশ, মুজিব বাংলাদেশ বাংলাদেশ করের, এরুম শিক্ষা দিব না ইয়াহিয়া হান, হলাইবার হঁত হাইত ন।
আঁই হুনি আর কানে য্যান্ তুলা দি রাই। হুরা দ্যাশের মাইন্ষ্যে হশ্চিমাগ কবল তুন্ মুক্তি হাইত চায়, এই ব্যাডারা কয় কি। আঁর স্বামীর বন্ধু মনতোষ বাবু উকিল কোটের তুন্ আই আঁঙ্গ ঘরে গালগপ্প করে, নানা রমের রঙ্গ রসিকতায় আঁইস্তে আঁইস্তে মরি যাই। হ্যাতেনে হুনে আর আঁসে আর হা দোলাইতে দোলাইতে কয়, এই হনুমানগুনের মাথা খারাপ অই গেছে, উল্টাসিধা বক্বক্ করে, কবে যে এগুনের জ্ঞানগম্মি অইব কে জানে। হাল্লায় হইরত সেলিম সাবের, এরুম বিচারক লাখে একজন, এগুনের বাপের নাম ভুলাই দিত, কোশ্চেনের হর কোশ্চেন করি, কাহর খুলি দৌড় মাইর্ত। আর স্বামী জিগ্গায়, মনতোষ বাবু কইতে হারেন এই দ্যাশহানের হাল কি অইব ? এক কতায় কমু, রসাতলে যাইব। ভোটের ঘন্টা ত বাজি গেছে। হ্যাঁ, আইজ উকিল বারেও কতা কাডাকাডি অয়ছিল। কে যে কোন দলে বুজা ভার। এই দ্যাশডার চরিত্র কী দাঁড়াইব কেউ কইত হারে না। মনের কতাহান বারে আইনতে শিক্ষিত মানুষরাও ভয় হায়, যদি সরকারের বিরুদ্ধে চলি যায়, বিনা বিচারে জেলে ভরি দিত হারে। হেই কতাগাইন যেমন হাঁচা হেরুম এত এত মিটিং এত এত মিছিল এত এত শ্লোগান, হুলিশের গুল্লি খাওন ইগাইন ত মিছা অই যাইত হারে না। হিয়ানে ত হিন্দু মোছলমান বাছবিচার অর না। বুইজ্জনি খোলা মনে দেইখ্লে এরুম, আর মনের দরজাহান বন্দ রাইখ্লে আরেকম।
হ্যাতেনগ কতা হুনি আর চুপ করি থাইক্তাম হাইর্লাম না। হিচনের ঘর তুন্ জানালার ফাঁক দি মুখ বাড়াই কইলাম, আইচ্ছা এত আগের তুন্ বেক্গাইন কওন যাইত হারে। দিনের কতা আর রাইতের কতায় কত হারাক, আন্দোলনের মুখ কোন মুই যাইব, আন্দোলনই ঠিক কইর্ব, শেখ মুজিব নিজেও ত জানে না, দ্যাশের মাইন্ষ্যেরে কী কতা কইব, কেরুম কতা কইব, কোন ভাষায় কইব, দ্যাশের লক্ষ লক্ষ চাষাভুষা মুডেমজুর হ্যাতেনের কতার কী অর্থ কইর্ব। কেবল ত ভোটের ঘন্টা বাইজ্ছে, ঠিক কইর্ব মানুষ দ্যাশের চেআরা কেরুম অইব, আম্নেরা বারে বই ঘরে বই উকিল মোক্তার আর বিচারকরা ঠিক কইর্লে ত অইত ন। অশিক্ষিতের মাথায় ত কিছু বিদ্যাবুদ্দি আছে। উকিলবাবু কয়, বদি, আম্নে ত কোন খারাপ কতা কন্ ন, অত তলাই ত আঁই ভাবি ন।
দাদা, আম্নেরা ত মাইয়া মাইন্ষ্যের মাথার কোন দামই দেন না, ভাবেন হেতিরা মাথায় ঘোমডা দি ঘরের কোনায় হড়ি থায়, আর চুলা ঠেলে, হেগুনেরে গনায় ধরি কী লাভ, আম্নেরা যেই দলেরে কইবেন, হেই দলেরে ভোট দি দিব, না এসব আর অইত ন, আঁঙ্গ এক্কান ভিন্ন মত আছে, এই কতাহান মানি লন, মাইয়া মাইন্ষ্যেগ আর হিছে হালাই রাইয়েন না, আঁঙ্গ চেহারা না দেই মগজহানের মূল্য দেন। কতাগাইন কইলাম বলি রাগ করিয়েন না। উকিলবাবু থম্ মারি বই রইলেন কিছুক্ষণ, হ্যাতেনে কল্পনাও করেন ন টাউনের নামজাদা উকিলরে কেউ এরুম হশ্ন কইর্ত হারে।
বদি, আম্নের মনের ভিত্রে এরুম এক্কান চিন্তার উদয় অইল কেরুম করি? এই হশ্নের উত্তর দেয়ন উচিত কি উচিত ন আঁই ঠিক কইর্তে হাইর্লাম্ না। হিছের তুন্ হাকের ঘরের হাশ দি মনে বল লই হা হালাই সামনের ঘরের মুই আগাই গেলাম। দুইডা কারণ আছিল এই যাওনের হিছে। হতমটা অইল আঁর বাঁই কতাগাইন হ্যাতেনে যাতে মন দি হুইনত হারে, আর এক্কান কারণ অইল, আঁর স্বামীরে বুজানো, হুযুগ হাইলে মাইয়ারাও জবাব দিত হারে, তাও কিনা এরুম মানুষের সামনে, হুইনছি কোটে বিচারকরা বলে সওয়াল জবাবের সময় ঢোক গিলে, চইদ্দবার ভাবে। আঁই হুনাইতে ছাইড়্লাম্ না, দাদা, সামনের ভোটে মাইয়ামাইন্ষ্যেরা হুরুষেগ লগে গলা মিলাইত যদি হারে, হশ্চিমারা হারি ভূত অই যাইব। পাটির নেতাগ কন্ বউঝিগ ঘরে আঁটকাই না রাই মাডে ময়দানে নামাইতে। আম্নের কতার মূল্য আছে, কিন্তু আঁঙ্গ সমাজ যে অইন্য কতা কয়। আরও অপেক্ষা কইর্ত অইব। আঁই মনে মনে আঁইসলাম, কতার অর্থহান বুজি ঘোমডা মাথাত্ দি বাগানে আইলাম, হিয়ানে গেঁন্দা জবা টগর হুলেরা গায়ে গা লাগাই কত কতাই না কয়, কান হাইত্লেও যার অর্থ উদ্ধার করন যায় না। আঁর কতা আর অন্ কে হুইনব!
বিয়াল অইলেও আঁন্দার ঢাকি হালাইছে চাইরদিগ। মেঘ উড়ি উড়ি বেড়ার আকাশের কোণায় কোণায়। হোলামাইয়ারা মাডে ফুটবল লই লাথালাথি করে। কোন্ দলের বল কার হা’র তুন্ হইড়ল যাই হুলিশের গাড়িত্। আঁঙ্গ ঘরের লগেই মাড্। মাডের লগে হুইর। হুলিশের লাডির বাড়ির চোডে ছুডি যাই ঝাঁপ মারে হুইরে। হেই এক দৃশ্য, বেক্গুন ডুব মারে, মাঝেমইদ্যে মুখ বাড়ায়, বুড়বুড়ি ছোডায়, আবার হুলিশের বন্দুক দেই ডুব মারে। এইডা ত গ্ৰাম ন, টাউন, কেউ আর ঘর তুন্ বার হয় না। কদিন ধরি হুনিয়ের হুলিশ নানান ছুতায় জোয়ান জায়ান হোলাগ ধরি লই যার। হ্যাতাগ চর লাগাই রাইখ্ছে কেউ কোন ষড়যন্ত্র কইর্লেই খবর দিব। দ্যাশের মাইন্ষ্যে যে এভাবে ভাগ অই যাইব কে আর বুইজ্জে। ঘেডি ধরি ঠেইল্তে ঠেইল্তে একজনেরে জিপ গাড়িত্ উডাইবার সময় আঁর স্বামী যাই কারণ জাইন্তে চাইলে কাডা কাডা কতা হুনাই দেয় এরুম করি য্যান্ আমরা এই দ্যাশের মানুষই ন। নিজ দ্যাশে হরবাসি। আঁর স্বামীরে ত হেনস্থা কইর্লই, এই জিলার মাইন্যগইন্য মানুষজনের মইদ্যে হইড়লেও হ্যাতাগ কাছে হত্তুর। ঘুম তুন্ উডি দেই এক লম্বা মিছিল ইষ্টিশন তুন্ আঁঙ্গ বাসার রাস্তা ধরি জিলা ইস্কুলের দিগে চলি যার। হোলাগা জিলা ইস্কুলের ছাত্র, হিডাই হিডাই বিনা দোষে আধমরা করি ছাড়ি দিছে; এত বিষ হশ্চিমাগ মনের মইদ্যে, এর এক্কান বিহিত একদিন অইবই। হ্যাতাগরে বধিব যে গোকুলে বাইড়্ছে সে। মিছিলের জোয়ান হোলাগ চখমুখ দেই বুইজ্তে হাইর্লাম্ ঢাকা হৌঁছাইতে আর বেশি দেরি লাইগত ন। আঁর হোলাডা যে কোন হাঁকে ভাঙ্গা হা লই ভিড়ের মইদ্যে মিশি গেছে ক্যাম্নে কইয়ুম। এরুম দিনও আইয়ে, মাইন্ষ্যে নিজের চেহারাহান নিজে দেই শরম হায়, আঁঙ্গও কী এরুম দিন আইছে! যদি তা না অইব আঁঙ্গরে উচ্ছন্নে হাঁডাইবার লাই হ্যাতাগ এত তোড়জোড় কিয়ের লাই। এরুম কাণ্ড ত কহ্নও দেই ন, আঁর স্বামী চেয়ারে বই মক্কলের লগে মুসাবিদা করে আর দ্যাশের হত্তুর বিভীষণ আই দরজার সামনে আত হা নাচায়, মুখ দি এরুম সব কতা কয়, মুয়ে আনন্ যায় না, কানে হুনন্ যায় না, দিন দুহরে ঘরের চালে হাতর ছোঁড়ে। আঁচ কইর্তাম্ হারিয়ের, বড় এক্কান কিছু ঘইট্ব। আঁর স্বামী ভাইব্ল কোটে কেইস কইর্ব। আঁই বুইজ্তাম্ হারিয়ের কেস করি কোন লাভ অইত ন, দূর তুন্ কেউ দান চালের। হরে হরে হুইন্লাম বাছি বাছি আওয়ামী লীগের নামের লিষ্টি ধরি ধরি এরুম কাণ্ড ঘডার। উকিলবাবুর বউ আই কইল, দিদি, আঁঙ্গ সামনে বড় বিপদ, হ্যাতেরা এই দ্যাশ তুন্ আঁঙ্গরে দোড়াই দিব। হ্যাতেরা উকিল হাড়ারে দখল কইর্ত চায়। চাইলেই অইল, হরান থাইক্তে এই দ্যাশ ছাড়ি আমরা যাইতাম্ ন, কিয়ের লাই বা যাইয়ুম্, হাত হুরুষের বাড়িঘর, জমিজমার তুন্ দৌড়াক্ চাই দেই, হরান থাইক্তে যাইতাম্ ন। ভাগ কর্লেই অইল, মাইন্ষ্যের আবার কিয়ের ভাগাভাগি। আগের বার যহ্ন ভাগ অইল আমরা জাইন্তাম্ও হারি ন, ক্যাম্নে ক্যাম্নে ভাগ অই গেল। যাইতে হয়, হশ্চিমারা আঁঙ্গ দ্যাশ তুন্ যাইব। বাঙালিরা এক ছাতার নিচে থাইয়ুম্। মারুক্ কিলাক্ হিডাক্ এইডা আঁঙ্গ জমি, আঁঙ্গই থাইক্ব। উকিলবাবুর বউ আঁর কতা হুনি মনে বল হায়, কয়, আম্নেরে হন্যাম করি, দাদা কোয়াল গুনে আম্নের মত বউ হাইছে। দিদি আম্নে উল্টা কতা কনের, আঁই ক্যামে্নে আম্নের দাদার যোইগ্য অইলাম, কন্ চাই, কন্নাই হ্যাতেন, কন্নাই আঁই।
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)