প্রেম ও বৈরাগ্য
আশিস ভৌমিক
লেখক পরিচিতি
(জন্ম 5 ই এপ্রিল 1974, গ্রাম -বৃন্দাবনচক , পাঁশকুড়া , পূর্ব মেদিনীপুর ।প্রাথমিক পড়াশোনা গ্রামে ।উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় ।সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ।গৃহ শিক্ষকতার ফাঁকে ফাঁকে সাহিত্য চর্চা । বিভিন্ন লিট্ল ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন । প্রথম কাব্যগ্রন্থ “”হিরণ্ময়ী ” । দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ” কালবেলা “।
– বুক ভরে নিই শহরের ঘ্রাণ
হৃদয়ে মেঠো পথ, ফলের বাগান।)
১
কবীর কথা :-
কোই রহিম কোই রাম বখানৈ
কোই কহে আদেস
নানা ভেষ বনায়ে সবৈ মিল
ঢুঁর ফিরে চহুঁ দেস
কহৈ কবীর অন্ত না পৈহো
বিনা সত্য উপদেশ ।
অনুবাদ :-
কেহ বলে রাম, কেহ বা রহিম
মেনে চলে প্রত্যাদেশ
ভেখ ধরে সব ফকির মুনিম
খুঁজে ফেরে সারাদেশ ।
.
কবীর বলেন, পাবে না এ রহস্যের অন্ত
সত্য বিনা উপদেশ দেয়না সিদ্ধান্ত।
২
কবীর কথা :-
মন তু নাহক দুন্দ মচায়ে
কর আসনান ছুয়ো নহি কাহ্
পাতী ফুল চঢ়ায়ে ।
মূরতসে দুনিয়া ফল মাঁগৈ
অপনে হাথ্ বনায়ে ।।
যহ জগ পূজে দেব দেবো,
তীর্থ বর্ত অনহারে ।
চলত ফিরত মেঁ পাঁর দুঃখিত ভয়ে
যহ্ দুঃখ কঁহা সমায়ে ।।
সাঁচে কি সঙ্গ সাঁচ বসত হই
ঝুঠে মার হঠায়ে
কহৈ কবীর জঁহ সাঁচ বস্তু হৈ
সহজ দর্শন পায়ে ।
অনুবাদ :-
ওরে মন কেন তুই উচাটন
মানুষ ছুঁয়ে গোসল নাও
ঘৃনা কর আত্মজন ।
নিজ হাতে মূর্তি গড়ে
ফুল পাতাতে দিস মানত
বার ব্রত আর তীর্থ ঘুরে
উপবাস রোজায় পাও জন্নত ।
ক্লান্ত চরন অবস মন
দুঃখ কি আদৌ হয় সমাপন ?
.
সত্যের মধ্যে সত্যপীর
মিথ্যার চাদর সরিয়ে দাও
কবীর কহে, সত্য সার
সহজ দর্শন সহজে পাও ।।
দোহা :-
জগত জানায়ো জিহি সাকাল সো জাগ জানিয়ো নাহি
জিয়ো আঁখি সব দেখিয়ে আঁখি না দেখি জাহি ।
অনুবাদ:-
জগত চলে কার বিধানে ?
জগত কি তা জানে !
যে চোখ দিয়ে দেখি বিশ্ব পানে
সেই চোখ আমি দেখি কেমনে।
৩
কবীর কথা :-
অবধু অমল করৈ সো পারৈ ।
জৌঁলগ অমল অসর না হোরৈ
তৌঁলগ প্রেম না আরৈ ।
বিন খায়ে ফল স্বাদ বখানৈ
কহৎ ন শোভা পারৈ ।
আঁধর হাত লিয়ে কর দীপক
কর পরকাস দিখারৈ ।
ঔরন আগে কবে চাঁদ না
আপ অন্ধেরে ধারৈ ।
অনুবাদ :-
প্রেম তো সাধনা এক
অমল আলোয়
অপবিত্র হৃদয়ে প্রেম
কভু না বিলোয়
.
গাছের ফল যার কাছে
এখনও অনাস্বাদিত
স্বাদের মহিমা গীতি তার
ব্যাখ্যাতীত ।
.
অন্ধ যদি দীপ হাতে
পথ দেখায়
মোক্ষ তার থাকে দুরে ,
নিজে আঁধারে হারায় ।।
৪
কবীর কথা :-
ভ্রমকে তালা লগা মহলসে
প্রেমকি কুঁজি লগাও
কপট কিরড়িয়া খোল কেরে
যহি বিধি পিয়কো জগাও
কহৈ কবীর শুনো ভাই সাধো
ফির ন লগৈ অসদার ।।
অনুবাদ :-
ভ্রমের তালা লাগানো মহলে
প্রেমের চাবি লাগাও
বন্ধ দরওয়াজা খুলে দাও প্রিয়,
.
প্রিয়া যে এখনও ঘুমায় ।
কবীর বলেন, শুনো ভাই সাধো,
ঘুম থেকে জাগাও প্রিয়াকে এবার
এ সহজ সুযোগ ফিরিবেনা আর ।
দোহা :-
সবয় রাসায়ন ম্যায় কিয়া প্রেম সমান না কোয়
রতি ইক তান মে সনচারে সব তন কাঞ্চন হোয় ।
অনুবাদ:-
সব রসায়ন চেখে দেখেছি, প্রেমের সমান কই ?
রতি পরিমাণ শরীরে গেলে সোনায় সোহাগা হই ।
৫
কবীর কথা :-
গগন ঘটা ঘহরানী সাধো
গগন ঘটা ঘহরানী
পুরব দিসসে উঠিহৈ বদরিয়া
রিমঝিম বরসত পানি ।
আপন আপন মেঁড় সমহারো
বহো জাত য়হ পানি
সুরত নিরত কা বেল নহায়ন
করৈ খেত নির্ব্বানী ।
ধান কাট, মার ঘর আরৈ
সোই কুসল কিসানী
দোনো থার বরাবর পরসে
জেঁরে মুনি অর জ্ঞানী ।
অনুবাদ :-
গগনে গরজে মেঘ ঘোর ঘনঘটা
আকাশে বাতাসে ভাসে গম্ভীর ধ্বনি
বাদল এসেছে পুবে, সরিয়ে আলোর চ্ছটা
রিম ঝিম ঝিম অঝোরে ঝরিছে পানি ।
.
ক্ষেতের আল বাঁধো বাঁধোরে এবার
আষাঢ়ের জল বুঝি বা ভাসায়
প্রেম-বৈরাগ্য লতা পেয়েছে রস তার
মুক্ত হল ক্ষেতের মাঠ, বস সাধনায় ।
.
সময়ে ধান কেটে ঘরে যে আনিতে পারে
সেই তো সঠিক কিষান
প্রেম বৈরাগ্যের অন্ন বিলাও অকাতরে
মুনি জ্ঞানী সবে, সমান সমান ।।
৬
কবীর কথা :-
চংদা ঝলকৈ য়হি ঘট মাহী
অংধী আখন সুঝৈ নাহীঁ ।।
য়হি ঘট চংদা য়হি ঘট সুর
য়হি ঘট গাজৈ অনহদ তুর ।।
য়হি ঘট বাজৈ তবল নিষাদ
বহিরা শব্দ শুনৈ নহি কান ।।
জবলগ মেরি মেরি করে
তবলগ কাজ একৌ ন সরে ।।
যব মেরি মমতা মর যায়
তবলগ প্রভু কাজ সবারৈ আর ।।
জ্ঞানকে কারন করম কমায়
হোই জ্ঞান তব করম নসায় ।।
ফল কারন ফুলৈ বনরায়
ফল লাগৈ পর ফুল শুখায় ।।
মৃগা পাস কস্তুরী বাস
আপ ন খোজৈ খোজৈ ঘাস ।।
অনুবাদ :-
দেহের ভেতর চন্দ্র সূর্য
চোখ দেখেনা তায়
দেহের ভেতর অসীম অপার
আমি শূন্যকায় ।
দেহের ভেতর মৃদঙ্গ বাজে
কর্ন শুনেনা হায় !
আমি বলতে আমার আমার
জীবন বৃথা যায় ।
ফলের জন্য ফুলের উদয়
ফুলটি ঝরে যায়
দাহ করলে আমিত্বটাকে
কার্য-সিদ্ধ পায় ।
মৃগের ভেতর কস্তুরী রয়
মৃগ জানেনা হায়
সারা জীবন ঘাস অন্বেষণ
সময় বহিয়া যায়।
.
কবীর বলেন,
জ্ঞানের জন্যই কর্ম্ম কর
কর্ম্মটি ভুলে যাও ।।
দোহা :-
নয়না অন্তর আও তু তিউহি ন্যায়ন ঝাপেউঁ
না হউ দেখুঁ অওর কু না তুঝে দেখন দেউঁ
অনুবাদ:-
চোখের তারায় এসো প্রিয়, চক্ষু মুদে দিই
দেখব না আর অন্য কেহ, দেখতে দেব না কাউকেই ।
৭
কবীর কথা :-
অবতো জরে মন বন আরে
লিনহি হাথ সিনধুয়া
প্রীত প্রতীত করো দৃঢ় সাঁইকি
শুনো শব্দ ঘনঘোরা ।
অগিন জ্বরে না সতী বনাহই
রন যুঝে নঁহি সূরা
বিরহ অগিন অন্দর জারৈ
তব পাবৈ পদ পূরা ।
য়হ সংসার সকল জগ মৈলা
নাম গহে তেহি সূচা
কহৈ কবীর ভক্তি মত ছাড়ো
গিরত পড়ত চর উঁচা ।।
অনুবাদ :-
প্রিয়তমা.
এসেছো বন্ধুর পথে
দৃঢ় প্রত্যয় আর গভীর প্রেম রেখো
অতলান্ত দুই চোখে ।
অগ্নিতে পুড়লেই সতী হয়না
বীর হওয়া যায় না কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে ।
জ্বালা যন্ত্রনার সংসার সীমান্তে
কতটা পুড়েছ বিরহ অনলে ?
দগ্ধ হয়েছে কি অন্তর
প্রেম হুতাশনে ?
ওই শোন, ঘনঘোর বাদ্য
এ মলীন জগৎ সংসারে ডুব দিয়ে
তুলে নাও সিঁদুর পাত্র ।
.
কবীর বলেন, ভক্তিকে ছাড়িওনা !
চড়াই উৎরাই পথে ওপরে উঠে এস
কন্ঠলগ্না হও ।
৮
কবীর কথা :-
সাঁইঘর দাগ লগায় আঈ চুংদরী
উ রংগরেজরা কো মবম ন জানৈ,
নহী মিলৈ ধোবিয়া কৌন করৈ উজরী ।
পহির ওড়কে চলি শ্বশুরিয়া
গৌঁরা কে লোগ কহৈঁ বড়ী ফুহরী ।
অনুবাদ :-
তোমরা যে দেখ এত রঙ আমার ওড়নায়
সেই সব রঙ দিয়েছে আমায় স্বামী সংসার ।
কীভাবে যে লাগে এত রঙ আমার বসনে !
তার রহস্য আমার অজানা ।
জানি, কোনো রজকই উঠাতে পারবে না
সে রঙ কোনওদিন ।
.
আমি সেই বসন পরিয়াই স্বামী গৃহে চলিয়াছি
গ্রামের লোকে আমাকে মূঢ় বলে ।
দোহা ;-
দস দুয়ারে কা পিনজরা তা মে পনছি পওন
রহিবে কো আচরজ হ্যায় জায়ে তো আচরজ কওন
অনুবাদ:-
দশ দুয়ারি পিঞ্জরে রয় অচিন পাখি খানি
চলে গেলে অবাক কেন ? তার থাকাটাই ঋণী।
৯
কবীর কথা :-
সাধো পাঁড়ে নিপুণ কসাঈ
বকরি মার ভেড় কো ধারে ।
দিলমে দরদ না আঈ
কর অস্নান তিলক দে বৈঠে ।
বিধিসে দেবী পুজাঈ
আতম মার পলক মে বিনসে ।
রুধির কী নদী বহাঈ
অতি পুনীত উঁচে কূল কহিয়ে ।
সভা মাহী অধিকাঈ
ইনসে গুরুদীক্ষা সব মাঙ্গে ।
হাঁসি আরৈ মোহি ভাঈ,
পাপ করণকো কথা শুনাবৈঁ
করম করারেঁ নীঁচা ।।
অনুবাদ :-
শাধু পাঁড়ে পুরোহিত এক,
নিপুণ কসাই
পুজোর নামে অনায়াসে দেন
আস্ত পাঁঠা জবাই ।
তবুও কি চিত্তে সুখ আছে তার ?
মেষের পিছে ছুটে !
স্নানের পরে গেরুয়া বসন
কপালে তিলক কাটে ।
দেবী তুষ্ট করতে গিয়ে ইনি
রক্ত-গঙ্গা বহায়
আর গো হত্যা করিলেই এনার
ধর্ম টলে যায় ।
উচ্চ কূলে জন্ম তাই সমাজে
সম্মানটা করেন আদায়
লোকেরা দীক্ষা নিতে তার কাছেই যায়,
শুনে হাসি পায়।
.
আসলেই ইনি পাপী, নীচ কর্ম করে বেড়ায়
যারা গো-হত্যা করে, মোটেই কম যান না তুলনায় ।
১০
কবীর কথা :-
মো কো কাহা ঢুঁড়ো বন্দে
মৈতো তেরা পাসমেঁ ।
না মৈ দেবল না মৈ মসজিদ
না কাবে কৈলাস মেঁ ।
না তৌ ক্রিয়া কর্ম্ম মেঁ
নহী যোগ বৈরাগ মেঁ ।
খোজি হোয় তো তুরতে মিলিহৌ
পলভর কি তলাস মেঁ ।
কহৈ কবীর শুনো ভাই সাধো
সব শ্বাসো কি শ্বাস মেঁ
য্যায়সে তিল মে তেল হুয়ে
য্যায়সে চকমক্ মে আগ
তেরা সাঁই তুঝমে হ্যায়
তু জাগ সাকে তো জাগ ।
অনুবাদ :-
কোথায় তুমি খুঁজিছ ঈশ্বর ?
না মন্দির না মসজিদে তাঁর ঘর
না আছেন কাবায় না কৈলাস
না আছে তাঁর অনন্ত নীবাস
সে থাকে তোমার হৃদয়ের পাস ।
ক্রিয়া কর্ম্ম যোগ বৈরাগ্য
মিথ্যা সবই মিথ্যার বেসাতি
শ্বাসের মধ্যে তিনি তোমাতেই বসতি ।
যেমনে থাকে তেল , তিলের ভেতর
যেমনে লুকায় আগুন চকমকি পাথর
তেমনে থাকে নাথ তোমার অন্তর
জাগাও আত্মা জাগাও ঈশ্বর ।।
দোহা :-
বিরহা ভুজঙ্গম প্যায়ঠি কারি কিয়া কলেজা ঘাও
সাধু অংগ না মোড়হি জিউ ভাওয়ে তিও খাও ।
অনুবাদ:-
বিরহ জ্বালায় জ্বলছে হৃদয়
সাপের ছোবল
সাধু অঙ্গ তবুও স্থির ,
হয়না উতল ।
১১
কবীর কথা :-
সুখ সাগরমে আয়কে
মত জা রে প্যাসা
অজহু সমঝ নর বাওরে
জম কবত তিরাসা
নির্মল নীর ভরের তেরে আগে
পীলে শ্বাঁসো শ্বাসা
মৃগ তৃষ্ণা ছাড় বাওরে
করো সুধারস আসা
ধ্রুব্ প্রহলাদ শুকদেব পিয়া
অওর পিয়া রৈদাস ।
.
প্রেম হি সংত সদা মতরালা
এক প্রেম কী আসা
কহৈ কবীর শুন্ ভাই সাধো
মিট গঈ ভব্ কি বাসা ।
অনুবাদ :-
হায়রে অবুঝ মন !
সুখ-সাগরের কিনারে এসে
বিভ্রান্ত প্রতিক্ষণ ।
.
মৃত্যুকে এত ভয় ?
.
সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে
হারালাম সময়।
তবু পিপাসার্ত হৃদয় ।
.
তৃষা যে মেটেনা হায় !!
.
চেয়ে দেখ চরাচর
প্রেমরসে ভরা
অমৃত সাগর ।
.
তবু কেন দিশাহারা ?
.
পান কর, পান কর
যে রসে ধন্য হয়েছেন ধ্রুব
সাধক রুইদাস, শুকদেব, প্রহ্লাদ ।
.
কবীর বলেন, এবার তোর ভেঙেছে ভবের হাট ।
১২
কবীর কথা :-
সাধো, যহ তন ঠাঠ তংবুরেকা
ঐঁচত তার মরোরত খুঁটি
নিকসত রাগ হুজুরেকা ।
টুটে তার বিখর গঈ খুঁটি
হো গয়া ধূরম ধূরেকা ।
কহৈ কবীর শুনো ভাই সাধো
অগম পংথ কোঈ সুরেকা ।
অনুবাদ :–
এই দেহখান তাঁহার বিনা
তিনিই বাজান ।
তার বাঁধা খুঁটি থাকে টানটান ।
ব্রম্ভ রাগিনী সাতচক্রে সুর
ওঠে ঝঙ্কার ।
শিথিল হলে খুঁটি ছিঁড়ে যায় তার
ধুলোর যন্ত্র ধুলোতে মিশায় ।
.
কবীর বলেন, ব্রম্ভই সেই সুর তুলিতে পারেন।
দোহা :-
সব রংগ তন্ত রাবাব তান বিরহা বাজাওয়ে নিত
অওর কোয় না সুন সাকে কায়ি সাই কায়ি চিত ।
অনুবাদ:-
সব রঙের এই মনোবীণায় নিত্য বাজে বিরহ গীত
কেউ না শুনুক তুমিই শোনো এই হৃদয়ের সংগীত ।
১৩
কবীর কথা :-
নিসদিন খেলত রহী সখিয়ন সঙ্গ
মহী বড়া ডর লাগে
মোরে সাহস কী উঁচা অটরিয়া
চঢ়ত মে জিয়ারা কাঁপে
জো সুখ চহৈ তো লজ্জা ত্যাগে
পিয়া সে হিলমিল লাগে
ঘুংঘট খোল অঙ্গ ভর ভেঁটে
নৈন আরতি লাজে
কহৈ কবীর, সুন সখী মোর
প্রেম হোয় সো জানে
নিজ প্রীতম কী আস নহী হৈ
নাহক কাজর পারে ।
অনুবাদ :-
নিশিদিন কেটেছে সময়
সখীদের লয়ে সাথে
এখন প্রানে জাগে ভয়
স্বামীগৃহে যেতে ।
শুনেছি স্বামীর বাস
উচ্চ অট্টালিকা পরে
কেমনে উঠিব আমি,
প্রান কেঁপে মরে ।
কীকরে মিলাইব হৃদয়,
অবগুণ্ঠন রেখে দুরে
আনন্দ যদি চাই,
লজ্জা পিছু নাহি ছাড়ে ।
নয়নে প্রেমের আরতি
জ্বেলেছি মরমে
অঙ্গ ভরি পূজিব তাঁরে,
মরেছি শরমে ।
.
কবীর বলেন, যদি না থাকে প্রানে প্রেমের আকুলতা
বৃথা তোমার কাজলপারা, বৃথাই এ অঙ্গ-সজ্জা ।
১৪
কবীর কথা :-
জো দিসৈ সো তো হৈ নাহী,
হৈ সো কঁহা ন জাঈ।
বিন দেখে পরতীত ন আহৈ,
কহে ন সো পাতিয়ানা।
সমঝা হৈ তো শব্দৈ চীনহৈ,
অচরজ হৈ অয়ানা ।
কোঈ ধ্যারৈ নিরাকার কো।
কোঈ ধ্যারৈ আকারা।
রা বিধি ইন দোনো তে ন্যায়া
জানৈ জানন হারা।
রহ রাগ তো লখা ন জাঈ
মাত্রা লগৈ ন কানা ।
.
কহৈ কবীর সো পড়ৈ ন পরলয়
সুরত নিয়ত জিন জানা ।
অনুবাদ :-
যাহা দেখা যাচ্ছে তাহা তিনি নন
যিনি আছেন তিনি বাক্যাতীত ।
আবার না দেখিলেও প্রত্যয় হয়না
তাঁর কথা বলিলেও কেহ বিশ্বাস করেনা ।
যে বোঝে, সে শব্দ মাত্রেই বোঝে
যে অজ্ঞান সে আশ্চর্য হইয়া থাকে ।
কেহ নিরাকারে ধ্যান করে
কেহ বা আকারে ধ্যান করে ।
যে জ্ঞানী, সে জানে এই ব্রম্ভ
দুইয়েরই অতীত ।
সেই রাগ নয়নে দৃষ্ট হয় না
সেই মাত্রা শ্রবনে শ্রুত হয় না ।
.
কবীর বলেন, যিনি প্রেম ও বৈরাগ্যকে জানিয়াছেন
তিনি প্রলয় প্রাপ্ত হন না।
দোহা :-
আয়ে সাকুঁ না তুঝ পে সাকুঁ না তুঝ বুলায়ে
জিয়ারা য়ুঁহি লেহুংগে বিরহা তাপায়ে তাপায়ে ।
অনুবাদ:-
না পারি ডাকতে তোমায়, না পারি যেতে তোমার সনে
নিরুপায় আমি পুড়ছি কেবল, বিরহ অনল দহনে ।
১৫
কবীর কথা :-
তরবর এক মূল বিন ঠাড়া
বিন ফুলে ফল লাগে
শাখা পত্র নহী কছু তাকে
সকল কমলদল গাজৈ
চঢ় তরবর দো পংছী বোলে
এক গুরু এক চেলা
চেলা রহা সো রস চুন খায়া
গুরু নিরন্তর খেলা
পংছী কে খোঁজ অগম পরগট
কহৈ কবীর বড়ী ভারী
সবহী মূরত বীচ অমূরত
মূরতকী বলিহারী ।
অনুবাদ :-
মূল নাই, অদ্ভুত সে গাছ আছে খাড়া,
ফুল নাই তবু ফলে ভরা।
শাখা নাই, প্রশাখা নাই, অঙ্গে রসের ঢল
পত্র পল্লব কিছু নাই, শোভিছে কমল-দল।
সেই গাছে গান গায় দুটি কবুতর
একটি তার গুরু অন্যটি অনুচর ।
চেলাটি যে ছিল, রসেতে মজিল
গুরু কেবল আনন্দের খেলাই খেলিল ।
.
কবীর বলেন, সেই পক্ষীর সন্ধান অতীব অগম্য
তিনি নিয়ত প্রকাশিত
সকল মূর্তির মাঝে, তিনি যে বিমূর্ত।
১৬
কবীর কথা :-
“মাটি কা এক নাগ বানাকে
পুজে লোগ লুগায়া
জিন্দা নাগ যব ঘড়পে নিকলে
লে লাঠি ধমকায়া।
জিন্দা বাপ কোয়ি না পুজে
মরে বাপ পুজবায়া।
মুট্ঠি ভর চাবল লেকে
কাউয়া কো বাপ বানায়া।”
অনুবাদ :-
মাটির সাপ বানিয়ে মানুষ
পূজা করে, হায় !
জ্যান্ত সাপ দেখলে তাকে
লাঠিতে পেটায়
জন্মদাতা বুড়োবাপ
থাকে অবহেলায়
মরার পর কাক বানিয়ে
হব্যিষ্যি খাওয়ায় !
দোহা :-
দিপক দিয়া তেল ভরি বাতি দেয়ি আঘাত
পুরা কিয়া বিসাহুনা বহুরি না আউঁ হাট ।
অনুবাদ:-
দীপের ভেতর তেল দিয়েছেন
জ্বলছি দিনে রাতে
সাঙ্গ যেদিন হবে খেলা
ফিরবনা এই হাটে ।
১৭
কবীর কথা :-
না জানে সাহব কৈসা হৈ
মুল্লা হোকর বাংগ যো দেরে
ক্যা তেরা সাহব বহরা হৈ ।
কীড়ী কে পগ নেওর বাজে
সোভী সাহব সুনতা হৈ
মালা ফিরি তিলক লগায়া
লম্বী জটা বঢ়াতা হৈ
অন্তর তেরে কুফর কটারী
য়োঁ নহি সাহব মিলতা হৈ ।
অনুবাদ :-
জানিনা ঈশ্বর কেমনতর !
.
মোল্লা দেয় চিৎকারে ডাক
তবে কি তিনি বধির বেবাক্ ?
.
কীটপতঙ্গের পায়ের নিক্কন
তাহাও যাহার শ্রুতিগোচর
কেমনে তিনি বধির হন ?
.
যতই তোমরা মালা ফেরাও
তিলক কাটো জটা বাড়াও
আসলে তোদের হৃদয় পাষান
মনের ভেতর শানিত কৃপাণ ।
.
ঈশ্বর নিজেই এদের তফাৎ যান ।
১৮
কবীর কথা :-
সূর পরকাশ, তঁহ রৈন কহঁ পাইরে
রৈন পরকাশ নহি সূর ভাসৈ ।
জ্ঞান পরকাশ, অজ্ঞান কহঁ পাইয়ে
হোয় অজ্ঞান, তহঁ জ্ঞান নাসৈ ।
কাম বলবান, তহঁ প্রেম কহঁ পাইয়ে
প্রেম জঁহ হোয় তঁহ কাম নাহি ।
কহৈ কবীর যহ সত্য বিচার হৈ
সমঝ বিচার কর দেখ মাহী ।
অনুবাদ :-
সূর্য যেখানে প্রকাশিত, সেখানে রাত্রি কোথায়?
রাত থাকিলে দিন নাই !
যেখানে জ্ঞান প্রকাশিত, সেখানে অজ্ঞান কোথায়?
অজ্ঞান থাকিতে জ্ঞান কোথা পাই ?
কাম যেখানে বলবান সেখানে প্রেম কোথায়?
প্রেম যেখানে আছে সেখানে কাম নাই ।
.
কবীর কহেন, ইহাই সত্য সার
অন্তর দিয়ে করিও বিচার।
দোহা :-
বিরহা জলন্তি ম্যায় ফিরুঁ জলত জলহারি জাউঁ
মো দেখয়া জলহারি জ্বলে সন্তোঁ কাহাঁ বুঝাউঁ
অনুবাদ:-
বিরহ জ্বালায় জ্বলছে হৃদয়
নদীর কাছে যাই
আমায় দেখে নদীই পুড়ে
বলো সাঁই! এ আগুন কোথায় নেভাই।
১৯
কবীর কথা :-
কোন্ মুরলী শব্দ সুন্ আনন্দ ভরো
জোত্ বরে বিন বাতি ।
বিনা মূলকে কমল প্রগট ভরো
ফুলরা ফুলত ভাঁটী ভাঁটী
জৈসে চকোর চন্দ্রমা চিতরে
জৈসে চাতৃক স্বাঁতি ।
তৈসে সন্ত সুরতকে হোকে
হো গয়ে জনম সংঘাতি ।
অনুবাদ:-
কোন্ সে বংশী ধ্বনি!
মন মাতোয়ারা
বিনা প্রদীপে জ্বলে আলোকের রেণু
মূলহীন শতদল
হয়েছে প্রস্ফুটিত
গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলে ভরেছে আকাশ
চকোর চিত্ত
খোঁজে চন্দ্রমা
চাতক ভিজিছে দেখো
স্বাতী নক্ষত্র ধারায়
প্রেমিক তেমনি করেছে সংহত
বহু জন্ম পার
প্রেম সংগীত রসে ।
২০
কবীর কথা :–
ইস্ ঘট অন্তর বাগ-বগিচে,
ইসী মেঁ সিরজনহারা।
ইস্ ঘট অন্তর সাত সমুদ্দর,
ইসী মেঁ নৌলখ তারা
ইস্ ঘট অন্তর পারস্ মোতী,
ইসী মেঁ পরখনহারা।
ইস্ ঘট অন্তর অনহদ গরজৈ,
ইসী মেঁ উঠত্ ফুহারা।
কহত কবীর সুনো ভাই সাধো,
ইসী মেঁ সাঁই হমারা।।
অনুবাদ:-
এই ঘটেতেই কুঞ্জ-নিকুঞ্জ
এর ভেতরেই স্রষ্টা হরি
এই ঘটেতেই সাত সমুদ্র
লক্ষ তারার আলোক বারি
এই ঘটেতেই পরস পাথর
এরই ভেতর বসেন জহুরী
এই ঘটেতেই অসীম নিনাদ
এর ভেতরেই বংশী ধারী
কবীর বলেন, এই ঘটেতেই
আমার স্বামী গোলক বিহারী ।
দোহা :-
দিপক দিয়া তেল ভরি বাতি দেয়ি আঘাত
পুরা কিয়া বিসাহুনা বহুরি না আউঁ হাট
অনুবাদ:-
দীপের ভেতর তেল দিয়েছেন
জ্বলছি দিনে রাতে
সাঙ্গ যেদিন হবে খেলা
ফিরবনা এই হাটে ।
২১
কবীর কথা :-
পানী বিচ মীন পিয়াসী
মোহিঁ সুন সুন আর্ত হাঁসী
ঘরমে বস্তু নজর নহি আরত
বনবন ফিরত উদাসী
আতম জ্ঞান বিনা জগ ঝুঁঠা
ক্যা মথুরা ক্যা কাসী ।
অনুবাদ :-
জলের ভেতর মীন পিয়াসী
পাচ্ছে হাসি এটা শুনে?
হায়! ঘরের মধ্যে থাকতে তিনি
ঘুরছ কেবল বনে বনে।
.
প্রদীপ শিখা যদি নাই জ্বলে
ঘুমিয়ে থাকা আত্মজ্ঞানে
কী হবে তোর তীর্থ ঘুরে?
কাশী মথুরা বৃন্দাবনে !
২২
কবীর কথা :-
ঝী ঝী জংতর বাজৈ
কর চরন বিহুনা নাচৈ
কর বিনু বাজৈ সুনৈ শ্রবন বিনু
শ্রবন শ্রোতা সোঈ
পাটন সুবাস সভা বিনু অবসর
বুঝৈ মুনি জন সোঈ।
অনুবাদ :-
দ্রিম্ দ্রিম্ করে বাজিছে বাদ্য
যন্ত্র সেথা নাই
বাজনার তালে চলিছে নৃত্য
চরন-হস্ত ছাড়াই
তিনিই শব্দ তিনিই শ্রোতা
সভা বিনা খুঁজে পাই।
.
বিনা করে বাজে মৃদঙ্গ
কর্ণ বিনা শ্রবন
রুদ্ধদ্বারে ওড়ে সুগন্ধ
বুঝে নাও সাধু জন।
দোহা:-
বিরহা জলন্তি ম্যায় ফিরুঁ মো বিরহন কো দুখ
ছা না ব্যায়ঠু দারপতি মাটি জ্বল উঠে ভুক
অনুবাদ:-
বিরহ আগুনে জ্বলে দ্বারে দ্বারে ঘুরে মরি
তরু ছায়ায় বসতে পারি না যে পাছে
আমার আগুনে তরুকেও পুড়ে খাক করি।
২৩
কবীর কথা :-
উল্টি গংগ সমুদ্রহি সোখৈ
শশি ও সূরহি গ্রাসৈ।
বৈঠি গুফামেঁ সব জগ দেখা
বাহর কছু ন সুঝৈ।
উল্টা জ্ঞান পারধী লাগৈ
সূরা হৈ সো বুঝৈ।
কথনী বদনী নিজকৈ জোহৈ
ঈ সব অকথ কহানি
ধরতী উলটি আকাশ হি বেধৈ
ঈ পুরুষন কি বাণী।
অনুবাদ:-
গঙ্গা উল্টে করে সমুদ্র শোষণ
চন্দ্রও সূর্য্যকে করে গ্রাস
গুহার ভেতর দেখি বিশ্ব জগৎ
বাহিরে সকলই নাশ।
উল্টো জ্ঞানে পরিধি লাগে
সদ্ জ্ঞান সীমাহীন
এইসব কথা তিনিই বোঝেন
পান্ডিত্যে যিনি প্রবীণ।
কথা আর বাক্য নিজেকেই খোঁজে
এইসব অকথ্য কাহিনী
ধরিত্রী উল্টে আকাশকে বাঁধে
ইহাই স্বামীজির বাণী।
২৪
কবীর কথা :-
কা নর সোরত মোহ নিসামেঁ
জাগত নাহি কুছ নিরবানা।
হোত পুকার নগর কসবেমেঁ
মুসাফির সভৈ অকুলানা।
পুরণ ব্রহ্মকী হোত তৈয়ারী
অন্ত ভূবন বিচ প্রান লুকানা।
প্রেম নগরীরামেঁ হাট লগতু হৈ
জনম জনমকে প্যাস বুঝানা।
অনুবাদ:-
হে নর আর কতকাল রইবে মোহ-নিদ্রামগ্ন?
ওঠো জাগো সময় সমাগত
সমস্ত নগরে এসেছে জাগরণের আহ্বান
ব্যাকুল হয়েছে মুসাফির মন
পূর্ণব্রহ্ম যাত্রার চলেছে আয়োজন
জগতের অন্তরেই প্রানের প্রকাশ
প্রেম নগরীতে বসেছে রুপের হাট
জন্ম জন্মান্তরের পিপাসা বুঝি তৃপ্ত হলো আজ।
দোহা :-
লালি মেরে লাল কি জিত দেখো তিত লাল
লালি দেখন ম্যায় গ্যায়ি ম্যায় ভি হো গ্যায়ি লাল
অনুবাদ:-
লাল আমার প্রিয়র লাল রঙ,
যে দিকে তাকাই সব লালে লাল
সেই রঙ দেখতে গিয়ে
আমিও তার রঙে রাঙা হলাম।
২৫
কবীর কথা :-
জো খোদার মসজিদ বসতু হৈ
ঔর মুলুক কোহকেরা।
তীরথ মূরত রাম নিবাসী
বাহর করেকো হেরা।
পূরব দিশা হরিকো বাসা
পশ্চিম আল্লাহ মুকামা।
দিলমে খোঁজি দিলহিমে খোঁজো
ইহৈ করিমা রামা।
জেতে ঔরত মরদ উপানী
সো সব রুপ তুমহারা।
.
কবীর পোংগরা অলহ রামকা
সো গুরু পীর হমারা।
অনুবাদ:-
খোদা যদি মসজিদে রয়
বাকি মুলুকে কাদের বাস?
তীর্থে মূর্তি রাম নিবাসী
বাইরে তবে কার আশ্বাস?
.
পূব দিকে হরির আবাস
পশ্চিমে আল্লা
হৃদয় মাঝে খুঁজে দেখো
রাম নারায়ণ খোদাতালা।
.
যত নারী যত পুরুষ
সবাই যেনো তাঁহার রুপ
রাম রহিমের পুত্র কবীর
তিনিই গুরু তিনিই পীর।
২৬
কবীর কথা :-
কায়া নগর মাঝার
সাঁই খেলৈ হোরী।
গাবত রাগ সরস সুর সোহৈ
অতি আনন্দ ভরোরী।
শরীর মহলমে বাজে বাজা
জগমগ জোত্ উজেরী।
সহজ রঙগ্ রঙ রহ্যৌ সকল তন
ছুটন নাহিঁ কারেরী।
অনদহ বাজে মধুর ধুম
বিন করতাল তনবুরা।
বিন রসনা জঁহা রাগ ছতিশোঁ
হোত মহানন্দ পুরা।।
অনুবাদ:-
কায়া নগরে খেলে হোলি
নন্দের দুলাল
সরস গানের রাগ রাগিনী
শুনি প্রেম করতাল।
শরীর মহলে বাজে জগমগ ধ্বনি
আনন্দে মাতোয়াল।
সহজীয়া রঙে রাঙাইল তনু
এ খুশির নেই অবসান।
আনন্দ যজ্ঞে বাজিছে মধুর ধূম
বিনা করতাল তানপুরা
বিনা রসনায় বাজে ছত্রিশ রাগিনী
মহানন্দে ভরপুরা ।।
দোহা:-
পোথি পঢ় পঢ় জগ মুয়া পণ্ডিত ভায়া না কোয়
ঢাই অকশর প্রেম কা পঢ়ে সো পণ্ডিত হোয়
অনুবাদ:-
পুঁথি পড়ে পড়ে মরলো জগত, পণ্ডিত হলো না কেউ
আড়াই অক্ষর প্রেম পড়ে যে, পণ্ডিত হলো সে-ই।
২৭
কবীর কথা :-
বালম আরো হমারে গেহরে
তুমি বিন দুখিয়া দেহরে।
সবকোই কহোই তুমহারী নারী
মোকো লাগত লাজবে।
দিলসে নহী দিল লগায়া
তবলগ কৈসা সনেহ রে।
অন্ন ন ভারৈ নীদ ন আরৈ
গৃহ বন ধরৈ ন ধীর রে।
কামিন কো হৈ বালম প্যারা
জ্যোঁ প্যায়াসে কো নীর রে।
হৈ কোই ঐসা পর উপকারী
পীরসো কহৈ সুনায় রে।
তো বেহাল কবীর ভরে হৈ
বিন দেখে জির জায় বে।।
অনুবাদ:-
প্রিয়তম,এসো মোর ঘরে
তুমি ছাড়া এই দেহমন দুঃখের সাগর
সবাই বলে আমি সমর্পিতা
মিশে যাই লজ্জায়!
হৃদয়ে হৃদয় না লাগিলে
প্রেমের স্বার্থকতা কোথায়?
অন্ন রুচেনা, ঘুম আসেনা চোখে
সময় চলে ধীরে ঘরে বা বাইরে।
তৃষ্ণার্তের কাছে প্রিয় জল
নারীর কাছে তুমিই সম্বল।
.
কে আছে এমন পরোপকারী?
প্রিয়তমকে জানাইবে এই হৃদয়ের বারি!
কবীর হয়েছে অধীর ! হায়
বিনা দরশনে প্রান যে যায়!
২৮
কবীর কথা :-
যা তরিবরমেঁ এক পখেরু
ভোগ সরস বহ্ ডালৈ রে।
বাকী সন্ধ লখৈ নহি কেঈ
কৌন ভারসোঁ বোলৈ রে।
দুর্ম্ম ডার তহঁ অতি ঘন ছায়া
পংছি বসেরা লেঈ রে।
আরৈ সাঁঝ উড়ি যায় সবেরা
মরম না কাহু দেঈ রে।
সো পংছি মোহ কোই না বাতাবৈ
জো বোলৈ ঘটমাহীঁ রে।
অবরণ বরণ রূপ নহি রেখা
বৈঠা প্রেমকে ছাহীঁ রে।
অগম অপার নিরন্তর বাসা
আরত জাত ন দীসা রে।
কহৈ কবীর শুনো ভাই শাধো
রহ কুছ অগম কহানী রে।
ওহ্ পংছিকে কৌন ঠৌর হৈ
বুঝো পন্ডিত জ্ঞানী রে।
অনুবাদ:-
এই তরুবরে সে এক অচিন পাখি খানা
সম্ভোগ আনন্দে নৃত্যে সে হয় মাতোয়ারা
কেউ জানেনা কোথায় যে তার সাকিন ঠিকানা
কোন্ ভাবের রসে হয়ে আকুল সেটাই অজানা।
.
সেই তরুর শাখায় শাখায় ঘন ছায়াতল
পাখি সেথা করে খেলা নিয়ে আশ্রয়
সাঁঝের বেলা ফেরে পাখি প্রত্যুষে যায় চলে
মর্ম্ম তাহার কেউ কাহাকেও না বলে।
.
যে পক্ষি ঘটের মধ্যে করিতেছে গান
তাহার কথা কেউ বলেনা আমায়
বর্ণ অবর্ণ রুপ রেখা কিছু বুঝি নাই
সে পাখি বসে আছে প্রেমের ছায়ায়।
.
যেখানে তাহার বাস নিরন্তর অগম্য অপার
কেহই দেখেনা কভু আসা যাওয়া তার
কবীর বলেন, সে এক অগম্য কথা কোথা তাঁর ঠাঁই
পন্ডিতেরা জ্ঞান চক্ষে বুঝে নেবে তাই।।
দোহা:-
মায়া তো ঠগিনে বানি ঠগত ফিরে সব দেস
জা ঠগ য়া ঠগিনে ঠগি তা ঠগ কো আদেস
অনুবাদ:-
এই মায়া বড় প্রবঞ্চক, ভুলিয়ে দেয় পুরো জগত
এই মায়াকেও যিনি ভুলিয়ে দেন ধন্য সেই প্রবঞ্চক।
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়)