ময়ূরী মিত্র
পর্ব : দুই
বৃষ্টি শেষ ৷ পাহাড়ের আকাশে ঝকঝকে তারা ৷ বৃষ্টি পাহাড়কে এত এত ঝাপসা করে ! শেষ হলে মনে হয় ‘বাবা আঁধার ! তুই এত উজল !’
ধাপে ধাপে গ্রাম ৷ গ্রামের ঝুঁটিতে কিছু তারা ৷ প্রতি গাঁয়ে কি আলাদা তারার ভুবন ! পৃথিবীর মতো আকাশেরও একটা ভুবন আছে গো ! রাতের কালে দুই ভুবন বরবউ হয় ৷ ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে ৷ তারা আর মানুষের তৈরি আলো দুইয়ের মিশ্রণে তৃতীয় কোনো আলোসূত্র তৈরি হয়েছে ! রুটি ভাজির আগুনে রান্নার দিদির যুবতী মুখের টসটসে বিউটি গায়েব ! বদলে এক কর্মী মানুষের দুটো চোখ ফুটে উঠছে ! একভাবে বেলছে আর
ভাজছে ৷ ক্যাসারোল ভর্তি ভাজা শস্য ৷
উঁচু তলায় দাঁড়িয়ে পথের মানুষ দেখিনি কোনোদিন ৷ ইচ্ছেই হয়নি ৷ পাহাড়ে মানুষ দেখার হিসেব আলাদা ৷ নীচের গ্রামগুলোকেও বুকের অংশই মনে হয় ৷ আসলে মানুষে মানুষে ফারাক তো অর্থই করে ৷ এখানে সবাই একই আর্থিক পরিমণ্ডলে ৷ ফলে কে কোন উচ্চতায় সংসার পেতেছে ভেবে মরি কেন !
রান্নার দিদি আমাদের রাতের খাবার খাইয়ে কুড়ি মিনিট হেঁটে বাড়ি পৌঁছোবেন ৷ এখান থেকে দু গাঁ টপকে তাঁর “একলা বাড়ি !” মেয়ে নিয়ে সেখানে একা থাকেন ৷ এঁরা নারী স্বাধীনতা বোঝেন না ৷ নারীর স্বাধীনতা যে আলাদাভাবে পালন করতে হয় সেটাই জানেন না ৷ সারাদিন নিষ্ঠা ও সততা নিয়ে কাজ করে যান ৷ কেউ চিকেন খাচ্ছেন না হয়ত ৷ তাঁর ওমলেটে ঠিকঠাক বিটনুন পড়েছে কিনা সেটাও যত্ন করে দেখেন ৷ শ্রম যাঁদের বেশি তাঁদের কি ক্ষোভও কম হয় !
প্রবল সৌন্দর্যে ঈশ্বরের অনুভূতি জন্মায় ! অথচ মস্তিষ্কের অর্ধভাগ বলে ” ওহে মানুষের ওপরে কোনো সত্য নেই !” এ মুহূর্তে দুইই সত্য ! চিরকালীন যুক্তিবাদও সত্য আবার পাহাড়ের মায়ায় আমার আচ্ছন্নতাও সত্য ! সুন্দর দেখে যে অনুভূতি আসে , তাকে মিছে করতে পারে সুন্দরতর ৷
মৃত্যু অব্দি মানুষ সুন্দরতরের অভিযানে ৷ আমার বন্ধুকবি সুনন্দ ( অধিকারী ) বলেন ” সুন্দরতর হয় না ৷এক সুন্দরের বিকল্পও অন্য সুন্দর হয় না!” ওঁর কথা সত্যি হলে আজকের রাত বিকল্পহীন ৷ যুবতী রাঁধুনির আঁধার পথ হেঁটে আপন ঘরে দীপ জ্বালাও সত্যের সৌন্দর্য্যায়ন !
বাসন ঝকঝকে করে দিদি চলে যাচ্ছেন ৷ ভোরের আলোয় এঁটো বাসন মাজতে তাঁর ভীষণ আপত্তি ৷
পাহাড়ের পথে স্ট্রিট লাইট নেই ৷
বিন্দুরা নড়ে ৷ প্রতিভাস ম্যাগাজিন