দেবাশিস সাহা
“এই শিবু ওঠ, পড়তে যাবি না?”
শিবু, মানে আমাদের শিবমের তখনও কোনও সাড়া শব্দ নেই। ঘুমে প্রায় অচেতন।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মালতী আঁতকে উঠল। সাতটা বাজতে দশ। সাতটা থেকে কোচিং। আর দেরি না করে, মালতী ছেলেকে পাঁজাকোলা করে বসাল, “ওঠ, বাবা ওঠ, আর দেরি করিস না। আজ না তোর অঙ্ক পরীক্ষা? আগের পরীক্ষাতেও শুন্য পেয়েছিলি!
এবার পরীক্ষাটা দে, দেখি কত পাস। ওঠ, সোনা আমার।”
মায়ের আদরমাখা ডাকে শিবমের ঘুম ভাঙার কোনও লক্ষণই দেখা গেল না। বরং মায়ের হাত জোর করে ছাড়িয়ে আবারও সটান বিছানায়। মালতীর আদরমাখা কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে সপ্তমে চড়তে শুরু করল,“ আজ বাদে কাল অ্যানুয়াল, আর তুই কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছিস! দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা।”
বেতের ঝাড়নটা সপাটে পড়ল পিঠে। এরকম মারের অনেক দাগ আছে শিবুর গায়ে, পায়ে ও পিঠে। আজকের মারটা বোধহয় একটু জোরেই পড়েছে। ঘুম জড়ানো চোখে পিটপিট করে তাকাল শিবম। কিন্তু ওই পর্যন্ত, উঠল না। আবারও কথা বলল মালতীর বেত।
এ বার পশ্চাদ্দেশে,“পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হবি। ব্যাগ, বই-পত্র গুছিয়ে রেখেছি। এক্ষুনি বেরোবি।”
আর দেরি করা নিরাপদ নয়, পশ্চাদ্দেশ ডলতে ডলতে শিবম বাথরুমে ঢুকল। মালতী ফের চেল্লাল, “দু’-মিনিটের মধ্যে বেরোবি। না হলে আবার পড়বে। পড়াশোনার নাম গন্ধ নেই। আদরে আদরে বাদর তৈরি হচ্ছো।”
“আদর করার জন্য তুমি থাকো কত! সারা দিনই তো অফিসে কাটাও। আমি একা একা খাই, জামা-কাপড় পরি, স্কুল যাই।”
কান্না জড়ানো গলা শিবমের।
“সেই সুযোগটাই তো কাজে লাগাচ্ছ। দিন রাত কার্টুন দেখা আর গেম খেলা। না হলে ক্লাস সিক্সেই কেউ ইংরেজিতে কুড়ি, অঙ্কে শূন্য পায়? বাংলাতেও প্রায় একই। মানলাম, বাংলায় না হয় উচ্চারণের জন্য সব বানান কাটা যায়।”
সত্যিই, “র” ও “ড়” শিবম কিছুতেই উচ্চারণ করতে পারে না। “পরীক্ষা” বলতে গেলে বলে ফেলে “পদীক্ষা”। “বড়” হয়ে যায় “বদো”। “রোপণ স্যর” হয়ে যায় “নোপোন স্যর।”
“আজ যদি অঙ্কে শূন্য পাও, তোমার এক দিন কি আমার এক দিন।” মালতী গজগজ করতে করতে বলল।“আর হ্যাঁ, টেবিলে হরলিক্সটা রাখা আছে। ওটা খেয়েই কোচিং-এ দৌড়াও।”
“না মা, আমি হরলিক্স খাব না।”
“কেন?”
“টিভিতে বলে, হরলিক্স বাচ্চাদের টলার, স্ট্রঙ্গার আর সার্পার করে। কই, আমি তো টলার নই! কোচিং-এ, স্কুলে সবাই আমাকে “নাটা” বলে খ্যাপায়। স্ট্রংগারও আমি না। নয়তো, এত ঘন ঘন সর্দি কাশিতে ভুগি? আর ব্রেন তো আমার সার্পারও না। না হলে অঙ্কে শূন্য পাই? হরলিক্স আমি খাব না।” বাথরুম থেকে বেরোতে বেরোতে শিবম বলে।
“খাবি না…” মালতী আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই, হঠাৎ কী যেন মনে পড়ে গেছে, এমন ভঙ্গিতে শিবু তাড়াতাড়ি মাকে ডাকল, “মা মা, শোনো।”
“হ্যাঁ, বলে ফ্যালো।”
“মা, কাল তুমি দেরি করে ডিউটি থেকে ফিরেছ, তাই বলতেই ভুলে গেছি, আজ তো কোচিং ছুটি!”
“কোচিং ছুটি! কেন?”
“আজ নোপোন স্যরের বার্থ-ডে। পড়া হবে না বলেছে।”
“পড়া হবে না! রোপণ স্যর বলেছে, পড়া হবে না!” মালতীর চোখে মুখে বিস্ময়।
রোপণ স্যর যে হঠাৎ হঠাৎ ছুটি দেন না, তা মালতী কেন, কোচিং-এর সব গার্জিয়ানরাই ভাল করে জানেন। বার্থ-ডে কেন, পারলে উনি মৃত্যুদিনেও পড়িয়ে দেবেন,- এমন একটা ধারণা অভিভাবক মহলে চালু আছে। আর, এমন আস্থা আছে বলেই, বাবা-মা ওনার কাছে ছেলেমেয়েকে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন। ঘড়ি ধরে রোপণ স্যর পড়ান না। দেড় দু’ঘণ্টার নিক্তি মেপে আজকালকার টিচারদের মতো তিনি টিচারি করেন না। পড়া না পারলে কোচিং-এ বসিয়ে রেখে পড়া তৈরি করে তবে ছাড়েন। তা্ঁর কথা, বাড়িতে যখন পড়োনি, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকো। যত ক্ষণ না পড়া তৈরি হয়। তাতেও কাজ না হলে, মাঝেমধ্যে গর্জে ওঠে রোপণ স্যরের বেত, আর নানান কায়দার মার। আর ছুটি? নিতান্তই যদি কোনও কারণে ছুটি দিতে হয়, তা হলে উনি আগে থেকে ফোন করে বা নিজে ছাত্র-ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে জানিয়ে আসেন। এ বার তো সেরকম কিছুই হয়নি। তা হলে ছুটি কিসের? কেমন যেন সন্দেহ হয় মালতীর। আগুন চোখে তাকায় ছেলের দিকে।
থতমত খেয়ে বলে শিবম, “আচ্ছা, বিশ্বাস না হয়, তুমি সুজয়কে জিজ্ঞেস করে দ্যাখো।”
“সুজয়কে!” সুজয়ের নাম করতেই, মালতীর মনে পড়ে গেল, কিছু দিন আগে এই সুজয়ের সঙ্গেই জোট বেঁধে স্কুলকাট মেরে এ মাঠে – সে মাঠে ঘুরে, বিকেলে পাড়ার সিনিয়র জুনিয়ার ফুটবল খেলা দেখে, বাড়ি ফিরেছিল দুই মূর্তিমান । স্কুলে গার্জিয়ান কল হতেই, দিন কয়েক পরে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায়। সে দিন আচ্ছামতন বাটাম খেয়েছিল শিবম। সে দিনের মতো ছেলে আজ আবার কোনও বদ মতলব এঁটেছে কি না, আঁচ করে মালতি বলল,“ সুজয়কে না, মোবাইলটা দে, রত্নাকেই ফোন করি।”
রত্না সুজয়ের মা। মালতীর ভাল বন্ধু। একই পাড়ায় বাড়ি। মালতীর সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করে। সেলসম্যানের কাজ। বাড়ি বাড়ি সায়া, ব্লাউজ, ব্রা, নাইটি… এইসব বিক্রি করে। কমিশন বেসিস ইনকাম। ফিক্সড স্যালারি নেই। তাই চাপ বেশি। ঘুরতে ঘুরতে জুতোর সোল ক্ষয়ে যায়। রত্নাই মালতীকে কাজটা দিয়েছিল। বছর দুই আগে যখন শিবমের বাবা, শিবালোকের কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তখন মালতী বাধ্য হয়েছিল এই কাজটা নিতে। পরে অবশ্য এলাকার কাউন্সিলরকে ধরে শিবালোক একটা কাজ জোগাড় করে। এটিএম-এর সিকিয়োরিটির কাজ।
কাঁচুমাচু শিবম ফোনটা এনে মায়ের হাতে দেয়। মালতী রত্নার নম্বর ডায়াল করে… এনগেজড টোন..‘দ্য নাম্বার ইউ আর কলিং ইজ কারেন্টলি বিজি, প্লিজ ট্রাই আফটার সাম টাইম..।’
“কী জ্বালাতন রে বাবা! এক্ষুনি ডিউটি বেরোতে হবে। বাসে ট্রামে যা ভিড়! আটটার মধ্যে পৌঁছতে না পারলে ম্যানেজারের ধমক খেতে হবে,” বিরক্তিভরে ফোনটা রেখে দেয় মালতী।
“বাঁচা গেল!” হাঁফ ছাড়ে শিবম।
‘ডিংডং ডিংডং…’ কলিং বেলটা বেজে উঠল হঠাৎ। দৌড়ে দরজা খুলতে যায় শিবম। নিশ্চয়ই বাবা। বাবা তো এই টাইমেই রোজ ফেরে। এ সপ্তা নাইট ডিউটি। মুহূর্তে আনন্দ উছলে উঠে ওর বুকে। বাবা এলে সব ঝামেলা থেকে মুক্তি। কোচিং-এও যেতে হবে না। অঙ্ক পরীক্ষাও দিতে হবে না। বাবার হাতটা ধরে এক বার আবদার করলেই হল। বাবা-ই মাকে বলবে- “থাক,আজ যখন যেতে চাইছে না, ছেড়ে দাও।”
কিন্তু, দরজা খুলতেই শিবমের চোখ এক্কেবারে ছানাবড়া।বাবা কোথায়! পিঠে বইয়ের ব্যাগ। মুখে ফিচেল হাসি, সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে রাজদীপ। রাজদীপ সেভেন-এ পড়ে। রোপণ স্যরের কাছে, একই কোচিং-এ।
রাজদীপ বলল, “কী রে, কোচিং যাবি না?” পাশেই মা দাঁড়ানো। মায়ের সামনে এমন প্রশ্নে শিবমের চোখ কপালে উঠল।
রাজদীপের দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন এক্ষুনি ভস্ম করে দেবে। ব্যাটা এমনিতে কোনও দিন আসে না, আজ একেবারে সাইকেল নিয়ে হাজির! কী সুন্দর একটা প্ল্যান এঁটেছিল মনে মনে। আজ কোচিং যাবে না। অঙ্ক পরীক্ষাও দেবে না। মা ডিউটি বেরোলেই যাবে জিসানের বাড়িতে। জিসানের কাছে ঘ্যামপ্যাক কিছু গেম আছে। তার মধ্যে টেম্পল রান, ক্যান্ডি ক্রাশ এই গেম দুটো ডাউনলোড করবে। বাবার স্মার্ট ফোনটা কালকেই চেয়ে রেখেছে। সব প্ল্যান ব্যাটা ভেস্তে দিল। এখন যাও, রোপণ স্যরের কাছে গিয়ে অঙ্কের পিন্ডি চটকাও।
কিন্তু, কী আর করা! ধরা পড়ে যেতেই, শিবম সুড়সুড় করে বইয়ের ব্যাগ নিল। ঢকঢক করে হরলিক্সটা গিলল। তার পর দে ছুট। মালতী গজরাতে থাকল, “দাঁড়া, আজ ডিউটি থেকে ফিরি, মিথ্যে কথা বলা তোর চিরতরে ঘুচাব। পড়াশুনায় তো লবডঙ্কা, তার উপর আবার ইনিয়ে বিনিয়ে মিথ্যে কথা বলতে শিখেছ।”
“ক্রিং ক্রিং ক্রিং” রাজদীপ এ দিকে সাইকেলের বেল বাজিয়ে চলেছে গেটে। হুড়মুড় করে শিবম আসতেই বলল, “তাড়াতাড়ি ওঠ, দেরি হয়ে যাচ্ছে, স্যর আজ সব ক’টা মার একসঙ্গে দেবে।”
“সব ক’টা মানে?”
“ভুলে গেলি? পেল্লাই সাইজের মার, অরডিনারি মার, গুড মর্নিং-এর মার, ভালোবাসার মার -সব ক’টা এক সঙ্গে পড়বে।”
“সে তো রোজই পড়ে, নতুন কী!” শিবম ক্যারিয়ারে বসতেই রাজদীপ জোরসে সাইকেল চালিয়ে দিল। ঠিক মতো বসতে পারছে না শিবম। রাজদীপ আর ওর দুটো ব্যাগই পিঠে। বলল, “এই রাজদীপ আস্তে চালা।”
“কেন?”
“যদি পোদে যাই।”
ওর কথা শুনে রাজদীপ হোঃ হোঃ করে হেসে উঠল, “দাঁড়া, তোর এই কথাটা আজ কোচিং-এ সব্বাইকে বলতে হবে-‘যদি পোদে যাই।’” কথাটা বলতে বলতে রাজদীপের বিটকেল হাসি আর থামতেই চায় না।
শিবমের ফর্সা মুখখানা রাগে লাল হয়ে উঠল। এক ঝটকায় নেমে পড়ল রাজদীপের সাইকেল থেকে, “তোর সঙ্গে যাব না। আজ আমি কোচিং-এও যাব না। তুই একা যা।” বেপরোয়া শিবম।
“যাবি না? স্যরকে বলে দেব।”
“যা, বলগে।”
সাইকেল নিয়ে রাজদীপ ছুট লাগাল। দেরি হলেই সবার সামনে কান ধরে উঠবস করতে হবে। প্রেস্টিজ পাংচার। তার চেয়ে আগে যাওয়াই ভাল।
মনমরা শিবম হাঁটতে লাগল একা একা। উদ্দেশ্যহীন। এলোমেলো চিন্তা মনে। মা কি ডিউটি বেরিয়ে গেছে? অঙ্ক পরীক্ষা এত ক্ষণ শুরু হয়ে গেছে বোধহয়। রোপণ স্যর রাজদীপকে নির্ঘাত জিজ্ঞেস করছে –“শিবম এল না কেন রে?” রাজদীপ উল্টোপাল্টা যা তা বলছে ওর নামে। বলুক। বাবা কি ফিরেছে এত ক্ষণে? সব ছেড়ে এই চিন্তাটাই আঁকড়ে ধরল শিবমের সমস্ত মন । বাবার মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নাইট ডিউটি থাকলে বাবার খুব কষ্ট। রাতে ঘুম হয়না। খাওয়াও হয়না ঠিক মতো। তাই হয়তো মেজাজটা চড়ে থাকে সব সময়। মা-র সাথে খিটিমিটি লেগেই আছে। কাল মোবাইল নিয়ে কী তুলকালাম কান্ডটাই না বেঁধে গেল! মা তখন রুটি বানাচ্ছিল। কিন্তু কান খাড়া ছিল এ দিকে। শিবমের আবদারে, বাবা যেই মোবাইলটা রেখে যেতে রাজি হল, ওমনি মা গরম খুন্তি নিয়ে তেড়ে এল, “তুমিই লাই দিয়ে ছেলের মুন্ডুটা চিবিয়ে খাচ্ছ!”
“খাচ্ছি, বেশ করছি, তুমি আমারটা খাচ্ছ না?”
“আমি তোমার মুন্ডু চিবিয়ে খাচ্ছি?”
“না তো কী!”
“কেন বললে এই কথা?” ফের মালতী খড়গহস্ত।
“বলব?”
“বলো।”
“আমি না থাকলে, রোজ রাতে রতন কেন আসে তোমার কাছে?”
“কে রতন! কী যা তা বকছ!”
“চিনতে পারছ না যেন! রত্নার বর গো! রত্নার বর!!” কথাটা বলেই বাবা কেমন যেন পাগলের মতো হেসে উঠেছিল। সে হাসি খুশির না, আনন্দের না,– কী এক ব্যথার! ছোট হলেও শিবম তা বুঝতে পেরেছিল।
হঠাৎ একটা কাঠবেড়ালি রাস্তা পেরোল। শিবমের চোখ পড়ল, রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়টাতে। স্যরের বাড়ির এ দিকটা বেশ নির্জন। প্রায় প্রত্যেকটা বাড়িতেই নারকেল, সুপারি, পেয়ারা গাছ দেখা যায়। বাসন্তী দিদিমণির বাড়ির পাশের ফাঁকা জমিটাতে বেশ বড়সড় একটা জঙ্গল। বিকেলের দিকে শালিক, চড়ুইয়ের কিচমিচে নির্জন গ্রাম্য পরিবেশের আবহাওয়া আনে। হাঁটতে হাঁটতে এখানটায় এসে শিবম চুপটি করে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমগাছটার একটা শুকনো ডালে, কী সুন্দর একটা প্রজাপতি বসে আছে। নিথর। নিশ্চুপ।
অন্য দিন হলে শিবম নির্ঘাত প্রজাপতিটার ডানা খপ করে ধরত। তার পর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখত, মুখটা কোথায়, সুড় দুটো কী ভাবে নড়ে, ডানায় কতগুলো রঙের পোঁচ। কিন্তু, আজ প্রজাপতিটাকে কষ্ট দিতে ওর মন চাইল না। শুধু ওর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, আর ভাবতে লাগল, সত্যি প্রজাপতিটা কী সুখী! ওর অঙ্ক পরীক্ষা নেই। মায়ের বেত নেই। স্যরের মার নেই।
অনেক ক্ষণ প্রজাপতিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় অস্ফুটে বলে উঠল, “পরের জন্মে আমি যেন ওই প্রজাপতিটা হয়ে জন্মাই।”